নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার দেশ

রুবেল১৯৮৭

আমি বিশ্বস করি ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ কিন্তু ধর্মহীনতায় নয়।

রুবেল১৯৮৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আদিনাথ মন্দির - ঐতিহাসিক ঐতিহ্য

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:২০

শ্রীশ্রী আদিনাথ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবতা দেবাদিদেব মহাদেবের নামানুসারে। বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর বঙ্গোপসাগর ঘেষা মৈনাক পর্বতের সর্বউঁচু চুড়ায় মনোরম পরিবেশে আদিনাথ শিব, তীর্থ মন্দিরটির অবস্থান। আদিনাথের অপর নাম মহেশ। এই মহেশের নাম অনুসারে মহেশখালী। আদিনাথের গোড়াপত্তন কয়েক হাজার বৎসর পূর্বে ত্রেতাযুগে, এর একটি ঐতিহাসিক সত্যতা রয়েছে এবং তা পাওয়া যায় হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ, রামায়ণ, পুরাণ ও ঐতিহাসিকদের বর্ণনায়। তিনি সর্ব গুণময় হয়েও গুণাতীত অব্যক্ত ভগবান। ব্যক্ত চরাচরে শিবরূপি উর্ধরূপি শিবলিঙ্গ। সকলি নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত রেখে জ্ঞানময়, কল্যাণময়, মঙ্গলময় সর্বকল্যুষ বিনায়ক, সত্য শ্বাশত সনাতন।



সাগর পাড়ের পাহাড় ঘেষা নির্জন মনোমুগ্ধকর স্থানে শ্রীশ্রী আদিনাথের গোড়াপত্তন। প্রকাশ মন্দির নির্মাণ। তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত লাভের ইতিহাস ব্যপক। তবে সংক্ষিপ্ত আকারে এই সব ইতিহাস এখানে আলোচিত হয়েছে। শ্রীশ্রী আদিনাথ হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহৎ তীর্থস্থান। যে কোন সনাতনী ব্যক্তি শ্রীশ্রী আদিনাথ দর্শন না করে অন্য তীর্থ কখনও সফলকাম হয় না। যেহেতু স্বয়ং মহাদেব একমাত্র এই স্থানেই আবির্ভূত হয়েছিলেন, সুতরাং তীর্থের মোক্ষ্য লাভের এবং মনসকামনা পূরণের জন্য শ্রীশ্রী আদিনাথ দর্শনই সর্বশ্রেষ্ঠ।



ত্রেতা যুগে রাম রাবণের যুদ্ধের কথা। রাবণ লংকা যুদ্ধে রামের সঙ্গে জয় লাভের জন্য উদগ্রীব। তিনি দেবদিদেব মহাদেবের কাছে অমরত্ব রব প্রার্থনা করেন। এই সময়ে মহাদেব কৈলাসে ধ্যানমগ্ন। রাবণের আরাধনায় দেবাদিদেব সন্তুষ্টি হয়ে রাবণকে বর দিলেন। তবে সঙ্গে শর্ত জুড়ে দিলেন। শর্ত হল শিবরূপি উর্ধ্বমুখী শিবলিঙ্গকে কৈলাস থেকে বহন করে লংকায় নিয়ে যেতে হবে, পথিমধ্যে কোথাও রাখা চলবে না। যদি পথিমধ্যে কোথাও রাখা হয় তা হলে মহাদেব সেই স্থানেই অবস্থান নিবেন। রাবণ শর্তে মেনে নিলেন এবং মহাদেবকে কান্ধে করে রওয়ানা দিলেন। যাত্রা পথে এটি মৈনাক শিখরে রাখতে বাধ্য হন। ওই সময় এই স্থানে নারায়ণ ব্রাহ্মণ রূপে আবির্ভূত হলেন। রাবণ এই ব্রাহ্মণকে সাক্ষী স্বরূপ দাঁড় করে এই পর্বতের পিছনে প্রকৃতির কাজ সারতে গেলেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ রূপে নারায়ণ কালক্ষেপণ না করার জন্য সময় বেঁধে দিলেন। রাবণ প্রকৃতির কাজ কয়েক ঘন্টায় শেষ করতে পারলেন না। ওই জায়গাটি এখনও বিদ্যমান, যার নাম মুদিচড়া রূপে পরিচিতি বহন করছে মন্দিরের এক কিলোমিটার পিছনে। প্রকৃতির কাজ সেরে রাবণ এসে সেই ব্রাহ্মণ দেখতে পেলেন না। অবশেষে শিলারূপি মহাদেবকে কাঁধে উঠাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোন অবস্থাতেই উঠাতে পারলেন না। শেষে ক্রোধান্বিত হয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করেও উঠাতে পারলেন না। যাহা এখনও বিদ্যমান। শেষে দেববাণী হতে লাগল রাবণ তোমার অমরত্ব লাভ ব্যর্থ হল, তুমি খালি হাতে লংকায় চলে যাও। মহাদেব এই মৈনাক শিখরেই অবস্থান নিবেন। রাবণ যেই লংকায় পৌঁছলেন তখন রামের সহিত ভয়ংকর যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পরাজয় বরণ করলেন।



