![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
- দোস্ত, মারা যাব।
- কেন? কি হইসে?
- খুন হব।
- মানে? কে খুন করবে তোকে?
- জাকারিয়া শামস।
নামটা বলে আপনমনে হেসে উঠল রাকিব। এই নাম কোনোদিন সে শুনেছে বলে মনে পরে না। কিন্তু হুট করে এই নামটা মাথায় চলে আসল। এভাবে চট করে বানিয়ে কিছু বলে দেয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে তার। মুহূর্তের ভেতর পুরো গল্প বানিয়ে ফেলতে পারে সে। কোন রকম ইতস্তত করা ছাড়াই সোজা মুখে চাপা মারে বলে তার কথা সবাই বিশ্বাস করতেও বাধ্য হয়। তাছাড়া সে কিছু পন্থাও ফলো করে। যেকোনো চাপায় ডিটেইলসের দিকে বেশি জোর দেয়। কোন চাপা দীর্ঘক্ষণ চালাতে চাইলে টা নিজের মাথাতেও মেমরি হিসেবে জমা করে ফেলে। নয়ত দ্বিতীয়বার বলতে গেলেই গল্পের খেই হারিয়ে যাবে। শ্রোতারা আর বিশ্বাস করবে না।
- জাকারিয়া শামস? এটা আবার কে?
- জানি না।
- মানে কি? তাইলে খুন করবে কেন?
- তাও তো জানি না। কিন্তু তাই তো দেখলাম।
- দেখলি মানে? কই দেখলি?
- স্বপ্নে। না ঠিক স্বপ্নে না, জেগেই ছিলাম। গতকাল রাত জেগে অ্যাসাইনমেন্ট করছিলাম। হুট করে চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে গেল। তারপর দেখলাম একটা ছোট ঘরে বসে আছি। সব দেখতে পাচ্ছি কিন্তু কোন নাড়াচাড়া করতে পারছি না। ঘরটিতে একটি ৬০ ওয়াটের হলুদ বাল্ব জ্বলছে। একটা ফ্যান কিচকিচ শব্দ করে ঘুরছে। দেয়ালে একটা পুরান ক্যালেণ্ডার। একটা ময়লা দরজা, দরজার পিছনে একটা ওয়ার্ল্ডকাপের ফিক্সচার টেপ দিয়ে লাগান। দরজাটা তখন খুলে গেল। মুখে নীল রুমাল বাধা একটা লোক এসে ঢুকল। লোকটার হাতে একটা তলোয়ার বা রামদা জাতীয় কিছু। আস্তে আস্তে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। লোকটার গায়ে একটা চেক শার্ট। গলা থেকে একটা আইডি কার্ড ঝুলছে। আইডি কার্ডে মুখ ঠিকমত বোঝা জাচ্ছে না কিন্তু নামটা দেখলাম জাকারিয়া শামস। লোকটা আস্তে আস্তে তার তলোয়ার তুলে আমার দিকে দ্রুত নামিয়ে আনল। তখনি ঘোর কেটে গেল। দেখলাম ঘেমে জবজবে হয়ে বসে আছি।
- কি কস এইসব? আসলেই দেখসস?
- হুম, আসলেই দোস্ত। দেখার পর থেকেই কেমন জানি লাগছে।
- আরে রাত জাইগা কাজ করতেসিলি, টায়ার্ড ছিলি, তাই উল্টাপাল্টা দেখসস।
- আমারও তাই ধারণা। কিন্তু এত স্পষ্ট দেখলাম, মাথা থেকে ঝাড়তে পারছিনা ব্যাপারটা।
- তলোয়ার দিয়া মারল দেখসস? তাইলে কি জঙ্গি নাকি? কিন্তু তোকে মারবে কেন? অই যে স্ট্যাটাসটা দিসিলি ধর্ম নিয়া এই জন্য?
- কিছুই তো বুঝতেসিনা।
এমন সময় নিবিড়ের ফোন বেজে উঠল। ফোন দেখে বলল,
- দোস্ত আমার তো এখন যাওয়া লাগবে, তুই কিন্তু সাবধানে থাকিস, উল্টাপাল্টাই দেখসস মনে হয়, তাও কিছু বলা যায় না।
নিবিড় উঠে চলে গেল। নিবিড় চলে যাওয়ার পরে আর হাসি আটকিয়ে রাখতে পারল না রাকিব। কাহিনীটা বলার সময় সে প্রস্তুত ছিল নিবিড় যেকোনো মুহূর্তে হেসে দিবে। বেশিই আজগুবি হয়ে যাচ্ছিল কাহিনীটা। কিন্তু নিবিড় ছেলেটা দেখা যাচ্ছে ভালই সহজ সরল। যাই হোক এটা নিয়ে নিবিড়ের সাথে আরও কিছুদিন মজা নেয়া যাবে এই ভেবে গল্পটা মাথায় জমা করে রাখল রাকিব।
সেদিন রাতে ফেসবুকে চ্যাটিং করছিল রাকিব। হঠাৎ নিবিড় নক দিল,
- অই দোস্ত আসস?
