নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার দেশ

রুবেল১৯৮৭

আমি বিশ্বস করি ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ কিন্তু ধর্মহীনতায় নয়।

রুবেল১৯৮৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৯৭১ সালের কিছু পত্রিকার খবর সমূহ পর্ব ৩৪

২৩ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:০৪

তাঁকে হত্যা করে বাঙ্গালী জাতিকে স্তব্ধ করা যাবে না

মুজিব আজ আর কোন ব্যক্তি নয়

সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর নাম শেখ মুজিব

[জয়বাংলা প্রতিনিধি]

মানব ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকারী ইয়াহিয়া লাখো লাখো নিরপরাধ বাঙ্গালীর শোণিতে দেহ রঞ্জিত করেও তার রক্ত পিপাসা নিবৃত্ত করতে পারেনি। খেঁকি কুত্তা খিপ্ত হয়ে উঠলে যেমন দিকবিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে যা তা কিছু করে বসে তেমনি মদ্যপ দুশ্চরিত্র ইয়াহিয়াও ঝাঁকালো ডিম্বল হুইস্কির নেশায় গোলাবী হয়ে গিয়ে তার মনিব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিচারের প্রহসন চালাবার জন্য উদ্ধত ঔদ্ধত্ব্যে খেউ খেউ রব ছাড়তে শুরু করেছে।

মানব সভ্যতা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি হুমকি স্বরূপ এই ঘৃণ্য নরপশুকে তাঁর বিপজ্জনক কাজ থেকে নিবৃত্ত করার জন্য বিশ্বের মানবতাবাদী বিবেক তাঁদের কণ্ঠস্বরকে উচ্চগ্রাসে তুলেছেন। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হচ্ছে না। উন্মত্ত খেঁকি কুত্তাকে যেমন মুগুরের আঘাতে মাথার মগজ বের করে দিয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা পরিচালনার পথকে কণ্টকহীন করতে হয় ইয়াহিয়া এবং তার ইতিহাসের শিখা বিস্মৃত জান্তাকেও তেমনি প্রচণ্ডতার সাথে আঘাত করতে না পারলে আগুন নিয়ে খেলা করা থেকে নিবৃত্ত করা যাবে না। ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ের গালিজ-পঁচা চরিত্র হিটলার, আইখম্যান, মুসোলিনীদেরও মিষ্টি কথায় নিবৃর্ত্ত করা যায় নি। যেমন কুকুর তার জন্য তেমন মুগুরের প্রয়োজন। আমাদের মুক্তি বাহিনী স্বয়ংক্রিয় মুগুর হাতে সে কাজ সমাধা করার জন্য আজ বিদ্যুতের গতিতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তারা পথের কোন বাধা মানবে না, বাঙ্গালী জাতির পিতা শেখ মুজিবর রহমানের জীবন রক্ষার জন্য কোন ত্যাগকেই বড় করে দেখবে না। মুজিব ভাই না বাঁচলে তাদের আলো-বাতাসে নিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকারও কোন আগ্রহ নেই। প্রতিটি অস্ত্রাঘাতে জল্লাদদের বাঁচার ক্ষীন সম্ভাবনাকেও তরুণ মুক্তি সেনারা অসম্ভব করে তুলবে।

ইয়াহিয়া ঘোষণা করেছে, সে ৭৫ মিলিয়ন বাঙ্গালীর আশা-আকাঙ্খা ও আবেগ-অনুভূতির প্রতীক শেখ মুজিবের বিচার করবেই। বিচারের কয়েক মাস আগেই সে ২৬শে মার্চের বেতার ভাষণে রায়ও দিয়ে ফেলেছে। মদ্যপ ইয়াহিয়ার মাতাল কণ্ঠ থেকে সেদিন ঝরে পড়েছিল ঃ শেখ মুজিবকে রেহাই দেওয়া হবে না। পরবর্ত্তী কালে একই কণ্ঠ ঘোষণা করেছে, বিচারে শেখ মুজিবের প্রাণদণ্ড হতে পারে। তার পাঞ্জাবী সেনাদের বুটের আঘাতে প্রকম্পিত বেতার থেকে প্রতিদিন শেখ সাহেবকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। খেঁকি কুকুরের দুগ্ধক্তময় নখ চাটা বাঙ্গালী কণ্ঠ তাঁকে ‘মীরজাফর’ বলার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে।

এই পরিবেশে স্থানের নামহীন, বিচারকের নামহীন খাকী ইউনিফর্মধারীদের গ্যাস চেম্বারে বাংলার নয়ন মনি শেখ মুজিবের বিচার শুরু হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও একটি চমকপ্রদ ঘোষণাও একই সাথে করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সিন্ধুর আল্লাবক্স খোদাবক্স ব্রোহী শেখ সাহেবের পক্ষে মামলা পরিচালনা করতে স্বীকৃত হয়েছেন। এবং তাকে শেখ সাহেবের পক্ষ অবলম্বনের জন্য অনেক চেষ্টা তদ্বির করতে হয়েছে। চেষ্টা করেছেন স্বয়ং ঘাতক-বিচারক ইয়াহিয়া। অনেক চেষ্টা তদ্বিরের পর জনাব ব্রোহী মামলা পরিচালনায় স্বীকৃত হয়েছেন। আহাঃ কি নাটক! কি উপাদেয় নাটক!

