![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত বেশ হয়েছে। হাতের ঘড়িতে যতটা বাজছে এখন ততটাই। এভাবে বলছি কারন ঠিক এ সময়টাতেই আমার ঘড়িটা সঠিক সময় প্রদর্শন করে। এই সময়টাকে জিরো আওয়ার বলা হয়। পেন্ডুলাম বারোবার ডিংডং স্টাইলে নড়েচড়ে ওঠে! রাত বেড়ে চলে, সময় গড়িয়ে যায়। আমার ঘড়িটা পিছিয়ে পড়ে। থাকে।
চাঁদ মেঘমুখোশের আড়াল থেকে বেরিয়ে আবার লুকোচুরি খেলছে। মে মাসের এ চাঁদকে বলে 'ফ্লাওয়ার মুন'। ফুল চাঁদ। মাঝে মাঝে অতি অনিন্দ্য জিনিসকেও ভয়ংকর দেখায়। চাঁদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না মাঝে মাঝে। সৌন্দর্যও যে এমন অদ্ভূতুড়ে হয় দৃষ্টিগোছর হয়নি আজকের আগে!
এমন জ্যোত্স্না দেখতে হয় আয়োজন করে। জ্যোত্স্নায় গা ভেজাবো বলে ব্রিজের উপর এসে দাঁড়িয়েছি। নিচে নদী ভেসে ভেসে যাচ্ছে। ব্রিজের উপর থেকে স্বচ্ছ পানিতে চাঁদ দেখা যায়। দেখলে এমন মনে হয় যে, চাঁদের আলো নদীতে সাঁতার কেটে বহুদূর যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইদানিংকালে এটি অভিশপ্ত ব্রিজ বলে অতি পরিচিতি লাভ করেছে। দু'মাসে তেরোজন আত্নহত্যা করেছে এখান থেকে। ভয়ংকর এলাকা। ভয়ংকর জিনিস দেখতে হয় ভয়ংকর জোন থেকে। সেজন্যই এখানে আসা। ভয়ংকর ফ্লাওয়ার মুন দেখব।
আমাকে দেখেই ব্রিজের ওপাশের একটা কালো কুকুর কুঁই করে উঠল। 'সাইনোফোবিয়া' নেই আমার। কিন্তু কুকুরের ডাকটা অতি ভৌতিক শোনাল। দূর থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে সেটা আরও ভয়ংকর শোনাল। হঠাত্ চমকে উঠে দেখলাম ওপাশে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। ব্রিজের ওপর উঠে বসতে বসতে বললাম, 'আগের তেরোজন সবার আত্নহুতির কারণ জানা আমার। এবার আপনারটা বলুন।'
ছেলেটা এক ঝটকার মতো দু'কদম বামে সরে গেল। চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভয় পেয়েছে খুব। আমি হাসি হাসি মুখ করে চেহারায় যথেষ্ট পৈশাচিক একটা ভাব এনে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছি। ছেলেটা চেহারায় স্বাভাবিকত্ব ধরে রেখে আবার আগের মতো ব্রিজের উপর ভর দিয়ে চাঁদ দেখতে লাগল।
.
প্রকৃতি বৈচিত্র্যতার মুখোশ পরে থাকে। একেকজনের কাছে একেকরকমভাবে নিজেকে প্রমাণ করতে সে ভালোবাসে। আমার কাছে যেমন ফ্লাওয়ার মুনকে খুব ভয়ংকর লাগছে। আর ছেলেটার কাছে মনে হচ্ছে এটাই পৃথিবীর সবচে' সুন্দর দৃশ্য। চাঁদটাকে মনে হচ্ছে মাসের দ্বিতীয় পূর্ণিমা। ব্লু মুন। আমি কুকুরটার দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বললাম, 'রেজাল্টটা ভালো হলে কিন্তু দৃশ্যটা এমন হতো না। মনে হতো ফালতু জিনিস এটা। চাঁদ আলাদা করে দেখার কি আছে? চাঁদ তো চাঁদ-ই!'
'তখন সুইসাইডের চিন্তা মাথায় আসতো না। তখন মনে হতো বেঁচে থাকাটাই ব্লু মুন!'
ছেলেটা এবার আমার দিকে ফিরল, 'এতক্ষণ আপনার ফ্লাওয়ার মুনে ছিলাম এখন আছি ব্লু মুনে। আমায় প্রকৃতির বহুরুপীর নেশায় পেয়েছে। একেকবার একেকরকম সিচ্যুয়েশনের ফিল নিচ্ছি। একটুপর ইউরিন মুনে চলে যাবো। মুততে মুততে চাঁদ দেখতে কেমন লাগে সেটাই দেখব।'
'জ্যোছনায় ভেজব আর ভেজাবো। মুততে মুততে চাঁদ দেখার মানে হলো বিসর্জনে বিসর্জন!'
.
ছেলেটা হাঁটতে শুরু করল উল্টা পথে। আমি তার পিছু নিলাম। কুকুরটা পেছন পেছন আসছে। হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে এলাম। খোলা মাঠে বসে পড়েছি। এখান থেকে স্পষ্ট ইউরিন মুন দেখা যাবে। এখন আমি মুততে মুততে চাঁদ দেখব। পেছনে আমার কুকুরটা দাঁড়িয়ে আছে।আমার দ্বিতীয় সত্বাটা তার চোখে পড়েনা...
.
তারিখঃ ২০১৭/০৫/০৪
গল্পঃ ফ্লাওয়ার মুন, ব্লু মুন, ইউরিন মুন ও আরও অন্যান্য।
©somewhere in net ltd.