নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জসিম উদ্দিন জয় তিনি ঢাকা জেলায় খুব সাধারণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । পিতা আব্দুল ছাত্তার খান ও মাতা আমেনা বেগম, পৈত্তিকভিটা কুমিল্লা জেলায়। প্রযুক্তিবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক এবং একজন দক্ষ সংগঠক হিসাবে বেশ পরিচিত তিনি | 19

জসিম উদ্দিন জয়

সাহিত্যিক, সংগঠক, প্রযুক্তিবিদ

জসিম উদ্দিন জয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুমি শুধুই ছবি

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৬




তুমি শুধুই ছবি

- জসিম উদ্দিন জয়

আমাদের পৃথিবীটা একটা রঙ্গমঞ্চ ও জীবন্ত ফটোগ্রাফ। যেখানে রয়েছে বারো রকমের মানুষের অভিনয়। পৃথিবীর মঞ্চে আমরা সবাই অভিনেতা অভিনেত্রী। সাব্বিরের দীর্ঘজীবনের ফটোগ্রাফী পেশাটাও বহুব্রিহী অভিনয়। স্মৃতিময় জীবনে, বয়ে বেড়ানো ক্লান্তিকে মাঝে মাঝে ছুরে দেয় অজানা গন্তব্যে। বাড়ীর দক্ষিনে শান্তদীঘির জলের ধারে খানিক সবুজঘাসের উপর পা পেতে বসেছে সাব্বির। হাতে পুরোনো সেই বিশাল আকৃতির ক্যামেরাটার দিকে মায়াবি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধুলোবালি পরিস্কার করছে। পুরোনো স্মৃতির ক্যানভাসে ভেসে উঠে চির চেনা কষ্টের স্মৃতি। সেই স্মৃতি মনে করতেই চোখের বাধঁ বেয়ে জল জমা হলো। চোখের জলে দীঘির দিকে তাকাতেই ভেসে উঠে ফটোগ্রাফী পেশার পুরোনো স্মৃতি। দুঃখ আর হতাসার মাঝেও ক্যামেরার আড়াল থেকে হাসি ফুটিয়ে তুলতেন হয়তো স্বপ্ন বিলাসী অন্য কোনো একজনের। যৌবনের রঙে নিজেকে রাঙ্গিয়ে ফটোফ্রেমে বাধঁতো কোন সুদর্শনা রূপসীর ছবি। কখনো ক্লিক ক্লিক শব্দে তুলতো রিদম। সুকন্যাদের বাকাঁ হাসি ক্যমেড়ায় বন্দি করে খুব আনন্দ পেতো সাব্বির।
নদীর ¯্রােতের সাথে পাল্লা দিয়ে সময় করেছে পার। কালের গহ্ববরে বদলে গেছে সাব্বিরের মর্জি। এখন আর সে কোন মানুষের ছবি ক্যামেরায় বন্দি করেন না। সুন্দরীদের প্রতিযোগীতায় সাব্বিরকে আর দেখা যায় না। প্রকৃতির অপার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে প্রকৃতির সাথে কাটিয়ে দেয় দীর্ঘসময়। ক্লিক ক্লিক শব্দ আর প্রকৃতির অপার মহিমার মাঝে শান্ত সময় অতিবাহিত করে। তাইতো একজন ফটোগ্রাফার হিসাবে সাব্বিরের কাছে প্রতিটা দিনই গুরুত্বপূর্ণ।
