নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইসলামি চিন্তাবিদ

ইসলামি চিন্তাবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাস্তিক হবার প্রধান কারণ সমূহ

১০ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:২৯



পর্ব-৩ (২য় এপিসোড)
দেখতে দেখতেই মাদ্রাসায় কয়েক মাস কেটে গেল, সামনে ঈদের ছুটিতে মাদ্রাসা হতে এই প্রথম সে বাড়িতে আসল বাবার সাথে, আব্দুল্লাহর অনেক খুশি লাগছিল অনেক দিন পরে মা-বোনদের কাছে আসতে পেরে। তার মা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে সে আসায় এবং আব্দুল্লাহ জানতে পারল এই কয়েক মাস আব্দুল্লাহর জন্য তার মায়েরও অনেক খারাপ লেগেছে এমনকি প্রায়ই রাত্রে কাঁদত, আব্দুল্লাহকে একবার দেখার জন্য রমিজ উদ্দিনকে অনেকবার বলেছেও কিন্তু তার একটাও জবাব- সন্তান তো শুধু তোমার একার না, আমারও ছেলেকে দেখার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে থাকে কিন্তু দ্বীনের উদ্দেশ্যে ছেলেকে মাদ্রাসায় দিয়েছি তাই বুকে পাথর বাধতেই হবে। যাইহোক মাদ্রাসা হতে বাড়িতে আসার পর সে সবসময়ই টুপি-কাবলী সেট পরে থাকত, ৫ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়ত আর সকলকেই ছালাম দিত কারন এমনটাই মাদ্রাসার হুজুরের নির্দেশ, আর এজন্য বাড়ির প্রায় সকলেই তাকে হুজুর ডাকা শুরু করে এতে তার অবশ্য ভালই লাগছিল কিন্তু কিছু কিছু জিনিস তার আবার একদমই খারাপ লাগে যেমনঃ- বাড়িতে আসার পর টুপি পরেই সমবয়সীদের সাথে খেলতে গেলে তাকে খেলা নিত না, বলত হুজুর মানুষের এসব খেলা খেলতে নেই। টিভিতে নাটক দেখতে বসলে অনেকেই বলত- ছি ছি! হুজুর মানুষ কেন এসব দেখে, অনেকে বলত টুপি মাথায় দিয়ে এসব দেখতে নেই। ক্যাসেট প্লেয়ারে গান শুনতে গেলে তার বড় বোনও তাকে বলে, হুজুর হয়ে গান শুনছিস? তোর শুধু ওয়াজ আর গজল শুনতে হবে। সেদিন বাজারে যাবার সময় মায়ের কাছে যখন সে ১০০ টাকা চাইল তখন মা তাকে শুধু ৫০ টাকা দিলে সে মায়ের সাথে জেদাজেদী শুরু করে তখন তার মা তাকে বলে- এই বেয়াদপ ছেলে! তুই না মাদ্রাসায় পড়িস, হুজুর মানুষের এমন রাগারাগি করতে নেই। পরে সে বাধ্য হয়ে ৫০ টাকা নিয়েই বাজারে যায়। ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে আব্দুল্লাহর কাছে ছুটিতে বাড়ি আসাটা যেন কাল হয়ে দ্বারিয়েছে তাই সে মনে মনে ভাবল হয়ত সে সবসময় হুজুর সেজে থাকে বলেই তাকে সকলে এমন বিধি-নিষেধ করছে তাই সে এবার হুজুর পোশাক খুলে তার আগেরকার প্যান্ট শার্ট পরে টুপি ছারাই বাইরে গেলে সে পরে আরেক বিপদে। যেই তাকে দেখে সেই বলতে লাগল, একি! হুজুরের পাঞ্জাবী কই টুপি কই, অনেকে আবার বলতে লাগল- এই কয়দিন বাড়িতে থেকেই এই অবস্থা! এজন্যই নতুন নতুন মাদ্রাসার ছাত্রদের বেশি ছুটি দিতে নেই। এরপর সে আবারও হুজুর সাজেই থাকতে লাগল যদিও অনেকেই তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টাও করত।
