নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতি অমলিন (১)

১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৭:১৬

(ইহাকে বলা চলে, একটি প্রাগৈতিহাসিক পোস্ট। এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছে এর কিছু কথা বিস্ময়কর মনে হতে পারে। কথাগুলো ১৯৬২-৬৭ সালের দিকের আমার জীবনের অভিজ্ঞতার কথা।)

খুব ছোটবেলা থেকেই (৭/৮ বছর) আমাদের বাসায় কোন অতিথি এলে আমি খুব খুশি হ’তাম। আমরা যেহেতু ঢাকায় থাকতাম, দেশের বাড়ি থেকে কোন আত্মীয় স্বজন ঢাকায় কোন কাজে আসলে সাধারণতঃ আমাদের বাসাতেই উঠতেন। এতে আম্মার উপর অবশ্য বেশ চাপ পড়তো, সেটা বুঝতে পেরে আমি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আম্মাকে যথাসাধ্য কিচেনে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতাম। আম্মা খুশি হয়ে আমাকে সামান্য কিছু করণীয় বাৎলে দিয়ে খেলতে যেতে বলতেন। বয়স নির্বিশেষে আমি সকল অতিথির ন্যাওটা হয়ে যেতাম। আর সমবয়সী হলে তো কথাই নেই। তাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়তাম পাড়া বেড়ানোর উদ্দেশ্যে। মাঝে মাঝে বিকেলে নিয়ে যেতাম আমাদের স্কুলের মাঠে। সেখানে খেলাধুলার অনেক উপকরণ ছিল। প্রাণভরে খেলে তৎকালীন প্রথা অনুযায়ী সান্ধ্য আযানের সাথে সাথে ঘরে ফিরতাম।

মুরুব্বী অতিথিরা আমার নানারকমের প্রশ্নবান শুনে অবাক হয়ে যেতেন। তারা যথাসাধ্য সঠিক জবাব দেবার চেষ্টা করতেন। তথাপি আমি তাদের জবাবে মাঝে মাঝে ভুল ধরতে পারতাম। সমস্যা হতো তাদের বিদায় বেলায়। যেদিন ওনারা বিদায় নিতেন, সেদিন সকাল থেকেই আমার মন খুব খারাপ থাকতো। ওনাদের ব্যাগ গোছানোর সময় আমি তাদের পাশে ঘুরঘুর করতাম। এটা ওটা নেয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিতাম। ওনারা ভালোবেসে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন। কেউ কেউ যাবার সময় আমার পকেটে কিছু নোট গুঁজে দিয়ে বলতেন, “কিছু কিনে খেও”। তখনও আমাদের বাসায় ছোটদের জন্য চকলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি খাবার প্রচলন শুরু হয় নাই। “কিছু কিনে খেও” এর মধ্যে তাই আমার পছন্দের শীর্ষে ছিল এক দৌড়ে পাড়ার মুদি দোকান থেকে কিনে আনা এক ঠোঙ্গা ‘মুরালি’।

ওনারা যাবার সময় আমিই রিক্সা ডেকে দিতাম। সেই রিক্সা দৃষ্টির আড়াল না হওয়া পর্যন্ত আমি অপলক সেই রিক্সাটির দিকে তাকিয়ে থাকতাম। দৃষ্টির আড়াল হলে ভগ্নচিত্তে কিছুক্ষণ বিছানায় শুয়ে গত কয়েকদিনের স্মৃতি মন্থন করতাম। একই সমস্যা হতো যখন আমি (আমরা) প্রতি বছর স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে প্রায় এক মাস নানাবাড়ি-দাদাবাড়িতে বেড়ানো শেষ করে নানিবাড়ি থেকে ঢাকা ফিরতাম। তখন পর্যন্ত সড়ক পথে আমাদের নানাবাড়ি-দাদাবাড়ি যেতে খুব কষ্ট হতো, খারাপ রাস্তার কারণে। তাই আমরা সড়ক পথে বাড়ি যেতাম না, রেলপথেই যেতাম। সে কারণে রেল লাইন, রেলগাড়ি, পুরনো দিনের ভোঁশ ভোঁশ করা সাদা বাষ্প ও কয়লার গুঁড়া মিশ্রিত কালো ধোঁয়া উড়িয়ে কুউউ ঝিক ঝিক করে ছুটে চলা স্টীম ইঞ্জিনের দৃশ্য আমার মনে চিরস্থায়ীভাবে আসীন রয়েছে।

