নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানে অন্য কেউ কিংবা প্রতিবিম্ব!

ইমরান আল হাসান

কলম সন্ন্যাসী এক!

ইমরান আল হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ বাবা বিরক্তিকর!

১৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ২:৫২

ব্রীজের উপর উঠেই আমি পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে গেলাম। হাসপাতাল অব্দি যাবো। গাড়ি থেকে নেমে এটুকু পথ পায়ে হেঁটে যেতে হবে। রুগী আমি নিজেই। ডাক্তার দেখাবো। বাবা চশমা মুছে চোখে দিতে দিতে আমাকে ক্রস করে গেলেন। আমি আবার তাঁর পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করলাম। বাবা বিরক্তিকর!
.
উনার সামনে হাঁটা মানে পরাধীনতা। উনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমাকে দেখবেন। তারপর খুঁত বের করে বকাঝকা করবেন।
হাত এমনভাবে নাড়াচ্ছি কেন? হাঁটতে গিয়ে দুলছি কেন? পকেটে হাত রেখে হাঁটছি কেন? শার্টের হাতা ফোল্ড করে রাখলেই শুনি তিনি বলছেন, 'মস্তান ছেলে। হাতা নামিয়ে রাখো।' বিরক্তিকর!
চুলের কাটে ভদ্রতা না থাকলে উনি নাপিতকে পর্যন্ত বকে আসেন। জুতার ব্যাপারেও উনি কঠোর। ফালতু সব স্টাইলের জুতা পরা যাবে না। ফালতু স্টাইল ছাটাই করতে তিনি বাটায় ভরসা রাখেন, 'জুতা কিনে এনে আমাকে দেখাবা। বাটা ছাড়া অন্য কিছু কিনলে আমি টাকা দিব না।'
বিরক্তিকর বাবা!
প্যান্টে এমন ছোপ ছোপ কাটা কেন? এই প্যান্ট কিনতে বলেছে কে? প্যান্ট এতো উপরে ফোল্ড করা কেন? আরও নিচে নামাও। বদমাশ ছেলে।
বাবা কি যে বিরক্তির!
ফালতু ছেলেদের মতো কিসব পরে রেখেছো হাতে? খুলে ফেল। রিস্টব্যান্ড পরলে ভালো দেখায় না। আমার ছেলেকে কেউ ছ্যাঁসড়া বললে আমি শুনতে পারবো না। অসম্ভব বিরক্তির তো!
.
বাবার বকাঝকার স্টাইল আমি জানি। একবার শুরু করলে উনি জি বাংলার সিরিয়াল হয়ে যাবেন। একটু থেমে থেমে আবার শুরু করবেন। পুরো রাস্তা এভাবেই চলবে। লজ্জায় কেবল আমার মাথাকাটা যাবে। দেখ দেখ এত বড় ছেলেকে তার বাবা বকছে! কি সম্মানহানিকর! বিরক্তিরও বটে!
এতো লোকের সামনে বকাঝকা শুনতে পারবো না বলেই আমি পিছিয়ে হাঁটছি! দেখবেও না বকবেও না!
.
একবার তিনি গেলেন কলেজে আমার সাথে দেখা করতে। কপালে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'শরীর থেকে এতো দুর্গন্ধ আসছে কেন? গোসল কর না, নাকি শার্ট ধোওনা?' তখন পাশ দিয়ে কলেজ লাইফের প্রথম ও একমাত্র ক্রাশ হেঁটে যাচ্ছিল! আমি কেবল ক্রোধে ফেটে যাচ্ছিলাম। হায় বাবা এখনি বলতে হল? মাইকেল বেঁচে থাকলে লিখতেন, প্রেমের শত্রু বাবাষণ!
.
খাওয়ার বেলায়ও তিনি কম যান না। কি খাবো, কি খাবো না, সেখানেও তার ইন্টারফেয়ার। যেখানে আমার প্রিয়খাদ্য তালিকায় দেখে দেখে তার নিষেধগুলোই যায়গা করে নিয়েছে! বাবা বিরক্তিকর!
.
কাঁথা গায়ে ফুলস্পীডে ফ্যান ছেড়ে ঘুমাই আমি। আরাম পাই বড্ড! রাতে বাবা রুমে এসে দেখেন ছেলে ঠান্ডায় গায়ে কাঁথা জড়িয়েছে। বন্ধ করে চলে যান। উফ! অসহ্য! সব বাবাই কি এমন বিরক্তিকর?
.
আরেকটা বিরক্তির কথা লিখে রাখি। বসে বসে পড়ছি। বাবা প্রায়ই এসে বলেন, এ শব্দটার অর্থ কি? এটার মানে কি?
হা করে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলি, এরে এডাতো প্রথম শুনলাম আজকে! বাবা বকেঝকে চলে যান, কিসের পড়ালেখা করো? এটা বলতে পারলা না! পড়ার নামে আমার টাকা নষ্ট! দরকার নাই আর। কাজে লেগে পড়।
.
একবার ঈদে জামা কিনতে গিয়ে পছন্দই হয় না। শেষে অনেক কষ্টে একটা পছন্দ হলো। ট্রায়াল রুম থেকে আসার পর বাবা ওইটা কিনে দিলেন না। অনেক পরে কারন হিসেবে জানতে পারলাম, ওটাতে আমাকে বেশী সুন্দর লেগেছিল! গ্রামের মহিলাদের নজর অনেক খারাপ জিনিস। কি বিরক্তির!
.
একবার অসুখে বাবা হাসপাতালে পড়ে ছিলেন। সাথে কেউ থাকা লাগবে। তিনি আমাকে থাকতে দিলেন না। সরকারী হাসপাতাল, পরিবেশ বেশি ভালো না। আমিও অসুস্থ হয়ে যেতে পারি তাই ভেবে!

