![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটবেলায় দেখেছি বৃষ্টির জন্য শিন্নি করতে।
তা করা হত বিশেষ করে চৈত্রের শেষের দিকে বা বৈশাখের শুরুতেও। চৈত্রের দাবানলে মাঠ ঘাট পুকুর নালা সবই যখন প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির।চারিদিকে তখন বৃষ্টির জন্য হাহাকার। তখন এলাকার মুরব্বিরা ঠিক করত আল্লাহর দরবারে বৃষ্টি মাগা হবে। এলাকার সমস্ত কৃষকেরা মিলে রাতের বেলা এলাকার প্রতিটি বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে বৃষ্টির জন্য দোয়া করা হত আর তখন সুর বেঁধে গাওয়া হত
আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ,ছায়া দেরে তুই -আল্লাহ মেঘ দে।
আসমান হইল টুডা টুডা ,জমিন হইল ফাডা-মেঘ রাজা ঘুমাইয়া রইছে মেঘ দিব তোর কেডা
আল্লাহ মেঘ দে।
আলের গরু বাইন্দা গেরস্থ মরে কাইন্দা, ঘরের রমনী কান্দে ডাল খিচুরী রাইন্দা
আল্লাহ মেঘ দে —।
প্রতিটি বাড়ির সকলেই কূলার উপরে পানি ঢেলে দিত, সেই সাথে চাল, এইভাবে পুরা এলাকাতে তিন দিন বা সাত দিন ধরে বৃষ্টির জন্য দোয়া কামনা করা হত আর সবার কাছ থেকে চাল আর অর্থ সংগ্রহ করাহত।
পরে এলাকার সবাই মাইল বিভিন্ন এবাদত বন্দেগীর পরে মহান আল্লাহপাকের দরবারে বৃষ্টি কামনায় বিশেষ মুনাজাত করা হত। আমার যতটুক মনে আছে বৃষ্টি জন্য দোয়া মুনাজাতে অনেক লোকের সমাগম হত। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের তিলাওয়াতের সাথে সাথে আগত মুসল্লিদের আমিন আমিন ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত হত।একই দিন সংগ্রহকৃত চাল এবং অর্থ ব্যয় করে শিন্নি বানানো হত যাকে বৃষ্টির শিন্নি বলা হত। কথিত আছে বৃষ্টির দোয়া শেষ না হওয়ার আগেই পরম করুনাময় আলাহ পাকের ইচ্ছায় বৃষ্টি নামত আর সবাই বৃষ্টি স্নান করেই বাড়ি ফিরত। এই রকম ঘটনার বর্ণনা পবিত্র হাদিসে অসংখ্যবার উল্ল্যেখ হয়েছে। আমার দেখা স্মৃতিতে দোয়া অনুষ্টানের দু'একদিনের মধ্যেই আল্লাহর ইচ্ছায় বৃষ্টি নামত আর গোটা পৃথিবী যেন শান্তি হত।
অতি বৃষ্টি বা অনা বৃষ্টি একটি খোদায়ী গজব যা আমাদের কৃত কর্মের জন্য শাস্তি স্বরূপ পৃথিবীতেই দিয়ে থাকেন। আর এর জন্য উচিত আল্লাহ পাকের কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়া , বেশি বেশি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। আমরা যেন আজকে দোয়া করতে ও ভুলে গেছি। চাইলে চাইতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে , কারণ পৃথিবীর কোনো শক্তির মাধ্যমে একফোটা বৃষ্টি পৃথিবীর জমিনে বর্ষণ করার ক্ষমতা নেই। আল্লাহ চাইলে সবকিছুই সহনশীল এবং কল্যাণময় করে দিতে পারেন , তাই শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাওয়া উচিত এবং সাহাহ্য চাইবার ভাষা আল্লাহ পাকি তাঁর পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন।
১) হে আমাদের প্রতিপালক, এ দুনিয়ায়ও তুমি আমাদের কল্যাণ দান করো, পরকালেও তুমি আমাদের কল্যাণ দাও; (সর্বোপরি) তুমি আমাদের আগুনের আযাব থেকে নিস্কৃতি দাও । (সূরা বাকারা : আয়াত ২০১)
২) হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের সবরের তাওফীক দান করো, দুশমনের মোকাবেলায় আমাদের কদম অটল রাখো এবং অবিশ্বাসী কাফেরদের মোকাবেলায় তুমি আমাদের সাহায্য করো; (সূরা বাকারা : আয়াত ২৫০)