সে সময়ে লালমনিরহাট ছিল একটি বিরাট রেলওয়ে জংশন (এখনও আছে)। এখানে রেলওয়ে ডিভিশন সদর দপ্তর ছিল বলে রেলের বড় বড় অফিসারগণ বড় বড় এলাকা জুড়ে তাদের জন্য নির্মিত বাংলোতে বাস করতেন। ওনারা ট্রলিতে করে তাদের বাসস্থান থেকে লালমনিরহাট জংশনে অবস্থিত তাদের অফিসে যাওয়া আসা করতেন। লাঞ্চ ব্রেকে ট্রলিতে করেই বাসায় যেতেন আবার কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ট্রলিতে করেই অফিসে ফিরতেন। কেবলমাত্র একটি লাইন ছিল বলে এক লাইনে আপ ও ডাউন দুটো ট্রলি চলে এলে যারা অফিসের দিকে যাবেন তারা অগ্রগণ্যতা পেতেন। স্টেশন থেকে বের হয়েই এ ব্যাপারে একটা বিরাট বিলবোর্ডে লেখা পরিষ্কার একটি নির্দেশনা আমার চোখে পড়তোঃ UP TROLLEYS WILL CUT FOR DOWN TROLLEYS। বড় সাহেবরা মটর ট্রলি ব্যবহার করতেন, ছোটরা বেহারা কর্তৃক ঠেলা ট্রলি। গরমের দিনে কাটাকাটির এই সামান্য সময়টুকুতে ক্লান্ত বেহারাগণ কিছুটা বিশ্রামের সুযোগ পেতেন।

নানিবাড়ি ভিজিট করতে আমার খুব ভালো লাগতো, কারণ সেখানে আমাদের ভিজিট উপলক্ষ্যে অন্যান্য খালারাও সপরিবারে আসতেন। এতগুলো নাতি-নাতনি সামলাতে গিয়ে নানি রীতিমত হিমসিম খেতেন। তদুপরি তিনি সবসময় আমার উপর বিশেষ সযত্ন দৃষ্টি রাখতেন। কারণ, আমরা ছিলাম দূরে (ঢাকায়) এবং বছরে দুইবছরে একবার করে যেতাম। এজন্য আমাদের কদরটা ছিল একটু বেশিই। অন্যান্যরা থাকতো কাছাকাছি এবং তারা ঘনঘন আসতেন। আমার প্রিয় খাবার ঘন দুধের মোটা সর, নিজস্ব বাগানের শবরি কলা (আমাদের ওখানে বলে মালভোগ কলা) আর ইলিশ মাছের ডিম ও মোটা পেটি অন্যান্যদের দৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে নানি আমার জন্য সংরক্ষিত রাখতেন এবং সুযোগ বুঝে আমাকে খেতে দিতেন। নানির ফোটানো দুধ থেকে এক ধরণের বিশেষ সুঘ্রাণ বের হতো। নানীর একটা সাদা রঙের গাভী ছিল। তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ঐ গাভীটির দুধ ছেঁকে আমাদেরকে খাওয়াতেন। নানা গাভী ছেঁকার সময় নানি পাশে দাঁড়িয়ে বাছুর সামলাতেন। নানির তোলা খাঁটি দুধের স্বরের উপর একটা হলদে রঙের আস্তরণ থাকতো এবং সেটা খেতে খুবই সুস্বাদু হতো। যেদিন ঢাকা ফিরে আসবো, তার একদিন আগে থেকে নানি খাওয়ার সময় একটি হাতপাখা দিয়ে আমার মাথায় বাতাস করতেন, আর কিছুক্ষণ পরপর মাথায় হাত বুলিয়ে ভগ্নস্বরে শুধু বলতেন, “ভাই, খাও!”

আমার নানি খুব নিরীহ প্রকৃতির ছিলেন। তার নাম করিমা খানম। তিনি যেমন ক্ষিণাঙ্গী ছিলেন, তেমনি ছিলেন স্বল্পবাক। আমি অনুভব করতাম, তিনি আমাকে অনেক ভালোবাসতেন। কিন্তু মুখে তিনি কখনোই তা প্রকাশ করতে পারতেন না। আমি খুব করে চাইতাম যে বিদায়ের সময় নানি আমাকে একটু জড়িয়ে ধরুক, কিন্তু সেটা করতে তিনি অভ্যস্ত ছিলেন না, হয়তো লজ্জিত হতেন। তখনকার দিনে অনেক মুরুব্বী নানি-দাদীদেরকে দেখতাম, মেয়ে নাইওরি খেয়ে চলে যাবার সময় উচ্চঃস্বরে বিলাপ করতে করতে পাড়া মাতিয়ে দিতেন। আমার নানি চাইলেও সেরকম কিছু করতে পারতেন না, বুকে যতই কষ্ট গুমরে কাঁদুক। তার শোক প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম ছিল কাছে এসে নীরবে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়া আর তার সাদা শাড়ির কালো পাড় দিয়ে নীরবে নিজের চোখ মুছতে মুছতে চোখ লাল করে ফেলা। এটুকু লেখার পর আমি নিজেও চোখ না মুছে আর কিছু লিখতে পারছি না।