- আসি, বল।
- দোস্ত ফেসবুকে সার্চ দিসিলাম জাকারিয়া শামস লেইখা, দুইটা প্রোফাইল পাইসি। তার একটার শেয়ায় টেয়ার দেইখা তো মনে হইতেসে একটু জঙ্গি ঘেঁষা।
- তাই নাকি, কি বলস?
- হুম আসলেই, দাঁড়া লিঙ্ক দেই তোকে, ছবি-টবি দেখা যাইতেসে না প্রাইভেসি দেয়া মনে হয়। কিন্তু শেয়ার গুলা দেখা যাইতেসে।
- দোস্ত, আমার তো ভয় লাগছে।
- আরে না না, ভয়ের কি আসে? এমনিই কোইন্সিড্যান্স হয়ত। ভয়ের কিছু নাই। সিটির পরা পরসস?
নিবিড় হয়ত বুঝতে পারল এইভাবে বলাটা ঠিক হয় নাই, রাকিব ভয় পেয়ে যেতে পারে। তাই দ্রুত প্রসঙ্গ বদলাল। ছেলেটা বেশ ভালই, মনে মনে ভাবল রাকিব।
পরদিন রাতে আবার নক দিল নিবিড়।
- দোস্ত, অই জাকারিয়া শামস কে তো চিনি, আমাদের এলাকাতেই থাকে।
- তাই নাকি?
- আরে হ্যাঁ। কালকে পরে কি মনে করে জানি অ্যাড দিয়া দিসিলাম। আজকে দেখি রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করসে। ছবি দেইখা দেখি একে তো ডেইলি দেখি আমাদের এদিকে। তুই ছবি দেখলে চিনতে পারবি?
- মুখ তো দেখি নাই। মুখে নীল রুমাল বাধা ছিল।
- ও হ্যাঁ। দাঁড়া তাও ছবি দেই দেখ এমনিতে চিনস নাকি।
ছবি পাঠাল নিবিড়। দাড়িওয়ালা মধ্যবয়স্ক এক লোক। কল্পনায় জাকারিয়া শামস এর যেরকম আকৃতি দাড় করিয়েছিল রাকিব সেরকমই, মুখের গড়নও মনে হচ্ছে একইরকম। কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হল রাকিবের। নিবিড়কে লিখল,
- এরকমই দেখসিলাম মনে হইতেসে।
- তাই নাকি? দোস্ত, এই লোককে দেইখা কিন্তু আমার কখনই ভাল মনে হয় না। রাত একটা দুইটায় বাসায় যায়। আমি তখন বারান্দায় থাকি, ডেইলি দেখি।
- ভয় লাগতেসে তো দোস্ত।
- পুলিশকে জানাবি?
- কি বলব পুলিশকে? আমি স্বপ্নে দেখসি? বিশ্বাস কি আর করবে?
- তাও ঠিক। দোস্ত এইদিকে তুই যে টিউশনিটা করস অইটা কি ছেড়ে দিবি, এইদিকে কয়দিন না আসলি।
- ছাড়তে তো পারব না মনে হয়। দেখি শুধু শুধুই ভয় পাচ্ছি হয়তো। কিছুই হবে না।
- ওইটাই, ভয় পাইস না। কিছুই হবে না। সবি কোইন্সিড্যান্স।
- হুম, এখন কাজের কথা বল, রাত একটা দুইটায় তুই বারান্দায় কি করস? :v :v
- না না কিছু না। :3
তারপর আর এই বিষয়ে কথা হয়নি কয়দিন। হঠাৎ একদিন ক্লাসে নিবিড় রাকিবের কাছে এসে বলল,
- কালকে তো এক কাহিনী হইসে।
- কি?
- আরে বাসায় যাইতেসি। গেটের সামনে দেখি বাবা অই লোকের সাথে কথা বলতেসে।
- কোন লোক?
- অই যে জাকারিয়া শামস। আমাকে দেইখা বাবা আবার আমার সাথে পরিচয় করায় দিসে।
- আঙ্কেল চিনে কেমনে?