৩) হে আমাদের মালিক, যদি আমরা কিছু ভুলে যাই, (কোথাও) যদি আমরা কোনো ভুল করে বসি, তার জন্যে তুমি আমাদের পাকড়াও করো না, হে আমাদের মালিক, আমাদের পূর্ববর্তী (জাতিদের) ওপর যে ধরনের বোঝা তুমি চাপিয়েছিলে তা আমাদের ওপর চাপিয়ো না, হে আমাদের মালিক, যে বোঝা বইবার সামর্থ আমাদের নেই তা তুমি আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না, তুমি আমাদের ওপর মেহেরবানী করো । তুমি আমাদের মাফ করে দাও । আমাদের ওপর তুমি দয়া করো । তুমিই আমাদের (একমাত্র আশ্রয়দাতা) বন্ধু, অতএব কাফেরদের মোকাবেলায় তুমি আমাদের সাহায্য করো । (সূরা বাকারা : আয়াত ২৮৬)
৪) হে আমাদের মালিক, আমরা আমাদের নিজেদের ওপর যুলুম করেছি, তুমি যদি আমাদের মাফ না করো তাহলে অবশ্যই আমরা চরম ক্ষতিগ্রস্তদের দলে শামিল হয়ে যাবো । (সূরা আল আ’রাফ : আয়াত ২৩)
৫) হে আমাদের মালিক, (তুমি) আমাদের এ যালেম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করো না । (সূরা আল আ’রাফ : আয়াত ৪৭)
৬) হে আমাদের মালিক, আমাদের এবং আমাদের জাতির মাঝে তুমি (সঠিক একটা) ফয়সালা করো দাও, কারণ তুমিই হচ্ছো সর্বোত্তম ফয়সালাকারী । (সূরা আল আ’রাফ : আয়াত ৮৯)
৭) হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা দাও এবং (তোমার) অনুগত বান্দা হিসেবে তুমি আমাদের মৃত্যু দিয়ো । (সূরা আল আ’রাফ : আয়াত ১২৬)
৮) হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের যালেম সম্প্রদায়ের অত্যাচারের শিকারে পরিণত করো না । এবং তোমার একান্ত রহমত দ্বারা তুমি আমাদের (ফেরাউন ও তার) কাফের সম্প্রদায়ের হাত থেকে মুক্তি দাও । ( সূরা ইউনুস : আয়াত ৮৫-৮৬)
৯) হে আমাদের মালিক, আমরা যা কিছু গোপন করি এবং যা কিছু প্রকাশ করি, নিশ্চয়ই তুমি তা সব জানো; আসমানসমূহে কিংবা যমীনের (যেখানে যা কিছু ঘটে এর) কোনোটাই আল্লাহর কাছে গোপন থাকে না । (সূরা ইবরাহীম : আয়াত ৩৮)
১০) হে আমার মালিক, তুমি আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানাও, আমার সন্তানদের মাঝ থেকেও (নামাযী বান্দা বানাও), হে আমাদের মালিক, আমার দোয়া তুমি কবুল করো । হে আমাদের মালিক, যেদিন (চূড়ান্ত) হিসাব কিতাব হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার পিতা মাতাকে এবং সকল ঈমানদার মানুষদের (তোমার অনুগ্রহ দ্বারা) ক্ষমা করে দিয়ো । (সূরা ইবরাহীম : আয়াত ৪০-৪১)
১১) হে আমাদের মালিক, একান্ত তোমার কাছ থেকে আমাদের ওপর অনুগ্রহ দান করো, আমাদের এই কাজকর্ম (আঞ্জাম দেয়ার জন্যে) তুমি আমাদের সঠিক পথ দেখাও । (সূরা আল কাহফ : আয়াত ১০)
১২) হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের মাফ করে দাও, আমাদের আগে আমাদের যে ভাইয়েরা ঈমান এনেছে তুমি তাদেরও মাফ করে দাও এবং আমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে, তাদের ব্যাপারে আমাদের মনে কোনো রকম হিংসা বিদ্বেষ রেখো না, হে আমাদের মালিক, তুমি অনেক মেহেরবান ও পরম দয়ালু । ( সূরা আল হাশর : আয়াত ১০)
১৩) .... হে আমাদের মালিক, আমরা তো কেবল তোমার ওপর ভরসা করেছি এবং আমরা তোমার দিকেই ফিরে এসেছি এবং (আমাদের) তো তোমার দিকেই ফিরে যেতে হবে । হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের (জীবনকে) কাফেরদের নিপীড়নের নিশানা বানিয়ো না, হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের গুনাহ্ খাতা ক্ষমা করে দাও, অবশ্যই তুমি পরাক্রমশালী ও পরম কুশলী । (সূরা আল মোমতাহানা : আয়াত ৪-৫)
১৪) হে আমাদের মালিক, আমাদের জন্যে আমাদের (ঈমানের) জ্যোতিকে (জান্নাতের জ্যোতি দিয়ে তুমি) পূর্ণ করে দাও, তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও, অবশ্যই তুমি সব কিছুর ওপর একক ক্ষমতাবান । (সূরা আত তাহরীম : আয়াত ৮)
হে আল্লাহ, তুমি আমাদের দোয়া কবুল করে নাও । আমীন
©somewhere in net ltd.