নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জসিম উদ্দিন জয় তিনি ঢাকা জেলায় খুব সাধারণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । পিতা আব্দুল ছাত্তার খান ও মাতা আমেনা বেগম, পৈত্তিকভিটা কুমিল্লা জেলায়। প্রযুক্তিবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক এবং একজন দক্ষ সংগঠক হিসাবে বেশ পরিচিত তিনি | 19

জসিম উদ্দিন জয়

সাহিত্যিক, সংগঠক, প্রযুক্তিবিদ

জসিম উদ্দিন জয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু স্বপ্নের কথা। ---------- জসিম উদ্দিন জয়

১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:০৫



হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু স্বপ্নের কথা।

- জসিম উদ্দিন জয়


বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। (১৭ মার্চ ১৯২০ - ১৫ আগস্ট ১৯৭৫) গভীর শ্রদ্ধা, অসীম কৃতজ্ঞতা ও বুকভরা ভালোবাসায় জাতির পিতাকে স্মরণ করছি।

এসো বন্ধু বলো তোমার স্বপ্নের কথা যা দেখেছিলো তোমার পিতা । .. . . . . ..
১.
আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখি নাই কেননা ৭৫ -এ বঙ্গবন্ধু মারা যাবার বহুবছর পরে আমার জন্ম হয়েছে । শুনেছি আমার বাবার কাছ থেকে। আমি যখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র তখনও আমার নাম ছিলো জসিম উদ্দিন খান। খান হলো বংশের উপাধী। আমার বাবা চাচারা খুব গর্ব করে এটা নিয়ে। খান বংশের অনেক সুনাম, জমিদারী, বাহাদুরী ইত্যাদি শুনেছিলাম । কিন্তু বংশ নিয়ে বাড়াবাড়ি এটা আমার মোটেও পছন্দ ছিলো না।
মনে পড়ে শ্রেণী শিক্ষক একটি ক্লাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলেছিলেন খুব আবেগ নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়াবহ ঘটনাগুলো যখন একের পর এক তুলে ধরে। তখন কেন যেন গাঁ শিউরে উঠে। পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মম ইতিহাস বুঝি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ । খান সেনারা কিভাবে আমাদের দেশের নিরস্ত্র অসহায় মানুষদের মেরেছিলো, তাদের হাতে আমাদের মা বোনেরা নির্যাতিত হয়েছিলো। কথাগুলো শুনে আমার চোখ বেয়ে আঝরে পানি পড়তে থাকে। সেদিন আমি আমার নামের পেছন থেকে খান শব্দটা মুছে জয় লাগিয়েছি। তখন চতুর্থ শ্রেণিতে পরি । সেই থেকে আমার নাম জসিম উদ্দিন জয়। যে ‘জয় বাংলা’ বলে দেশের মানুষ দেশেকে স্বাধীন করেছে । আমি সেই ‘জয় বাংলা’, নামটি ভালোবেসে বুকে লালন করেছি। শ্রেণী কক্ষের শিক্ষক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা বলছিলেন । যার জন্ম না হলে একটি বাংলাদেশের জন্ম হতো না। যার জন্য বাঙ্গালি তার অধিকার, মর্যাদা, মুক্তি অর্জন করেছিলো। বাঙ্গালী পেয়েছিলো একটি স্বাধীন দেশে। পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম হয়েছিলো বাঙ্গালিদের বাংলাদেশ। অথচ সেই স্বাধীন দেশেই নির্মম ভাবে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিলো জাতির জনককে । সেই দিনই শেখ মুজিব নামটির প্রতি একটি গভীর শ্রদ্ধা জন্ম নেয় ।
আমার আব্বাকে দেখেছি এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছবি আমাদের ঘরের ড্রইং রুমে টানিয়ে রাখতো। আমার মা এটা নিয়ে প্রায়ই বাবার সাথে ঝগড়া করতো । কি সব ইসলামের দোহাই দিতো। বাবা একটি কথারও কোন উত্তর না দিয়ে বলতো ‘‘এই মানুষটির ছবি দেখলে আমার ভালো লাগে। নিজেকে নতুন করে দেশের জন্য উৎসর্গ করতে ইচ্ছে করে।’’ সেই থেকে বাবার আদর্শকে বুকে লালন করি। অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় আমি ধানমন্ডি ৩২ শে ছুটে যাই। সেখানে যেয়ে দেখি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্বপরিবারে কি নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। সেই ছোট মানুষ আমি কি আর বুঝি। তবু আবেগে কেঁদে ফেললাম। সেখানে একটি বড় খাতায় প্রায় ১ পৃষ্ঠা ভরে লিখলাম। আমি এই হত্যাকান্ডের বিচার চাই । বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে যারা হত্যা করেছে। শিশু পুত্র রাসেলকেও যারা ক্ষমা করে নাই। আমি এই নিমর্ম হত্যাকান্ডের বিচার চাই। আবেগে আপলুত হয়ে অনেক কথা লিখেছিলাম সেই শোক