![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুবই সাধারণ একজন মানুষ যে দেখতে চায় পরিবর্তিত সমাজ যেখানে ঘটবে আত্মিক, নৈতিক ও মানবিক পুনর্জাগরণ।
রক্ত! নামটা শুনলেই স্মৃতি বয়ে নিয়ে যায় ইতিহাসের সেই তান্ডব লীলা খেলায়। গ্লাডিয়েটর, স্পার্টাকাস, আরও নাম না জানা কত বিভৎস চলচিত্রের লিখিত স্ক্রিপ্টের কাল্পনিক যুদ্ধক্ষেত্রে। চলচিত্রগুলোতে কাল্পনিকতার ছাপ থাকলেও তৎকালীন আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে গ্লাডিয়েটরদেরকে তৈরী করা হতো ব্যাবসায়িক দৃষ্টিকোন থেকে। বর্তমান ক্রিকেট বা ফুটবল খেলায় দর্শক সমাগোমের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় যেমন বিনোদন চিত্র ঠিক তেমনি তৎকালীন গ্লাডিয়েটরদেরকে দিয়ে রক্তপাতের মাধ্যেমে ফুটিয়ে তোলা হতো বিভৎস বিনোদন যেখানে না্রী, পুরুষ, কিশোর, কিশোরী অথাৎ সর্বস্তরের মানুষেরা অংশ নিতো। খুবই অবাক হতে হয়, সেখা্নে মায়েরা তাদের শিশু বয়সের সন্তা্নদেরকে কোলে নিয়ে দুর্বার আকর্ষনে মত্ত হয়ে রক্তলীলা নামক বিনোদনে হাজির হয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতো, পছন্দনীয় গ্লাডিয়েটরকে উৎসাহ দিতো তার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে মস্তক ছিন্ন করতে। এটাই ছিল নাকি তৎকালীন রোমান সভ্যতা! ধিক্কার জানাই সেই সব মানুষকে। মানুষ ভাবতেও কষ্ট হয় তাদের। আসলে মানুষ তো সেই যে বিশ্বজনীন মমতাকে নিজের বুকে ধারন করে অন্যকে বাঁচানোর তাগিদে নিজের রক্ত হাসি মখে বিলিয়ে দেয়। আশরাফুল মাকলুকাত হয়ে সৃষ্টির সেবা করতে পেরে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানায়। মানুষ হয়ে মানুষের প্রতি এইরূপ নির্দয় চিত্র যেমন আদিকাল থেকে ছিল, ঠিক তেমনি মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা ছিল পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই।
মানুষকে রক্তদানের মাধ্যমে বাঁচানোর চেষ্টা কিন্তু আজ থেকে শুরু হয়নি। প্রথম ১৬১৬ সালে ইংরেজ চিকিৎসক ডা. উইলিয়াম হার্ভের গবেষণার মাধ্যমে মানুষ প্রথম জানতে পারে যে মানবদেহের অভ্যন্তরে রক্ত প্রবাহিত হয়। কাল পরিক্রমায় আমাদের ভারত উপমহাদেশে ১৯২৫ সালে কোনো ধরনের সংরক্ষণের ব্যবস্থা নয় বরং শুধুমাত্র একজন রক্তদাতার দেহ থেকে একটি সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করে রক্তগ্রহীতার দেহে পরিসঞ্চালনের ব্যবস্থা নিয়ে ইম্পিরিয়াল সেরোলজিস্টরা কলকাতার ট্রপিকেল মেডিসিন স্কুলে একটি রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র শুরু করে। আর আমাদের সোনার বাংলায় সেচ্ছা রক্তদান বিচ্ছিন্নভাবে অনেকেই শুরু করলেও ১৯৯৬ সালে কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম শুরু হয় সুগঠিতভাবে। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নিজস্ব ল্যাব। ২০০৩ সালে সংযোজিত হয় রক্তের কম্পোনেন্ট সেপারেটর (সেন্ট্রিফিউজ মেশিন), স্ক্রিনিংয়ের জন্যে আধুনিক এলাইজা মেশিন, -৯০ ও -৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ডিপফ্রিজ এবং প্লাটিলেট সংরক্ষণের জন্যে প্লাটিলেট ইনকিউবেটর। ২০০০ সালে ল্যাবের কার্যক্রম শুরু করার পর যেখানে প্রথম বছরে রক্ত সরবরাহ করা হয়েছিলো ১,৫৬৪ ইউনিট সেখানে ২০১০ সালে ল্যাব থেকে প্রতিমাসে গড় সরবরাহকৃত রক্ত ও রক্ত উপাদান ৫৫০০ ইউনিটেরও বেশি।
অথচ আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে চার লক্ষ ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন।
আপনি কি জানেন, প্রতি বছর আমাদের দেশে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যত সু্স্থ সমর্থ মানুষ আছেন, তারা যদি শুধু জন্মদিনেই রক্ত দেন, তাহলেই আমাদের দেশের পুরো রক্তের চাহিদা স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। তাই আপনার প্রতিটি জন্মদিন বরণ করুন রক্তদান করে। পৃথিবীতে আপনার আগমনের এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখুন আরো ৪ টি প্রাণ বাঁচানোর মাধ্যমে। নিজ পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের উদ্বুদ্ধ করুন রক্তদানের মাধ্যমে আপনার শুভ জন্মদিনকে উদযাপন করতে।
©somewhere in net ltd.