হাড়িভাঙ্গাস্থ আমার নানিবাড়ি থেকে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনে যেতে হলে রিক্সায় অনেকটা পথ সোজা উত্তর দিকে যেতে হতো। “সদরের কাঁঠালের তল” নামে একটি জায়গায় এসে ঘন জঙ্গল শুরু হতো। সদর আলি নামের কোন এক কাঁঠালপ্রেমিক ব্যক্তির নামানুসারে ঐ জায়গাটি লোকমুখে এই নামে পরিচিত ছিল, কারণ সেখানে তার লাগানো একটি সুউচ্চ কাঁঠাল গাছ ছিল এবং সেই গাছের কাঁঠালগুলো অত্যন্ত সুমিষ্ট ছিল। সেই গাছের তলা বলে নাম হয়েছিল “সদরের কাঁঠালের তল”। তখন রাস্তার আশেপাশে কোন ঘরবাড়ি কিংবা ঝোপঝাড় ছিল না বলে নানিবাড়ি থেকে এই নাতিদীর্ঘ পথটুকুর পুরোটাতেই চলমান রিক্সাটাকে দেখা যেত। যতক্ষণ দেখা যায়, নানি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতেন। আর আমিও বার বার রিক্সার হুডের পেছন দিক দিয়ে নানির দিকে তাকিয়ে থাকতাম। “সদরের কাঁঠালের তল” পার হবার সাথে সাথে আমি হুডের পেছন থেকে দৃষ্টিটাকে ফিরিয়ে এনে রিক্সার সামনে মেলে ধরতাম। পেছনের মায়ার বাঁধন ভুলে সম্মুখের বাস্তবতার দিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করতাম। আড়চোখে তাকিয়ে দেখতাম, আম্মার চোখও অশ্রুসিক্ত, কারণ হৃদয় ভারাক্রান্ত। আমি শুনেছি, ভালোবাসার দৃষ্টিও নাকি এক ধরনের দোয়া। যদি তাই হয়, তবে আমি আমার জীবনে নানির অনেক দোয়া পেয়ে ধন্য হয়েছি বলে আমার বিশ্বাস। আল্লাহ রাব্বুল ‘আ-লামীন আমার নানা-নানিকে ক্ষমা করুন এবং তাদের উভয়কে জান্নাত নসীব করুন!

ঢাকা
১৭ অগাস্ট ২০২৫
শব্দ সংখ্যাঃ ৯৭৬

মন্তব্য ৪২ টি রেটিং +১৯/-০

মন্তব্য (৪২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৮:০৩

বিজন রয় বলেছেন: শুভসকাল।
আশাকরি ভালো আছেন।

১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: শুভ অপরাহ্ন। ভালো থাকুন!

২| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৮:১৩

জুল ভার্ন বলেছেন: এমন কতো স্মৃতি আমাদের জীবনে থাকে, কিন্তু সবাই আপনার মতো এমন সুন্দর করে লিখতে পারেনা- যা পাঠককে নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত করে! ❤️

১৮ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:৩৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: বয়স যত বাড়ে, মানুষ ততই স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়। প্রতিটি অপসৃয়্মান মুহূর্তই একেকটি স্মৃতি, যেগুলো আর কোনদিন ফিরে আসবে না।

৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৮:২১

বিজন রয় বলেছেন: পড়লাম। স্মৃতিকথা লিখতে যেয়ে আবেগে কাতর হয়ে পড়েছেন। এটাই হলো অকৃত্রিম আবেগ।

আপনি কোন স্কুলের মাঠে খেলা করতেন।
আপনাদের দেশের বাড়ি কোথায় ছিল।

দুধের স্বর আমার অন্যতম প্রিয়।
এটা খাওয়ার জন্য যে কত দুষ্টামি করতাম তার ইয়াত্তা নেই।

