![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত ২ টা ৩৭ মিনিট। ঠাহর করতে পারছি না এখন ঠিক কোন জায়গায় আছি। বাস চলছে বাতাসের চেয়েও দ্রুত গতিতে। বাসের সবাই মোটামুটি গভীর ঘুমে নিমজ্জিত। আমার পাশের সিটে বসা সহযোদ্ধা বেশ আরাম করেই ঘুমাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। পিচের উপর দিয়ে বাসের দ্রুত ঘুর্নায়মান চাকার দ্বারা সৃষ্ট শব্দের কারনে হয়তো তার নাক ডাকার শব্দটা আমার কানে আসছে না। বাসের একেবারে সামনের দিকের একটা সিট আমার জন্য বরাদ্দ ছিল- মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে বাসের স্টিয়ারিং আমার হাতে, আমিই নিয়ন্ত্রন করছি বাসটাকে। বাসের ভেতরের বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। অন্ধকার বাসের ভেতর আমার নকিয়া ১২০৮ মডেলের হ্যান্ডসেটের টর্চলাইটটা পর্যাপ্ত আলো যোগাচ্ছে লিখার জন্য। বাসের সুপারভাইজর সাহেব আমার এ অবস্থাটা দেখছেন কিছুটা সরু চোখে তাকিয়ে; ব্যাপারটা বেশ মজার ছিল। লিখাটা এখন শুরু করতে না পারলে আর কাগজ কলম নিয়ে বসা হবে না- আমি আমাকে জানি; তাই কিছুটা ঝক্কি ঝামেলা এড়িয়েই লিখাটা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। যদিও লিখার চেয়ে বাসের বাইরের দিকেই আমার মনোযোগ এখন বেশি। বাসের ঝাকুনিতে সামান্য না, বেশ ভালোই সমস্যা হচ্ছে। টেনশনে আছি নিজের হাতের লিখা পরবর্তীতে নিজেই চিনব কিনা। বাস যখন জ্যামে আটকে যাচ্ছে কিছুক্ষনের জন্য তখন আর ঝাকুনি অনুভব করছি না। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে বাস যখন থেমে যাচ্ছে আমার কলমও তখন থেমে যাচ্ছে; কেন জানি বাস চলাকালীন সময়ে ঝাকুনির মধ্যেই আমার কলমটা ভালো চলছে।
বাস যত এগিয়ে যাচ্ছে আমি যেনো আমার নিত্যদিনের বয়ে বেড়ানো কাজের চাপ, টেনশন আর যান্ত্রিক জীবন কে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছি। ওসব কিছু বয়ে বেড়ানোর জন্য এখন আমার মস্তিষ্কের কোন কক্ষই খালি নেই, আমি এখন অনেকটাই হালকা। পিছুটান গুলো এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে তারা এখন আর আমাকে পেছনের দিকে টানতে পারছে না। আমি এগিয়ে চলেছি পাহাড়ের দিকে- কারন “পাহাড় ডাকিছে আমায়”।
দুপুর ১২ টা ৪০ মিনিট। আমি স্বর্গ দেখিনি, কখনো দেখব কিনা তাও জানিনা তবে স্বর্গের যে বর্ননা শুনেছি মানুষের মুখে সেটার উপর ভিত্তি করেই বলছি- আমি এখন যে জায়গাটাতে বসে আছি এটা স্বর্গের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। আমি যা দেখছি তা হচ্ছে- আমার ডান বাম দুদিকেই ঘন জঙ্গলে ভরা সবুজ পাহাড়। ঝিরিপথের উপর অদ্ভুদভাবে বসানো বিশাল কালো রঙের শেওলা ধরা পাথরের উপর বসে সময়টা উপভোগ করার ব্যাপারটা খুব ভালো লাগছে। মানষের দ্বারা সৃষ্ট কোন শব্দ এই মুহুর্তে আমার কানে আসছে না। আমি যা শুনছি তা হচ্ছে নাম না জানা পাখির ডাক আর ঝিরি দিয়ে বয়ে চলা পানির শব্দ।
একটা অদ্ভুদ মোহময়ী শব্দ আমার কানে আসছে, হঠাত খেয়াল করলাম। কেন জানি শব্দটার ভিতরেও ঢুকতে পারছি আমি। শব্দটাকে শত-সহস্র ভাগে বিভাজিত করে অনেকগুলো সতন্ত্র শব্দও বের করা যাচ্ছে। এগুলো সবমিলে গলাগলি ধরে আমার মস্তিষ্কে ঢুকে আঘাত হানছে। তবে এ আঘাত আমাকে বা আমার মস্তিষ্ককে আহত করছে না একটুও; বরং এ জগতটায় হারিয়ে যাবার মাঝে নতুন একটা মাত্রা যোগ করছে। ব্যাপারটায় বেশ মজা আছে। তবে শব্দের উতস নিয়ে চিন্তা করে হুটকরেই কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারলাম না; হয়তো বিশেষ ধরনের বেশকিছু পতংগ ধারাবাহিক ভাবে ডেকে যাচ্ছে- নয়তো অন্যকিছু। আবার কেন জানি এই শব্দের উতস নিয়ে চিন্তা করাটা বাদ দিয়ে সময়টাকে উপভোগ করাটাকে বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হল।
চলবে…
©somewhere in net ltd.