নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাহিত্যিক, সংগঠক, প্রযুক্তিবিদ
- জসিম উদ্দিন জয়
পশ্চিমা ঝড় বাতাস বইছে। সেই বাতাসের ঝাপটাতে কেউ কেউ নিজেকে ডুবিয়ে রাখছে। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসের উত্তপ্ত রোদ। মাঠ- ঘাট ঘরের চাল উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কেথাও বৃষ্টির ছোয়া নাই। শেষ কবে কোথায় বৃষ্টি হয়েছিলো কেউ বলতে পারবে না। পাশেই একটি খাল। সেই খালে সামন্যতম পানি রয়েছে। সেই অর্ধমৃত খালটি থেকে কলসি ভরে পানি এনে ফসলি জমিতে ছিটিয়ে দিচ্ছে সোনিয়া । রোজ রোজ মানুষের জমিতে কলসি ভরে পানি ছিটানোই সোনিয়ার কাজ। প্রতি কলসি পানির জন্য ৩(তিন) টাকা করে পায়। তার কর্মের চঞ্চলতা প্রখর রৌদ্রের প্রখরতাকে হার মানায়। কখনো টিউবওয়েল থেকে কলসি ভর্তি করে পানি নিয়ে যায় রহমত ও করিমের চায়ের দোকানে। প্রতি কলসি পানির জন্য ৫ টাকা করে পায়। এভাবে বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে প্রতিদিন মোটামুটি ৮০-৯০ টাকা মতো রোজগার করে। করিমের চায়ের দোকানে কলসি করে পানি দিতে যেয়ে সেদিন মাটির কলসটি ভেঙ্গে ফেলেছিলো। দোকানের উপরে ঝুলানো তকতার সাথে বারি খেয়ে মাটির কলসিটা ভেঙ্গে যায়। সমস্ত কলসির পানিতে সোনিয়ার শরীর ভিজে চুব চুবে হয়ে যায়। একটি মাত্র শাড়ীর আচল দিয়ে গুটিশুটি করে বেঁধে তার সমস্ত শড়ীর ডেকে রাখতো । কেননা তার শরীরের সাথে জড়িয়ে থাকে ব্লাউজটা ছিলো ছ্যেড়া । পানি ঝাপটায় যখন সমস্ত শরীর এর যৌবন ভেসে উঠে। করিমের চায়ের দোকানে বসে পান চিবুচ্ছিলো বকরউদ্দিন মেম্বার । তার গায়ে সামন্য পানির ছিটা পরতেই সে দাঁড়িয়ে পরে। সোনীয়াকে বকাঝকা করে এবং কু-দৃষ্টি দিয়ে সোনীয়ার সমস্ত শরীর তল্ল্যাসি করতে থাকে। চা-পানের মতো সোনীয়র সমস্ত যৌবনের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গিলতে থাকে। সোনীয়া ভয়ে ঝড়সর হয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্ঠা করতেই সোনীয়ার হাত ধরে ফেলে বকরউদ্দিন মেম্বার। নাদুস নুদুস কন্ঠে বলতে থাকে,‘‘ কই যাও, সোনীয়া বেগম, না বুইজ্জা বকাঝকা করছি, কিছু মনে কইরো না, আমি তোমারে খুব ভালা জানি।, ‘‘তোমার জামাইডা তো একটা বাদাইম্মা, আউল -বাউল, খালি গাও গোরামে ঘুরে আর গান করে। তুমি কিছু মনে কইরো না এই নাও, বলেই ১০০ টাকার একটা নোট গুজে দেয় সোনীয়ার হাতে। তারপর হাতখানি ছেরে দেয়। সোনীয়া খানিকটা দূরে সরে যেয়ে দাড়িঁয়ে ভয়ে কাঁপতে থাকে। তখনও মোম্বার বলে যাচ্ছে , ‘‘ আমারে তো আল্লা ধন সম্পত্তি অনেক দিছে । তুমি চাইলে তোমার এই বাদাইম্মা জামাইডারে ছাইরা আমার কাছে আসতে পারো। তুমারে আমি আমার সবচেয়ে ছোট আদরের বউ বানামু।” কথাটা শোনা মাত্রই সোনীয়ার কপালে যেনো আকাশ ভেঙ্গে, ‘‘ সাপের ভয়ানক ফ্যানার মতো তার শরীরে শক্তি সঞ্চিত হয়। সে বকরউদ্দিন মেম্বারের মুখের উপর ১০০ টাকা ছুরে দেয়। একমুর্হুতের সময় সেখানে অতিবাহিত না করে একদৌড়ে বাসায় চলে আসে। তার পরদিন থেকে সোনীয়া কোন চায়ের দোকানে কলসি ভারে পানি দিতে যায় না। সোনীয়া তার স্বামীকে খুব ভালোবাসে। তার স্বামীর নামে এই কথাগুলো সে একদম সহ্য করতে পারছে না। তাই বালিশের মাঝে মুখ বুজে গোমরিয়ে গোমরিয়ে কাদঁছে । ঘরে তার আদুরের একমাত্র মেয়ে স্বর্ণা। দুই বছর বয়েস । খুবই চঞ্চল সারা বাড়ী হইহুল্লে এটা সেটা করে বেড়ায়। কখনো ছোট ছোট ফুল ছিরে হিঃ হিঃ করে হাসছে। কখনো ঘাষ ফড়িং ধরছে কখনো ছাগল ছানার সাথে দুষ্টুমিতে মাতিয়ে রাখে বাড়ীর উঠোন। স্বর্ণা বাবা গাঁও গেরামে গান করে যা পয়সা পায় তা দিয়ে কোন মতো চাল ডাল কেনার পয়সা হয়ে যায়। স্বর্ণা মা, সোনীয়া যা রোজগার করে । তার একটা অংশ সে রোজ রোজ জমিয়ে রাখে। সোনীয়ার ইচ্ছে তার মেয়ে স্বর্ণাকে সে বড় একটি স্কুলে ভর্তি করাবে।
