![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একদিন ফরেনসিক মেডিসিনের বিশাল বড় একটা আইটেম পড়ছিলাম । আইটেমের নাম হল “আইডেন্টিফিকেশন” । জীবিত ও মৃত বিভিন্ন লিঙ্গের, গোত্রের, বর্ণের মানুষদের কি কি বৈশিষ্ট্য দেখে আলাদা করা যায় তাই এই আইটেমের আলোচ্য বিষয় । শুনতে আসলে যতটা ইন্টারেস্টিং মনে হলেও এত কিছু একসাথে মনে রাখা খুব বোরিং একটা কাজ । যাই হোক, পড়তে গিয়ে “ভাওয়াল সন্ন্যাসী” সম্পর্কিত খুব ইন্টারেস্টীং একটা টপিকের সন্ধান পেয়ে গেলাম । নেট ঘেটে যা জানতে পারলাম তা একটু সমপাদিত করে কয়েক পর্বে দিয়ে দেয়ার আশা রাখি । পুরোটাই দিতাম, কিন্তু এত বড় লেখা আপনাদের পড়তে ভালো নাও লাগতে পারে তাই পর্বে ভাগ করে দিচ্ছি । তথ্যগুলো উইকিপিডিয়া আর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের “রাজকীয় প্রতারক” প্রবন্ধ থেকে নেয়া হয়েছে ।
রমেন্দ্রনারায়ণ রায় ছিলেন ভাওয়াল এস্টেট এর জমিদার বংশের রাজকুমার। তিন ভাই মিলে তাঁরা এই জমিদারীর দেখাশোনা করতেন। ভাওয়াল এস্টেটে প্রায় ৫৭৯ বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে প্রায় ৫ লাখ প্রজা বাস করতো।
রমেন্দ্রনারায়ণ ছিলেন ভাইদের মধ্য দ্বিতীয় । আজকালকার যুগে “প্লেবয়” বলতে যা বোঝায় তিনি আসলে ঠিক তাই ছিলেন প্রথম জীবনে । তাঁর অধিকাংশ সময় কাটত শিকার করে, আনন্দ-ফুর্তি করে, এবং নারী সংসর্গে থেকে, এমনকি তাঁর বেশ কয়েকজন রক্ষিতাও ছিলো। ফলশ্রুতিতে রমেন্দ্রনারায়ণ ১৯০৫ সালের দিকে যৌন রোগ সিফিলিসে আক্রান্ত হন। ১৯০৯ সালের দিকে তিনি চিকিৎসা করার জন্য দার্জিলিং যান । কিন্তু সেখানেই মে মাসের ৭ তারিখে ২৫ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় । মৃত্যুর কারণ হিসাবে জানা যায় বিলিয়ারি কলিক বা গলব্লাডারে পাথর। দার্জিলিং এ তাঁর শবদেহ দাহ করা হয়, এবং শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান পালিত হয় মে মাসের ১৮ তারিখে।
কিন্তু মে মাসের ৮ তারিখে কি হয়েছিল এবং কার মৃতদেহ দাহ করা হয়েছিল এ নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায় । কোনো কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর মতে ঐ সময়ে হঠাৎ শুরু হওয়া শিলাবৃষ্টি দাহকার্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। ফলে শ্মশানে চিতা প্রজ্জ্বলিত করার ঠিক আগমুহুর্তে দাহকার্য্য স্থগিত হয়ে যায়। শেষকৃত্যে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা শিলাবৃষ্টি হতে বাঁচার জন্য যখন অন্যত্র আশ্রয় নেন, তখন মৃতদেহ গায়েব হয়ে যায়।
কুমার রমেন্দ্রনারায়ণ
কুমার রমেন্দ্রনারায়ণের বিধবা তরুণী স্ত্রী বিভাবতী দেবী তাঁর ভাই সত্যেন ব্যানার্জীর সাথে ঢাকায় চলে যান। পরের দশ বছরের মাঝেই ভাওয়াল এস্টেটের মালিক অন্য দুই ভাইয়ের মৃত্যু ঘটে। ফলে তদানিন্তন ঔপনিবেশিক শাসক ব্রিটিশদের কোর্ট অফ ওয়ার্ড্স কুমারদের বিধবা স্ত্রীদের পক্ষে এই জমিদারীর মালিকানা গ্রহণ করে।
