নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জসিম উদ্দিন জয় তিনি ঢাকা জেলায় খুব সাধারণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । পিতা আব্দুল ছাত্তার খান ও মাতা আমেনা বেগম, পৈত্তিকভিটা কুমিল্লা জেলায়। প্রযুক্তিবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক এবং একজন দক্ষ সংগঠক হিসাবে বেশ পরিচিত তিনি | 19

জসিম উদ্দিন জয়

সাহিত্যিক, সংগঠক, প্রযুক্তিবিদ

জসিম উদ্দিন জয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেই কাশঁবন দেখবে

০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৩৬





সেই কাশঁবন দেখবে
- জসিম উদ্দিন জয়

ঝরঝর বৃষ্টি। প্রতিদিনই বর্ষা। বৃষ্টি অরিপের খুব প্রিয়। আর অপি তো বৃষ্টি বলতেই পাগল। বৃষ্টির পানিতে ঢাকা আজ জলঢাকা । ঢাকার রাস্তায় পানিতে আটকে পরেছে অনেক গাড়ী। অরিপ ও অপির গাড়ীটিও আটকে পরেছে পানিতে । কোন ভাবেই ষ্টার্ট নিতে পারছে না অরিপ । প্রচন্ড বৃষ্টি, অপি গাড়ী থেকে রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখে টিপটিপ বৃষ্টির ফোটাগুলো যখন রাস্তায় সদ্যজমে উঠা হাটু সমান পানিতে পরছে। খুব সুন্দর লাগছিলো। বিশাল পিচঢালাইয়ের পথ পানিতে ডুবে আছে। পানির ¯্রতে দেখে ছোটখাটো নদী মনে হচ্ছে। অপি কৌতুহলবসত: রাস্তায় এত পানি দেখে গাড়ী থেকে নেমে পরে। অঝর বৃষ্টির মাঝে দুই হাত মেলে ধরে আকাশের দিকে। মুঠো ভরে হাতে বৃষ্টির পানি নিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে নিজের দিকে। রাস্তায় হাটু সমান নোংরা পানি। সেদিকে তার একটুও খেয়াল নেই। বৃষ্টির পানিতে তার গায়ের সাথে জড়িয়ে থাকা জামা আঠার মতন লেগে আছে। উৎসুক জনতা রাস্তার দুই পাশে অপির কান্ড দেখতে থাকে। অপি সেদিকে কেনা কর্নপাত না করে বৃষ্টির পানিতে ভিজনোর জন্য গাড়ি থেকে অরিপকে টেনে বের করে। এরই মধ্যে তাদের সাথে যোগ দিয়েছে বেশ কয়েক পথশিশু। অপি আর অরিপ সবাই মিলো রাস্তার মাঝখানে অনন্দ হই হুল্লোর করতে থাকে। বৃষ্টির গতিবেগ ও কিছুটা বেড়ে যায়। পথশিশুদের সাথে বল নিয়ে এদিক থেকে ওদিক ছুটাছুটি করছে।
অপি কিছুদিন হবে বাংলাদেশে এসেছে । অপি জানে না বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে রয়েছে মরনফাদঁ । লন্ডনের মাটিতে বড় হয়েছে । অরিপ কিছুদিন বিদেশ কিছুদিন স্বদেশ এভাবেই বড় হয়েছে। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত পোহায় । কিছুক্ষন পরেই একটা চিৎকার ।
: অরিপ বাচাঁও ..
অপির চিৎকার । অরিপ চারপাশ তাকিয়ে দেখে। কিছুটায় দূরেই অপি চিৎকার করছে। এবং সে পানির নিচে ডুবে যাচ্ছে । অরিপ এক দৌড়ে অপির হাত ধরে বসে । একটি বিশার বড় ম্যনহোল এর মধ্যে পরে গেছে অপি । অরিপ অপিকে টেনে তুলে । কিন্তু অপির পায়ে প্রচুর রক্ত বেরুচ্ছে । ঘেলাটে ময়লা পানিও রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে^। অরিপ দ্রুত তাকে কোলে তুলে নিয়ে দ্রুত গতিতে হাটতে লাগলো। তখনও অপি পা থেকে অঝড়ে রক্ত ঝড়ছে। বৃষ্টির তান্ডব আরো বেড়েই চলছে। রাস্তার পানি কোমর সমান । অরিপ তার গাড়ীর দিতে তাকাতেই দেখতে পায় তার গাড়ি পানিতে ভাসিঁয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অরিপ গাড়ীর মায় না করেই অপিকে কোলে তুলে নিয়ে ছুটলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় প্রচন্ড পানি । কিছুদূর যাওয়ার পরই । উচু রাস্তার সন্ধান পায়। কিন্তু উচু রাস্তাধরে বেশীদূর এগুতে পারলো না । কোন গাড়ী কোন রিক্স্রাও রাজি হচ্ছে না হাসপাতালে যেতে। বরং রাজী না হয়ে একটু টিম্পুনি কেটে বলে উঠছে উহ! এ যুগের লাইলি-মজনু একেবারে কেলো তুলে হাসাপাতালে যাতি হবি নে ” । অরিপ কারো