নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীকে যেমন দেখার প্রত্যাশা করি, সে প্রত্যাশার আগে নিজেকে তেমন গড়তে চাই। বিশ্বাস ও কর্মে মিল স্থাপন করতে আজীবন যুদ্ধ করতে চাই নিজের সাথেই।

হিমন

ভিন্নমত সহ্য করতে পারা এক বিরাট গুণ। সকল ভিন্নমত উদার দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টায় আছি।

হিমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গীয় মোল্লা আর চৈনিক ভাইরাস

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:০১

গত সত্তুর হাজার বছরের মানবেতিহাসে মানুষের প্রধান শত্রু ছিল তিনটি। গত একশ বছর আগে পর্যন্তও সেই শত্রুরা এক এক করে হানা দিয়েছে আর মানবের ইতিহাসের গতি-প্রকৃতি নাড়িয়ে দিয়েছ। সেই তিনটি শত্রুর নাম যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ আর মহামারী সংক্রামক রোগ।

১৬৯২-১৬৯৪ সালের দুই বছরে ফ্রান্সে না খেয়ে মারা যায় আটাশ লাখ মানুষ যা ওই সময়ে মোট জনসংখ্যার পনেরভাগ। এর দুই বছর পর ফিনল্যান্ডে মারা যায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ। কাছাকাছি সময়ে স্কটল্যান্ডে মারা যায় বিশ শতাংশ মানুষ। শুধুমাত্র বিজ্ঞানের কল্যাণে দুর্ভিক্ষ আজ ইতিহাসের পাতায়। এখন আর না খেয়ে কেউ মরে না, বরং বেশি খেয়ে মরে। ২০১৪ সালে মোটা মানুষের সংখ্যা ছিল দুইশ দশকোটি, আর ওদিকে পুষ্টিহীনতায় ভুগেছে মাত্র পঁচাশিকোটি। ২০৩০ সালের মাঝে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ প্রয়োজনাতিরিক্ত ওজন সমস্যায় ভুগবে। ২০১০ সালে দুর্ভিক্ষ আর পুষ্টিহীনতা এই দুইয়ে মিলে দশলাখ মানুষ মেরেছে, অপরদিকে স্থূলতা একাই বিনাশ করেছে তিনকোটি মানুষের জীবন।

দুর্ভিক্ষের পরেই দুই নম্বরে আছে সংক্রামক রোগ। ১৩৩০ এর দিকে প্লেগ নামক এক মহামারীর সাথে মানবজাতির পরিচয় ঘটে, পূর্ব অথবা মধ্য এশিয়া হতে যার সূচনা। ইরসিনিয়া পেস্টিস(Yersinia pestis) নামের ভাইরাস হতে এর তীব্রতা এত ব্যাপক ছিল যে মানুষ এর নাম দিয়েছিল কালো মৃত্যু(Black Death)। ১৫২০ সালের মার্চ মাসের পাঁচ তারিখে ৯০০ সৈন্য, কিছু ঘোড়া আর আফ্রিকান দাস নিয়ে স্প্যানিশ জাহাজ প্রথমবারের মতো মেক্সিকোতে পা রাখে। দাসদের মাঝে একজনের নাম ছিল ফ্রানসিস্কো। সে নিজেও জানতো না তাঁর রক্তকণিকায় রয়েছে পক্সের (বসন্ত) জীবাণু। দিনে দিনে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। মেক্সিকোর জনসংখ্যা তখন দুই কোটি বাইশ লাখ। মাত্র নয় মাসের মাথায় মারা যায় এক কোটি চল্লিশ লাখ মানুষ। সেকালে ওদেশের মানুষ মনে করতো তিনজন দুষ্ট দেবতা, একপেটয, উজাঙ্কাক আর সোজাকাক মিলে উড়ে উড়ে জনপদে ঘুরে ঘুরে তাদের কালো জাদু দ্বারা মানুষের মাঝে এই রোগ বিলিয়ে দেয়। যেহেতু এই মহামারী দেবতার দান, তাই তাদের ধারণা এর থেকে মুক্তি সম্ভব নয়। ফলশ্রুতিতে ষাট বছরের মাথায় ১৫৮০ সালে মেক্সিকোতে বেঁচে ছিল বিশ লাখেরও কম মানুষ। মধ্যযুগে বৃটেনে প্রতি দশনের চারজন প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে যেতে তিনকোটি সত্তুরলাখ হতে বেঁচে ছিল দুইকোটি বিশলাখ। ইতালির ফ্লোরেন্সে এক লাখ অধিবাসীর মাঝে অর্ধেকেরই প্রাণপাত হয়েছিল প্লেগের জীবাণুতে। 