রমেন্দ্রনারায়ণের মৃতদেহ হারিয়ে যাওয়ার গুজব আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে। এও শোনা যেতে থাকে যে, রমেন্দ্রনারায়ণকে জীবিত দেখা গেছে। সারা বাংলায় লোক দিয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। গুজব রটে যে, কুমার রমেন্দ্রনারায়ণ বেঁচে আছেন, এবং সন্ন্যাস ব্রত গ্রহণ করেছেন। রমেন্দ্রনারায়ণের বোন জ্যোতির্ময়ী এই ব্যাপারে খোঁজ করতে শুরু করেন, এবং বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, কুমার রমেন্দ্রনারায়ণ সন্ন্যাসী হিসাবে বেঁচে আছেন।
১৯২০-২১ সালের দিকে একটি নাটকীয় ঘটনা ঘটে ।
১৯২১ সালের জানুয়ারি মাস । ঢাকার বাকল্যাণ্ড বাঁধে এক সাধুর আবির্ভাব হয়। জটাধারী সন্ন্যাসীর সর্বাঙ্গে ছাই মাখা, পরনে কৌপীন । ব্যবসায়ী রূপলাল দাসের অট্টালিকা ঢাকা শহরের এক দ্রষ্টব্যস্থান । আজও হৃত জৌলুসের মলিন স্মৃতি বহন করে সংরক্ষিত ভবন হিসাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে রূপলাল হাউস । সেই রূপবাবুর বাড়ির সামনে স্থান নিলেন সন্ন্যাসী। রোদ-বৃষ্টির মাঝেও তিনি সবসময় সেখানে বসে থাকতেন। তাঁর বেশভূষা-চেহারা ইত্যাদির জন্যই সন্ন্যাসী অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। অনেকদিন পর আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ে একজন যেমন বলেন, ‘‘এমন সুন্দর গৌরবর্ণ, সম্ভ্রান্ত চেহারার জটাধারী সন্ন্যাসী ঢাকায় আগে কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ে না।’’ প্রায়ই সাধুকে ঘিরে ছোটখাটো ভিড় জমে যেত। লোকে তাঁকে নানা প্রশ্ন করত— ‘কোত্থেকে এসেছ? তাবিজটাবিজ দাও নাকি?’ ইত্যাদি। সাধু বিশেষ উত্তর দিতেন না। দিলে উত্তর দিতেন হিন্দিতে। পরে শোনা যায়, সাধু নাকি বলতেন যে, তিনি পঞ্জাবের লোক, ছোটবেলায় ঘরবাড়ি ছেড়ে সন্ন্যাসী হয়েছেন। বাংলার জল-হাওয়া তাঁর একেবারে পছন্দ হচ্ছে না। ওষুধ চাইলে তিনি মাদুলি তাবিজের বদলে তাঁর গায়ের ছাই এক চিমটে তুলে দিতেন। পরের কয়েক দিনে আত্মীয়রা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, এই ব্যক্তিই কুমার রমেন্দ্রনারায়ণ। সাধুর ঢাকায় আসার প্রায় চার মাস বাদে ভাওয়াল রাজপরিবার থেকে প্রথম তাঁকে দেখতে যায় কুমারদের দিদি জ্যোতির্ময়ীর ছেলে বুদ্ধু।
[img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/JADEED_1363803315_1-2011-12-23-16-40-24-4ef4aef877d17-10.jpg
উনিশ শতকের রূপলাল হাউস
জয়দেবপুরের পাশের গ্রাম কাশিমপুরের কয়েকজন ভদ্রলোককে সঙ্গে নিয়ে বুদ্ধু সন্ন্যাসীকে দেখে আসার পরও কিন্তু নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারল না। সন্ন্যাসীর সঙ্গে মেজকুমারের চেহারার মিল ছিল ঠিকই, কিন্তু এই সাধুই যে তাঁর মেজমামা, মৃত্যুর দ্বার থেকে জীবন্ত ফিরে এসেছেন, এমন কথা বুদ্ধু জোর গলায় বলতে পারল না, পারার কথাও নয় । কাশিমপুরের সঙ্গীরা তখন স্থির করলেন যে, সন্ন্যাসীকে একবার সশরীরে জয়দেবপুর নিয়ে আসতে হবে।
