নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা পড়িয়া রয় অবহেলায়, তাহা সমগ্রই আমার কী-প্যাডের, দূর্দান্ত গতি ছড়ায়। যদি কোন অন্ধ/বদ্ধ মনের দ্বার একবার খোলা যায়?\n

আসিফুজ্জামান জিকো

অাইন বিভাগ..

আসিফুজ্জামান জিকো › বিস্তারিত পোস্টঃ

রৌদে পুড়ে লোকটা ছায়া দিয়েই যাচ্ছে..

০১ লা এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৫:৪০

বাবার গায়ের এক্টা গন্ধ আছে। লোমকুপের গোড়া দিয়ে বের হয় গন্ধটা.. ছোট বেলায় কোলে চেপে যখন ঘুরতাম তখন গন্ধটা বার বার নাক ডুবিয়ে নিতাম.. বাবা বুঝতো কি না টের পেতাম নাহ.. ঘাম আর নিকোটিন মিশ্রিত গন্ধটা বাবার লোমেভরা বুকে কাধে পিঠে লেগে থাকতো, আর আমি যতক্ষণ কোলের সওয়ারী থাকতাম ততক্ষণ ই গন্ধটা নিতে থাকতাম.... নেশার মত হয়ে গেছিল গন্ধটা..

তারপর এক্টু এক্টু বাড়তে শুরু করলাম.. কেন জানি দুরত্বটাও বাড়তে শুরু করলো.. এত এত দুরত্ব যা আমি চাইলেও অতিক্রম করতে পারিনা.. এখন আমার আর ওই গন্ধটা নেবার সুযোগ হয়ে ওঠে নাহ.. মাঝে মাঝে যখন বার বার আমার ত্রাণ কর্তা ওই লোক্টাই, তখন মনে পড়ে যায়.. গন্ধটা নিতে ইচ্ছে হয়.. দৌড়ে বুকের মধ্যে ঝাপ দিতে ইচ্ছে করে... অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করে.. বলা হয়ে ওঠে নাহ.. দুরত্বটা তখন ও বাধা হয়ে দাড়ায়.. বালিশে মুখ গুজি, চোখটা ছলছল করে... আবার সকালে উঠে বেমালুম ভুলে যাই গন্ধটা, বালিশে মুখ গোজার কথা, কিছু বলতে চাওয়ার কথা...

কিন্তু কি জানেন ? ওই রোদে পোড়া মানুষটা কিচ্ছু ভোলে নাহ.. এক সেকেন্ডের জন্যে ও নাহ হয়ত! প্রতি টা সকালে লোক্টার রুটিন ফোন.. এপাশে কেউ ধরবে না জানে, তাতে কি? হি ডোন্ট কেয়ার.. এপাশের ফোনে রিং বাজলেই সে নিশ্চিন্ত হয়ে যায়, আমি ঘুমোচ্ছি.. তারপর বেলা গড়ায়, তার জীবনযুদ্ধ ও আস্তে আস্তে জীবনমুখী হয়ে ওঠে.. কখনো বাস্তবতার চরম শিখরে উঠে যায় তার পঞ্চান্ন বছরের ক্লান্ত অবসন্ন দেহ খানি.. তবুও সে ভোলে নাহ.. আমি বড্ড খারাপ, নষ্ট..
বড্ড অকৃতজ্ঞ..

কিছুক্ষণ আগে লোক্টা ফোন দিল..
- হ্যালো.. আমি আসতেছি.. রাতে তোর সাথে থাকবো।

- কেন..?! আমার রুমের অবস্থা ভাল নাহ। পরিষ্কার করা নাহ.. অগোছালো আব্বু.. আসো কিন্তু অনায কোথাও থেক.. হোটেলে বা অত্যত্র..

- নাহ রে বাবা। আমার ওতে পোষাবে নাহহ.. আমি তোর সাথেই থাকবো..!

-কেন ?? ( নির্লজ্জের মত বলে যাচ্ছি )

-সন্তানের গায়ে এক্টা গন্ধ থাকে.. প্রত্যেক বাবাই গন্ধটার জন্যে পাগল থাকে.. তুই বুঝবি নাহহ বাবা..
( ওপাশ থেকে লোক্টা বললো..)

তার মানে আজ থেকে বছর কুড়ি আগে যখন আমি ওনার শরীরের গন্ধটা মস্তিষ্কে ধারন করে রেখেছিলাম,, ঠিক তখনই উনি ও এই একই কাজ টা করেছেন..

আমি প্রিপারেশন নিচ্ছি,, সব না বলা কথাগুলো বলবো আজকে.. আবার ও শেষ মেষ বল হয়ে উঠবে নাহহ আমি জানি.. তাতে কি, লোক্টা সব বুঝে.. আমার কথাগুলো ও বুঝে যাবে... চোখের দিককে একবার তাকালেই...

অনেকদিন আগে আমার এলাকার একটা যানে চড়েছি.. চালক বয়সে আমার ছোট.. জিগাইলাম, কি রে তুই এত ছোট মানুষ এত কষ্ট করস ক্যান ? ভাই আমার ছেলের জন্যে দুধ কিনতে হয়.. অনেক দাম..
তুই বিয়া করছস ?
- হুমম..
এত অল্প বয়সে ক্যান করেছিস ?
এবার কষ্ট করে দেখ, কি মজা !!?

- হুম ভাই,, ঠিক বলছো..
তাও কি জানো বাড়িত ফিরার পর ছাওয়ালডা যখন আব্বা কইয়ে ডাক পাড়ে,, তখন আমার যে কিরাম ভাল ঠ্যাহে..
তুমি বুঝবানা...

- ঠিকই বলে গেলো ছেলেটা, আমি বুঝি নাই এখন ও..!
কিন্তু এক্টা জিনিস বোঝায় দিয়া গেছিলো..
আমি রোদে পোড়া লোক্টারে অনেক ভালবাসি.. অনেক..
ঐ লোক্টা পুড়তে পুড়তেই আমাকে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে...

ঐ রোদে পোড়া লোক্টার জন্যে আমি কিছু করতে পারবো নাহহ মনে হয়.. প্রকৃতির কাছে কিছু চাই না আমি কখনো.. ঐ লোক্টার জন্যে কিছু করার সুযোগ চাইবো শুধু.. এই অপুর্ণ জীবনে এটা থেকে বঞ্চিত করবেনা প্রকৃতি।
সে অপেক্ষায়......

পুনশ্চঃ ২০১৫ র এই রকম আলো ফোটা সকালে লেখাটা, হঠাৎ ফেইসবুক মেমোরী হিসেবে তুলে ধরলো। মেমরী শেয়ারিং ব্যাপ্যার্টা আসলেই ভাল্লাগে...

আমার বাবাটার জন্যে সবাই একটু দোয়া করবেন।
আমি ও করবো সকলের জন্যে...

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৯

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লেখা।
++++

২| ২৪ শে মে, ২০১৮ সকাল ৭:২২

আসিফুজ্জামান জিকো বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.