আব্দুল্লাহর এবার ঈদের ছুটি বাড়িতে কাঁটিয়ে আসার পর মাদ্রাসার আবাসিক জীবন পূর্বের চাইতে আরও বেশি দুর্বিষহ লাগছিল। প্রতিমূহুর্তেই তার শুধু গ্রামের সৃতিওগুলো ভেসে উঠছিল আর মা-বাবা, বোনের কথা মনে পরলেই বুকের ভিতর হু হু করে উঠত । তার মন চাইত আবার গ্রামে যেতে এবং বন্ধু-বান্ধবদের সংগে গিয়ে খেলতে , এখানকার খেলাধুলা তেমন ভাল লাগত না আর বন্ধুগুলোও তেমন অন্তরঙ্গ হয়ে উঠেনি। সে এবার ঈদের ছুটিতে গিয়ে কিছু নতুন গান শুনেছিল যা তার বোন কিনে এনেছিল ঈদ উপলক্ষে ঐসব গানগুলো তার খুবই ভাল লাগত এবং ঈদের মাঝে বার বার শুনতে শুনতে তার মুখস্ত হয়েও গিয়েছিল সেসব গানগুলো বার বার তার কানে বাজতে লাগল এবং শুনতেও ইচ্ছে করল কিন্তু এখানে তো আর হারাম গান শুনা সম্ভব না , যদিও এখানে ছাত্রদের সুরেলা কন্ঠে শুধুমাত্র কুরান তেলায়ত গজল শুনা যায় কিন্তু আব্দুল্লাহর কাছে এসবের চেয়ে গানের সুমধুর সুর আর মিউজিক ওয়ালা গানই যেন বেশি ভাল লাগছিল হল বিশেষ করে জারি, ভাটিয়ালী,পল্লীগীতি আর হিন্দি ও বাংলা সিনেমার গানগুলো তার বেশি ভাল লাগত। এখানকার পড়াশুনা, পরিবেশ, নিয়ম-কানুন, হুজুরদের শাসন এবং বেত্রাঘাত সবকিছুই তার কাছে অসহ্য লাগতে শুরু করল, একপর্যায়ে সে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলল সে মাদ্রাসায় কিছুতেই পড়বে না স্কুলে পড়বে, বাবা-মা যতোই তাকে মারধোর করুক তবু তো হুজুরের হাতের লাঠি পেটা খাবার চাইতে ভাল হবে। প্রথমদিকে তাকে হুজুররা মারধোর করত না কিন্তু কয়েক মাস পর হতে সামান্য ভুলেই অন্য সবার মত তারও মার খাওয়া শুরু হয়, এবার ঈদের ছুটির পর মাদ্রাসায় আসার পর যেন হুজুরদের মারধোর আরও বেড়েছে। কিভাবে মাদ্রাসা ছেরে চলে যাবে সে কোনকিছুই ভেবে পাচ্ছিল না তাছারা তার আব্বাকে জানালে উল্টো ফল হতে পারে এমনকি হুজুরদের না জানিয়ে মাদ্রাসা হতে পালালে যদি ধরা পরে তবে তার ফল যে মোটেও ভাল হবে না তা সে ভাল করেই জানে কেননা কয়েকদিন আগে খারেজী বিভাগের এক ছাত্র পালাতে গিয়ে ধরা পরলে তাকে সকল ছাত্রের সামনে হুজুর এমন বেত্রাঘাত করে যা দেখে আব্দুল্লাহর চোখে পানি এসে গিয়েছিল, মনে হচ্ছিল তাকেই বোধ হয় হুজুর পালানোর অপরাধে এভাবে পিটাচ্ছে। আব্দুল্লাহ মনে মনে ভাবছিল না পালিয়ে কিভাবে মাদ্রাসা হতে বাড়িতে যাওয়া যায়? একবার বাড়িতে গেলেই সে আর ফিরবে না এমন চিন্তা-ভাবনা করতে করতেই হটাৎ তার চেয়েও বড় এক ছাত্র যার সাথে বিকেলে প্রায়ই সে ব্যাডমিন্টন খেলত সে বলল- তোমার কি এই মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতে ভাল লাগে? আব্দুল্লাহ বলল- নাহ! আমার স্কুলে পড়তেই বেশি ভাল লাগে আর আমি স্কুলেই পড়তাম কিন্তু বাবা আমায় মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছে, ছেলেটি বলল- তুমি মানা করনি? সে বলল- আমি আগে জানতাম না মাদ্রাসার জীবন এত কঠিন বিশেষ করে মা-বাবাকে ছেড়ে দূরে থাকা এত বেশি খারাপ লাগবে তা আগে কল্পনাও করিনি, তা শুনে ছেলেটি বলল- তাহলে তুমি স্কুলেই পড়, মাদ্রাসা পড়া বাদ দাও। আব্দুল্লাহ ছেলেটির এমন বক্তব্য শুনে খুবই খুশি হল এবং ছেলেটিকে ভীষন আপন মনে হতে লাগল তাই সে বলল- আমি তো মাদ্রাসা ছেরে চলেই যেতে চাই কিন্তু বাবাকে বললে রাজি হবে না তবে একবার বাড়িতে গেলে মা-বোনকে দিয়ে বাবাকে বুঝানো যেত কিন্তু মাদ্রাসা থেকে যাব কিভাবে? হুজুরকে বললে তো আর এমনি এমনি যেতে দিবে না তাছারা ঈদের মধ্যে বাবা স্বয়ং এসেই নিয়ে গিয়েছিল তাই একা একা তো আর হুজুররা যেতে দিবে না। ছেলেটি বলল- এমনিতেই তো আর যেতে দিবে না, তুমি ১ নম্বর হুজুরের কাছে গিয়ে ছুটি নাও বাড়িতে যাবার জন্য, বলবে হুজুর আমার মা অসুস্থ গ্রামের একজন এসে বলে গেছে তাই ১দিনের জন্য ছুটি দিন পরের দিনই চলে আসব, এরপর ছুটি দিলে তুমি একাই যেতে পারবে তো? আব্দুল্লাহ খুশিতে বলে উঠল- কেন পারব না? আব্দুল্লাহ আসলে জানতই না যে হুজুরদের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে একাই যাওয়া যায়, ছেলেটি তাকে বলল তারও নাকি মাদ্রাসায় পড়তে ভাল লাগে না, এর আগে সে অন্য মাদ্রাসায় পড়ত সেখান থেকে সে বার বার পালিয়ে যেত পরে তার বাবা পিটিয়ে আবার মাদ্রাসায় দিয়ে আসত, এরপর নাকি তার বাবা তাদের গ্রাম থেকে অনেক দূরে এই মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছে, সে ইচ্ছে করলে এ মাদ্রাসা হতেও পালাতে পারে কিন্তু বাড়িতে গেলে তার কোন ঠায় হবে না ভেবে সে বাধ্য হয়েই আর পালাচ্ছে না।
যেই বুদ্ধি সেই কাজ আব্দুল্লাহ ঐ ছেলের কাছ থেকে কিভাবে ছুটি নিয়ে বাড়িতে একাই যাওয়া যায় তা শিখে নিয়ে ঠিকই ১ দিনের ছুটি নিয়ে যখন বাড়িতে পৌছাল তখন তার মা তাকে দেখে ভাবল সে নিশ্চয় অসুস্থ , আব্দুল্লাহও তাই বলতে লাগল কিন্তু রাত্রে তার বাবা তাকে দেখে অবাক হয়ে বলল সে এতদুরের পথ একা একা কিভাবে আসল আর তার কি রোগ হয়েছে সেটাও জানতে চাইল, আব্দুল্লাহ থতমত খেয়ে বলল জ্বর হয়েছে, যদিও এই কয়েকদিনে চিন্তায় চিন্তায় সে অনেকটাই রোগাটেই হয়ে গিয়েছিল তবু তার বাবা তার মাথায় হাত রেখে বলল, কই- মাথা তো ঠান্ডাই মনে হচ্ছে। সে বলল এখন আগের চাইতে একটু কমেছে। পরের দিন আব্দুল্লাহ তার মা-বোনকে বলল যে সে মাদ্রাসায় পড়তে চায় না, তার মা তাকে বলল কেন সে পড়বে না? সে বলল- মাদ্রাসার পড়া ভীষন কঠিন তাকে দিয়ে এসব হবে না এমনকি মাদ্রাসার হুজুরদের পেটানোর বর্ননাও দিল এমনকি বুঝাল যে সেখানকার জীবন অনেক কষ্টের তাই সে স্কুলেই পড়বে। প্রথমে আব্দুল্লাহর মা তার কথায় রাজি না হলেও তার বোন ঠিকই রাজি হল আর সেদিনই আব্দুল্লাহর বাবাকে তার মা বিষয়টি জানাল, এরপর তো রমিজ উদ্দিন ভীষন রেগে