এই দিকে শ্রীশ্রী আদিনাথের মৈনাকে অবস্থান নেয়া এবং আবিষ্কার সম্পর্কে এক সুন্দর জনশ্রুতি আছে। জনশ্রুতি হলেও এলাকাবাসীদের মতে ঘটনাটি সত্য। এই সত্য আরো সুন্দর হয়ে উঠেছে।



তা হল হিন্দু সম্প্রদায়ের এই তীর্থ স্থানটি আবিষ্কৃত হয় ও বিশেষ মর্যাদা পায় এই মহেশখালীর একজন সচ্ছল মুসলমানের হাতে। তার নাম নূর মোহাম্মদ সিকদার। তার একটি গাভী হঠাৎ দুধ দেয়া বন্ধ করে দেয়। এই ব্যাপারে তিনি রাখাল ছেলের উপর সন্ধিহান হন এবং প্রতিদিন রাখাল ছেলেকে গালমন্দ দিতে থাকেন। মনিবের গালমন্দে অতিষ্ঠ হয়ে রাখাল ছেলেটি রাত্রি বেলায় গোয়াল ঘরের গাভীটিকে পাহারা দেয়া আরম্ভ করলেন। কারণ কেউ দুধ চুরি করে কিনা। গভীর রাত্রে সে দেখতে পায় গাভীটি গোয়াল ঘর থেকে বের হয়ে গভীর জঙ্গলের দিকে চলে যাচ্ছে। এই দিকে রাখাল বালকও গাভীটির পিছনে অনুসরণ করতে থাকে। গাভীটি সোজা চলে এসে ওই কাল পাথরের উপর গিয়ে দাঁড়ায় এবং আপনা আপনি ওই পাথরের উপর দুধ পড়তে থাকে। দুধ পড়া শেষ হলে সঙ্গে সঙ্গে গাভীটি পুনরায় ওই নূর মোহাম্মদ সিকদারের গোয়াল ঘরে চলে গেলেন। এই অবস্থা রাখাল বালকটি স্বচক্ষ্যে দেখে তার মালিককে পূর্ণ ঘটনা খুলে বলে। কিন্তু গৃহকর্তা তেমন গুরুত্ব না দিয়ে গাভীটিকে বড় মহেশখালী নামক স্থানে সরিয়ে নিয়ে রাখলেন। এই সময় তিনি রাত্রিতে স্বপ্নে দেখেন যে, গাভীটিকে দূরে লোহার শিকলে বেঁধে রাখলেও ওই স্থানে দুধ দেয়া বন্ধ হবে না বরং গাভীটির আসা-যাওয়া কষ্ট হবে। তিনি আরও স্বপ্নে আদেশ পান ওই স্থানে মন্দির বেঁধে দেয়ার স্থানীয় হিন্দু জমিদারকে বলার জন্য। ইতোমধ্যে সেই রাখাল ছেলেটি ওই কাল পাথরে একখানা ছোরা দিয়ে শান দিতে থাকায় তখনই অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করা হলেও আর বাঁচানো যায়নি।