সাব্বির ছোটবেলায় খুব ডানপিটে ছিলেন। গাছে উঠা, ক্লাস ফাঁকি দেয়া, পুকুর-এ লাফালাফি করে চোখ লাল করে ফেলা। অকারনে ঝগড়া বাধাঁনো আর ডাব চুরি করে খাওয়া ছিলো সাব্বিরের দুরন্ত ছেলেবেলা। সাব্বির যখন স্কুল-কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। সেই সুবাদে ঢাকায় আসে । তখনই এক নাটকীয় ভাবে রুপার সাথে তার পরিচয়। সাব্বির যে বাসায়টিতে ভাড়া থাকতো তার পাশে একতালা একটি বাড়ী ছিলো। বাড়ীটি বেশ পুরোনো। উত্তপ্ত রোদ-বৃষ্টিতে ঝলসানো বাড়ীটি। অনেকটা পুরোনো জমিদারী বাড়ীর মতো। বাড়ীর ছাদে নানাপ্রাজাতীর ফুলের গাছ লাগানো। মাঝে মাঝে দক্ষিণা বাতাসে সেই ঘ্রান ছড়িয়ে যেতে আশেপাশের বাড়িতে। দূপুরের উত্তপ্ত রোদ পেরিয়ে শেষ বিকেলের শান্ত হিমেল হাওয়া আর সোনালীর রৌদ্রের আভায় বাড়ীটিকে খুব সুন্দর লাগে। রোজ বিকেলে রুপা নামের মেয়েটি গাছে পানি দিতে ছাদে উঠে। কখনো রঙিন লাল-নীল আর বেগুনী ড্রেস আবার কখনো সাদাকালো ড্রেস। বিকেলের স্বর্ণালী আলো আর রুপার দুধে আলতা গায়ের রংয়ের সাথে মিশে রুপের ঝলক তৈরী করে। ঠিক তেমন একটি দিন, একটি বিকেল, চোখের পলক নামাতে পারে নাই সাব্বির। সবুজ জামা আর নীল ওড়ানা পরিহত মেয়েটিকে বিকেলে সোনালী আলোয় খুব সুন্দর লাগছিলো। তখন দূর থেকে জানালার ফাকেঁ তাকিয়ে থাকে সাব্বির। বিধাতা রুপাকে এত সুন্দর করে তৈরী করেছেন। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। রুপা যখন টকটকে লাল গোলাপের কাছে যেয়ে ফুলটিকে আলতো স্পর্শ করে তখন সাব্বিরের কাছে মনে হয়ে, দূর আকাশ থেকে নেমে এসেছে কোন ফুল পরী। দক্ষিনা বাতাসে রুপা নামের মেয়েটির চুলগুলো যখন হাওয়া ভাসে তখন সাব্বিরের মনের ঘুড়িটাও যেনে উঁড়ে বেড়ায়। একদিন এক দুষ্টুবাতাসে রুপার রঙ্গীন উড়না উড়িঁয়ে নিয়ে যায় সাব্বিরের জানালার রেলিং ঘেষে। সাব্বিরের চেয়ে থাকা অপালক দৃষ্টি খানিকটা থেমে যায় সেই উড়ন্ত ওরনার জন্য। সেই ওরনার সুবাধে সাব্বিরের সাথে পরিচয় রুপার। তখন থেকেই মেয়েটির প্রেমে পরে যায় সাব্বির। প্রতিদিন রুপা বিকেলে ছাদে যায় ফুলগাছগুলোকে পানি দেয়। সাব্বির দূর থেকে তার পড়ার রুমের জানালা দিয়ে স্মাট ফোন দিয়ে ছবি তুলে। ছবিগুলো ডাটা ক্যাবল দিয়ে ল্যবটপে জমা রাখে। ছবিগুলো দেখে সাব্বিরের সরা-রাত্রী দিন কেটে যায়। কলেজের ক্লাস চলাকালীন সময়েও তার স্মার্ট ফোনটিতে দেখতে থাকে মেয়েটির ছবি। খুব গোপনে অত্যন্ত যতন করে ছবিগুলোকে তার মনের গভীরে সুঁই সুতোর মতো গাথঁতে থাকে।