গেল কারন আব্দুল্লাহকে নিয়ে আল্লাহর কাছে মানত করা হয়েছিল যে ছেলে সন্তান হলেই মাদ্রাসায় দিবে এখন ছেলের ভাল লাগা না লাগার কারনে সে কি করে আল্লাহর সাথে ছলনা করে তাই সে আব্দুল্লাহকে ডেকে আচ্ছা মতন বকা দিল এবং বলল তাকে মাদ্রাসাতেই পড়তে হবে এবং কালকেই সে তাকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসবে কিন্তু আব্দুল্লাহ নাছোর বান্দা সে কিছুতেই মাদ্রাসায় পড়বে না সাফ সাফ জানিয়ে দিল, এই কথা শুনে রমিজ উদ্দিনের মাথায় রক্ত উঠে গেল এবং তখনই সে আব্দুল্লাহকে উত্তম মধ্যম দেওয়া শুরু করল যদিও তার মা-বোন তাকে বাঁচায়। পরে আব্দুল্লাহ বুঝতে পারল তার বোন তার পক্ষে কিন্তু বাবা তার সম্পূর্ব বিপক্ষে আর তার মা পরেছে উভয় সংকটে অর্থাৎ সন্তানের কথাতে অনেকটাই রাজি আবার মানতের কারনে মাদ্রাসায় পড়াতেও ইচ্ছা আছে , এসময় তার বোন বলল- সমস্যা নেই , মানত করে পুরো না করতে পারলে কাফফারা দিলেই নাকি আর সমস্যা হবে না অর্থাৎ মানত না মানায় আব্দুল্লাহ মারা যাবে না, তাছারা আব্দুল্লাহর পক্ষেও মাদ্রাসার পড়া কঠিন সবার ব্রেইন সমান না সবাই মাদ্রাসায় পড়তে পারে না, এসব শুনে তার মা অনেকটাই যেন স্বস্তি পেল। পরের দিন আব্দুল্লাহকে যখন তার বাবা জোর করে মাদ্রাসায় নিয়ে যাবে তার আগেই আব্দুল্লাহ বাড়ি ছেরে পালিয়ে থাকল, সারাদিন বাড়িতে আসল না রাত্রে যখন সে বাড়িতে আসল তখন রাত্রে খাওয়ার পরে সে তার বাবার হাতে ধরা পরল এবং ভীষন মার খেল, মা-বোনও বাধা দিয়ে পেরে উঠল না যদিও আব্দুল্লাহ অনেক কান্না-কাটি করেছে তবু রমিজ উদ্দিনের এতটুকুও দয়া হল না, ছোট একটি ছেলেকে এভাবে মারধোর করাতে তার মা-বোনও ভীষন রেগে গেল তাই রাত্রে তার বোন তাকে বুদ্ধি দিল সে যেন শহরে তার চাচার কাছে চলে যায় কারন একমাত্র চাচাই রমিজ উদ্দিনকে বুঝাতে পারবে। পরের দিন রমিজ উদ্দিনকে না জানিয়ে গ্রামের এক আত্মিয়ের সাথে একটি চিঠি দিয়ে ঢাকায় আব্দুল্লাহকে কান্নাচোখে মা-বোন বিদায় দিল।
ঢাকায় গিয়ে আব্দুল্লাহ তার চাচার কাছে সব খুলে বলল, আব্দুল্লাহর এই ছোট চাচা তাকে খুবই আদর করত তাই সে আব্দুল্লাহর কাছে সব বৃত্তান্ত শুনে খুবই মর্মাহত হল এবং আব্দুল্লাহকে আশ্বস্ত করল যে তাকে কিছুতেই মাদ্রাসায় পড়াতে দিবে না স্কুলেই পড়াবে, প্রয়োজনে ঢাকায় নিজের কাছে রেখেই পড়াবে। তার চাচা দেরি না করে শুক্রবারের ছুটিতে দেশে এল এবং রমিজ উদ্দিনকে অনেক বুঝাল কিন্তু কিছুতে কাজ হল না অবশেষে অনেক বুঝা-বুঝির পর আব্দুল্লাহর চাচা রমিজ উদ্দিনকে ঢাকায় ক্যাডেট মাদ্রাসায় নিজের কাছে রেখে পড়ানোতে রাজি করাল এতে আব্দুল্লাহর মা-বোনও বেশ খুশি হল। আব্দুল্লাহর ক্যাডেট মাদ্রাসায় পড়তে ভালই লাগছিল কারন এটি হুবহু স্কুলের মতই শুধুমাত্র আরবী আর ধর্মীয় বইও এখানে পড়তে হয় আর ক্যাডেট হওয়ায় নিয়ম শৃংখলাও একটু বেশি । আব্দুল্লার কাছে জেনারেল লাইনের পাঠগুলো বেশি ভাল লাগত ধর্মীয় বইগুলোর চাইতে আর সে ধর্মীয় সাবজেক্টগুলোতে ভালই কাঁচা ছিল। চাচার বাসায় তার দিনগুলো ভালই কাটছিল কেননা এখানে তার চাচাত ভাই জনি আছে সে তারচেয়ে বয়সে দুবছরের ছোট হলেও ভীষন স্মার্ট, জনিই একমাত্র তার বন্ধু তারসাথেই সে সারাদিন কাটায় শুধুমাত্র স্কুল ও পড়ার সময় বাদে। শুরুর দিকে দেশের বাড়ির মা-বাবা-বোনদের খুবই মনে পরত এবং খারাপও লাগত কিন্তু কিছুদিন পরে আর খারাপ লাগে না, এখানে তার বিনোদনের জন্য স্যাটালাইট, সিডি প্লেয়ার, খেলাধুলার সামগ্রীসহ অনেক কিছুই আছে কিন্তু দেশের বাড়ির মত খোলা পরিবেশ আর অনেক ছেলেপেলে নেই আর মহল্লার সকলের সাথে মিশাও যায় না গ্রামের মত।
দেখতে দেখতে আব্দুল্লাহ প্রাইমারী লেভেল পার করে ফেলল এরপর আব্দুল্লাহ তার চাচার কাছে জিদ ধরল যে সে আর ক্যাডেট বা কোন ধরনের মাদ্রাসায় আর পড়বে না কারন ধর্মীয় সাবজেক্টগুলোতে সে মোটেও ভাল রেজাল্ট করতে পারেনি কোনমতে পাশ করেছে আর একইসাথে ধর্মের বই এবং অন্নান্য বিষয়গুলো পড়া তারকাছে অনেক কঠিন লাগছে তাছারা সে দেখেছে তার চাচার ভাই জনি স্কুলে পড়েও অনেক ট্যালেন্ট তারচাইতে, বয়সে ছোট জনির সাথে সে কিছুতেই পেরে উঠছে না পড়াশুনার দিক দিয়ে। আব্দুল্লাহর চাচা ইত্যাদি অনেক বিষয় শুনে তার বড়ভাই রমিজ উদ্দিনকে বুঝাল যে সে যে আল্লাহর কাছে মানত করেছিল তার ছেলে হলে মাদ্রাসায় দিবে সেটা এই ৫ বছর যাবৎ মাদ্রাসায় পড়িয়েই মানত পূরন হয়ে গেছে, তার ছেলেকে যে বড় আলেম-মাওলানা বানাতেই হবে এমন নয় তাছারা আব্দুল্লাহর মাদ্রাসায় পড়ে ধর্মীয় জ্ঞান অনেক হয়েছে সে কুরান পড়তে পারে আরবিও পারে এখন যদি সে জেনারেল লাইনে ঢাকায় তারকাছে থেকে পড়ে গ্রাজুয়েট হয় তবে তার ভাল বেতনের চাকরি হবেই হবে নচেৎ সে মাদ্রাসা হতে পাশ করে কোন মসজিদের ঈমামতি করে মোটেও ভালভাবে চলতে পারবে না আর সবচেয়ে বড় কথা আব্দুল্লাহও আর মাদ্রসায় পড়তে ইচ্ছুক নয়। অবশেষে রমিজ উদ্দিন এক হুজুরের কাছে থেকে শুনে আশ্বস্ত হল যে শিশুকাল হতে প্রাইমারী লেভেল পর্যন্ত মাদ্রাসায় পড়িয়েও মানত পূরন হয়েছে কেননা সে তার ছেলেকে আলেম বানাবে এমন ওয়াদা করেনি তাই রমিজ উদ্দিন আব্দুল্লাকে ঢাকাতে তার চাচার কাছ থেকেই পড়াশুনা করাতে রাজি হল। আব্দুল্লাহ আর তার চাচত ভাই জনি একই হাইস্কুলে ভর্তি হল জনি তারচেয়ে বয়সে ছোট হলেও পড়াশুনাতে সে আব্দুল্লাহর চাইতে এগিয়ে ছিল তাই আব্দুল্লাহ বয়সে বড় হয়েও জনির সাথেই একই ক্লাসে ভর্তি হল। তাদের দিনকাল ভালই চলছিল বিশেষ করে মাদ্রাসার পড়া বাদ হওয়ায় আব্দুল্লাহ ভীষন স্বস্তি পেল এখন শুধু জেনারেল লাইনের পড়াই পড়তে হবে আরবী আর ধর্মীয় বইগুলো আর পড়তে হচ্ছে না, তারা দুই ভাই একইসাথে স্কুলে যেত এবং ফিরে আসত পড়াশুনা ও থাকাও তারা একই রুমেই করত তবে