নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নারী তরলের মত, যে যায়গাতেই যাবে ইচ্ছা -অনিচ্ছায় সেখানেই মানিয়ে নেবার মত অসীম সহ্য ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। এইটা শুধু আমাদের অঞ্চলে।
বাইরের উন্নত-অনুন্নত অঞ্চলের মেয়েদের আমি দেখিনি, তবুও ওরা যে আমাদের মেয়েদের মত এত্ত সহজে চাপিয়ে দেওয়া সিন্ধান্ত মেনে নিয়ে তরলের মত আচরণ করেনা তা বিভিন্ন চলচিত্র, দৃশ্য, ঘটনা কিংবা বইয়ের পাতায় করে আমি অনুমান করতে পারি।
মাঝে মাঝে সিটি বাসে চড়লে দেখি মহিলা সীট ভরে গিয়েছে। দাড়িয়ে আছে মহিলা, ছাত্রী, কেউনা কেউ! সামনের স্টপেজে দাড়িয়ে গাদাগাদি করে পুরুষ ছেলেপুলে দের তুলে নিচ্ছে, তার ভেতর থেকে দুই একজন মহিলা গন্তব্যের তাড়ায় ভীড় ঠেলে উঠতে গেলে, বাসের হেলপার-কনডাক্টর বলে-
আফা মহিলা সীট ভইরা গিছে, যাওন যাইত ন..
আমি খুব করে চাই সেই বাইরের কোন মহিলা কিংবা ভেতর থেকে কোন মেয়ে বলে ঊঠুক, কিসের মহিলা সীট? বাসের আশি সীটের ১০ টি মেয়েদের বাকি ৭০ টি পুরুষের? প্রতিটি সীটে পুরুষ এবং মহিলার সমান অধিকার?
একবার বললেই যে আমার মত আরো কতজন যাদের মা ঠিক এই সকাল ন'টার সময় কোন এক মফস্বলের বাসে চেপে শিক্ষালয়ে যাত্রা করেছেন! সেসবব ছেলেদের সবকটা কন্ঠ যে ওদের হয়ে ফুসে ওঠে এ মুহুর্তে!
কেউ বলেনা, কোন মেয়ের কন্ঠেই আমি ক্ষোভ কিংবা একটু অভিমান ও শুনতে পাইনা। স্বাধীনতার স্বাদ ওরা জানেনা। জানলে বলতো অবশ্যই।
বসে আছি মেঘে ঢেকে রাখা সদরঘাটের জনশূণ্য এক ফাকা লঞ্চের ছাদে। ওরা আজ ছাড়বেনা লঞ্চ, সবাই নেমে গেছে ডাঙ্গায়, আমাকে উঠতে দেখে জিগেস করলে বললাম, একা একা ভালো লাগছিলো না,তাই ধানমন্ডী থেকে দ্বীপন ট্রান্সপোর্টার বাসে চড়ে তোমাদের জলযানে কিছুক্ষণ বসবো বলে চলে এলাম!
কি বুঝলো জানিনা, সারেং মাস্টার, নাবিক, রাধুনী, ডেক বয় সবাই আমাকে দেখতে দেখতে নিশ্চিন্ত মনে নেমে গেলো ডাঙ্গার বাজারের দিকে।
এত সরল বিশ্বাস এই পানির উপর জীবন বেচে দেওয়া মানুষ গুলোর, এখন মায়া হচ্ছে, আমাদের জঞ্জালময় ডাঙ্গার ধুরন্ধর সব মিথ্যুক-ঠকের দলেরা কি ভীষণ ঠকাবে ওদের আজ রাত্রে!
তাতে কিছু আসে যায়না, এই প্রজাতীর মানুষ গুলোর সমস্ত ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সদা ব্যস্ত থাকেন প্রকৃতি আর স্রষ্টা।
স্ক্রীনে ছিটে বৃষ্টির পানিতে আঙ্গুল সাতার কাটছে, কালো গেঞ্জী আর নীলচ হাফ প্যান্ট ভিজে চুপসে গিয়েছে, মাথা দিয়ে বড় বড় ফোটা ঝরছে, ঠাণ্ডায় ক্রমশ কাপছি, ফিরে যেতে হবে তবুও বসে আছি।
এমন অনিশ্চিৎ সুখের সময় আমি হারবো না জীবনের নিত্য প্রযোজনে এই মেঘের গ্রহণে বসে আমি বলে যাচ্ছি। স্বাধীন হতে চাইলেই তবেই তা পাওয়ি যায়। একটু কষ্ট হলে ও স্বাধীনতার স্বাদ ভয়ংকর সুন্দর, কয়েক হাজার বার মরণে ও আমার নিউরণ, দেহ-মন আর চারপাশটাকে দখলমুক্ত একদম রবি ঠাকুরের খোলা হাওয়ার অবাধ বিচরণ চাই..
©somewhere in net ltd.