আবার এই নূর মোহাম্মদ সিকদারই শিবের শক্তি অষ্টভুজাকে সুদূর নেপাল থেকে এনে এই মৈনাক শিখরে অবস্থান করানোর আদেশ পান এবং নাগা সন্ন্যাসীর মাধ্যমে ১৬১২ সালে নেপাল স্টেইটের মন্দির থেকে চুরি করে নিয়ে আসার সময় ধরা পড়ে যায় ও জেল বন্দি হয়ে পড়েন। যেদিন রায় ঘোষণা হবে তার পূর্ব রাত্রিতে এই নাগা সন্ন্যাসী যোগমায়া বলে মহাদেবের সান্নিধ্যে কৃপা লাভ করেন এবং মহাদেব অভয় বাণী দেন। বিচারক তোমাকে যে প্রশ্নই করুক না কেন তুমি নির্ভয়ে তোমার মুখ দিয়ে যাহা বের হবে তাহাই বলিবে। পরের দিন হলও তাই। মহামান্য বিচারক নেপাল রাজাকে প্রশ্ন করে মূর্তির রং জানতে চান। রাজা উত্তরে উনার মূর্তির রং কষ্টি পাথরের বর্ণনা দেন, আবার ওই নাগা সন্ন্যাসী উত্তরে বলেন, আমার মূর্তির রং সাদা। এখন মহামন্য বিচারক প্রতেক্যের সম্মুখে উন্মোচন করে দেখন প্রকৃত সাদা রং-ই মূর্তির আসল রং। তখনই নাগা সন্ন্যাসীর পক্ষে রায় ঘোষণা করা হয় এবং নেপালের রাজা ক্ষমা প্রার্থনা করেন প্রকৃত ঘটনা জানতে উদগ্রীব। তখন নাগা সন্ন্যাসী বিস্তারিত খুলে বলেন। এতে ওই রাজাই এই মূর্তিটিকে যথাযথ মর্যাদার সহিত এই মৈনাক পর্বতে শ্রীশ্রী আদিনাথের পার্শ্বেই স্থাপিত করে এবং মূল মন্দির নির্মাণ করে যান। এখনও প্রায় সময় নেপাল সরকার মাঝে মর্ধে যথাসাধ্য অনুদান দিয়ে থাকেন। এই মৈনাক পর্বত হিমালয়ের শাখা, পূরাকালে প্রাগইতিহাস্পুর, ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম, আরকান, ব্রহ্মদেশ, মালদ্বীপ ও পর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত এক সমসূত্রে গাঁথা ছিল। বর্তমান সময়ের নিম্নবঙ্গ ছিল সাগর গর্ভে, আর্যরা এই অঞ্চলকে পূর্ব সাগর বলত। অর্থাৎ মগদের পরই ছিল সমুদ্র। এমনকি বিন্দ পর্বত ও দক্ষিণ সাগর তীরবর্তী বলে উল্লেখ আছে। এই মৈনাকের অবস্থান লবণ সমুদ্রে, পূরাণ আদিতে উল্লেখ আছে। চট্টগ্রাম দক্ষিন পশ্চিম দিকস্থ মহেশখালী দ্বীপ। এই দ্বীপেই মৈনাক, মৈনাক শীর্ষেই আদিনাথ শিবের অবস্থান।



তৎকালীন নবাব আলীবর্দী খাঁন দেওয়ান ব্রজ কিশোর লাল কানুনগোর প্রতিনিধি দেওয়ান কালিচরণের নয় বৎসরের কিশোর শরৎচন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে এই দ্বীপে আসেন এবং দ্বীপটি ক্রয় করেন। পরে শরৎচন্দ্র ওই নাগা সন্ন্যাসীর সংস্পর্শে এসে দীক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি পরবর্তীতে তাহার জমিদারী সকল সম্পত্তি ১৮৭৬ সালে শ্রীশ্রী আদিনাথ মন্দিরের নামে দেবত্তর সম্পত্তি হিসেবে উইল করে যান। আদিনাথ দ্বৈত ব্যবস্থাপনা পুরী এ্যাক্ট অনুযায়ী মোহন্ত শাসনে ছিল। পরে মোহন্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠিলে ১৯১১ ইং এর ব্যবস্থাপনা সীতাকুন্ড স্রাইন কমিটির অধীনে চলে যায়। যা এখনও বর্তমান।



বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ভারতীয় উপমহাদেশের হাজার হাজার তীর্থযাত্রী পূর্ণ অর্জনের জন্য প্রতি নিয়ত যাতায়াত করে পূণ্য সঞ্চয় করে থাকেন। প্রত্যেক বৎসর ফাল্গুনের শিব চতুর্দ্দশী তিথিতেও লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থী এসে পূণ্য সঞ্চয় করে যান। এই শিব চতুর্দ্দশী মেলা পক্ষ কাল ব্যাপী স্থাপিত্ব হয়ে থাকে। উপমহাদেশের সকল স্থান থেকে সকল সম্প্রদায়ের ভীড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে মিলন মেলা ও তীর্থ ক্ষেত্র।



আবার অনেকেই প্রতিনিয়ত এসে মানত করে যান মনসকামনাপূর্ণ হওয়া এবং দুঃখ যন্ত্রণা লাঘবের জন্য। আরও দেখা যায় মন্দিরের বিভিন্ন গাছে সুতলী বেঁধে মানত করেন, আবার সফলতা লাভ করে পুনরায় এসে সুতলীর বাঁধন খুলে পূজা পার্বণ দিতেও দেখা যায়।



মহেশখালীতে কোন দূর্গা প্রতিমা বানানো হয় না। কারণ স্বয়ং অষ্টভূজা দূর্গা জাগ্রত আছেন। বর্তমান আয়তন প্রায় ১৫৫ মাইল এবং লোক সংখ্যা প্রায় ৩,৪৮,৫০০ জন। (সংগৃহীত)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.