শেখ মুজিব দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, আমার বিচার করার কোন এখতিয়ার ইয়াহিয়ার নেই। কিসের অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে? আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কি অধিকার ইয়াহিয়ার আছে? তাকে এ অধিকার কে দিয়েছে?

এর পরও জনাব এ, কে, ব্রোহীকে নাকি শেখ সাহেবের পক্ষে মামলা পরিচালনায় নিযুক্ত করা হয়েছে এবং তিনি তার মক্কেলের সাথে আলোচনার জন্য এক অঘোষিত স্থানে রওয়ানা হয়ে গেছেন। সে স্থানের নাম তিনি প্রকাশ করবেন না কারণ তিনি গোপনতার শপথ পাঠ করেছেন ইয়াহিয়ার কাছে। ঘাতক যে শেখ সাহেবকে অপরাধী বলে পূর্বেই রায় দিয়ে ফেলেছে, যার প্রচারযন্ত্র অহরহ শেখ বিরোধী বিষ ছড়িয়ে-ঝরিয়ে যাচ্ছে সেই আইনের আর ইতিহাসের জ্ঞান বর্জিত ইয়াহিয়া আবার অনেক চেষ্টার পর’ বিবাদী পক্ষের আইনজীবীও ঠিক করে দিয়েছেন। ইয়াহিয়া তোমাদের হাজারা গ্রামের গুহায় এ জাতীয় বিচারের প্রহসন হতে পারে-কিন্তু সভ্যতার আলো-বাতাসে উদ্ভাষিত আজকের বিশ্বে এ জাতীয় মধ্যযুগীয় বিচারের প্রহসন অকেজো। ইয়াহিয়া তোমাকে খেয়াল রাখতে হবে পরকীয়া প্রেম করে তোমার সাদ্দাদী বেহেস্ত প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রত্যাবর্তনের পর তোমার স্ত্রীকে চোখ রাঙ্গিয়ে ঠাণ্ডা করার ক্ষমতা তোমার আছে কিন্তু দুর্জয় শপথের দীপ্তিতে মাথা উঁচু বাঙ্গালীরা তোমার হুমকির কাছে যে মাথা নোয়াবার শিক্ষা পায়নি তা তুমি এবং তোমার জেনারেলরা ইতিমধ্যেই নিশ্চয়ই টের পেয়ে গেছ।

মিঃ ব্রোহী মামলায় কার পথ অবলম্বন করবেন? শেখ সাহেবের বিরুদ্ধে কি অভিযোগের জবাব তিনি দেবেন এবং কার কোটে? বিশ্ব জনমতের আদালতে শেখ মুজিব একটি মাত্র অপরাধ করেছেন এবং তা’ হলো জনগণের আশা-আকাঙ্খা অনুভূতির সাথে তিনি বিশ্বাস ঘাতকতা করেন নি ছয় দফার সাথে বেঈমানী করে প্রধান মন্ত্রীর পদকে বড় করে দেখেন নি। জনতার নদী নদী রক্ত আর অশ্র“ গঙ্গার সাথে নিজেকে একাÍ করে নিতে সূক্ষ্মতর বিলম্ব করেন নি। এই অপরাধে যদি শেখ সাহেবের বিচার হয় তা’ হলে সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীকেও বিচারের কাঠ গড়ায় উঠাতে হবে। কারণ শেখ মুজিব আজ ব্যক্তি নয়, সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর নাম শেখ মুজিবমুজিব মানে সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী কণ্ঠ, বাঙ্গালী প্রাণ, বাঙ্গালী আবেগ। ইয়াহিয়া তোমার ক্ষমতাদর্প সেনারা একটি জাতিকে কি নিশ্চিহ্ন করতে পারবে? পারবে না। হিটলার পারেনি। আইখম্যানদের গ্যাস চেম্বারও একদিন ‘টায়ার্ড’ হয়ে পড়েছিল।

জয়বাংলা (১) ১ ঃ ১৬ ২৭ আগস্ট ১৯৭১



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.