১৯২১ সালের ৫ এপ্রিল কাশিমপুরের অতুলপ্রসাদ রায়চৌধুরী সন্ন্যাসীকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে এলেন। অতুলবাবু মেজকুমারকে খুব ভালভাবে চিনতেন। কারণ, ভাওয়াল আর কাশিমপুর, দুই জমিদার বাড়ির মধ্যে বিশেষ ঘনিষ্ঠতাও ছিল। পরে অবশ্য বলা হয় যে, সন্ন্যাসীকে আদৌ ভাওয়ালের মেজকুমার সন্দেহ করে কাশিমপুর নিয়ে যাওয়া হয়নি। নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কারণ, ওই বাড়ির কর্তা সারদাপ্রসাদের কোনও পুত্রসন্তান ছিল না, তাই সন্ন্যাসীকে দিয়ে পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করানোর চেষ্টা হয়েছিল । সন্ন্যাসী যদিও সরাসরি বলে দেন যে, তিনি যজ্ঞটজ্ঞ কিছু জানেন না। তবু প্রায় দিন সাতেক সন্ন্যাসী কাশিমপুরে এক গাছতলায় আশ্রয় নেন। ১২ এপ্রিল বিকেলে সন্ন্যাসীকে হাতির পিঠে চড়িয়ে জয়দেবপুর নিয়ে আসা হয়।
সন্ধে ছটা নাগাদ হাতি সোজা এসে থামল রাজবাড়িতে। সন্ন্যাসী হাতির পিঠ থেকে নেমে ধীরে এগিয়ে গেলেন রাজবাড়ির অতিথিশালা মাধববাড়ির দিকে। সেখানে একটা কামিনী গাছের তলায় গিয়ে বসলেন। কুমারদের তিন বোনই ততদিন রাজবাড়ি ছেড়ে জয়দেবপুরে অন্যত্র বাড়ি করে চলে গেছেন। আশি বছরের বৃদ্ধা রানি সত্যভামাও তখন তাঁর এক নাতনির সঙ্গে ছিলেন। সেইদিন সন্ধ্যাবেলা সন্ন্যাসীকে নিজ চোখে দেখতে আসেন রাজবাড়ির কিছু কর্মচারী আর দূরসম্পর্কের আত্মীয়। তাঁদের একজন— সত্যভামার ভাইপো রাধিকা গোস্বামী— পরে বলেছিলেন যে, তিনি বিশেষ করে কৌপীনধারী সাধুর হাত-পায়ের গড়ন লক্ষ করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ইনি মেজকুমার কি না, নিশ্চিত হতে পারেননি।
পরদিন সকালে ভাওয়াল স্টেটের সেক্রেটারি রায়সাহেব যোগেন্দ্রনাথ আর তাঁর ছোট ভাই সাগর সন্ন্যাসীকে দেখতে এলেন। এঁরা এসে দেখেন সন্ন্যাসী রাজবিলাস নামে বাড়ির দক্ষিণের বারান্দায় বসে আছেন। সাগরবাবু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সন্ন্যাসীকে দেখতে লাগলেন। ‘আমরা ওঁর মুখোমুখি দাঁড়াতে উনি আমাদের দিকে তাকালেন। আমি ওঁর চোখের মণির রং দেখতে পেলাম। চোখ কটা। আমি ওঁর গড়নপেটন, ওঁর বসার, তাকাবার ভঙ্গি, ওঁর চেহারা, খুব ভাল করে লক্ষ করতে লাগলাম। ওঁকে মেজকুমার বলেই সন্দেহ হল। আমি যোগেনবাবুকে যা ভাবছিলাম তা বললাম। উনি বললেন, ব্যাপারটা অত্যন্ত গুরুতর। উনি বললেন হইচই কোরো না। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ওঁকে দেখা যাক। কিছুক্ষণ বাদে বুদ্ধু এসে জানাল যে, তাঁর মা সন্ন্যাসীকে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেছেন। জিজ্ঞাসা করাতে সন্ন্যাসী বললেন যে, তিনি দুপুরে সেখানে যাবেন।’’
