নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাহিত্যিক, সংগঠক, প্রযুক্তিবিদ
ময়ুরপঙ্খী নাও সাজিয়ে চলো যাই বৃন্দাবন
- জসিম উদ্দিন জয়
আষাঢ় শ্রাবন মাস । আকাশের রং মুহুর্তের মধ্যে পরিবর্তন হয় । এই মেঘ এই রৌদ্রের খেলা । নদীর আকাশটায় মেঘগুলো বিচিত্র রকমের ছুটে বেড়াচ্ছে। নদীর ¯্রােতের সাথে আকাশের সাদা-কালো মেঘ পাল্লা দিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে। মেঘের আড়ালে সূর্য উঁিকঝুকি দিয়ে লুকোচুরি খেলায় মেতে উঠেছে। এলোমেলো মাতাল করা বাতাসগুলোও দিক পরিবর্তন করছে । নদীর এখন ভরপুর যৌবনকাল। তাই চঞ্চলা চপলা তরুণীর মতো নদীর যৌবন রুপে ঝিলমিল করছে। নদীর পানি উপচে এসে পরছে পায়ে । নদীর ধারে যেখানেই কোচুরিপানার ঝাঁক সেখানেই নানা কিসিমের মাছ চুপটি লুকিয়ে থাকে । তাইতো সেখানে বড়ঁশি পেতে বসে আছে অনেকে। মধ্য বয়সি যুবক রাজ । রাজের খুব ইচ্ছে হলো মাছ ধরতে। আজ মনে হয় বড় বোয়াল, রুই কাতলা এগুলো ধরা যাবে। রাজ তাইতো নিজের এলাকা থেকে একটি ছোট ছেলেকে নিয়ে এসেছে । তাকে ১০০ টাকা দিবে । তার কাজ শুধু বড়শিতে কেচোঁ গেঁথে দিবে। পাড়ার কোন ছেলেই রাজি হয় নাই । বড়ঁশিতে কেচোঁ গাথাঁ । মাটি থেকে কেচোঁ খুঁেজ বেড় করা খুবই কঠিন ঘৃনার কাজ । কেউ রাজি হয় নাই। শুধুমাত্র পটলার ছোট ভাই পলাশ রাজি হয়। তার নাকি ১০০ টাকা খুবই প্রয়োজন। ১০০ টাকা দিয়ে সে বাংলা ছবি দেখবে । ছবির নাম ‘বেদের মেয়ে জোৎ¯œা’ । অনেকে নাকি এই ছবি দেখার জন্য আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে। বড়ঁশিতে কেচোঁ গাঁথতে হবে এটা কোন ব্যাপারনা। যেতেই পুরোনো একটা ডোবার পাশে স্যাঁত স্যাতেঁ মাটি। সেই মাটি খুরলেই অনেক কেচোঁ পাওয়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। যেতে যেতে পথেই সেই ডোবা। একটি ছোট গর্তের পাশেই সেই স্যাঁত স্যাঁতে মাটি। হাতে একটি ছোট ছুরি দিয়ে ক্রমাগত মাটি খুরছে কিন্তু কেঁেচা-টেচো কোনটাই নেই। তখন বর্ষাকাল । বর্ষাকালে সাপ পানিতে কম থাকে । আরেকটু গর্ত করতেই ফোঁস ফোসঁ শব্দ শুনতে পেলো। পটলার ভাই পলাশ শব্দ শুনে এদিক সেদিক তাকায় । এটা কিসের শব্দ । খানিক চিন্তা করে আবার গর্ত খুরতে যায় আর ওমনিই পাশের গর্ত থেকে ফোঁস ফোঁস শব্দ করে বেড়িয়ে এলো গোখরা সাপ। সাপ দেখে ছুরি কাঁচি সব ফেলে এক দৌড় । সাথে রাজও দৌঁড়াচ্ছে । দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে তাদের গতি যেনো আরো বেড়ে গেলো । ‘‘ওরে বাপরে গোখরা সাপ’’ বলছে আর দুইজনই