| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পর্ব (১)
জাতির জ্ঞান নির্ভর করে আমরা জাতি হিসাবে আমাদের নিজস্ব ভাষা কতটা সমৃদ্ধ তার উপর। এক সময় আরবি ছিল পৃথিবীর ভাষা! জ্ঞান-বিজ্ঞানে, আধুনিক সভ্যতা বিনির্মাণে আরবী পণ্ডিতদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। রোমের রাজা যখন গ্রিক ধর্ম থেকে খৃষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন, তারপর তিনি সমগ্র রোমে গ্রিক ভাষার চর্চা নিষিদ্ধ করেছিলেন। যার কারণে গ্রিক পণ্ডিতেরা সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন সহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যে জ্ঞানের ভাণ্ডার রেখে গিয়েছিলেন তা দু'তিন শত বছরের ব্যবধানে এই জ্ঞানের ভাণ্ডার মানবজাতি কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। যেমনটা; কামাল আতাতুর তুরস্কের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তুরস্কের অক্ষর ভাষা পরিবর্তনের মাধ্যমে উসমানী খিলাফতের ৮০০বছরের জ্ঞান, সমৃদ্ধ ইতিহাসকে হারিয়ে ফেলা হয়েছে। গ্রিক সভ্যতার হারিয়ে যাওয়া এই জ্ঞানের ভাণ্ডারকে আবার পূণজাগ্রনের ক্ষেত্রে আরব পণ্ডিতদের ভূমিকাই ছিল একমাত্র এবং অনস্বীকার্য। গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস কে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। কিন্তু চিকিৎসা শাস্ত্রের জন্য ইবনে সীনা গ্রিক পণ্ডিতের লেখা বই অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আরবি ভাষায় অনুবাদ এবং ব্যাখ্যা সহ বর্ণনা করেছিলেন। তারও অনেক পরে এই ইবনে সীনার লিখা বইটি ইংরেজি এবং অন্যান্য ভাষায় অনুদিত হয় এবং যা ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল প্রতিষ্ঠানসমূহে পাঠ ছিল। এই সময়টা হচ্ছে তখন, যখন পৃথিবীর মানুষ গ্রিক জ্ঞান ভাণ্ডার সম্পর্কে বেমালুম ছিল।
একসময় বাগদাদ বলা হতো জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন সহ সকল প্রকার জ্ঞানের রাজধানী। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার জ্ঞানীগুণীরা বাগদাদে গিয়ে সমাদৃত হতো। বিভিন্ন জ্ঞানের, সংস্কৃতির মেলবন্ধন দেখা যেত বাগদাদের দারুল হিকমাহতে।
হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের কথা অনেকে জানে। বাগদাদের বিখ্যাত দারুল হিকামহ যেখানে সঞ্চিত ছিল বিগত ৫০০ বছরে মানব ইতিহাসে অর্জিত প্রায় সকল জ্ঞান। বলে রাখা ভাল বাগদাদ প্রসিদ্ধ ছিল অনুবাদের জন্য। পূর্বে ভারতবর্ষ থেকে শুরু করে পশ্চিমে গ্রীক সভ্যতা পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় পুরনো কিংবা আধুনিক যত বই পাওয়া যেত সেগুলো গণহারে আরবিতে অনুবাদ করা হত বাগবাদে।
হালাকু খানের বাগদাদ ধ্বংসের ক্ষেত্রে কথিত আছে যে- বাগদাদ নগরী ধ্বংসের সময় টাইগ্রীস নদীতে এতো বেশি বই ফেলে দেওয়া হয়েছিল যে নদীতে একপ্রকার বাঁধ দেওয়ার মত হয়ে গিয়েছিল, আর এসব বইয়ের কালীর কারণে টাইগ্রীস নদীর পানি কালো হয়ে গিয়েছিল। আর টাইগ্রীস নদীতে বই ফেলতে ফেলতে এতো বেশি বইয়ের স্তূপ হয়েছিল যে এই বইয়ের স্তূপের উপর দিয়ে অনায়েসে টাইগ্রীস নদী একপাশ থেকে অন্যপাশে ঘোড়া চালিয়ে যাওয়া যেত!
এরপর থেকে আরবরা আর দাঁড়াতে পারেনি। তারা তাদের যে জ্ঞানভাণ্ডার হারিয়ে ফেলেছি, তা তারা আজো পূর্ণ করতে পারে নি।
তার পরিপেক্ষিতে পরবর্তী আরও ৪০০ বছর অর্থাৎ ইউরোপের রেনেসাঁ আসার পর ইউরোপ জ্ঞানবিজ্ঞানের দিক দিয়ে অনেক অনেক এগিয়ে গেছে এবং জ্ঞানের দিক থেকে আরবদের চাপিয়ে গেছে। পৃথিবী সকল জ্ঞান তারা ইংরেজিতে কনভার্ট করেছে, করছে। সেই থেকে আজো ইংরেজি ইন্টারন্যাশনাল ভাষা।
ইউরোপ এখনো থেমে নেই, তারা বিভিন্ন ভাষার গুরুত্বপূর্ণ নতুন পুরোনো বইগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করেই যাচ্ছে। যেকোনো ঐতিহাসিক বা গুরুত্বপূর্ণ বই অন্য ভাষায় পাওয়া না গেলেও ইংরেজি ভাষার অনুবাদ পাওয়া যায়। এমনও হয়েছে মূল বই এখন আর পৃথিবীতে নেই, কিন্তু তার ইংরেজি অনুবাদ রয়েছে।
এক সাংবাদিক ব্রিটিশ লেখিকাকে (নাম মনে নেই) প্রশ্ন করেছিলেন কাল্পনিক চরিত্রের মধ্যে আপনার সব চেয়ে পছন্দের চরিত্র কোনটি?
উত্তরে তিনি বলেছিলেন আরব্য রজনী! বিংশশতাব্দীতে এসে হ্যারি পটারকে আরব্যোপন্যাসের জেরক্স কপি বলতে পারি।
এখন মূল কথা হচ্ছে বাংলা ভাষাকে'ও একই ভাবে সমৃদ্ধ করা জন্য নিজেদেরকে জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় ধাবিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নির্ভর বইগুলো বাংলা ভাষায় অনুবাদ হওয়া উচিৎ। সেক্ষেত্রে বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য বাংলা একাডেমী সহ বাঙলা ভাষী বিভিন্ন জ্ঞানীগুণী পণ্ডিত মনিষীদের ভূমিকা কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
যেখানে শুধু মাত্র ২৮ খণ্ডে বিভক্ত ইসলামী বিশ্বকোষের সম্পাদনা কাজ ১৯৫৮ সনে ডাঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ শুরু করলে'ও প্রকাশিত হয় ১৯৮০সালে। সেখানে আমরা জাতি হিসাবে কতটা জ্ঞানী? 
১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৫:৪৭
ইমরান বিন জাবের বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মে, ২০১৮ ভোর ৪:১৭
কাওসার চৌধুরী বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম। শুভ কামনা আপনার জন্য।