আব্দুল্লাহর একটি অভ্যাস গড়ে উঠেছিল যে সে ৫ওয়াক্ত নামাজ পড়ত কিন্তু জনি পড়ত না সে শুধু শুক্রবারে পড়ত, আব্দুল্লাহর মাঝে মাঝেই মনে হত সে কত কষ্ট করে মসজিদে আসে আবার যায় কিন্তু জনি কত আরামে ঘরে বসে থাকে, একা একা মসজিদে এসে নামাজ পড়তে আব্দুল্লাহর প্রায়ই বোরিং লাগত, আর সবচেয়ে বড়কথা হল জনির পাল্লায় পরে প্রায়ই আব্দুল্লাহর নামাজ মিস হওয়া শুরু হল তবু সে প্রত্যহ ঠিকই নামাজ পড়ত আর মাঝে মাঝে নামাজে না গেলে তার চাচী বলত- ছি ছি! মাদ্রাসায় পড়া ছেলে নামাজ কাজা করছ? তাছারা তিনি জনিকেও মাঝেমধ্যেই আব্দুল্লার সাথে মসজিদে নামাজে যেতে বলতেন কিন্তু জনি যাচ্ছি আম্মু! বলে আর যেত না।
আব্দুল্লাহ ও জনির ক্লাস সিক্স, সেভেন পর্যন্ত হাইস্কুলে ভালই কাটছিল কিন্তু ক্লাস এইটে উঠার পর তাদের জীবন অনেকটাই পাল্টাতে শুরু হল। তাদের কন্ঠ ও শরীরেও পরিবর্তন আসা শুরু হল এমনকি চিন্তাধারাতেও পরিবর্তন আসা শুরু হল। আব্দুল্লাহর যদিও সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ছিল ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিবর্তন আর এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল তাদের হাইস্কুলের দুজন টিচারের, যাদের একজন ছিলেন সমাজের টিচার অন্যজন ছিলেন বিজ্ঞানের টিচার। বিজ্ঞানের টিচার ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের আর সমাজের টিচার ছিলেন মুসলমান। বিজ্ঞানের হিন্দু টিচারটি ক্লাসে পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে প্রায়ই ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে তুলনা করে কথা বলতেন যা শুনে আব্দুল্লাহর টনক নরতে শুরু হয় যেমন- স্যার, ১ম দিনেই ক্লাস নিতে এসে বলেছিল- মানুষ মারা যাবার পর তার কি অবস্থা হয় তা বিজ্ঞানের দৃষ্টিভংগিতে আলোচনা কর, খবরদার কেউ আবার ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করবে না। একেক ধর্ম অনুসারে মারা যাবার পর মৃত ব্যাক্তির একেক পরিনিতি হয় যেমন- ইসলাম ধর্মানুযায়ি মানুষকে আবার জাগিয়ে তু্লে ৩টি প্রশ্ন করা হয় এরপর সাস্তি দেয়া হয়, গুড় আযাব হয় মাটি দুই পাশ হতে চাপ দেয়, মৃত ব্যাক্তি চিল্লাতে থাকে কিন্তু সেই চিৎকার নাকি কেউ শুনতে পারে না, কিন্ত আমরা আসলে দুচোখে প্রকৃতভাবে যাই দেখতে পাই বিজ্ঞানও আমদের তাই বলে উদাহরণস্বরুপ পুড়িয়ে না ফেললে সব ধর্মেরই মৃত ব্যাক্তির শরীরে ব্যাকটেরিয়া ধরে পঁচন শুরু হয় এরপর এক সময় কঙ্কালে রুপান্তরিত হয়। স্যারের প্রথমদিনের কথা শুনেই আব্দুল্লাহর অনেক ভাল লেগেছিল এবং তার মনে হল ঠিকই তো আমাদের ধর্মানুযায়ি মৃত ব্যাক্তির সাথে যা যা হবার কথা তা তো আমরা কেউ দেখতে পারি না শুধু দেখি যে সবার শরীরই কঙ্কালে পরিনিত হয়। তাছারা সমাজের স্যার একদিন ক্লাসে জোড় গলায় সকলকেই বললেন- যদিও আমাদের ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে আদম-হাওয়াই হল এই পৃথিবীর ১ম মানুষ কিন্তু আমাদের সমাজের বই এ যেসব আদিম মানুষের কথা সচিত্র বলা হয়েছে আসলে তারাই আমাদের সত্যিকারের পূর্ব পূরুষ, তারা গাছের ছাল ও পশুর চামরা পরত লাঠি আর পাথর দিয়ে পশু শিকার করে খেত, শুরুর দিকে তারা কাঁচা মাংসই খেত পরে যখন তারা আগুন জ্বালাতে শিখল তখন থেকে তারা মাংস পুড়িয়ে খাওয়া শুরু করল, সেসব আদিম মানুষই ধীরে ধীরে সভ্য হতে হতে বর্তমান জামানার সভ্যতায় পৌচেছে। সমাজের বই পড়ে এবং সমাজ স্যারের কথা শুনে আব্দুল্লাহর মনে মনে নিজের ধর্ম নিয়ে দুঃচিন্তা শুরু হল তাছারা আব্দুল্লাহরও নিজের মনে মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে- সে মুসলিম ঘরে জন্মেছে বলে সে মুসলিম হয়েছে এবং অন্যসব ধর্মকে ভুল জানে কিন্তু যদি সে অন্য ধর্মালম্বীদের ঘরে জন্মাত তবে সে তো সেই বাপদাদার ধর্মকেই সঠিক এবং ইসলামসহ অন্য সকল ধর্মকে ভুল জানত, তখন যদি সে ভুলের উপরে থাকত তবে সে মুসলিম হয়ে জন্মেও যে ভূলের উপরে নেই এটি সে ভাবছে কেন? ইত্যাদি অনেক ব্যাপারই আব্দুল্লাহ পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে জনির সাথে আলোচনা করে, জনির আবার ধর্ম সম্পর্কে পূর্ব হতেই অন্যরকম ধারণা যেমনঃ- ধর্ম টর্ম এসব আসলে অনেক আগের রুপকথার মত একটি বিষয় এসব ধর্ম মেনে থাকে বেশির ভাগই গ্রামের অশিক্ষিত মূর্খ্য খ্যাত লোকজনেরা শহর এবং উন্নত বিশ্বের আধুনিক লোকজন এসব মানে না। জনির কাছে ইসলাম ধর্ম মানে দাড়ি-টুপি পাঞ্জাবী, তাবিজ-কবজ, দান-খয়রাত, সস্তা আতরের ঝাঁঝাল গন্ধ, রোজাদার ব্যাক্তির মুখের অসহ্য দুর্গন্ধ, লেলানো কন্ঠে ওয়াজ আর বোরিং সুরে সুরা তেলায়ত ছাড়া আর কিছু নয়। জনি ছোটবেলা হতেই গরীব অসহায় আর নিম্ন শ্রেনীদেরই শুধু ধার্মিক হিসেবে দেখেছে উঁচু স্তরের লোকদেরকে খুব কমই ধর্ম মানতে দেখেছে। তবুও জনি ধর্মের প্রতি এত ক্ষিপ্ত ছিল না কিন্তু বেশ কয়েক বছর পূর্বে তার আম্মু তাকে কিছু দুয়া শিখিয়ে বলেছিল এগুলো পড়লেই নাকি সাথেই সাথেই ফল পাওয়া যায় আর সে সেসব দুয়া অনেক কষ্টে মুখস্ত করে পড়েও সে কোন ফলই পায়নি যেমন- পড়াশুনা করার পূর্বে সে একটি দুয়া করত যাতে পড়া মুখস্ত হয় ভালভাবে কিন্তু সেই দুয়া পড়ে তার ভালভাবে মুখস্ত তো হতই না বরং মুখস্ত হতে পূর্বের তুলনায় আরও বেশি সময় লাগতে শুরু হয়। জনি একদিন দেশের বাড়ি গিয়ে নদীতে গোছল করে জ্বর আসলে আম্মু এক হুজুরকে ডেকে এনে তার ঝার-ফুক করায় এবং পানি পড়াও খায় কিন্তু জনির জ্বর কিছুতেই কমে না তারপর সে রাত্রে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেলে জ্বর কমে, এতকিছুর পরও সে পুরোপুরি ধর্মের উপরে ক্ষিপ্ত ছিল না কিন্তু একদিন তার আব্বু বলেছিল নামাজ পড়ে মুনাযাত করে আল্লাহর কাছে তুমি যা চাবে তাই পাবে