নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আতিথেয়তা

০৮ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:৪৬

আমাদের বাসায় একজন ডমেস্টিক এইড একটানা প্রায় ৭/৮ বছর কাজ করেছিলেন। তার নাম মর্জিনা বেগম। তিনি বয়স্কা ছিলেন, তবে তার সঠিক বয়সটা তিনি অনুমান করেও বলতে পারতেন না। শুধু এটুকু বলতে পারতেন যে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি অনেক ছোট ছিলেন, সে সময়ের কোন স্মৃতি তার মনে নেই। বছর পরিক্রমায় তখন তার মেয়ের ঘরে নাতি নাতনিও আছে বলে তিনি জানিয়েছিলেন। তাই আমরা ধরে নিয়েছিলাম, তখন তার বয়স হয়তো পঞ্চাশ হবে, কিংবা তার কিছু কম বা বেশি। মেয়ের সাথে তার সদ্ভাব ছিল না, তাই মেয়েকে বিয়ে দেবার পর ডমেস্টিক এইড হিসেবে কাজ করে তিনি নিজের জীবিকা অর্জনের পথ বেছে নেন।

তিনি স্বল্পাহারী ছিলেন, কিন্তু প্রচুর পান খেতেন। আমাকে বাজার যাওয়ার জন্য তৈরি হতে দেখলেই তিনি তার পান-শুপারি-চূণ-জর্দার ফরমায়েশ জানিয়ে রাখতেন। বাজারে যাওয়া-আসার পথে একটি পানের দোকান ছিল, সেখানেই তার ফরমায়েশের সকল উপকরণ পাওয়া যেত। তাকে আমি জর্দাটা বাদ দিতে অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তিনি সেটাতে এতটাই আসক্ত ছিলেন যে তিনি আমার অনুরোধ রক্ষা করতে পারেন নি। তার হাতে জর্দার কৌটা তুলে দিবার সময় প্রতিবারই আমি তাকে স্বাস্থ্যের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে দিতাম। তিনি ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমাদের থেকে ভালোভাবে বিদায় নিয়ে পুনরায় স্থায়ীভাবে নিজ বসতবাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যান।

যে দোকানটি থেকে আমি তার জন্য পান শুপারি এবং অন্যান্য উপসঙ্গ ক্রয় করতাম, বেশ ঘনঘন যাতায়াতের সুবাদে সেই পানওয়ালার সাথে আমার বেশ ভালো আলাপ পরিচয় হয়ে যায়। তার নাম মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ, বাড়ি জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলায়। মর্জিনা বেগম চলে যাবার পর থেকে আমার আর সে দোকানে যাবার প্রয়োজন হতো না। তবুও যেহেতু তার দোকানটি বাজারে যাওয়ার পথেই ছিল, মাঝে মাঝে তার সাথে দেখা হলে আমি একটু থেমে দু'চারটি কথা বলে নিতাম। মাঝখানে কয়েক মাস ধরে তাকে দেখিনি, তার জায়গায় অন্য কেউ একজন দোকানে বসতো। তাদেরই একজনের কাছে আমি একদিন তার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, তিনি বিভিন্ন রোগে ভুগছেন, দোকানে বসার মত অবস্থায় নেই। এরই মাঝে এ মাসের প্রথমদিকে একদিন আমি তাকে পুনরায় দোকানে বসা অবস্থায় দেখতে পেলাম। তাকে দেখে মোটেই অসুস্থ মনে হচ্ছিল না, বরং বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছিল।

আমাকে দেখে তিনি বললেন, "স্যার অনেকদিন পরে আইলেন, কেমুন আছেন?" আমি ভালো আছি জানিয়ে তাকে তার অসুস্থতার কথা জিজ্ঞস করাতে তিনি একগাল হেসে বললো, "স্যার আমার অনেক রোগ, কোনটা রাইখা কোনটার কথা কমু? ব্লাড প্রেসার, ডাইবেটিজ, বাত, চোখের অসুখ, সবই আছে। তবে একেবারে কানা হইবার লাগছিলাম, তাই সব ছাইড়া আগে চোখটারেই অপারেশন করাইলাম। এখন খুব ভালো দেখি।"