- বাজারে টাজারে নাকি দেখা হয়, আমাদের কয়েকটা বাড়ি পরেই গলিতে থাকে। অই যে মসজিদের পাশ দিয়া যে গলিটা ঢুকসে, ওইটাতে। দোস্ত, টিউশনিতে গেলে অই গলিটা এভয়েড করিস। ওইটা কিন্তু কানা গলি। রাতে অনেক নির্জন থাকে গলিটা।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
স্যার চলে আসায় আর কথা হয়নি তখন। সেদিন বিকালে নিবিড়ের সাথেই ওদের ওদিকে যাচ্ছিল রাকিব। টিউশনি আছে ওইদিকে। জাকারিয়া শামস বিষয়েই কথা হচ্ছিল। ফেসবুক থেকে মোটামুটি অনেক তথ্যই সংগ্রহ করেছে নিবিড়। সেইসবই বলছিল। হঠাৎ চমকে উঠল নিবিড়,
- আরে অইতো।
- কি?
- লোকটা।
রাকিব তাকিয়ে দেখল জাকারিয়া শামস হেঁটে আসছে। হাঁটার ভঙ্গিটা দরজা খুলে অই লোকটা যেভাবে হেঁটে এসেছিল সেরকমই মনে হল। নিবিড়কে দেখে জিজ্ঞেস করল,
- কি ভাল আছ?
- এই তো আছি আঙ্কেল।
নিবিড়ের কণ্ঠে নার্ভাসনেস স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। লোকটা কিছু সন্দেহ করবে না তো, ভাবল রাকিব।
- এ কে? তোমার বন্ধু নাকি?
- জী আঙ্কেল।
- ভাল, ভাল।
এই বলে চলে যেতে লাগল জাকারিয়া শামস। নিবিড় রাকিবের দিকে তাকিয়ে বলল,
- আজকে করবি টিউশনি? আজকে বরং চলে যা।
- হুম চলেই যাই, আমারও ভাল লাগতেসে না।
- হুম, আর পারলে বাদ দিয়ে দে টিউশনি টা।
- আচ্ছা দেখি। যাই তাইলে।
- সাবধানে যাইস।
মনের মধ্যে কেমন যেন অস্থিরতা নিয়ে চলে গেল রাকিব। টিউশনিটা কি আসলেই ছেড়ে দিবে, ভাবল রাকিব। দেখি আর কয়দিন যাই, মনে মনে স্থির করল রাকিব।
পরদিন সন্ধ্যায় টিউশনিটায় যাচ্ছে রাকিব। আজকে একাই সাথে কেউ নেই। হঠাৎ দেখল হেঁটে আসছে জাকারিয়া শামস। হেঁটে আসতে আসতে একটা হাঁচি দিল লোকটা। পকেট থেকে একটা রুমাল বের করল নাক মুছার জন্য। রুমালটা দেখে থমকে দাঁড়াল রাকিব। এতাই কি সেই নীল রুমালটা না? যেটা সে দেখেছিল। তার সামনে এসে পরেছে লোকটা, তার দিকে একবার তাকাল, চিনতে পেরেছে বলে মনে হল না, কিন্তু চোখগুলো ভয়াবহ স্থির। তাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল লোকটা। কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থেকে আবার ধীরে ধীরে হাঁটা শুরু করল রাকিব।
রাত ১টা বেজে ৫। মসজিদের পাশে অই কানা গলিটার মাথায় দাঁড়িয়ে আছে রাকিব। আজ টিউশনির পর আর বাসায় যায়নি। আসে পাশেই ঘোরাঘুরি করেছে কিছুক্ষণ। একটা প্রয়োজনীয় জিনিস কিনেছে দোকান থেকে। তারপর রাত ১২টার দিক থেকে দাঁড়িয়ে আছে এখানে। প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে, আজকে চলে যাবে ভাবছিল, ঠিক তখনি দেখল জাকারিয়া শামস হেঁটে আসছে। যেদিক দিয়ে আসছে টার উলটো দিকে কিছুদূর গিয়ে দাঁড়াল রাকিব। লোকটা গলিতে ঢুকতেই সেও রওনা দিল গলির দিকে। গলিটা একদম নির্জন। শুধু লোকটা এগিয়ে যাচ্ছে। লোকটার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল রাকিব। ব্যাগ থেকে কয়েক ঘণ্টা আগে কেনা ধারাল ছুরি টা বের করে হাতে নিল। লোকটার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। লোকটার গায়ে ছুরি চালাবে রাকিব, লোকটাকে শেষ করে দিতে হবে, নয়ত লোকটা ওকে মেরে ফেলবে।
©somewhere in net ltd.