কেবল ওই একটা সময়ই বাবাকে আমার বিরক্তিকর মনে হলো না। তখন খেলাধুলার মৌসুম। সবাই মাঠে পড়ে থাকে সারাদিন। আমিও সুযোগটা ভালোভাবে পেয়ে গেলাম। হাসপাতালে আটকে থাকলে খেলা যাবে না!
.
আমি পেছনে হাঁটছি আর বিরক্তিকর লোকটা সামনে হাঁটছে। একটু থেমে পেছন ফিরে বললেন, রোদের মধ্যে হাঁটছো কেন?' বলে তিনি আমার পাশাপাশি এসে হাঁটতে লাগলেন। বিরক্তি না! হাঁটাতেও উনি স্বাধীনতা দিবেন না! আমরা বামমুখো হাঁটছি। বাবা আমার বাঁ পাশে। হাত ধরে রেখেছেন যাতে সামনে পিছনে না যেতে পারি। সূর্য তখন পশ্চিমাকাশে হেলতে শুরু করেছে। আমি অদ্ভূতভাবে খেয়াল করলাম, বাবার গায়ের ছায়া এসে আমার গায়ে পড়ছে। বাবা রোদের পাশে থেকে তার ছায়ার তলে আমাকে রাখছেন। বাবা রোদে হাঁটছে আর আমি রোদে থেকেও ছায়ায় ছায়ায় হাঁটছি! বিরক্তিকর লোকটার বুদ্ধি দেখে আমি হতভম্ব! (মৃত্যুর আগে আগে কথাগুলো আমার খুব করে মনে পরবে)
আমার বাবা সন্তানের মাথার উপর ছায়াময় বৃক্ষ!
.
বিরক্তিকর ব্যাপারগুলো আমি ভালোবাসি! কিছু অসাধারণ বিরক্তি আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি। যেগুলো শুধুই বিরক্তি ছিল না। অন্যকিছু। একদম অন্যকিছু। কেবল আমিই জানি বিরক্তি ভালোবাসার প্রতিশব্দ! তাইতো বাবা বিরক্তিকর! আমার বাবা বিরক্তির শ্রেষ্ঠে বসে আছেন!
.
সেদিন স্বপ্নে দেখলাম, বাবা বলছেন, নিম্নমানের সিগারেট খাবা না। এগুলার নিকোটিন বেশি ক্ষতিকর। বেনসন খাবা। খাবা যখন দামীটা খাবা। ভালো টা খাবা। সব ভালো জিনিসই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। :-P
.
©ImRan AL Hasan

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:৩৫

কানিজ রিনা বলেছেন: খুব ভাল লাগল ভিষন সুন্দর লেখাটা। ধন্যবাদ।

২| ১৮ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৯:৫০

মার্শাল আরমান বলেছেন: অসাধারণ।

৩| ১৮ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১০:২৭

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: এমন একটা বিরক্তিকর বাবা পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যপার।

৪| ১৮ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১০:৪৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মরণের ওপারেও বসে কত টেনশন!!!!! ভাবা যায়?

বাবা না হলে বাবা কি অনুভব করা যায় না। পৃথিবীর সকল বাবা সূখে থাকুন, এপারে ওপারে সবসময়।

+++

৫| ১৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:০৮

ইমরান আল হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ, সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

৬| ১৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১০

ইমরান আল হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ

৭| ১৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১৩

ইমরান আল হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.