১৬৬২-৬৭ সাল আমার কাছে প্রাগৈতিহাসিক মনে হয় না।
এই লেখায় কয়টি শব্দ তার উল্লেখ করেছেন, ৯৭৮ টি এটা করার কারণ জানতে পারলে কৃতার্থ হতাম।

স্মৃতি অমলিন (১), মানে আরো পর্ব আসবে। তাইতো?
তাই যদি হয় তাহলে গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।
কারণ আমার এগুলো খুব ভালো লাগে।

অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

১৮ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমি যে সময়টার কথা লিখেছি, তখন আমি পড়তাম সেন্ট্রাল গভঃ বয়েজ হাই স্কুল, মতিঝিল, ঢাকা তে। এটা রাজারবাগ পুলিশ লাইনস এর দক্ষিণে অবস্থিত। স্বাধীনতার পর স্কুলটির নাম রাখা হয় 'মতিঝিল সরকারি বালক বিদ্যালয়'। স্কুল গেটের পূর্বদিকে ছিল শাহজাহানপুরে ঢোকার রাস্তা। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কেন্দ্রীয় রাজস্ব বাজেটে স্কুলটির ব্যয় নির্বাহ হতো। আমি যে বছর স্কুলটিতে ক্লাস ফাইভে ভর্তি হয়েছিলাম, সে বছরেই স্কুলটি থেকে প্রাক্তন মন্ত্রী জনাব এ মঈন খান সমগ্র ঈস্ট পাকিস্তান বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। তার এ সাফল্যে স্কুলটির নাম-ডাক বেশ বেড়ে গিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারি স্কুল হওয়াতে স্কুলটিতে প্রচুর খেলাধুলার এবং উন্নত মানের ব্যায়ামাগারে শরীর চর্চার ব্যবস্থা ছিল। আমার দেশের বাড়ি যদিও লালমনিরহাট জেলায়, আমি ঢাকাতেই বড় হয়েছি এবং সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছি।

"১৬৬২-৬৭ সাল আমার কাছে প্রাগৈতিহাসিক মনে হয় না" - আমি লিখেছি ১৯৬২-৬৭, '১৬৬২-৬৭' নয়। যাহোক, প্রাগৈতিহাসিক কথাটা আমি আক্ষরিক অর্থে নয়, "অতি পুরনো" দিনের কথা বুঝিয়েছি, যখন এ ব্লগের অধিকাংশ সদস্যদের জন্মও হয়নি।

"এই লেখায় কয়টি শব্দ তার উল্লেখ করেছেন, ৯৭৮ টি এটা করার কারণ জানতে পারলে কৃতার্থ হতাম।" - আমার প্রতিটি পোস্টের নিচে শব্দ সংখ্যার উল্লেখ থাকে। এটা আমার নিজের স্বার্থে উল্লেখ রাখি। একই পোস্ট আমি মাঝে মাঝে অন্যত্রও পাঠাই। কোন কোন জায়গায় শব্দসংখ্যা সীমিত করে দেয়া থাকে। পোস্টে শব্দসংখ্যাটা উল্লেখ করা থাকলে অনুমানের উপর কাঁটছাট বা সম্প্রসারণ করি। এতে সময় বাঁচে।

"স্মৃতি অমলিন (১), মানে আরো পর্ব আসবে। তাইতো?" - আশাকরি, তাই, যদি শরীর, স্বাস্থ্য ও মন অনুকূলে থাকে এবং আপনাদের মত পাঠক পাশে থাকে।

এতটা মনযোগ এবং আগ্রহ প্রকাশের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:৩১

কামাল১৮ বলেছেন: এমন সুন্দর স্মৃতিকথা ছোট গল্পকেও হার মানায়।মনে দাগ কাটার মতো অনেক বিষয় আছে।আটোবায়োগ্রাফি লিখে ফেলুন।

১৮ ই আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৫:২৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, এমন প্রশংসা ও সুপরামর্শের জন্য।

৫| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:১৫

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



সুন্দর এই স্মৃতিচারণটি আমার ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দিলো!

