নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিউরোকথন

চিরকালের শিক্ষানবিশ

নিউরোকথক

চিরকালের শিক্ষানবিশ

নিউরোকথক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিঃসংগ যুবকের মনোস্তাত্তিক যুদ্ধঃ পর্ব ১

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৫০





আজকের বিকালটা একটু অন্যরকম; কেমন জানি একটা গুমোট, মন খারাপ করা পরিবেশ। বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে পাড়ার বাচ্চাদের ক্রিকেট খেলা দেখছে সকাল। ছয় তলার উপর থেকে ক্রিকেট খেলা দেখে বেশ ভালোই আনন্দ পাচ্ছে সে। কিন্তু তার নিচে নেমে রাস্তায় যেতে ইচ্ছে করছে না। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যায় না সে। এ কারনে তার বন্ধু-বান্ধব এর সংখ্যা কমতে কমতে একেবারে নেই এর কাছাকাছি চলে গেছে। এতে তার বিন্দুমাত্রও আক্ষেপ বা ভ্রুক্ষেপ নেই। সে একা থাকতেই পছন্দ আর স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। এ ব্যাপারটা নতুন কিছু নয়। কারো সাথে মিশতে ভালো লাগে না বলে সে ঠিকমত ইউনিভার্সিটিতেও যায় না। গেলেও কাজ বা ক্লাস শেষ করে দ্রুত বাসায় ফিরে আসে। মা রাবেয়া খাতুন ব্যাপারটা খেয়াল করছেন বেশ অনেকদিন ধরেই, কিন্তু সকাল এর সাথে তিনি কখনো জোর করেন না। তিনি শুধু জানতে চেয়েছেন কোন সমস্যা হয়েছে কিনা। কিন্তু সকালের কাছ থেকে তিনি এখন পর্যন্ত গ্রহনযোগ্য কোন উত্তর পাননি। তাই তিনি একটু চিন্তাগ্রস্ত। সকালের বাবাকে জানিয়েছেন তিনি ব্যাপারটা। সবুর সাহেব সরকারী চাকুরে। ছেলের এ বিষয়টা কে তিনি খুব একটা আমলে নিয়েছেন বলে সকালের মা রাবেয়া খাতুন মনে করছেন না। সবুর সাহেব তার স্ত্রীকে একবার শুধু জিজ্ঞেস করেছেন, সকাল নেশা-টেশা করে কিনা। সকালের মা উত্তরে বলেছেন আমার ছেলে সিগারেট পর্যন্ত খায় না- আপনি এসব কি বলছেন। সবুর সাহেব স্ত্রী কে আস্বস্ত করে বলেছেন- এ বয়সে এমন একট আধটু উলটাপালটা হয়-ই, এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে; তুমি এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করো না।



সকাল সুস্থ সবল ছেলে; ছাত্র হিসেবেও কম মেধাবী নয়। বেশ কিছু বছর যাবত সে নিজেকে একটা গন্ডির ভেতর আটকে ফেলেছে। সে নিজে নিজেই একটা জগত তৈরি করেছে, সেখানে সে একাই বিরাজ করে; সেখানে অন্য কারো উপস্থিতি সে একদমই সহ্য করতে পারে না। সে নিজের তৈরি জগতটাতে খুব সুখে শান্তিতে বসবাস করছে ব্যাপারটা আসলে এমন নয়। প্রতিনিয়ত একটা উদ্ভট ভাবনা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সে এটা থেকে পরিত্রানের কোন পথ খুজেঁ পাচ্ছে না। ব্যাপারটা সে কারো সাথেই শেয়ার করেনি, এমনকি মায়ের সাথেও না। সে খুব ভালো করেই জানে এটা বলার মত কোন বিষয় নয়। কেউ শুনলে ভাববে সকাল মানসিক বিকারগ্রস্থ। সকাল তাই মনে করে। মা কে কয়েকবার বলতে যেয়েও বলতে পারেনি সকাল। সে মনে করে এই পৃথিবীতে সে এমনটা একাই।



বছর পাচেঁক আগের কথা। রাত প্রায় তিনটা। সকালের ঘুম ভেঙ্গে গেছে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে। ঘুম ভাঙ্গার পর সে আর স্পষ্ট করে কিছু মনে করতে পারছে না কি দেখেছে স্বপ্নে। এমনটা তার এই প্রথম না। মাঝে সাঝেই হয়। সকাল বিছানা থেকে নেমে এক গ্লাস পানি খেয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে রইল। আজ সে আর ঘুমাবে না। সে অন্যরকম কি যেনো একটা অনুভব করছে, নিজেও স্পষ্ট করে বুঝতে পারছে না ব্যাপারটা আসলে কি। আজকের রাতটা অন্য সব রাতের মতই, কিন্তু তার জন্য একেবারে অন্যরকম। বারান্দায় হেলান দিয়ে বসে সে নিজের হাত পা এর দিকে তাকাচ্ছে বার বার। তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, ঘরে ঢুকে আরো এক গ্লাস পানি খেল সে, তারপর আবার বারান্দায় এসে বসল। সে তার বাম পা দিয়ে দেয়ালে জোরে জোরে আঘাত করছে, লাথি মারছে। সে নিজেও বুঝতে পারছে না তার ভিতরে কি কাজ করছে। সে স্থির হতে চাইছে, পারছে না। আবারো সে দেয়ালে কয়েকটা লাথি মারল জোরে। সে অনুভব করছে তার বাম পায়ের হাটুর নিচের অংশটুকু তার নয়। এটা অপ্রয়োজনীয় একটা অংশ তার শরীরের। বাড়তি একটা জিনিস সে বয়ে বেড়াচ্ছে। এটা কোন স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এটা অবচেতন মনের কথা নয়। সে যা ভাবছে, যা অনুভব করছে সুস্থ স্বাভাবিক মস্তিষ্কেই। সকাল ট্রাউজার উঠিয়ে তার বাম পায়ের হাটুর নিচের অংশটুকু বারবার দেখছে, আঘাত করছে, নখ দিয়ে চিমটি কাটছে। সবই ঠিকঠাক। আগের মতই। অন্য আট দশটা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতই রিয়েকশান। কিন্তু সে এ বিষয়ে নিশ্চিত যে তার বা পায়ের অই নিচের অংশটুকু তার নয়। সে ভেবে পাচ্ছে না এমনটা সে কেনো অনুভব করছে। বারবার তার গলা-বুক শুকিয়ে যাচ্ছে। সে ঘরে ঢুকছে, বারান্দায় যাচ্ছে। বাম পা দিয়ে মেঝেতে আঘাত করছে। সকালের জায়গায় অন্য কোন ছেলে হলে হয়তোবা পুরো বিল্ডিং এর লোক জড়ো করে ফেলতো এতক্ষনে। কিন্তু সে এখন পর্যন্ত মা কেও ডাকেনি। সকাল ছোটবেলা থেকেই একটু বেশি আত্নকেন্দ্রিক। তার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ খুব কম। সে ভাবে অনেক কিছু, কিন্তু প্রকাশ করে কম। ওয়াশরুমে গিয়ে মাথাটা ভিজিয়ে আবার বারান্দায় গিয়ে বসল সে। সে মাথা ঠান্ডা করে আবারো ভাবতে চাইছে।



চলবে…

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.