কলেজে ক্লাসের সময় এমনকি যখন কোন গাড়ীতে চড়ে বাসে তখনও খুব গোপনে সাব্বির তার স্মাটফোনটিতে রুপা নামের মেয়েটির ছবি দেখে । রুপা কোন মোবাইল ফোন নেই । তাই সাব্বিরের কথা বলার সুযোগ নেই। শুধু দূর থেকে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কথা বলার কোন সুযোগ হয়ে উঠে না। রোজ বিকালে মেয়েটির ছবি তুলে । মেয়েটি মিটি মিটি মিষ্টি হেসে তার দিকে তাকাঁয়। সাব্বিরের ভালোবাসার সীমানা ক্রমশ: বাড়তে থাকে। সাব্বিরের এই ভালোবাসার সীমানা এক সময় অসীম সীমানায় রুপ নেই। তার এই সীমানা কখনো ঘুমের ঘেরো স্বপ্নের হাতছানি দিয়ে ডাকে । রুপা দূর থেকে দাড়িঁয়ে সাব্বিরের এই ছবি তোলার দৃশ্য দেখে মিটিমিটি মিষ্টি হাসি হেসে নেয়। সাব্বির এখন কোন লতাপাতা ফুল এগুলো ছবি তোলো না । শুধু মাত্র রুপার ছবি তুলে। সাব্বির তার ছবিগুলো রুপাকে দেখানোর জন্য একটি চিরকুটে লিখে ছুরে দেয় রুপার বাড়ীর ছাদে । তাতে লেখা , ‘‘ রুপা আমি আপনার প্রায় ১,০০০ (এক হাজার ) ছবি তুলেছি । রুপা মিষ্টি হেসে একটি চিরকুট লিখে উত্তর পাঠায় ‘ঠিক আছে, আমি ছবিগুলো দেখবো। আমি আর আপনি তো একই কলেজে পরি । আমরা ইচ্ছে করলে লাইব্রেরীতে দেখা করতে পারি।’’ সাব্বির দূর থেকে তার এই চিরকুটের উত্তরে মাথা নেড়ে সায় দেয়। সেই রাত থেকেই সাব্বিরের মনে আকাশ ছোঁয়া কল্পনার বাসা বাধেঁ রুপার ছবি। মাঝে মাঝে আনন্দের শিহরণ বয়ে যায় ক্ষনেক পর পর । পরের দিন লাইব্রেরীতে দেখা হলো দু‘জনের। রুপার সান্নিধ্যে এসে সাব্বির খুব আনন্দিত । দূর থেকে দেখা রুপা আজ তার সামনে । ক্যামেরায় তোলা ছবি থেকে বাস্তবে রুপা অনেক সুন্দর । মুগ্ধ বিস্ময়ে তাঁিকয়ে থাকা রুপার চোখ। শ্রাবনের সন্ধ্যের আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘের মতো তার চুল । শিশির ভোজা ফুটন্ত গোলাপের পাপড়ির মতো বাঁকা ঠোঁট । মানুষ এতো সুন্দর হতে পারে সাব্বিরের জানা ছিলো না। সাব্বির তড়িঘরি করে ল্যাবটপ বের করে ছবিগুলো দেখাতে লাগলো রুপাকে। রুপা ছবিগুলো অনেকটা মনোযোগ সহকারে অনেকক্ষন দেখলো । সাব্বির ততক্ষনে রুপার দিকে মুগ্ধবিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। ছবিগুলো রুপা দেখে খানিকটা দুষ্টু হাসি হেসে পরিস্কার জানিয়ে দিলো, ‘‘এই ছবিগুলো মোটামুটি ভালো হয়েছে তবে এস,এলার ক্যামেরায় ছবিগুলো তুললে ভালো হতো।” সময়ের ব্যস্ততার কারনে রুপা চলে যায়। রুপার বাবা, রোজ রুপাকে কলেজ থেকে নিয়ে যায়। তাই ততোটা সময় রুপা করো সাথে গল্প করতে পারে না। কলেজের ক্লাস শেষে একটু খানি লাইব্রেরীতে বসে । তারপর সোজা বাসায় । পড়াশুনা আর একটু খানি লাইব্রেরীতে সময় কাটানো ছাড়া রুপার বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা নেই।