বইতে। বড় হয়ে দেখলাম বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার চলছে। আমার আব্বা ভেবেছিলো এরশাদের পতন হয়েছে। এবার বুঝি বঙ্গবন্ধুর ভাষন তার কর্মকান্ড টিভিতে দেখাবে। বাবা ৯১ সালে একটি সাদাকালো টেলিভিশন কিনেছিলো শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু কথাগুলো শুনবার জন্য। কিন্তু তাও হলো না। ষড়যন্ত্রকারীরা দেশের ক্ষমতায়। আরও পাচঁটি বছর দেশের সঠিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আড়াল করে রাখা হয়েছিলো। পৃথিবীর অনেক দেশেই অনেক মহামানবকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক । পঁচাত্তরে তাঁকে স্বপরিবারে হত্যা করেই হত্যাকারীরা দায়িত্ব শেষ করেনি, এই দেশের ইতিহাস থেকে তার চিহ্ন মুছে দেওয়ার জন্যে ২১ বছরে এমন কোনো কাজ নেই যেটি করা হয়নি। যার জন্ম না হলে হয়ত একটি বাংলাদেশের জন্ম হতো না। একটি জাতির জন্ম হতো না। বিশ্বের দরবারে আমরা কখনো বলতে পারতাম না যে আমরা বাঙ্গালী আমার দেশে বাংলাদেশ। সবচেয়ে আশ্চর্য যে দীর্ঘ ২১ বছর রেডিও টেলিভিশনে কোনোদিন তার নাম পর্যন্ত উচ্চারিত হয়নি। সেই পাকিস্তানি নরপশু, আলবদর, রাজাকার, দেশের শত্রু তারা শুধু স্বপরিবারের বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে শান্ত হয়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা শব্দটি মুছে দেওয়ার জন্য। বঙ্গববন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে তারা দেশে আসতে দেয়নি দীর্ঘ ২১ টি বছর। ফেরারী আসামী হয়ে দেশ হতে দেশান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ২০০৪ সালে ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা কে হত্যা করতে পারেনি ঘাতকরা। কথায় আছে ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’। মহান আল্লাহ-তালা তাকে রক্ষা করেছিলেন সেদিন। আমার বাবা সেই মিটিং-এ ছিলেন। গ্রেনেড এর হামালায় তিনি আহত হয়েছিলেন। দীর্ঘ ৬ মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এখন সুস্থ। কিন্তু সেই দিনের ভয়াবহ কথা তিনি বলেছেন। ঘাতকরা কতটা ভয়ানক হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা তিনি একমাত্র মহান আল্লাহ তালা কে ছাড়া আর কাউকে ভয় পান না। দেশের মানুষের কল্যানে নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য সে প্রস্তুত। ৯০ এ এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় সরাসরি জরিত ছিলাম। স্বৈরাচারি এরশাদের পতন হয়েছে দেশে গনতন্ত্র ফিরে এসেছে। কিন্তু রাজাকার আলবদর বাহিনীরা আবারও ক্ষমতায় এসেছিলো । রাজাকার এ দেশের মন্ত্রী হয়েছিলো। তাদের গাড়ীতে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা লাগিয়ে তারা ঘুরে বেরিয়েছিলো । তারা ২১ শে ফেব্রুয়ারী মানে না । তারা স্মৃতিসৌধ মানে না। যারা ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মা বোনদের ধর্ষন করেছে, লুট করে জ্বালিয়ে দিয়েছে বাড়িঘর, অকাতরে মেরেছে সাধার মানুষকে। স্বাধীন দেশে তারা কি করে ক্ষমতায় আসলো। আমি আমার বাবাকে আমদের ড্রইং রুম থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিটা নামিয়ে ফেলতে বললাম। বাবা আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। সেদিন আমার এই প্রশ্নের উত্তর বাবার জানা ছিলো না । কিছুক্ষন পরে দেখলাম বাবার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। আমি আর বাবাকে কোন কিছু না বলে বেরিয়ে পরি । সেদিন আমার দৃঢ বিশ্বাস ছিলো আজকের এই শোক একদিন শক্তিতে পরিনত হবে। এই দেশে ষড়যন্ত্রকারী রাজাকার আলবদরদের বিচার হবেই।
৩.
২০১৫ সালে, বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” বইটি অনলাইনে পড়লাম। ৩৩৭ পৃষ্ঠা । আমাদের দেশে যারা বর্তমানে রাজনীতি করছেন তাদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে এই বইটি। শুধু আদর্শ নয় । রাজনীতির দিক নির্দেশনা সহ দেশ ও দেশের মানুষকে কিভাবে ভালোবাসতে হয় । সেই সকল নীতি আদর্শ সব কিছুই শিখতে পারবে এই বইটিতে। বঙ্গবন্ধুর পুরো জীবনটাই সংগ্রামে কেটেছে। জীবনের অনেকটা অংশই জেলে কাটিয়েছেন। তুলনা করলে নেলসন ম্যান্ডেলা থেকে খুব একটা কম হবে না ।