এর প্রায় দুইশ বছর পর ১৭৭৮ সালে ব্রিটিশরা হাওয়াই দীপপুঞ্জে যায় যক্ষ্মা আর সিফিলিস নিয়ে। তখন ওখানে জনসংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ। ১৮৫৩ সালে সেখানে বেঁচে ছিল মাত্র সত্তুরহাজার মানুষ। আজ হতে মাত্র আটানব্বই বছর আগে ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লুতে মারা যায় পাঁচ থেকে দশকোটি মানুষ, যেখানে সদ্যসমাপ্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারা যায় চারকোটি।





বিজ্ঞান যতদিন পর্যন্ত এই মানববিনাশি মহামারীর বিহীত করতে পারেনি ততদিন পর্যন্ত মুর্খ ধর্মান্ধ বর্বর মানুষেরা মনে করত এসবকিছু মানুষের পাপের ফল হিসেবে সৃষ্টিকর্তা দিয়ে থাকে। তাদের ধারনা মানুষ পাপের পথ হতে ফিরলেই কেবল এ থেকে মুক্তি মিলবে। তৎকালীন যুদ্ধবাজ ক্ষমতালোভী শাসক, প্রভাবশালী খ্রিষ্টান মোল্লা আর রাজবৈদ্যরা মিলে এই রোগগুলো হতে মুক্তির নানা আয়োজন করতো। সেটি ছিল বড়জোর গীর্জায় গীর্জায় উপাসনার আয়োজন। বলা বাহুল্য, উপাসনা ফলদায়ক হয়নি।

গত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ ছিল বিজ্ঞান মানবজাতিকে এই মহামারী হতে মুক্তি দিয়েছে নানাপ্রকার এন্টিবায়োটিক, ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করে। উদাহরণস্বরূপ, গুটি বসন্তের চিকিৎসা এতই সাফল্য পায় যে, ১৯৭৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করে, মানবজাতির জয় হয়েছে কারণ বসন্তরোগ সম্পূর্ণ নির্বাপিত হয়েছে।



উপরের তথ্যগুলো আমি পেয়েছি বর্তমান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ্য ইতিহাসবিদ ও দার্শনিক, হিব্রু ইউনিভার্সিটি অব জেরুজালেমের প্রফেসর ইউভাল নোয়াহ হারারির "হোমো ডিউসঃ আগামীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস” (Homo Deus: A Brief History of Tomorrow) বই থেকে। 

ইতিহাসবিদ হারারি হাজার হাজার বছরের দুর্যোগসমুহ আরো বিস্তারিত নানাদিক দিয়ে বিশ্লেষণ করে বলেছেন, কোন এক জাদুর বলে মধ্যযুগ হতে যদি ওই মোল্লা-পুরোহিতদের এই একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনে দেখানো যেত যে, তাদের দেখা জীবনঘাতী সকল রোগশোককে মানুষ পরাজিত করেছে, তাহলে তারা হাঁ করে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলত, “মানুষ কি তবে পাপ করা বন্ধ করে দিয়েছে!"



