![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বাধীনতার দাবী করে মুজিব অন্যায় করেন
বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবী করে শেখ মুজিবর রহমান কোন অন্যায় করেন নি। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি যদি দেশের স্বাধীনতা চেয়ে থাকেন তাহলে তিনি রাজনৈতিক অপরাধী হতে পারেন না। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে তাই আমাদের একমাত্র দাবী, মুজিবর রহমানের মুক্তি চাই।
কলাসীম, গাইঘাটা, বনগাঁ ও বাগদার শরণার্থী শিবিরগুলি পরিদর্শনের পর ক্যানাডার সরকারী দলের নেতা শ্রীজর্জ ল্যাচেনস সাংবাদিকদের কাছে তাঁদের এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
বুধবার নয়াদিল্লী থেকে দমদম বিমানঘাঁটিতে নেমে তাঁরা সোজা সীমান্ত শিবিরগুলি পরিদর্শনে যান। পথের দুপাশে অগণিত জনতার মিছিল তাঁদের বার বার জিজ্ঞাসার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দোভাষীকে দিয়ে জিজ্ঞাসা করান, কোথায় তাদের ঘর, কতদূর থেকে তারা আসছে। সেই একই বেদনাময় কাহিনী। মায়ের বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে সন্তানকে, সদ্যবিবাহিতা স্ত্রীর চোখের সামনে স্বামীকে করেছে হত্যা, ইয়াহিয়ার রক্তলোলুপ বাহিনীর রক্তের তৃষ্ণা তাতেও মেটেনি। প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসার পথেও হিংস্র কুকুরের মত তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে, যুবতী কন্যাদের লুণ্ঠন আর কিশোরীদের হত্যাওপার বাংলা থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের সবারই এই কাহিনী। ক্যানাডিয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি আর দেশে ফিরে যাবে না? হ্যাঁ যাবো, যদি মুজিব আমাদের ডাক দেয়’ সবার মুখে একই উত্তর।
আবেগে আপ্লুত ক্যানাডার নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা মিঃ এণ্ড্রু ব্রেউইন, প্রগ্রেসিভ মিঃ কনজারভেটিভ দলের নেতা মিঃ হীথ ম্যাকোয়ারি ও লিবারাল পার্টির নেতা মিঃ জর্জ ল্যাচেনস বলে ওঠেনঃ পাকিস্তানে গিয়ে আমাদের প্রধান কাজ হবে শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তির দাবী তোলা।
গণতান্ত্রিক কাঠামোয় কেউ যদি স্বাধীনতার দাবী করে তাহলে সে কিছু অন্যায় করবে না। ক্যানাডায় এমন গণতান্ত্রিক দল আছে যারা কুইবেকের স্বাধীনতার দাবী তুলেছে। তাদের বিচ্ছিন্নতাকামী বলে তো জেলে পোরা হয়নি। কিম্বা তাদের দেশদ্রোহী বানিয়ে পৃথিবীর সামনে হেয় করবারও কোন চেষ্টা হয়নি।
নিউ ডিমোক্রেটিক পার্টির নেতা শ্রী এণ্ড্রু ব্রেউইন তাঁদের সফরের উদ্দেশ্য ঘোষণা করে বলেন, দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁরা ভারতে এসেছেন। একটি মানবিক কর্তব্য সম্পাদনের দায়িত্বে। অপরটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা পরীক্ষা করা। মানবিকতার দিক থেকে ভারতের কাঁধে সবচেয়ে বেশী বোঝা এসে পড়েছে। ক্যানাডা তার কতটুকু সহজ করে দিতে পারে সেদিকে তাঁদের প্রধান লক্ষ্য। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাধান না হলে বিশ্ব শান্তি বিঘিœত হবে বলে তাঁদের বিশ্বাস। কারণ আমেরিকা চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশের ওপর লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাই ভয় হয়, রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা সুদূরপরাহত না হয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, মাত্র ছ’মাস শরণার্থীদের থাকা-খওয়ার জন্য প্রায় চল্লিশ কোটি ডলার খরচ হবে। ক্যানাডা ইতিমধ্যেই কিছু অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রী পাঠিয়েছে। শরণার্থীদের দেখে যাবার পর তাঁরাও সরকারের কাছে দাবী তুলবেন, কত বেশী সাহায্য শরণার্থীদের দেওয়া সম্ভব সেদিকে নজর দিতে।
লিবারাল পার্টির নেতা শ্রীজর্জ ল্যাচেনস বলেন, অর্থনৈতিক সাহায্যের জন্য পাকিস্তানকে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই এমন পরিকল্পিত গণহত্যা করার আগে তারা যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরামর্শ গ্রহণ করতো তবে তা অনেক বেশী বাস্তব ও বুদ্ধিমানের কাজ হতো।
স্বদেশ ১ ঃ ৩ ১৪ জুলাই ১৯৭১
©somewhere in net ltd.