২০০৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়।
খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়ই অস্পষ্ট।
মূল্যবান সেই খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি

১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি।

জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকান্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার সাক্ষর বহন করছে।

বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, বংশ পরিচয়, পিতা-মাতা, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ সহ এসব বিষয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে, আরো আছে কারাজীবন, চীন-ভারত-পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনা এবং পরিবার, বিবাহিত জীবন, সর্বোপরি সহধর্মিণীর কথা।
৪.
কিভাবে একটি জাতি থেকে দেশ হয়ে উঠলো ।
বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত জীবনী পড়লে বোঝা যায় ।
১৯৪১ সালে বঙ্গবন্ধু মেট্ট্রিক পাস করার পর তার রাজনীতি জীবন জোড়ালো ভাবে শুরু হয় । (পাতা-১৫) স্কুল জীবনে প্রথম রমাপদক নামের একটি ছেলে তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে পরে পুনারায় সে আঘাতে বিনিময়ে সেও আঘাত করে । সত্যবাদি মুজিব সেদিন অকপটে লাঠি দিয়ে মারামারি কথা বলেছিলেন কিন্তু হিন্দু উকিল তাকে মিথ্যে ছোরা মারার ওযুহাতে তাকে হাজাতে পাঠায়। তাকে ৭ দিন জেলে কাটাতে হয়েছিলো । (পাতা -১৩) এটাই তার জীবনে প্রথম জেল ।
১৯৪৩ সালে মিস্টার জিন্নাহ আসবেন বাংলাদেশে, প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সম্মেলনে যোগদান করার জন্য । তখন মুজিবের বিশাল কর্মীবাহিনী । ১৯৪৩ সালে, খাজা নাজিমুদ্দীন সাহেব প্রধানমন্ত্রী হলেন তিনি তার ছোট ভাই খাজা শাহাবুদ্দীন সাহেবকে শিল্পমন্ত্রী করলে সেখানে মুজিব বাঁধা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি শুনেননি। এবং দেশে ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ শুরু হয়। গ্রাম থেকে লক্ষ লক্ষ লোক শহরের দিকে ছুটে আসে। খাবার নাই, কাপড় নাই। ইংরেজ যুদ্ধের জন্য সমস্ত নৌকা বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছে । ধান চাল সৈন্যদের খাওয়াবার জন্য গুদাম জব্দ করেছে। ব্যবসায়ীরা দশ টাকা মনের চাউল চলিশ পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি করছে । এমন দিন নাই রাস্তায় লোকে মরে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। তখন মুজিবরা সবাই শহীদ সাহেবের কাছে যেয়ে বললে, ‘ কিছুতেই জনসাধারণকে বাচাঁতে পারবেন না । শহীদ সাহেব তখন রাতারাতি বিরাট সিভিল সাপ্লাই ডিপাটমেন্ট গড়ে তুললেন। কন্টোল দোকান খোলার বন্দোবস্ত করলেন। গ্রামে গ্রামে লঙ্গরখানা করার হুকুম দিলেন। দিল্লিতে যেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ভয়াবহ অবস্থার কথা জানালেন এবং সাহায্য দিতে বললেন । ইংরেজদের কথা হলো বাংলার মানুষ মরে তো মরুক, যুদ্ধের সাহায্য আগে। শহীদ সাহেব এর হুকুমে তখন মুজিব বিভিন্ন জায়গায় লঙ্গরখানা খোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরে । পড়াশুনা ছেড়ে দূর্ভিক্ষপীড়িতদের সেবায় ঝাপিয়ে পড়ে । ( পাতা – ১৮ )

রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাভাবনা ছিলো প্রখর । তার লেখায় এটা প্রমান মিলে ।
আমাদের বাঙ্গালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হল 'আমরা মুসলমান, আরেকটা হল, আমরা বাঙ্গালি।' পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে আছে ... ঈর্ষা, বিদ্বেষ সকল ভাষায়ই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু বাঙ্গালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই, ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙ্গালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। সুজলা, সুফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি। এমন উর্বর জমি দুনিয়ায় খুব অল্প দেশেই আছে তবুও এরা গরিব। কারণ, যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজের দোষে। নিজেকে এরা চেনে না, আর যতদিন চিনবে না এবং বুঝবে না ততদিন এদের মুক্তি আসবে না।'
অনেক সময় দেখা গেছে, একজন অশিক্ষিত লোক লম্বা কাপড়, সুন্দর চেহারা, ভাল দাড়ি, সামান্য আরবি, ফার্সি বলতে পারে, বাংলাদেশে এসে পীর হয়ে গেছে। বাঙ্গালী হাজার হাজার টাকা তাকে দিয়েছে একটু দোয়া পাওয়ার লোভে। ভাল করে খবর নিয়ে দেখলে দেখা যাবে এ লোকটা কলকাতার কোন ফলের দোকানের কর্মচারী অথবা ডাকাতি বা খুনের মামলার আসামি। অন্ধ কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাসও বাঙ্গালির দুঃখের আর একটা কারণ।'
পৃষ্ঠা -৪৭

কাজপাগল মানুষ দেশের মানুষের মঙ্গলচিন্তায় সর্বদা ছিলো জাগ্রত । তাই সে বলেছিলো
“আমি অনেকের মধ্যে একটা জিনিস দেখেছি, কোন কাজ করতে গেলে শুধু চিন্তাই করে। চিন্তা করতে করতে অনেক সময় পার হয়ে যায়, কাজ আর হয়ে উঠে না। অনেক সময় করব কি করব না, এই ভাবে সময় নষ্ট করে এবং জীবনে কোন কাজই করতে পারে না। আমি চিন্তাভাবনা করে যে কাজটা করব ঠিক করি, তা করেই ফেলি। যদি ভুল হয়, সংশোধন করে নেই। কারন যারা কাজ করে তাদেরই ভুল হতে পারে, যারা কাজ করে না তাদের ভুল ও হয় না”।
পৃষ্ঠা ৮০

তারপরের সময়টা খুব কঠিন সময় বৃটিশদের পতন । এবং হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা । এবং পাকিস্তানের জন্ম ।
পাকিস্তান হওয়ার সাথে সাথেই ষড়যন্তের রাজনীতি শুরু হয়। বিশেষ করে জনাব সোহরাওয়াদীর বিরুদ্ধে দিল্লিতে এক ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ( পাতা-৭৫)
১৯৪৮ সালে ৮ ইং ফেব্রুয়ারী করাচিতে পাকিস্তানে সংবিধান সভায়। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার গভীর ষড়যন্ত্র। প্রতিবাদি হয়ে উঠেন বঙ্গবন্ধু মুজিব। তখন বিভিন্ন সভা করে প্রতিবাদ শুরু করে শেখ মুজিব। এই সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমদ্দুনমজলিস যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা আহবান করে একটা রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। সেই সময় বঙ্গবন্ধুকে অনেকবার জেলে নেওয়া হয়েছিলো । (পাতা-১১০-১১১)