রোজ ভোর হতেই ফজরের নামাজ পরে এবং কোরআন তিলোয়াত করে। স্বামী এবং মেয়ে স্বর্ণাকে রুটি বানিয়ে খাওয়ায়। নিজে পাতিলের নিচে জমে থাকা পান্তাভাত আর বাসি আলুভর্তা দিয়ে কোনরকম ভাত খায়। ঘরের উঠোনে আসেপাসে লাগানো গাছগুলোতে পানি দেয় । বেরিয়ে পরে কাজে। শরীফউদ্দিনের ক্ষেতে প্রথমে পানি দিতে হবে। এক কলস পানি দেওয়ার পরপরই হঠাৎ আকাশটা অন্ধকার হয়ে এলো। পশ্চিমা বাতাস খানিকক্ষনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। রৌদউজ্জ্বল দিনটিতে তার চেহারা পাল্টে ফেলে। দক্ষিনা বাতাস বইতে শুরু করে । হঠাৎ ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটায় খুব আনন্দ অনুভব করলো । এরই মাঝে ঝর ঝর করে শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি । সোনীয়া বৃষ্টির আনন্দে আজ আনন্দিত । খুশির রেশনাই । কতদিন পরে বৃষ্টি । মনে হচ্ছে স্বর্গের অনুভূতি। মনের অজান্তে বৃষ্টিতে ভিজছে সোনীয়া। ফসলের ক্ষেত্রের মাঝখানে ছোট ছোট ধানি চারাগুলোও খুব আনন্দিত । বৃষ্টিতে ভিজে একাকার, সোনীয়া এসে দাড়াঁলো খালটি পাশে। বৃষ্টি পেয়ে খালের পানির রং ও যেনো বদলাতে শুরু করেছে। নিষ্পান মৃতখালটি আজ প্রাণ ফিরে পেলে। বৃষ্টির পানির ফোনার টপটপ শব্দে মন ভরে যায় সোনীয়ার । এই খালের পানিই তার রোজগারের উৎস। তাই খুবই খুশি। এরই মাঝে বৃষ্টি শেষ । সোনীয়া তার পরিহত কাপড়টিতে খানিক পানি ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কারন এই কাপড় পরেই থাকে যোহরের নামাজ পরতে হবে। খালের পারে একটি কুড়ে ঘর আছে সেখানে এক বুড়ি থাকে সে ঐ বুড়ির সাথে একসাথে জোহরের নামাজ পরে। তাই তার পরিহত কাপড় খানা থেকে খানিকটা বৃষ্টির পানি চিপে নিচ্ছে। এর মাঝে জমির মালিক শরীফউদ্দিন এসে হাজির। আনন্দ হাসি মুখে নিয়ে সোনীয়ার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে ,‘‘ আলহামদুল্লাহ আল্লাহ তালা বৃষ্টি দিয়েছে। এখন থেকে প্রায় রোজই বৃষ্টি হবে,। মহান রব্বুল আলামিন এর কাছে শুকরিয়া। , জমির মালিকের কথা শুনে সোনীয়াও কিছু শুকরিয়া আদায় করলো। জমির মালিক সোনীয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,‘‘ এই নাও সোনীয়া, আজকে তো তোমাকে তেমন পানি দিতে হয় নাই, তবু তোমাকে আমি পুরো দিনের টাকাটা দিয়ে দিচ্ছি এই নাও ৭০ টাকা,। কাল থেকে আর তোমাকে কষ্ট করতে হবে না । বৃষ্টির দিন শুরু হয়ে গেছে। এখন জমিতে বৃষ্টির পানিতেই চলবে। বলেই জমির মালিক চলে যায়।
সোনীয়া শেষবারের মতো খালটার দিকে তাকায় । কিছুক্ষন আগে যে খালটি ছিলো বৃষ্টির ফোটায় দুরন্ত সেই খালটিও, শান্ত । জমির দিকে তাকায় জমিতেও নিরব শীতল বাতাস বইছে। ছোট ছোট ধানের চারাগুলো বৃষ্টি ছোয়া পেয়ে দোল খাচ্ছে। রোজ যে ঘরটিতে নামাজ পরতো সেই কুড়ে ঘরটির দিকে তাকায় । কিছুদিন হলোও এই পরিবেশটি সে বড় আপন করে নিয়েছিলো। কিছুদিন পরেই তার আদুরের ছোট মেয়ে স্বর্ণাকে বড় একটি স্কুলে ভর্তি করাবে। এখনও আরো কিছু টাকা তাকে জমাতে হবে। নিজের অজান্তে সোনীয়ার চোখের বাধেঁ পানি জমে। টপ টপ করে সেই পানি গাল বেয়ে ঝরে পরে । রৌদ্র বৃষ্টির জীবন, জীবন তো এমনই হয় . . . . . . .. . . . . . .. ।
২| ১১ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯
জসিম উদ্দিন জয় বলেছেন: ধন্যবাদ । ঠিক আছে আমি বেশি বেশি লেখার চেষ্টা করবো ।
৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫০
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: প্লটটা দারুন। লাগছিলও বেশ!
কিন্তু হঠাৎ যেন ছেড়ে দিলেন ?
++++++++
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৪
বিজন রয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
আপনি এত কম লেখেন কেন?