সাব্বিরের এখন এসএলার ক্যামেরার প্রয়োজন। যেভাবেই হোক এস. এলার ক্যামেরা তাকে সংগ্রহ করতে হবে। সাব্বির খাবারের খরচ থেকে টাকা বাচাঁনো, টিউশনী করে টাকা যোগাড় করা। কখনো বাস ভাড়া বাচিঁয়ে টাকা জমানো । বিন্দু বিন্দু করে টাকা জমাতে জমাতে সে একদিন এস.এল আর ক্যামেরা কিনে ফেলে। ক্যামেরা কিনেই রুপাকে আবার চিরকুট লিখে ছাদেঁর উপর ফেলে দেয়। রুপা তার চিরকুটটি পড়ে আর হাসে । একবার পাশের বাড়ীর জানালার দিকে তাকিয়ে একটু মিষ্টি হেসে বলে, ‘‘ পাগল।” সাব্বির দূর থেকে তার এই মিষ্টি হাসিটুকুর ছবি ক্যামেরায় বন্দি করে। রুপা রোজ বিকেলে ছাদে উঠে তার ফুল বাগানে প্রজাপতি ধরে ফড়িং ধরে দূর থেকে দাড়িঁয়ে সাব্বির এই ছবিগুলো তার ক্যমেড়ায় বন্দি করে। সাব্বির রুপার কাছ থেকে চিরকুটের মাধ্যমে একটু সময় চাইলো। সে রুপাকে নিয়ে নদীর ধারে ঘুরতে যাবে। রুপা চিরকুটের উত্তরে লিখে দিলো সোজা কথা ,‘‘ স্যরি ” আমি খুবই দুঃখিত । আমার বাবা-মা এটা ‘‘এলাউ’’ করবে না।’ আর এভাবেই সময় যেতে থাকে । সাব্বির এখন প্রফেশনার ফটোগ্রাফার। ভালোবাসার আকুতি দিনদিন বেড়েই চলে। রুপা সাথে তার দেখা হয় দূর থেকে । একের পর এক ছবি তুলে। কিন্তু এস,এলারের ক্যমেড়ায় তোলা ছবিগুলো রূপাকে দেখানোর সুযোগ ও সময় হয়ে উঠে না। রুপা পড়াশুনা নিয়ে খুবই ব্যস্ত। এভাবেই শেষ সেমিষ্টার পরীক্ষার সময় পরপরই আচমকা একদিন কলেজের লাইব্রেরীতে উপস্থিত হয় রুপা । সাব্বিরকে দেখে তার কাছে আসে। তখন রুপার চোখে মুখে বিষন্নতা আর হতাশার ছাপ। চোখের বাধঁ ভেঙ্গে কান্নার আলামত। অসহায় দৃষ্টিতে সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে বলে,‘‘ সাব্বির: আমেরিকার এক ইঞ্চিনিয়ার পাত্রের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে । ‘আগামী সাপ্তাহে আমার বিয়ে’’। বিয়ের পর পাত্র আমাকে আমেরিকায় নিয়ে চলে যাবে। আমি এই বিয়েতে রাজি না। আমার কাছে এই দেশের প্রকৃতি, মানুষ সবকিছুই খুবই আপন।” তার শখের গোলাপ বাগান, বেড়াল ছানা টিনটিন,। এগুলো ছেড়েও সে আমেরিকায় যাবে না।
সাব্বির রুপার কথা শুনে খানিকটা হেসে বলে,‘‘ স্বপ্নের দেশ, বড়লোক জামাই, বিয়েতে রাজি হয়ে যাও। সাব্বিরের কথাশুনে রুপা রাগান্নিত হয়ে উঠে বলে ‘‘সাব্বির আমি তোমাকে ভালোবাসি। সেটা কি তুমি বুঝো না । সেদিন প্রথম রুপা সাব্বিরকে তার ভালোবাসার কথা জানান দেয়। সাব্বির নিজের চোখ ও কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না । কি করে সম্ভব । সে খানিকক্ষন স্থির হয়ে থাকলো । তারপর চোখেমুখে আনন্দের বন্যা তুলে বলে উঠে,‘‘ আমি আমার ভালোবাসাকে জয় করতে পেরেছি। সেদিন সাব্বির তার সাতজনমের ভালোবাসার কথা বলে রুপাকে জানান দেয়। এবং কলেজে অন্যান্য ছেলেমেয়ের সামনেই মনের অজান্তে রুপাকে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝে। সবাই হতবাক ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী পড়–য়া মেয়ে । যাকে কখনো কারো সাথে কথা বলতে দেখে নাই । সেই রুপা ও সাব্বির এই কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে ? দীর্ঘক্ষন জড়িয়ে থাকার পর দুইজনই তাকিয়ে দেখে চারপাশে অন্যান্যরা হাসাহাসি করছে। লজ্জায় রুপা তড়িৎগতিতে সেখান থেকে চলে যায়। সাব্বির এক দৃষ্টিতে রুপার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
তারপর থেকে অস্থিরতায় দিন পেরিয়ে রাতের গভীরতায় ভালোবাসার আবেগে কখনো চোখের জল, কখনো হাসি, কখনো প্রেমের সুখের উদ্দ¦ীপনায় কেটে যায় রাত । সকাল গড়িয়ে উদাস দূপুর এবং চিরচেনা সেই স্বর্নালী বিকেল, সেই ছাদ। কিন্তু রূপার চোখে মুখে হাসির কোন ছাপ নেই । একটু বিমর্ষদৃষ্টিতে তাকায় সাব্বিরের জানালার বরাবর । তারপর হাত থেকে ছুরে দিলো চিরকুট ছাব্বিরের জানালায় বরাবর। তাতে লিখা,‘‘ সে আগামী ৯ তারিখে বাসা থেকে পালিয়ে চলে আসবে সাব্বিরের কাছে ।”
সাব্বির কোন রকম চিন্তাভাবনা না করেই প্রতিউত্তরের আরেকটি চিরকুট লিখে,‘‘ ঠিক আছে আমি প্রস্তুত আছি । আমরা এতটা সময়.সেই জায়গাটিতে একসাথে দেখা করবো । এবং কাজী অফিসে বিয়ে করবো । তারপর তোমাকে সরাসরি আমাদের গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে যাবো। মাকে বলে রাখবো আমি বিয়ে করছি। আমার মা তোমাকে দেখে খুব খুশি হবে।”
দুইজনে একমত হলো পালিয়ে বিয়ে করবে। যেই ভাবা সেই কাজ।
৯ তারিখ সাব্বির তাদের নির্ধারিত স্থানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে রুপার জন্য। সময় যোনো কিছুতেই ফুরায় না। অস্থিরতা ছটফট করছে সাব্বির । আর মাথা থেকে ঘাম মুছে নিচ্ছে হাত দিয়ে । কখন আসবে রুপা । অধির আগ্রহ আর উদ্ভিপনা। রাস্তার ওপাশে দাড়নো সাব্বির এদিক সেদিক তাকিয়ে শুধু রুপার অপেক্ষায় । হঠাৎ রাস্তার বিপরীত দিকে একটি শব্দ এবং অনেক লোকের চিৎকার ও চেঁচামেচি । সাব্বিরের দৃষ্টি সেদিকে । সাব্বিরের পাশে কয়েকটি লোক পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে আর বলছে “ইস্ মেয়াটি ভয়ানক এক্সিডেন্ট করেছে মনে হয় বাচঁবে না।” সাব্বিরের হৃদয়ে যেনো বিদ্যুৎ চমকানের মতো আঘাত আনলো। অজানা আতঙ্ক মনের মাঝে বাসা বাধঁলো, তাহলে কি রুপা এক্সিডেন্ট করেছে ? ঐ মেয়েটি কি রুপা ? সাব্বির এক মুহুর্ত দেরী না করে ছুটে যায় । ততক্ষনে মেয়েটিকে লোকজন ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলো । সাব্বির এক নজর কোন ভাবে দেখে , কিন্তু বোঝার কোন উপার নেই, মেয়েটি মুখ রক্তাক্ত ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। তবে