১৯৪৯ সালে ১১ ই অক্টোবর আরমানিটলায় বিরাট সভায় মাওলানা ভাসানী বক্তব্যের পরেই শামসুন হক সাহেব বক্ততা করেন তারপর বঙ্গবন্ধু বক্তব্যে ছিলো যদি কোন লোককে হত্যা করা হয় তার বিচার কি হবে । ফাঁসি হবে। যারা হাজার হাজার লোকের মৃত্যুর কারন, তাদের কি হবে ? জনগন বললো ’ফাসি হবে‘। শেখ মুজিব বললো তাদের গুলি করে হত্যা করে উচিত। তারপর জনগনকে সাথে নিয়ে এক শোভা যাত্রা বের করে । একপর্যায়ে শোভা যাত্রায় পুলিশ গুলি করে । কাদানি গ্যাস নিক্ষেপ করে । বঙ্গবন্ধু আহত হক । রাতে ব্যাথার ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখে । এমন সময় পুলিশ আসে গ্রেফতার করতে। ভাসানী সাহেব খবর দিয়েছেন গ্রেফতার যেন না হয়। এই ব্যাথা নিয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে তিন তালা থেকে দুই তালায় লাফ দিয়েছিলেন। একটু এদিক সেদিক হলো একেবারে নিচে পড়ে মারা যেতে। শুধু মাত্র পুলিশি নির্যাতন থেকে রক্ষ পাবার জন্য । (পৃষ্ঠা - ১৩৩)
ভাষা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু জেলে, দুই বছর থেকে বেশি সময় বিনা বিচারে জেলে আটকা পড়ে আছেন, তখন ঠিক করলেন মুক্তির জন্যে আমরণ অনশন করবেন। খবর পেয়ে কর্তৃপক্ষ তাঁকে এবং তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীকে ফরিদপুর জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। অনশন শুরু করার দুইদিনের ভেতর খুব শরীর খারাপ হলে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হল। চারদিন পর তাদের নাক দিয়ে জোর করে খাওয়াতে শুরু করল। বঙ্গবন্ধুর নাকে ঘা হয়ে গেছে, রক্ত আসে যন্ত্রণায় ছটফট করেন। যখন বুঝতে পারলেন আর বেশিদিন বাঁচবেন না, গোপনে কয়েক টুকরা কাগজ আনিয়ে বাবা, স্ত্রী এবং তাঁর দুই রাজনৈতিক নেতা সোহরাওয়ার্দী এবং মাওলানা ভাসানিকে চিঠি লিখলেন, কারণ তখন বুঝে গেছেন কয়েকদিন পর আর লেখার শক্তি থাকবে না।
পাতা- ১৩৩

