নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জসিম উদ্দিন জয় তিনি ঢাকা জেলায় খুব সাধারণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । পিতা আব্দুল ছাত্তার খান ও মাতা আমেনা বেগম, পৈত্তিকভিটা কুমিল্লা জেলায়। প্রযুক্তিবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক এবং একজন দক্ষ সংগঠক হিসাবে বেশ পরিচিত তিনি | 19

জসিম উদ্দিন জয়

সাহিত্যিক, সংগঠক, প্রযুক্তিবিদ

জসিম উদ্দিন জয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে জলে ভাসে ভালোবাসা

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৩৭



যে জলে ভাসে ভালোবাসা

- জসিম উদ্দিন জয়

পর্ব -১
বর্ষাকাল নদীর জল কানায় কানায় পূর্ণ। হালকা ঝড়ো বাতাসে নদীর ঢেউ এসে উপচে পরছে পারে । নদীর বুকে ছোট ছোট ডিঙি নৌকাগুলোর ঢেউ এর সাথে পাল্লাদিয়ে ছুটে যাচ্ছে দূরে কোথাও। কোন কোন নৌকা আবার খেয়া পারাবারের কাজে ব্যস্ত। নদীর এপার ওপারের বুক জুড়ে যদিও একটি বিশাল সেতু নির্মান হয়েছে। তাতে কি ? নদীর বিশালতা উজ্জ্বলতা একটু কমে নি। নদীর একপারে বিভিন্ন রঙ্গীন পাথর দিয়ে বাধাঁনো খেয়া ঘাট। সেই ঘাটের এককোনে বসে আছে বাসন্তি । জলপাই রংয়ের শাড়ী পরা নদীর রং আকাশের রং সবকিছুই যেনে ম্যাচিং তার সাথে । দূধে আলতা গায়ের রং। সমস্ত পায়ের পাতার গোড়ালী জুড়ে আলতা পড়া । পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত নদীর পানিতে ডুবিয়ে বসে আছে। নদীর ঘোলা পানির মাঝেও তার দুধে আলতা পা দু‘টি আদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো। মনে হচ্ছে সাদা মেঘে ঢাকা চাদেরঁ আলো ।
রাজ নৌকা দিয়ে নদীর ওপারে যাবে। কিন্তু বাসন্তিকে দেখে থমকে দাড়াঁলো। রাজ প্রায় প্রতিদিনই এই নদীর ধারে আসে । নদীর এপার থেকে ওপারে যায় । আবার ওপার থেকে এপারে আসে । তারপর নদীর ধারে বসে এবং নদীর পানির দিকে তাকিয়ে কেদেঁ ওঠে । চোখের জল নদীর পানিতে ভেঁসে যায় । নদীর জল দিয়ে মুখ ধুয়ে চোখের জল কে লুকাবার চেষ্টা করে। মনে মনে বলে উঠে কিচ্ছু হয়নি । আমাকে বাঁচতে হবে। বাসন্তি ফিরে আসবে ? এই নদীর জলেই আমার ভালোবাসা । এই নদী আমার বাসন্তিকে গ্রাস করতে পারে না। এই বলে রাজ নিজেকে, নিজেই শান্তনা দেয় । এবং বাড়ী ফিরে যায় ।
কিন্তু আজ এই সন্ধ্যেয় নদীর পারে বাসন্তি ফিরে এলো কি ভাবে ! এতবছর পর বাসন্তি এখানে । আমার বাসন্তি তাহলে ফিরে এসেছে । রাজ অষ্পষ্ট দেখতে পায়, সেই হাসি । গালে টোল পরা সেই হাসি। কপালে লাল টিপ। গোলাপের পাপড়ি মাখানো ঠোঁট । রাজ আবেগে আপ্লুত ও হতভম্ব। এতবছর পর আমার বাসন্তি ফিরে এসেছে। সেই জলপাই রংয়ের শাড়ী । আলতা পড়া পায়ে নদীর পানিকে রাঙ্গিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য তখন বছর অনেক আগে বাসন্তির এক অলুক্ষুনে বান্ধবী মুখপোড়া বলেছিলো ‘‘ রাজ ভাই আপনার বাসন্তী হাসলে গালে টোল পরে, গালে টোল পড়া মেয়েরা দীর্ঘদিন বাচেঁ না ।” ওই মুখপোড়া বান্ধবী অবশ্য রাজকে খুব ভালোবাসতো তাই জেলাসি করে এই কথাগুলো বলেছে।