যেদিন তার সাথে আমার এই কথোপকথন হচ্ছিল, কাকতালীয়ভাবে তার ঠিক তিন দিন পরে আমার নিজের চোখেও ফ্যাকো সার্জারির দিন নির্ধারিত ছিল। তাই আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলাম। আমার আগ্রহ দেখে তিনি উৎসাহের সাথে তার পূর্বাপর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিল। আমি মন দিয়ে শুনলাম। আমার আগ্রহ লক্ষ্য করে তিনি জিজ্ঞাসু চোখে জানতে চাইলেন, "ক্যান স্যার, আপনেও অপারেশন করাইবেন নাকি?" আমি হ্যাঁ বলাতে তিনি আরও উৎসাহ নিয়ে বললেন, "স্যার, একদম সহজ অপারেশন। কিচ্ছুই ট্যার পাইবেন না। অপারেশনের পর চোখ খুইল্যা দ্যাখবেন, সবকিছু ফকফকা পরিষ্কার!"

তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরে আসার সময় তিনি আতিথেয়তার সুরে বললেন, "স্যার, অনেকদিন পরে আইলেন। আপনে তো পান খান না, খাইলে নয় ভালো কইরা একটা পান বানাইয়া দিতাম। তয় আমার কাছে ভালো শবরি কলাও আছে। না হয় দুইটা কলা খায়্যা যান?"

ঢাকা
০৪ অগাস্ট ২০২৫
শব্দ সংখ্যাঃ ৫০৭






আমার কোন একটা কথা শুনে তিনি এভাবেই হেসে উঠেছিলেন....
ঢাকা, ০৫ জুলাই ২০২৫
দুপুর ১৫ঃ০৫

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:২৮

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



সন্মান সবাই করতে জানেন না, সন্মান আসে রক্ত থেকে। সময় সুযোগ করে আমি বিস্তারিত লিখবো কোনো দিন। বেশ ভালো লিখেছেন, ধন্যবাদ।

এখন আপনার চোখের অবস্থা কেমন?

০৮ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:২১

খায়রুল আহসান বলেছেন: একটা চোখের বেশ ভালো উন্নতি হয়েছে, অপরটায় কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। চিকিৎসা চলছে। জিজ্ঞাসার জন ধন্যবাদ।
"সন্মান সবাই করতে জানেন না, সন্মান আসে রক্ত থেকে" - খুবই মূল্যবান একটা কথা বলেছেন। +

২| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: গ্রামাঞ্চলে অনেক মহিলা আছেন যারা প্রয়োজনে ভাত ছেড়ে দেবেন কিন্তু জর্দা পান ছাড়তে পারেন না। অনুরূপ অনেক মুরুব্বি আছেন যারা বিড়ি ছাড়তে পারেন না।
ছোট ছোট বিষয় নিয়ে সবাই লিখতে পারেনা। আপনি পারেন।
ছোট গল্পের আদলে চমৎকার লিখেছেন।
শুভকামনা জানবেন।

৩| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর গল্প। জীবনের গল্প। জীবনের গল্প গুলোই আসল গল্প।

৪| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:৩৪

নজসু বলেছেন:





এই কাহিনীটা সমাজের এক অবহেলিত অথচ মূল্যবান বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
অর্থের কমতি যে মানুষের হৃদয়ের গভীরতা ও চারিত্রিক সৌন্দর্যকে ঢেকে দিতে পারে না সেটা অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
গরিব মানুষদের ভেতরে থাকা বিনয়, আন্তরিকতা ও অন্যের প্রতি সম্মানবোধ আমাদের অনেক কিছু শেখায়।
আসলেই, মানুষ বড় হয় তার আচরণে, সম্পদে নয়।

৫| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:৪৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ভালো লেগেছে ।

৬| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:৩১

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: বেশ ভাল লাগলো আপনার রোজনামচা। এভাবেই দৈনন্দিন জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা, অভিজ্ঞতা, বা চিন্তাভাবনা নিয়ে আপনার লিখা নিয়মিত পেতে চাই। ভাল থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.