কতটা সাদামাটা সহনশীল মানুষ বঙ্গবন্ধু তার এই উক্তিতে বোঝা যায়
পাঞ্জাবে শীত যে কি ভয়ানক । সেই ভয়ানক শীতে সেখানকার মানুষ কম্বল এর উপর কম্বল দিয়ে, ঘরে আগুন জ্বালিয়ে ঘুমাতো তাও ঘুম হতো না । এত শীত সেখানে মুজিব বলেছিলো ‘‘ আমি পূর্ব বাংলার মানুষ, একটা চাদর গায়ে দিয়েই শীতকাল কাটিয়ে দিতে পরি । ( পাতা- ১৩৯)
রাজনীতির কাজে যখন যেখানে যেতো সেখানে সস্তায় হোটেল আর সস্তায় খাবার খেয়ে দিন কাটাতো এই সর্ব কালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী ।
পাতা-১৪০
১৯৪৯ এর মাঝামাঝি থেকে ১৯৫২ এর মার্চ এর শুরু পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান কারাগারে বন্ধী ছিলেন। এখানে একজন সমাজকর্মী চন্দ্র ঘোষের সাথে তার সম্পর্কের কথা আলোকপাত করেছেন। এই চন্দ্র ঘোষ চিলেন একজন সমাজকর্মী। রাজনীতি করতেন না। তার সাথে শেখ মুজিবের কারাগারের একটি ঘটনা তার লেখা বই
অসমাপ্ত আত্মজীবনী - শেখ মুজিবুর রহমান থেকে নিচে তুলে ধরা হল-
চন্দ্র ঘোষ স্ট্রেচারে শুয়ে আছেন। দেখে মনে হল আর বাঁচবেন না, আমাকে দেখে কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, "ভাই, এরা আমাকে "সাম্প্রদায়িক" বলে বদনাম দিল; শুধু এই আমার দুঃখ মরার সময়। কোনোদিন হিন্দু মুসলমানকে দুই চোখে দেখি নাই। সকলকে আমায় ক্ষমা করে দিতে বোলো। আর তোমার কাছে আমার অনুরোধ রইল, মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখো। মানুষে মানুষে কোন পার্থক্য ভগবান ও করেন নাই। আমার তো কেউ নাই, আপন ভেবে তোমাকেই শেষ দেখা দেখে নিলাম। ভগবান তোমার মঙ্গল করুক।"
এমনভাবে কথাগুলো বললেন যে সুপারিন্টেনডেন্ট, জেলার সাহেব, ডিপুটি জেলার, ডাক্তার ও গোয়েন্দা কর্মচারী সকলের চোখেই পানি এসে গিয়েছিল। আর আমার চোখেও পানি এসে গিয়েছিল। বললাম, "চিন্তা করবেন না, আমি মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। রাজনীতিতে আমার কাছে মুসলমান, হিন্দু ও খ্রিস্টান বলে কিছু নাই। সকলেই মানুষ।" আর কথা বলার শক্তি আমার ছিল না। শেষ বারের মত বললাম। "আল্লাহ করলে আপনি ভাল হয়ে যেতে পারেন। " তাকে তারপর নিয়ে গেল।
পৃষ্ঠা -১৯১
১৯৭০ সালে ৭ ডিসেম্বর সাধারন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নিরস্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামীলীগ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনে মধ্যে ১৬৭টি আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৮৮ টি আসন লাভ করে।
৪৮, ’৫২, ’৬২, ’৬৬, ’৬৯ এবং সবশেষে ১৯৭১ এই ২৩ বছর ধরে সে মহাজাগরণের মধ্যে একটি স্বাধিন দেশ জন্ম হলো যার নাম বাংলাদেশ । অনেক দাম দিয়ে কেনা এই দেশ । এ দীর্ঘ সময় জুড়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র এবং বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার উপযোগী সুস্থ-সবল সাংস্কৃতিক সংগ্রাম এ সব রক্তঝরা বেগবান আন্দোলনের চুরান্ত প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল ১৯৭১-এর মার্চ মাসে।
বাংলার মানুষ একটি ভাষণ শুনেছিল। যে মানুষটি ১৯৪০ থেকে সক্রিয় রাজনীতির অবস্থান ‘৪৮ থেকে শুরু করে ‘৭১ পর্যন্ত সময়ে একটি দেশ ও জাতির মুক্তির ডাকটি দেবার জন্য নিজেকে তৈরি করেছেন । দেশের মানুষ সেই ডাকে সাড়া দিয়ে এক মহাজাগরণে সামিল হয়ে ইতিহাসে বাঙালির মুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তিনিই হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রচুর পড়তেন তিনি। ছিলেন একজন সর্বভূক পাঠক। তিনি কেবল পড়তেন-ই না, সমস্ত বিশ্বের নামজাদা সব লেখক, দার্শনিক, রাজনীতিবিদদের মনের ভিতরে উচ্চ সম্মানের আসনে রাখতেন। ভালোবাসতেন বার্ট্রান্ড রাসেল, আব্রাহাম লিঙ্কন, উইন্সটন চার্চিল আর মহাত্মা গান্ধীর লেখা। বার্নার্ড শ’র “মানব এবং অতিমানব” এই বইটি তিনি মৃত্যুর আগে রাতে পরেছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘরে গেলে আজ আমরা দেখে উঠি তাঁর গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা গড়ে তুলতে কী বিপুল পড়াশোনা ছিল তাঁর।
বঙ্গবন্ধু নিজে লিখে গেছেন শক্তিশালী বিরোধীদলের কথা, গনতন্ত্রের কথা। অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পড়ে বোঝা যায় সত্যিকারের গণতন্ত্র কি ? আমাদের একটি শক্তিশালী স্বাধীনতার স্বপেক্ষের বিরোধী দলের দরকার ।
বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীটি আমাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্ব¡পূর্ণ একটি বই। আমরা যারা দেশকে ভালোবাসি তাদের সবাইকে এই বইটি পড়তে হবে। আমরা যারা নতুন প্রজন্ম যারা দেশের ইতিহাস জানতে চাই তাদেরকে এই বই পড়তে হবে। নতুন যারা রাজনীতি করেন তাদেরকে এই বই পড়তে হবে। এই বইটি পড়লেই আমরা জানবো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী একজন সংগ্রামী মানুষের কথা। বুঝতে পারবো কীভাবে একজন মানুষ একটি জাতি হয়ে উঠে, একটি জাতি কীভাবে দেশ হয়ে উঠে ।
নতুন প্রজন্ম আজ যারা বিরোধী দল করেন। যারা জামাত-শিবিরের মতো দলের সাথে যুক্ত আছেন । তারা এই বইটি পরবেন। রাজনৈতিক আদর্শকে জনতে পারবেন। দেশের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য মমত্ববোধ জন্মাবে। আমাদের শক্তিশালী বিরোধীদল প্রয়োজন তবে সেটা অবশ্যই দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ভালোবেসে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত হয়ে রাজনীতি করতে হবে।


মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.