রাজ মুগ্ধবিস্ময়ে দূর থেকে বাসন্তির দিকে তাকিয়ে । এদিক দিয়ে নৌকায়ও যাত্রী ভরে গেছে। নৌকা পার থেকে ছেরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এবং ছেড়ে দিয়েছে । রাজ এক দৌড়ে নৌকা থেকে পারের দিকে লাফ দেয়। কিন্তুু নিউটনের তৃতীয় সূত্রের মতো কাজটি হয়ে গেলে । পাড় পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে নি । পারের কাছেই ধপ্পাস করে পানিতে পরে। ততক্ষনে তার চোখের স্বপ্ন ভাংগে । তরিঘরি করে পারে উঠে । বাসন্তির কাছে ছুটে যায়। ততক্ষনে চোখের আফসা আধাঁর সরে গিয়ে বাস্তবতার আলো ফুটে উঠে । সে কাছে যেতেই দেখতে পায় এই মেয়েটি বাসন্তি না । অন্য একটি মেয়ে। মেয়েটির জলপাই রংয়ের শাড়ী, আলতা পরা পা, লাল টিপ গালে টোল পড়া হাসি কেনটাই নেই তার। রাজ হাতাসায় দাড়িয়েঁ পরে । কিছুক্ষন পর একটি ছেলে এসে মেয়েটিকে নিয়ে নৌকায় উঠে । রাজ নদীর পারে দাড়িঁয়ে। নৌকা ভেসেই চলছে। যাত্রী পার করতে হবে। ওপরে যাত্রী পার করা জন্য মাঝনদীতে নৌকা । রাজের চোখের বাঁধ বেয়ে গড়িয়ে পানি পরে । রোজ রোজ একই ভূল । . . . . . .. . . . . . .
রাজের চোখের জলে অতীত স্মৃতি ভেসে উঠে । রাজ এবং বাসন্তির বিয়ে ঠিক হয়েছিলো বেশ ঘটা করে। আনন্দের সীমানা ছিলো বিশাল। দুই পক্ষের গার্ডিয়ান বেশ ঘটা করে বিয়ের বন্দোবস্ত করেছিলো। বিয়ের দুই দিন আগেই তারা এই নদীতে ঘুরতে আসে। হঠাৎ এক কাল বৈশাখী ঝড়ের কবলে পরে নৌকা । নৌকাটি খুব ছোট ছিলো। পার পর্যন্ত পৌছানোর আগেই নৌকাটি বড় একটি লঞ্চের সাথে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। তারপর কি হয়েছে ঠিক মনে নেই । রাজের যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে হাসপাতালে । রাজ সাতাঁর জানতো না। কিন্তু সে বেচেঁ গেছে । কিন্তু বাসন্তি সাতাঁর জানতো সে কোথায় হারিয়ে গেছে । তাকে আর খুজেঁ পাওয়া যায় নি । রাজের বিশ^াস বাসন্তি ফিরে আসবেই। রাজ প্রতিদিন এই নদীতে আসে নদীর পানিতে ঘ্রান শুকে নেই । এই নদীর পানিতেই সে বাসন্তির ঘ্রান শুনতে পায়। এই নদীর জলেই ভেসেঁ বেড়াই বাসন্তি আর রাজের ভালোবাসা ঘ্রাণ । প্রতিক্ষার ১০ বছর গেটে গেলো এখনও রাজ বাসন্তির অপেক্ষার প্রহর গুনে । নদীর এপার থেকে ওপারে যায় । নদীর জলের দিকে তাকিয়ে ভালোবাসার স্বাদ গ্রহন করে। ভালোবাসার কষ্টে মাঝে মাঝে নদীর জলে মিশে যেতে চায় সে । কিন্তু বাসন্তির প্রতিক্ষার প্রহর তাকে নদীর জলে নিঃশ্বেস হতে দেয় না। . . . . .
রাজ পার থেকে সেই নৌকার দিকে তাকিয়ে । নৌকা নদীর মাঝে ভাসছে । সেই ছেলেটি ও মেয়েটি সেই নৌকার মাঝে উজ্জ্বল উচ্ছ্বল তারন্যদীপ্ত নদী থেকে মুঠো করে জল নিয়ে উঁড়িয়ে দিচ্ছে আকাশপ্রাণে। রাশি রাশি আট্টহাসি মুক্তদানা ছড়িয়ে যাচ্ছে বাতাসে । রাজের এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে একটু হেসে উঠে । চোখের পানি মুছে । তারপর নদীর জলে মুখ ধুঁয়ে নেই .. . ....


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.