দৌঁড়াচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে অবশেষে সেই নদীর ধারেই পৌঁছালো। মোল্লাবাড়ীর হাট । এখানে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। তখন অনেক ভীর থাকে। লোকে- লোকারন্য । বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নৌকার ভীর বসে। তখন মনে হয় পুরো নদীর বুক জুড়ে নৌকা আর নৌকা। আজ হাটের দিন নয় । তাই আজ হাট একেবারে জনশুন্য । হাটে সবসময় বসে থাকা মানুষগুলো বড়শি নিয়ে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত । কেহ কেনো জাল , কেহ ঝাকি জাল, কেহ ভাসাজাল , কেহ ফাসঁজাল, ব্যাগ জাল কেহ কেহ আবার ক্যারেন্ট জাল নিয়ে ব্যস্ত মাছ ধরার জন্য । রাজের ইচ্ছেটাও পুরন হচ্ছে না । চেষ্টা চলছে । কেচোঁ কোথায় পাবে। সে পটলার ছোট ভাইকে মাথায় টোকা দিয়ে বলে ‘‘কিরে কেচোঁ যোগাড় কর।” পলাশ মাথায় টোকা খেয়ে বুদ্ধি বের করে । কেননা তাকে যেভাবেই হোক ১০০ টাকা রোজগার করতে হবে। যেইভাবা সেই কাজ । পাশে বসে একটি লোক মাছ ধরছিলো বড়ঁশি দিয়ে । বড়ঁশি পেতে সে বড়ঁশির টোপ এর দিকে তাকিয়ে ছিলো । এই সুযোগে সে ঐ লোকটির পেছন থেকে কেঁচোর ছোট প্যাকেটটি নিয়ে আসে। রাজকে দিয়ে বলে, ‘চলেন আমরা অন্যদিকে বসি । ঐ তো ঐদিকটায় । চটপট এখান থেকে কেটে পরি ।’
পলাশ বড়ঁশিতে কেঁেচা গেঁথে দিলো । বড়শির টোপ এখন নদীর পানিতে কচুরিপানার একপাশে । রাজ ও পলাশ বসে আছে, মাছের অপেক্ষায়। কিছুক্ষন পর পর টোপটি পিট পিট করে ডুবানোর চেষ্টা করে। তখন পলাশ চিৎকার করে উঠে ভাইয়া, ভাইয়া, মাছ, মাছ, । রাজ শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে বড়শি টান দেয় । কিছুই না । বরং বড়শিতে গেথে রাখা কোচোঁ খেয়ে ফেলেছে। পলাশ বলে উঠে ভাই এটা নিশ্চয় অনেক বড় একটা বোয়াল মাছ । কিন্তু খুব চালাক। ভাইয়া তোমার আধাঁর খেয়ে ফেলছে কিন্তু ধরা পরছে না এই বলে বড়ঁশিতে আবারও কেঁচো গাঁথে । বড়ঁশির টোপ আবারও সেই খানটিতে। আধঘন্টা বড়ঁশির টোপ পিট পিট করে ঠোকরাচ্ছিলো। এবং এক পর্যায়ে টোপ ডুবিয়ে ফেলে। পলাশ চিৎকার করে উঠে ‘‘ ভাইয়া ভাইয়া এবার টান দেন টান দেন. . . .. । যেহেতু বড় বোয়াল মাছ একটু জোরে-সোরে টান দেয় রাজ । কিন্তু এবার ও ফাঁকা। আকাশপানে বড়শি ঝুলে আছে । রাজ আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে তার বড়শিতে কোন মাছ নেই। খানিকটা হতাস হয় । এদিকে বিকেল প্রায় গড়িয়ে চললো । কোন মাছ পেলো না। পলাশ শান্তনা দেবার জন্য রাজকে বলে ‘‘ ভাইয়া আরেকবার চেষ্টা করেন এখনও একটি বড় কেচোঁ আছে। সেটা গেথেঁ দেই । এবার কেচোঁ গাঁথবো অন্য রকম করে । এবার মাছ আর ফাঁকি দিতে পারবে না। পটলার ভাই পলাশ আবারও কেচোঁ গেথেঁ দেয়। বড়ঁশির টোপ যেয়ে পরে নদীতে । সেই জায়গাটিতেই । এবার অনেকক্ষন পর্যন্ত বড়ঁশির টোপটি ফেলে রাখে পিট পিট করে ডুবু ডুবু টোপটি। তবুও বড়ঁশি টি টান দিচ্ছে না রাজ । পলাশ বললো ভাইয়া মাছ ঠুকরিয়ে ঠুকরিয়ে খাবার খেতে খেতে যখন বড়শির ধারালো অংশের খাবার খেতে আসবে তখন বড়শির টোপ একেবারে ডুবে যাবে । এবার যখন বড়ঁশির টোপটি একেবারে ডুবিয়ে নিয়ে যাবে তার একটু পরে তুমি বড়ঁশি টান দিবে। ঠিক তেমনটিই ঘটলো । বড়ঁশি যখন একেবারে ডুবিয়ে নিয়ে বড়ঁশি টানাটানি শুরু করলো । ঠিক তখনই বড়ঁশি টান দিলো রাজ। এবার মনে হয় কিছু একটা এসেছে । খুব আনন্দ নিয়ে আকাশ পানে তাকায় । মুহুর্তের মধ্যে হতাসা চলে আসে । এটা তো মাছ না জীবন্ত একটা বড় কাকঁড়া । কাঁকাড়াটাকে পলাশ এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে রাজ বলে ‘‘নে তুই এবার বাড়ী যা’’ । আমি আজ কোথাও যাবো না। সন্ধ্যে থেকে মাঝ রাত্রী পর্যন্ত এই নদীর ধারে বসে থাকবো । পলাশ বিস্ময চোখে তাকিয়ে রাজকে বলে, ‘‘ আমার ১০০ টাকা , জলদি দাও, বেদের মেয়ে জোৎ¤œার শো চালু হয়ে যাবে আধ ঘন্টা পরেই । আমাকে রহমত আলীর মার্কেটে যেতে হবে । জলদি দাও ৃ . . . .. . । রাজ হোঃ হোঃ করে হেসে উঠে পকেট থেকে ১০০ টাকা বের করে দিয়ে বলে কাকঁরাটা আগুনে পুরো সেদ্ধ করে রাখবি রাতে আমি খাবো । পলাশ মাথা নেড়ে সায় জানায় । ১০০ টাকা পেয়ে আনন্দে আনন্দে পথ দৌড়াতে দৌড়াতে চলে যায় ।
রাজ বড়ঁশিটাকে জোড়ে ছুরে মারে নদীতে। বড়ঁশিটাকে নদীতে ফেলে দিয়ে একটু শান্তি পেলো । মুহুর্তেই নদী তার বড় স্বাদের বড়শিটি গ্রাস করে । মাছ ধরবে না । সে এই ঘাটে চুপচাপ বসে থাকবে। এদিকে নদীতে এখন জোয়ার । দক্ষিনা বাতাস কখনো পশ্চিমা বাতাস । বাতাসের দিক পরিবর্তন হচ্ছে। সন্ধ্যের লাল আকাশজুড়ে সাদা সাদা মেঘ উড়ে উড়ে যাচ্ছে। নদীতে ভরা জোয়ারের পানি ঝাপটা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে রাজকে। নদীর বুকে ছোট ছোট নৌকাগুলো মাঝে হারিকেনের বাতি জ¦লছে। বাতাসের তালে নৌকাগুলো তালমাতাল হয়ে দোল খাচ্ছে । হারিকেনের বাতি নিবু নিবু। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে । নদীর রাতের আকাশ বড়ই সুন্দর । ততক্ষনে রাজ মাছ না পাওয়ার সেই দুঃখ ভূলে গেছে। হঠাৎ রাজের চোখ জ¦লজ¦ল করে এক আলোর বর্ণচ্ছ্বটা এসে পরে । চোখটা খানিকটা বন্ধ করে । মুগ্ধবিস্ময়ে তাকিয়ে দেখে ময়ুরপঙ্খী একটা বড় নাও বাহারি রকমের সাজসজ¦া করে এই ঘাটের দিকে আসছে। রাজ খুবই আনন্দিত এবং আনন্দে উদ্ভাসিত। ময়ুরপঙ্খী নৌকাটি রমরমা সাজসজ্জ্বায় ঘাটে থামলো। নদীর টেউয়ে রুপের জোয়ার। নৌকাটি ভেতরের কামরা থেকে বেরিয়ে এলো এক সুদর্শনা রুপসী মেয়ে । রাজ ভালো করে তাকিয়ে দেখে “রামেন্দ্র সাওদাগরের মেয়ে ‘নীলাঞ্জনা’ । দেখতে গল্পের পরীদের মতো সুন্দর । রাজ ‘‘নীলাঞ্জনাকে খুব ভালোবাসতো । কিন্তু তাদের ভালোবাসার শেষ পরিনতি ছিলো ভয়াবহ। দুটি পবিত্র প্রাণের মিলন হয়নি । নীলাঞ্জনা হিন্দু ধর্মের্র আর রাজ মুসলিম। রাজের বাবা ছিলো গ্রামের মাতাব্বর ও গ্রামের স্কুল কলেজ , মসজিদ মাদ্রাসার সভাপতি । ক্ষমতার দাপটে নীলাঞ্জনাদের গ্রাম ছাড়া করেছে। রামেন্দ্র সাওদাগর অথার্ৎ নিলাঞ্জনাদের অনেক সম্পদ থাকা সত্বেও তারা মান সম্মানের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়।
কিšু‘ এতো বছর পর নীলাঞ্জনাকে দেখে রাজ হতভম্ব । তার উত্বপ্ত প্রেমের মরুভূমিতে ঝড়ো বৃষ্টি বইছে । নীলাঞ্জনাকে খুজেঁ বেড়ানো তার অতৃপ্ত আত্মায় শান্তির জোয়ার এসেছে। ময়ুরপঙ্খী নাও থেকে নালীঞ্জনা সিড়ি বেয়ে নেমে আসে ঘাটে । হাস্যজ¦ল নীলাঞ্জনা একদৃষ্টিতে তাকায় রাজের দিকে । তারপর বলে উঠে ‘‘ কেমন আছো রাজ ?
রাজ ঘাট থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে ‘‘ নীলাঞ্জনা তুমি ।
ঃ হ্যা আমি
রাজ, নীলাঞ্জনাকে বুকে জড়িয়ে কেদেঁ উঠে বলে তুমি আর ফেরত যাবে না তো ?
নীলাঞ্জনা রাজের চোখের পানি মুছে বলে ‘‘ একটু হাসো ।
আমি তোমার নীলাঞ্জনা একবারে চলে এসেছি তোমাকে নিয়ে যেতে . . . . .
রাজ বলে উঠে কোথায় . . . . . . . .
ময়ুরপঙ্খী নাও সাজানো আছে চলে যাই বৃন্দাবন । সেখানে আমরা প্রজাপতির ঘরবসতি করবো । আমাদের কেউ খুজেঁ পাবে না ।
রাজ হেসে উঠে বলে চলো ‘‘ ময়ুরপঙ্খী নাও সাজিয়ে চলে যাই বৃন্দাবন। বলেই নিলাঞ্জনার হাত ধরে ..
এরমধ্যে পটলার ভাই পলাশ এসে হাজির । রাজের হাত ধরে ডাকাডাকি করছে ‘‘ রাজ ভাই ও রাজ ভাই । আপনি ঘাটের মধ্যে এই ভাবে ঘুমিয়ে পরেছেন । . ..
রাজের ঘুমটাও গেলো ভেঙ্গে । .. . জেগে দেখে পলাশের হাত ধরে বসে আছে . . . ..
রাজ নদীর বুকে তাকিয়ে স্বপ্নকে খুজতে থাকে . . . ৃ. . .
ÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑ
২| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:১৬
ফয়েজ উল্লাহ রবি (পারিজাত) বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৫৬
ak ahad বলেছেন: ভাল্লাগছে ভাই___ দারুন