একথা শুনে জনি ভীষন আশান্বিত হয়ে তার মনের একটি চাওয়ার কথা নামাজ পরে মুনাযাতে বলেছিল কিন্তু তার সেই চাওয়া কিছুতে পূরন হয়নি এরপর হতেই সে ধর্মের প্রতি ভীষণ ক্ষিপ্ত এমনকি তার শুক্রবারের নামাজও আর পড়তে ইচ্ছে করে না। আব্দুল্লাহ জনির সাথে আলাপ করে বুঝতে পারল সে আরও আগে থেকেই ধর্মে অবিশ্বাস শুরু করেছে কিন্তু তা কোনদিনই আব্দুল্লাহ বা পরিবারের অন্য কারও কাছে সে মুখ ফুটে বলেনি, জনির বর্তমানে বিশ্বাস হল সে সকল ধর্মকেই একধরনের কুসংস্কার মনে করে যদিও সে পূর্বে ভিতরে ভিতরেই শুধু ধর্মের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিল কিন্তু ধর্মে অবিশ্বাসি ছিল না পুরোপুরি কিন্তু জনির বন্ধুদের যে সার্কেল আছে সেই সার্কেলের রবিন নামে একজন বন্ধু আছে যার বাবা বাসদের একজন বড় নেতা এবং নাস্তিক মানুষ সে তার ছেলে রবিনকে ছোটবেলা হতেই নাস্তিক বানিয়েছে এমনি পুরো পরিবারকেও । আর জনির ফ্রেন্ড সার্কেলের মাঝে সেই রবিন প্রায়ই ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরে জনিসহ তাদের প্রায় সকল বন্ধুদেরকেই ধর্ম সম্পর্কে সন্দিহান করে ছারত। বর্তমানে তাদের সেই ফ্রেন্ড সার্কেলের জনিসহ বেশিরভাগই আজ নাস্তিক কেউ কেউ আবার সংশয়বাদী হলেও তাদের সার্কেলে ধার্মীক কেউই নেই, আব্দুল্লাহ বুঝতে পারল তাদের সাথে মেশার ফলেই জনি ধর্মে অবিশ্বাস শুরু করেছে , জনি প্রায় ১ বছর পূর্ব হতে অবিশ্বাসি হয়েছে এরপূর্বে জনি নিজেও রবিনের সাথে ধর্মের পক্ষেই তর্ক করত যদিও সে ধর্মের প্রতি ভিতরে ভিতরে ঠিকই ক্ষিপ্ত ছিল। জনির কাছে এসব কিছু শুনার পর আব্দুল্লাহ জনির সেই বন্ধু রবিনের সাথে দেখা করতে চাইলে জনিও পরের দিনই রবিনের সাথে আব্দুল্লাহকে দেখা করায়। রবিনের সাথে আব্দুল্লাহর অনেক কথা হয় এবং আব্দুল্লার মনে হল রবিনের প্রতিটা কথাতেই যুক্তি ছিল আর বাস্তব সম্মত কথাগুলোই সে বলছিল। এরপর থেকে আব্দুল্লাহও জনির এই ফ্রেন্ড সার্কেলের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় এবং রবিন আব্দুল্লাহকে কয়েকটি বই দেয় পড়ার জন্য তাছারা আরও কয়েকটি বই জনির কাছে পূর্ব হতেই ছিল, এই বইগুলো ছিল ধর্ম-নাস্তিকতা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক। উক্ত বইগুলো আব্দুল্লাহ পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে পড়ত অন্যদিকে ক্লাসে ঐ দুই স্যারও প্রায়ই ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন হিন্টস দিত যাতে করে আব্দুল্লাহর মাথা খুলতে শুরু করে, ঐ বইগুলোর সবগুলোই শেষ করে তারা যখন নবব শ্রেনীতে পদার্পন করল তখন আব্দুল্লাহর ধর্মীয় বিশ্বাস একেবারেই নড়বরে হয়ে গেলেও সে প্রায়ই নিজের মনে মনে এসব নিয়ে গবেষনা করত আর “সকল ধর্মই আসলে মিথ্যা” সর্বদাই এই উপসংহারে পৌছাত ।
(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.