নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুয়েল তাজিম

জুয়েল তাজিম

অলস হবেন, তো হতাশা পাবেন। শুরু করুন,শেষ হবেই। সামনে এগোতে থাকুন, পথ কমবেই।

জুয়েল তাজিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভ নববর্ষ ১৪২৪

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২২

ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।
সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রূপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে। তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকানদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষত স্বর্ণের দোকানে।
এখন হালখাতার দিন শেষ হয়ে বানিজ্যিক ভাবে পান্তা ইলিশের দিন শুরু হয়ে গেছে বিগত দশক থেকে। কিন্তু ইতিহাসে বাংলা নববর্ষের সাথে কোথাও ইলিশের যোগসূত্র পাওয়া যায়না। বৈশাখ। বর্ষবরণ। মানুষ ও প্রকৃতির মিলন। প্রকৃতিকে বরণ করে নেওয়ার, প্রকৃতির সঙ্গে মিলবার, নিজেকে মেলাবার উৎসব। একজন বাঙালি হিসেবে পহেলা বৈশাখকেই সবচেয়ে বড় উৎসব বলে মনে করি আমি। এমন সার্বজনীন, অসাম্প্রদায়িক উৎসব বাঙালির জীবনে আর কোথায়? সকলে এসে গাইতে পারে বৈশাখের গান। যতই পুজো বলি, ঈদ বলি, বড়দিন বলি- শেষ পর্যন্ত সবই তো ধর্মের উৎসব, ধর্মের বিভেদ। সকল বিভেদ ভুলে প্রকৃতির এমন বন্দনার দিনটি কোথায় আর? অথচ প্রকৃতির এই উৎসবে প্রকৃতি বিরোধিতা, ইলিশ নিধন, ইলিশ হত্যার উৎসবে মেতে উঠি আমরা। মেনে নেওয়া যায় এই ভয়াবহতা?
ইলিশ বৈশাখের নয়। বৈশাখের সঙ্গে কোনও সম্পর্কও নেই ইলিশের। বৈশাখের সঙ্গে ইলিশকে যুক্ত করে যে ইলিশ নিধন তা নেহায়েত পুঁজি, বাণিজ্য ও মুনাফা সর্বস্বতা ভিন্ন অন্য কিছু নয়। একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন, বুঝবেন- এই ইলিশ বাণিজ্য ও বাণ্যিজিক মিডিয়ার। যদি প্রকৃতি সম্পর্কে, প্রকৃতি বিজ্ঞান সম্পর্কে ন্যূনতম কোনও জ্ঞান থাকে তাহলেই বোঝা যায়, ইলিশের সঙ্গে বৈশাখের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রকৃতিই নির্ধারণ করে দিয়েছে কোন সময় কোন ফুল ফুটবে, কোন ফল ধরবে, কোন মাছ পাওয়া যাবে কখন। এইসময় ইলিশের ঘোর প্রজননের। এখন ইলিশমিথুন কাল। ইলিশ এখন সঙ্গম করবে, সুখ সাগরে ভাসবে যৌনসুখে, ঘুরে আসবে সাত আসমান। এই সময় ইলিশ নিধন নিতান্ত প্রকৃতি-বিরুদ্ধ কাজ। এখন ইলিশ খেলে ইলিশের বংশ বিস্তার হবে কিভাবে?
'একটি ইলিশ বিক্রি হয়েছিল ষোল হাজার টাকায়', 'বৈশাখে ইলিশ চাই', 'বৈশাখে ইলিশ কিনেছেন তো?'- এমন শিরোনাম ও খবর ইলিশ কেনার ধুমকে নেহায়েত উস্কে দেয়। ইদানিং ইলিশ আবার পাশের দেশে উপহার হিসেবেও দেওয়া হয় তাও আবার ইলিশ প্রজনন মৌসুমে, নাকি ফ্রিজিং করা ইলিশ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.