কথায় কর্ণপাত না করে তার হাটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো । কেননা হাসপাতাল আরো আধা মাইল হবে। এদিকে সন্ধের সূর্য্যটাও ডুবে গেলো । হাসাপাতালের সামনে আধামাইল জুরে পানি আর পানি । সেই বৃষ্টির জমেথাকা ময়লা পানিতে নেমেই সাবধানে পা বাড়াচ্ছে অরিপ। অপি জ্ঞানহীন অবস্থায় আরিপের কাধেঁ। কিছুক্ষণ আগে চলে যাওয়া বৃষ্টি আবারও আঝড়ে শুরু হলো। অরিপ ও অপি কোন রকম দুঃর্ঘটনার স্বীকার না হয়ে হাসপাতালো পৌঁছালো । ততক্ষনে তার অপির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তরিঘরি হাসপাতালো ভার্তি করালো অপিকে । অরিপ এতটাই ক্লান্ত সে দপ করে হাসপাতালের মেঝেতো শুয়ে পরে । সেও অসুস্থ্য হয়ে পরে। অপির পায়ের অবস্থা খুবই শেচনীয় । দুইজনই পাশাপাশি বেডে শুয়ে । অপির পায়ের হাড় ভেঙ্গেছে ও অতিরিক্ত রক্তপাতের কারনে রক্ত শুন্যতা দেখা দিয়েছে । জরুরী ভিত্তিতে অপির জন্য রক্ত লাগবে। রক্তের গ্রুপ “এ” পজেটিভ । কি আশ্চর্য মিল অরিপের রক্তের গ্রুপ ও একই । অরিপ চটকরে বিছানা থেকে উঠে বসে বলে উঠে
“ ডাক্তার আপা আমার রক্ত “এ” পজেটিভ ।
ডাক্তার : আপনি তো নিজেই অসুস্থ হয়ে পরেছেন । এই অবস্থায় রক্ত দিবেন ।
: না ডাক্তার আপা আমি সুস্থ্য । অপনি নিশ্চিন্তে রক্ত নিতে পারেন। ও সেরে উঠলেই আমি আমার জীবন ফিরে পাবো । কিছুদিন পরেই আমাদের বিয়ে । ডাক্তার আপা দ্রুত ব্যবস্থা করুন ।
অরিপের দেওয়া রক্তে অপি জ্ঞান ফিরে পেলো । কিন্তু তার পা অপারেশন করতে হবে । অপির পা ভালো হতে ১ থেকে ২ বছর সময় লাগবে। অরিপের অভিভাবকরা খানিকটা বেকে বসে বলে উঠে
“ বিয়ের আগেই কণ্যের এই দশা, বিয়ের পরে না জানি কি হয়।
কেউ কেউ বলে উঠে, “ খোড়া মেয়েকে বিয়ে করালে সমাজে মুখ দেখাবে কি করে”
অরিপ সমাজের এই সমস্ত কথা মেনে নিতে পারলো না । নিজের অভিভাবকের কথা পাত্তা না দিয়ে সমাজকে পেছনে ফেলে। নিজের সিদ্ধান্তে আটল থাকলো।
এক সময় অপির অপারেশন হলো। কিছুদিন পরে অপি খানিকটা সুস্থ । হুইল চেয়ার ছাড়া সে কোথাও চলাচল করতে পারবে না। স্বাভাবিক ভাবে হাটতে তার বছর খানেক সময় লাগবে।
অপি বিষন্ন চোখে তাকায় অরিপের দিকে । দুইজনের চোখে আলোআধাঁরের মাতে সাঝেঁর মায়া লেগে আছে । অতীত স্মৃতি । কাশঁফুলের বাগানে ছুটে চলা, লুকোচুরি খেলা । প্লেয়ারস ক্লাবে খেলাধুলায় সময় কাটানো বৃষ্টি ভেজা, হুইহুল্লোর । সবকিছুই ভেসেঁ উঠেঁ চোখে । অপির চোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে। অরিপের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে ”
: অরিপ আমাদের বুঝি আর বিয়ে করা হবে না । আমার মতো খোড়া মেয়েকে বিয়ে করে তুমি ঠক্বে।
অরিপ হেসে উঠে বলে এক মিনিট . . . . ..
: অরিপ এক মিনিট কথাটা বুঝতে না বুঝতেই । অপি দেখতে পেলো হাসপাতালের কেবিনে অপি ও অরিপের বন্ধু বান্ধব সহ মামা এক কাজী নিয়ে হাজির । কাজীর হাতে বিয়ের রেজিষ্টারী খাতা
: হাসপাতালের কেবিনে বিয়েটা হয়ে গেলো । বন্ধু-বন্ধাবরা সবাই তাদেরকে স্বাগত জানালো। তারপর মিষ্টি খেতে খেতে, যে যার বাসায় চলে যায় ।
: অরিপ ছুটে এসে অপির হাত ধরে বলে “ আমিই তোমার হুইল চেয়ার” আমার কাধেঁ ভর করে তুমি হাঁটবে . . . .. .
সেই কাশঁবন দেখবে . .. . . .


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:০৬

শামচুল হক বলেছেন: অনেক সুন্দর গল্প। ভালো লাগল। ধন্যবাদ

২| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:১৩

পবন সরকার বলেছেন: চমৎকার গল্প।

৩| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:২৫

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: মনে লয় ভালাই অইছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.