সে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে এটা রুপা না অন্য কোন একটি মেয়ে। সাব্বির মনে সন্দেহ তবু পিছু ছারছে না । সে আবার দৌড়ে পিছুপিছু গিয়ে দুর্ঘটনার স্বীকার মেয়েটিবে দেখে নিলো । এবার নিশ্চিত এটা তার রুপা না। বিস্তৃর্ন আকাশের দিকে তাকিয়ে একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিলো । মনে মনে প্রর্থনা করলো এই দূর্ঘটনা কবলিত মেয়েটির জন্য, যেনো তারাতারি সুস্থ হয়ে উঠে। মেয়েটি একটি ছেলের সাথে বাইকে করে আসছিলো। বাইকটি স্প্রিডবেকারের সাথে ধাক্কা লেগে ছিটকে পরে । ছেলেটি সামান্য ব্যথা পেয়েছে তবে মেয়েটির অবস্থা গুরুতর । সাব্বির রোডের অপরপ্রান্তে যেয়ে দাড়াঁয় পুনরায় রুপার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। মিনিটের কাটায় ঘন্টা ফুঁড়িয়ে যায় রুপা আসে না। সাব্বিরের সুন্দর মুখখানিতে আন্ধকার নেমে আসে। শ্রাবনের মেঘগুলো আকাশে জড় হতে থাকে । সূর্য্য হঠাৎ আড়াল হয়ে বৃষ্টি শুরু হয় । বৃষ্টির ঝাপটায় ভিজে অপেক্ষায় ঠাইঁ দাড়িঁয়ে সাব্বির। রুপা কখন আসবে প্রতিক্ষার প্রতিক্ষন গুনছে আর তাকিয়ে আছে রোডের দিকে। বৃষ্টি শেষ । পেছন থেকে এক বৃদ্ধলোক আসলো । সাব্বিরের গায়ে হাত রেখে বলে,‘‘ বাবা সাব্বির যার জন্য অপেক্ষা করছো সে আসবে না । আমি রুপার নানাভাই। রুপা আমাকে সব বলেছে । এই চিঠিটি রুপা পাঠিয়েছে। বৃদ্ধলোকটি সাব্বিরের গায়ে হাত রেখে যাবার সময় বলে যায় ‘‘ভালো থেকো, কারো জন্য কোন কিছু বসে থাকে না । সময় চলে যায়” বলেই বৃদ্ধলোকটি চলে যায়।
সাব্বির তড়িঘরি করে সেই চিঠিটি পরে । তাতে লিখা ‘‘ সাব্বির ভূল বুঝো না, বাবা-মা আমাকে আটকিয়ে দিয়েছে। বাবা-মায়ের ভালোবাসার কাছে নিজের ভালোবাসা জলাঞ্জলি দিলাম । ভালো থেকে, পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
বিদ্যুৎ এর শটের মতো মনের আকাশটায় জোড়ালো ধাক্কা খেলো সাব্বির । রাস্তার পাশে আইল্যান্ডের উপর বসে পরলো । এক দৃষ্টিতে চিঠির দিকে তাকিয়ে । তখন চোখের জল বাধাঁহীন হয়ে টপ টপ বৃষ্টির ফোটার মতো পরতে থাকে। রুপাকে সে কতটা ভালোবাসে, কোন ভাষা দিয়ে কাউকে বোঝাতে পারবে না। ....
তারপর সময় গতিতে সময় পার হয় । সেই থেকে সাব্বিরের মনে আর কারো ছবি ভাসে না । শুধু রুপার ছবি ভাসে। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে এই ক্যমেড়াটি শুধুই রুপার ছবি আর ভালোবাসার স্মৃতি হয়ে বেচেঁ থাকবে। সে আর কোন মানুষের ছবি তুলবে না । প্রজাপতি, লতাপাতা ও প্রকৃতির সাথে কাটিয়ে দিবে বাকী জীবন ।
ÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.