নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন অ্যামেচারের কিছু কথা...

মু.ই.মা ইমন

বাংলাদেশী হওয়ার চেষ্টায় আছি

মু.ই.মা ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাদের মোল্লা , কে ছিল ? কি ছিল ?

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৫২

কাদের মোল্লা ১৯৭১ এ এক হাজার মানুষ খুন করেছিল ।

মিরপুর , মনিপুর , রূপনগর , শিয়ালবাড়ি , শেওড়াপাড়া আর কাজীপাড়া ছিল তার প্লে-গ্রাউন্ড ।

এবং , তার হত্যাযজ্ঞ শুরু হয় হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখার আগে থেকেই ।



আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৭১ সালেই একহাজার মানুষ হত্যা করে ।



একটা মাত্র লাইন , একটা মাত্র বাক্য আমাদের কিছুই বোঝায় না ।

কাদের মোল্লার ইতিহাস ঘেঁটে স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষকে শুনাচ্ছি সেই সব দিনগুলির কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ।



****



৬ই মার্চ ,১৯৭১।

সিরামিক ইন্ড্রাস্টির গেইট ।

মিরপুর ৬ নম্বর ।



দেশ উত্তাল । পরদিন রেসকোর্স ময়দানে ডাক দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । তারও আগে , ১লা মার্চ নির্বাচিত পাকিস্তান জাতীয় উদ্বোধনী সভা স্থগিত ঘোষণা করেছে ইয়াহিয়া খান ।



বাঙ্গালীর মনে ক্ষোভ,হতাশা । সিরামিক ইন্ড্রাষ্টির গেইটে তাই আজ জড়ো হয়েছে বেশ কিছু মুক্তিকামী জনতা । তাদের লক্ষ্য একটাই , বাঙ্গালী জাতির দাবী পেশ করা ।



জনসমাবেশ একত্রিত হতেই অনেকে স্লোগান দিয়ে উঠলেন , 'জয় বাংলা !'



পায়ে হেঁটে কয়েক কিলোমিটার পার হয়েই এই জনসমাবেশে যোগ দিয়েছেন কলেজ ছাত্র শাহাদত । গলা মেলালেন তিনিও । গলার রগ ফুলিয়ে বললেন , 'জয় বাংলা !!'



জনসমাবেশ উত্তেজিত হয়ে উঠল । সকলে গলা মেলালো এই স্লোগানে ।



হঠাৎ ভীর ফাঁক হয়ে যাচ্ছে । লক্ষ্য করলেন তিনি । ধারালো অস্ত্র হাতে ওরা কারা ?



নেতাগোছের লোকটিকে ভাল মতই চেনেন তিনি । মিরপুরবাসী চেনে তাকে । চেনে 'কসাই' কাদের মোল্লা নামে ।



হাতে লম্বা ছুরি , রাম-দা ওদের ।



নির্বিচারে নিরীহ মানুষগুলোর শরীরের যত্র-তত্র ছুরি চালাতে লাগল তারা । দা দিয়ে কোপাতে থাকল ।



আহতদের আর্তনাদের ভারী হয়ে উঠল মিরপুর-৬ এর ওই এলাকাটি ।



****



ব্লক-বি , মিরপুর -১ ।



এখানে বর্তমানে শাহআলী থানা অবস্থিত । কাজিফুরী মসজিদ ও ঈদগাহ এখানেই । [আমার বাসাও এই জায়গার ঠিক পাশেই ]



১৯৭১ সালে এই এলাকাতে বাস করতেন ফিরোজ আলী ।

একটি ছোট ভাই আছে তাঁর ।

তাকে নিয়ে ফিরোজের গর্ব ও শংকার শেষ নেই ।

তবে তা কেবল ভেতরেই ।



বাইরে কিছুই প্রকাশ করেননা তিনি ।

এমনকী পল্লবের সামনেও না ।



ফিরোজ আলীর ছোট ভাই পল্লব , তবে মা নাম রেখেছিলেন টুনটুনি ।

অদ্ভূত নাম , কিছুটা মেয়েলী ধাঁচের ।



তবে , টুনটুনি কি ছেলে পাখি হয় না ?