সেদিন সন্ধেবেলা জ্যোতির্ময়ীদেবী প্রথম সন্ন্যাসীকে দেখলেন তাঁর বাড়িতে। সন্ন্যাসী কিছুক্ষণ আগেই টমটম চড়ে পৌঁছেছেন। জ্যোতির্ময়ী বারান্দায় বেরিয়ে দেখলেন সন্ন্যাসীকে আসন পেতে বসানো হয়েছে। তাঁকে ঘিরে বসে আছে পরিবারের লোকজন। সন্ন্যাসী মাথা নিচু করে আড়চোখে চারপাশ দেখছিলেন। ‘‘তাই দেখে আমার মেজর কথা মনে পড়ল। ও যেমন ভাবে লোকজনের দিকে তাকাত। আমার বেশ সন্দেহ হল। আমি ভাল করে লক্ষ করতে লাগলাম ওঁর চেহারা, মুখের আদল, চোখ, কান, ঠোঁট, গড়ন, হাত পা।’’ জ্যোতির্ময়ী সন্ন্যাসীকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তিনি কতদিন থাকবেন। সন্ন্যাসী জবাব দিলেন যে, পরদিনই তিনি নাঙ্গলবাঁধ যাবেন ব্রহ্মপুত্র স্নানে। জ্যোতির্ময়ী তাঁকে কিছু ফল আর ক্ষীর খেতে দিলেন। সন্ন্যাসী ক্ষীরটুকু খেলেন। তার পর চলে গেলেন। ‘‘আমি ওঁর চলনটা লক্ষ করলাম। ঠিক যেন মেজকুমারের মতো। ঠিক একই রকম লম্বা। তবে ওকে আরও মোটাসোটা লাগল। সামান্য মোটা।’’ সন্ন্যাসী চলে যাওয়ার পর সবাই তাঁকে নিয়ে আলোচনা করতে লাগল। ঠিক হল, পরদিন তাঁকে নিমন্ত্রণ করে খেতে বলা হবে। তখন দিনের আলোয় তাঁকে ভাল করে পরীক্ষা করে দেখা যাবে ।
পরদিন সকালে সাধুকে রাজবিলাসের বারান্দায় পায়চারি করতে দেখা গেল। এই রাজবিলাস নামে বাড়িটিতেই রাজপরিবারের লোকেরা থাকতেন। সাধু মেজকুমারের ঘরের খড়খড়ি ফাঁক করে ভেতরে উঁকি মেরে দেখলেন। তার পর পাশের স্নানঘরে কল খুলে হাত মুখ ধুলেন। দুপুরে এস্টেটের ঘোড়া গাড়িতে তাঁকে আবার নিয়ে যাওয়া হল জ্যোতির্ময়ীদেবীর বাড়ি। এবার তিনি সোজা বৈঠকখানায় ঢুকে চেয়ার পেতে বসলেন। কুমারদের আর এক দিদি স্বর্গতা ইন্দুময়ীর স্বামী গোবিন্দ মুখুজ্যে সামনে চৌকিতে বসলেন আর সত্যভামা ও জ্যোতির্ময়ীদেবী বসলেন চেয়ারে। জ্যোতির্ময়ী পরে বলেছিলেন, ‘‘সন্ন্যাসী আমার ঠাকুরমাকে হিন্দিতে বললেন চৌকিতে উঠে বসতে। ঠাকুরমা উঠে চৌকির একধারে বসলেন। সন্ন্যাসী তাঁকে ধরে আরও আরাম করে বসতে সাহায্য করলেন। তার পর বললেন, ‘বুড়িকা বড়া দুখ হ্যায়।’’ ‘‘এর পর জ্যোতির্ময়ীর মেয়েদের দিকে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন তাঁরা কে।
ইন্দুময়ীর ছেলেদেরও পরিচয় নিলেন । ‘‘আমার বোনঝি কেনিকে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়ে কৌন হ্যায়?’ আমি বললাম, আমার দিদির মেয়ে । বলতেই সন্ন্যাসী কেঁদে ফেললেন। গাল বেয়ে চোখের জল গড়াতে লাগল। কেনি তখন বিধবা ।’’ ইন্দুময়ীর ছেলে টেবু অ্যালবাম এনে সন্ন্যাসীকে মেজকুমারের ছবি দেখাল। ছবি দেখে তিনি অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। জ্যোতির্ময়ী সাধুকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তিনি তো সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী, তবে কাঁদছেন কেন? সন্ন্যাসী বললেন, ‘হ্যাম মায়াসে রোতা হ্যায়।’ জ্যোতির্ময়ী জিজ্ঞাসা করলেন ‘কীসের মায়া?’ সন্ন্যাসী কোনও উত্তর দিলেন না। এরপর জ্যোতির্ময়ী মেজকুমারের মৃত্যুর গল্প বলতে শুরু করলেন। বললেন সে দার্জিলিংয়ে মারা গিয়েছিল। কিন্তু তাঁর মৃতদেহ সৎকার হয়েছিল কি না তা নিয়ে নানা কথা শোনা যায়। জ্যোতির্ময়ীর কথা শেষ হওয়ার আগেই সন্ন্যাসী বলে উঠলেন, ‘‘না, না, তাঁর দেহ পোড়ানো হয়নি। তিনি জীবিত আছেন।’’ জ্যোতির্ময়ী সোজা সন্ন্যাসীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘আপনার মুখ অবিকল আমার ভাইয়ের মতো, যেন কেটে বসানো। আপনিই কি সে?’’ সন্ন্যাসী বললেন, ‘‘ না, আমি আপনার কেউ হই না।’’