হারিরি মধ্যযুগ হতে ওদের ফিরিয়ে আনতে পারেনি। কিন্তু ওরা ফিরে এসেছে বঙ্গীয় ব-দ্বীপের বাংলাদেশে। বিশ্বাস না হলে ইউটিউব খুলে দেখুন। স্বাস্থ্যকর রকেটে পাড়াবেড়ানো, কাজী নজরুলকে নিয়ে স্বপ্নদোষে দুষ্ট, চাঁদ থেকে আজান শুনতে পাওয়া, মাটির নিচ থেকে গোরের সাজার শব্ধ শুনতে পাওয়া মোল্লারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ওসব আবর্জনার মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ। বহুমানুষের সুশ্রী সুললিত কারুকার্যময় বঙ্কীমীয় ঢংয়ে ওসব ভিডিওর নিচে কমেন্টের বন্যা। কিছু কমেন্ট এমনঃ আল্লাহ তুমি তোমার এই কোরআনের পাখিটাকে হেফাজতে রাইখো, মমতাজ মাগীকে চীনে পাঠানোর জন্য জননেত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাই, এতদিনে একটা বক্তার মত বক্তা পেলাম, এই ২০২০ সালেও কে কে শুনছেন তারা লাইক দিন, কে কে কোরানের এই পাখিকে স্বপ্নে দেখেন তারা আমিন না বলে যাবেন না...।



মহান সৃষ্টিকর্তা আর পবিত্র কোরআনের স্বঘোষিত এই কলির বামুনেরা চীনের সম্প্রতি করোনা ভাইরাস নিয়ে যে অশ্লীল জঘণ্য কুরুচিপূর্ণ উল্লাসে মেতে উঠেছে তাতে সেই পুরনো কথাই বলতে হয়। বাংলাদেশের মুমিনেরা সত্যবাদী, নীতিবাদী শুভবাদী হয়ে উঠতে আজও নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েই রইল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশে যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে, জেলহত্যার আসামী যারা, পঁচাত্তুরের রক্তাক্ত ঘটনায় যারা জড়িত, একুশে আগস্টে যারা গ্রেনেড মেরেছে, মুক্তমনা কবি সাহিত্যিক, লেখকদের যারা খুন করেছে তাদের প্রতি অত্যন্ত বেদনাদায়কভাবে এই বঙ্গীয় ইসলামবাদীদের সবসময় কঠিন প্রেম লক্ষ করা যায়। প্রশ্ন হল, তবে কি ইসলাম আমাদের নিষ্ঠুর নীতিহীন হতেই শিক্ষা দেয়, নাকি বাংলাদেশের মুসলিম সমাজ ইসলামকে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না?


ধন্যবাদান্তে
জাহিদ কবীর হিমন
বার্লিন থেকে
০২.০২.২০২০

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:২৮

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: সেই তিনটি শত্রুর নাম যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ আর মহামারী সংক্রামক রোগ।
................................................................................................
মানব সভ্যতার অকল্যান ঘটে , যখন আমাদের বুদ্ধি আর জ্ঞান লোপ পায় ।

২| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:৫৩

ইমরান আশফাক বলেছেন: সুন্দর ও তথ্যপূর্ন একটি পোষ্ট পেলাম আপনার কাছ থেকে, ধন্যবাদ।

৩| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২২

রাজীব নুর বলেছেন: জীবন ক্ষয় হয়। অক্ষয় রয়।
আসেন গান করি। নাচ করি। পান করি। প্রেম করি। আনন্দ করি।
জীবন সুন্দর।আসেন উদযাপন করি।
জয়গুরু।

৪| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৪১

রানার ব্লগ বলেছেন: আমার ভাষ্য মোতাবেক ধর্ম কে প্রশ্নবিদ্ধ এই সব ভণ্ডরা করে।

৫| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:০৩

একাল-সেকাল বলেছেন: ভণ্ড দেরকে ধর্মের ঠিকাদার ভেবে আমরাই ভুল করি। চোরের ধর্ম চুরি করা, আমাদের কেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৬| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:০৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: নিপাত যাক মোল্লাবাজি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.