নিশ্চয় হয় ! - ভাবেন ফিরোজ আলী ।



মাত্র আঠারো বছর বয়স টুনটুনির ।

তবে এই বয়সেও সে যথেষ্ট সক্রিয় । আসলে , যে কোন বয়সের তুলনাতেই সে যথেষ্ট সক্রিয় - শেখ মুজিবুর রহমানের সমর্থক হিসেবে ।



ফিরোজ আলীর গর্ব এখানেই । তবে , শংকাও এই কারণেই ।

দেশের পরিস্থিতি তো ভাল না ! যদি ,যারা বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পারে না , বাঙ্গালীর জাতিগত দাবী সহ্য করতে পারে না , তারা যদি কিছু করে বসে ? ইসলামের নামে যারা সহিংসতা করে যাচ্ছে , তারা যদি কিছু করে বসে ?



ছেলেটার বয়স একদম কম , ও কি ভবিষ্যৎ দেখতে পায় ? ভাল মন্দ আগে থেকে বোঝে ?



ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে ফিরোজ আলীর ।



হ্যাঁ , এলাকার অনেকেই জানে , পল্লব ছেলেটা শেখ মুজিবর রহমানকে গুরু ভাবে । তাঁর যে কোন নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালক করে ও । এবং সেই সাথে - জাগাতে চেষ্টা করে ঘুমন্ত বাঙ্গালীদের ।

'তোমরা জেগে ওঠ , পশ্চিম পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র কি কিছুই টের পাও না তোমরা !!'



এলাকার অনেকের সাথে এসব কথা জানে কাদের মোল্লাও ।

নোংরা নোটবুকে আগে লেখে রাখা অনেকের নামের সাথে আরও একটা নাম যোগ করে সে ।

'পল্লব টুনটুনি'



'দেশটাকে হিন্দুদের হাতে তুলে দিবার চায় এরা' রাগে জ্বলতে জ্বলতে গরগর করে বলে আব্দুল কাদের মোল্লা , 'ছাড়ুম না,আমার এলাকার একটারেও ছাড়ুম না ।কুত্তার মত রাস্তায় রাস্তায় টাইনা মারুম ওরে আমি । '



কাদের মোল্লার লোক ছায়ার মত লেগে থাকে পল্লবের পেছনে ।

পল্লব যথেষ্ট সতর্ক ছেলে । বয়স কম হলে কি হবে !



সহজে নাগাল পাওয়া যায় না তার ।



তবে একদিন -



২৯শে মার্চ , ১৯৭১ ।



ঢাকার অন্যপ্রান্তে ছিল পল্লব । নিজের কাজেই ।

এতদিনে মোক্ষম সুযোগ পেয়ে আর দেরী করল না কাদের মোল্লার লোকজন ।



পল্লবের পাশে ব্রেক কষল একটা গাড়ি ।

চার/পাঁচ জন নেমে পল্লবের চোখ বেঁধে তুলে নিল তাকে গাড়িতে ।



মিরপুরে ফিরিয়ে আনা হল তাকে ।

হাত পেছনে বেঁধে রাস্তায় তাকে ফেলে দিয়ে মিরপুরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তাকে টেনে হেঁচরে নিয়ে যাওয়া হয় । নির্মম রাস্তার কর্কশ ঘর্ষণে সারা শরীরের চামড়া ছিলে যেতে থাকে তার । রক্তপাত শুরু হয় শরীরে বিভিন্ন স্থান থেকে । অন্য প্রান্তে পৌঁছে আবারো প্রথম প্রান্তের দিকে টেনে নেয়া হয় তাকে ।



আঠারো বছর বয়সের একটা ছেলের শরীর । পরিপূর্ণ যৌবনে পৌঁছেনি তখনও । এত অত্যাচার সহ্য করতে পারে না পল্লব । জ্ঞান হারায় রাস্তাতেই ।



জ্ঞান ফিরলে লক্ষ্য করে ঈদগাহ মাঠে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে । একটা গাছের সাথে ।

আল্লাহর বান্দার সাথে এমন অত্যাচার চালিয়ে শেষটায় তাকে কি না ঈদগাহে বেঁধে রাখা হল ?