যাই হোক, সন্ন্যাসী সেদিন জ্যোর্তিময়ীর বাড়িতে খেয়ে যেতে রাজি হলেন। ‘‘উনি খাচ্ছিলেন, আমি ওঁকে লক্ষ করছিলাম। দেখলাম প্রতিটি গ্রাস মুখে তোলার সময় ওঁর ডান হাতের তর্জনী কেমন বেরিয়ে থাকে। জিভটাও কেমন একটু বেরিয়ে আসে। ঠিক মেজর মতো। আমি ওঁর মুখের গড়ন, কণ্ঠার ওঠানামা, ভালভাবে লক্ষ করলাম। দেখলাম ওঁর চুল লালচে, চোখ কটা। ওঁর দাঁত দেখলাম অবিকল মেজকুমারের মতো— পরিপাটি সাদা, মুক্তোর মতো। ওঁর হাত আর আঙুলের নখগুলো লক্ষ করলাম, প্রতিটি নখ আলাদা করে দেখার চেষ্টা করলাম। হাতের তেলো দেখলাম। পা, পায়ের পাতা, পায়ের আঙুলগুলো। ছোট্ট থেকে অামরা একসঙ্গে থেকেছি, বড় হয়েছি। ওঁর সারা শরীর— হাত, পা, মুখ, এমনকী চোখের পাতাও, ছাইমাখা। চুল লম্বা, মুখে দাড়ি। মেজো যখন দার্জিলিং যায়, ওর দাড়ি ছিল না। কথা বলছিলেন অস্পষ্ট ভাবে। গলার স্বর একেবারে মেজকুমারের মতো।’’জ্যোতির্ময়ীর সন্দেহ এবার তীব্র হতে লাগল যে, এই সন্ন্যাসী তাঁর ভাই। তিনি চাইছিলেন যে, সন্ন্যাসী আর ক’দিন জয়দেবপুরে থাকুন যাতে তাঁর শরীরের দাগগুলো পরীক্ষা করানো যায়। কিন্তু সন্ন্যাসী ঢাকা ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন, কিছুতেই থাকতে রাজি হলেন না।
(চলবে)
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, "রাজকীয় প্রতারক"-পার্থ চ্যাটার্জী
২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:২২
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: বড় পোস্ট পড়তে অনেকে বিরক্ত বোধ করেন, তাই পর্ব করে দিচ্ছি । পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ । আশা করছি কাল দুপুরের মাঝেই বাকি তথ্যগুলো সাজিয়ে দিয়ে দিতে পারব
২| ২০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১২
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: দ্বিতীয় ভালো লাগা। চমৎকার লাগল জাদীদ ভাই।
আপনার লেখনীটাই এমন যে মনে হলো কোন রহস্য উপন্যাস পড়ছি। নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষাটা এখন অনেক তীব্র এবং দীর্ঘ মনে হচ্ছে।
দ্রুত দিন। সেই প্রতিক্ষায়।
২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:২৮
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: লজ্জায় ফেলে দিলেন, সত্যি বলতে অন্যদের লেখা ইতিহাসই অল্প একটু ঘষে মেজে আপনাদের সামনে দিচ্ছি । যারা জানেনা এই কাহিনী তাদের খুব ভালো লাগবে মনে করেই দেওয়া । যে অর্ডারে তথ্যগুলো দেয়া আছে সেটা পার্থ চ্যাটার্জীর লেখা অনুসারেই করা । আমি ইচ্ছা করলে কাট-ছাট করতে পারতাম । কিন্তু ঘটনাপ্রবাহুগুলো এত চমকপ্রদ যে কিছুই আর বাদ দেয়া সম্ভব হল না । আমাকে "সংকলক" বলতে পারেন
৩| ২০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১৭
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: Opekkhay roilam......