শত যন্ত্রণাতেও হাসি পেল পল্লবের ।



কয়েকজন মানুষকে দেখতে পায় ও সামনে ।

চোখে-মুখে জীঘাংসা নিয়ে তাকিয়ে আছে যে লোকটা , তাকে চিনে নিতে মোটেও কষ্ট হল না টুনটুনির ।



এ তো কাদের মোল্লা ।

কসাই কাদের মোল্লা !



হাতে ওটা কি ওর ?

আতংক নিয়ে ওটার দিকে তাকিয়ে থাকে ফিরোজ আলীর আদরের ছোটভাই পল্লব ।



একটা চাপাতি ।



কাদের মোল্লা ওর পেছন দিকে চলে গেল । পিছমোড়া করে বাঁধা হাত খুলে দিচ্ছে কেউ ।

কাদের মোল্লার লোকেরা পল্লবের হাত টানটান করে ধরে সামনে আনে ।



বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে সামনে তাকায় পল্লব ।

কাদের মোল্লার চাপাতি ধরা হাত উঠে যাচ্ছে ওপরে ।



'জয় বাংলা ।' শোনা যায় কি যায় না এভাবে বলল পল্লব ।



বিদ্যুৎবেগে নেমে আসল কাদের মোল্লার হাত ।



অসহ্য যন্ত্রণায় জন্তুর মত চিৎকার করে উঠে জ্ঞান হারাল পল্লব ।



সামনে পড়ে থাকল ওর কাটা আঙ্গুল ।



৭ দিন এভাবে বেঁধে রাখা হয় পল্লবকে ।

আঙ্গুল কেটে আলাদা করে ফেলা হয়েছে ওর ।

কোন চিকিৎসার ব্যাবস্থা ছাড়াও সাতদিন কিভাবে যেন টিকে গেল পল্লব ।



৫ এপ্রিল ,১৯৭১ ।

'টুনটুনি পাখি উইড়া গেছে না এখনও আছে ?' হাসতে হাসতে দলের একজনকে জিজ্ঞাসা করল কাদের মোল্লা ।

'এখনও বাইচা আছে ।'

'শালাকে গুলি করে মেরে ফেল ! ' হাসি থেমে সেখানে স্থান নিল ক্রোধ ।



ধিকি ধিকি জ্বলছে কাদের মোল্লার চোখের তারা ।



'আর , ওই গাদ্দারের লাশ গর্তে ফালাইস না । ২ দিন ওই গাছে ওরে ঝুলায়া রাখবি । লোকে দেখুক ।'



গুলি করে বুক ঝাঁঝরা করে দেওয়া হল পল্লবের । ঈদগাহের মাটি শুষে নিল রক্ত ।



গণকবরে , রাজাকার কাদের মোল্লার ভাষায় যেটা 'গর্ত' , সেখানেও ঠায় হল না কিশোর ছেলেটার ।

ওই গাছেই দুই দিন ঝুলিয়ে রাখা হল ছেলেটার লাশ ।



তারপর নিতান্ত অবহেলার সাথে গণকবরে ছুঁড়ে ফেলা হল ওর লাশ ।



*****



কাদের মোল্লার দুটো মাত্র অপরাধের বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম ।

ঘটনা সম্পূর্ণই সত্য । কেবল অনুভূতির বর্ণনা নিজে অনুভব করে দিয়েছি ।



হয়ত আমি তেমন অনুভব করতেই পারিনি ।

কারণ বাস্তব জীবনে , পল্লব অথবা ওই জনসমাবেশের জনতার অনুভূতি অনেক অনেক গুন বেশি তীক্ষ ছিল ।



কাদের মোল্লা মনিপুর , কাজীপাড়া , শেওড়াপাড়া , রূপনগর , শিয়ালবাড়ি প্রভৃতি এলাকায় যত বিহারী ছিল , তাদের একত্রিত করে নিজের অধীনে সশস্ত্র বাহিণী গঠন করে ।



যার ফলাফল , হাজারো মানুষের মৃত্যু !



হানাদার বাহিনীর থেকেও একে আমি ভয়ংকর শত্রু হিসেবে দেখতে পাচ্ছি ।



কি ধারণা আর সবার ?

কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই তো ??



[উৎসর্গঃ শ্রদ্ধেয় আনিসুল হককে ।



উনার 'মা' লেখা থেকেই শিখেছি , কিভাবে ইতিহাসকে চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলতে হয় । ]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.