২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:২৯
আহমাদ জাদীদ বলেছেন:
ধন্যবাদ ।
৪| ২০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০১
অ্যামাটার বলেছেন: দারুন! প্ররে পর্বের জন্য অপেক্ষা সইছেনা। তাড়াতাড়ি দেন!
২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৩০
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: কালকে দুপুরের মাঝেই.........
৫| ২০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩২
হাসান মাহবুব বলেছেন: এইটা নিয়া সিনেমা দেখসিলাম একটা মনে পড়ে। পোস্ট চলুক।
২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৩২
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: তাই নাকি? নাম কি সিনেমার??
৬| ২০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩৬
স্বপনবাজ বলেছেন: চমৎকার লাগল জাদীদ ভাই।
২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৩৩
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: ধন্যবাদ
৭| ২০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৪৩
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: পুরাই সিনেমা সিনেমা লাগছে
তারপর!!!!
২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৩৫
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: কাহিনী আসলে সেইরকমই
কালকেই দিব পরের পর্ব । )
৮| ২০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৫২
বাংলার হাসান বলেছেন: আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় রইলাম পরের পর্বের।
২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৩৫
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: ধন্যবাদ
৯| ২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:০২
স্বপ্নবাজ বাউন্ডুলে বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। ২য় পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৩৬
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: ধন্যবাদ
১০| ২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:০৮
সুমন্ত বলেছেন: This is very true story. thanks writer for letting others to know.
২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৩৭
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: থেংকু
১১| ২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:২৭
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন: চমৎকার ।
বড় পোস্ট , পড়তে ইচ্ছে হয় না । তারপরেও পড়লাম । সার্থক হয়েছে পড়া ।
চালিয়ে যান
২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৩৮
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: ইনশাল্লাহ চলবে
১২| ২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:০৭
আমি হয়ত নতুন কেউ নই বলেছেন: ইন্টারেস্টিং
২৮ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: আসলেই.........
২৮ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫২
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: থ্যাঙ্কস ফর কমেন্ট ।
১৪| ২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৫৯
সানড্যান্স বলেছেন: চলুক!!!
যাইহোক, ভাইবাতেও ফেইল হইছে নাকি আজকে?
২৮ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৩
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: কেমনে কই?
১৫| ২১ শে মার্চ, ২০১৩ ভোর ৫:৪৩
শের শায়রী বলেছেন: চমৎকার লাগলো মাস দুয়েক আগে আমি ভাওয়াল সান্ন্যাসী কে নিয়ে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম।
ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম
২৮ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৪
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: আপনাকেও থ্যাঙ্কস । আপনার পোস্টটা মনে হয় পড়েছি ।
১৬| ২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৫৭
জাকারিয়া মুবিন বলেছেন: ভাল লাগল। চলুক।
২৮ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৫
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: দিলাম শেষটা
১৭| ২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১০
ধুম্রজ্বাল বলেছেন: আপনি ভাইজান হিন্দি সিরিয়ালের নমুনা দিছ্ছেন নাকি?
চলবে মানে কি ?
তাড়াতাড়ি চালান।
২৮ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৫
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: আসলে ভাই আমি একটু এনগেজ আছি পরিক্ষার কারণে...। তাই এখানে কম আসা হচ্ছে ।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫৪
বিষণ্ণ বালক বলেছেন: কি মুশকিল ! "(চলবে)" মানে? এইভাবে মানুষকে টেনশনে রাখা কি ঠিক? দারুন লিখেছেন। আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করব।