নিয়ম মেনে চলা, মুরুব্বীদের সাহায্য করার অভ্যাস আপনার ভালোত্বের পরিচয় দেয়।

সর্বোশেষে, মুরুব্বীদের জন্যে দোয়া করছি। খোদা নানা - নানিকে জান্নাত নসীব করুন।

১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:৫৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: "সুন্দর এই স্মৃতিচারণটি আমার ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দিলো" - জেনে প্রীত হ'লাম।
অনেক ধন্যবাদ, দোয়া ও প্রশংসার জন্য।

৬| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:৪৩

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সুন্দর স্মৃতি। স্মৃতি অমলিন ভালো লাগলো

১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। মন্তব্যে প্রীত হ'লাম।

৭| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫

শ্রাবণধারা বলেছেন: সুন্দর স্মৃতিকথা খায়রুল আহসান ভাই।

আপনার নানিবাড়ি থেকে লালমনিরহাট স্টেশনে রিকশা ভ্রমণের অংশটি আমার নিজের শৈশবের কথা মনে করিয়ে দিল। আমাদের নানিবাড়ি ছিল গ্রামে। আমরা থাকতাম মহকুমা সদরে। নানিবাড়ি থেকে আমাদের মফস্বলের বাড়ির দূরত্ব ছিল ২০ কিলোমিটারের মত। রাস্তার বেশির ভাগটা পাকা হলেও ৩-৪ কিলোমিটার ছিল মাটির রাস্তা। নানিবাড়ি থেকে ফেরার পথে এই ২০ কিলোমিটার রাস্তার অর্ধেকটা কেঁদে কাটাতাম। রাস্তা অনেকদুরে এসে কোন একটা ব্রিজের কাছাকাছি এলে কান্না থামতো। এখন যখন শৈশবের দিকে তাকাই, প্রায়ই মনে করার চেষ্টা করি, ঠিক কোন বয়সে এসে নানিবাড়ি থেকে ফেরার সময় আমার সেই কান্নাটা বন্ধ হয়েছিল।

১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৪:১০

খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার আপনার এ স্মৃতিকথাটুকু শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আমাদের বাল্যকালের কোমল মনে এ ধরণের সাময়িক বিচ্ছেদগুলো গভীরভাবে রেখাপাত করতো। মনটা এতটাই ভারাক্রান্ত হয়ে থাকতো যে মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হতে চাইতো না।

৮| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:১৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


সুন্দর অনুভূতি।
আপনার লেখা পড়তে ভালো লাগে।

১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৫:১৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। মন্তব্যে অনেক প্রীত হ'লাম।
নতুন শহরে গিয়ে আপনার কেমন লাগছে, সেটা নিয়ে লিখুন। পারিপার্শ্বিক এলাকা এবং এলাকার ঘটনাবলী নিয়ে কিছু লিখুন।

৯| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: অনেক দিন পরে আপনার লেখা পড়লাম।খুবই ভাল লাগল।
আপনার স্মৃতিচারন লেখা পড়তে পড়তে আমারও অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল।+++

১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:০৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার স্মৃতিগুলো নিয়ে আপনিও কিছু লিখে ফেলেন।
মন্তব্য ভালো লাগলো। +

১০| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:৫০

করুণাধারা বলেছেন: আপনার স্মৃতিকথাগুলো পড়তে ভালো লাগে। মনে হয় আপনার প্রায় প্রতিটা স্মৃতিকথাতেই রেলের ঝিকঝিক শোনা যায়..

বাড়তি কাজ করতে গিয়ে মায়ের কষ্ট হয়, ৭/৮ বছরের বাচ্চাদের মনে সাধারণত সাধারণত এই বোধ জন্মায় না! আপনি বোধহয় ছোটবেলা থেকেই অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।

আজকালকার বাচ্চাদের সাথে কি নানা- নানীর এমন সম্পর্ক গড়ে ওঠে!! আপনার লেখা পড়ে এই প্রশ্ন মনে আসলো। উত্তর হবে, না‌। কারণ বস্তুবাদীতার স্রোতে ভেসে গিয়ে আমরা আবেগ বিসর্জন দিয়েছি।

১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৪৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: ছোটবেলা থেকেই প্রায় প্রতি বছরে রেলগাড়িতে করে ঢাকা-লালমনিরহাট-ঢাকা, এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতাম। এজন্য রেলপথ ও রেলগাড়ি আমার শৈশব, কৈশোর, যৌবন এমনকি বয়স্কবেলার স্মৃতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তবে রেল নিয়ে আমার সবচেয়ে মধুর স্মৃতিগুলো কয়লার কালো ইঞ্জিনের সাথে বেশি জড়িত। নিচে দিয়ে সাদা বাষ্প (স্টীম) বা গরম পানির ধোঁয়া ছেড়ে আর ছাদের ওপর দিয়ে ভোঁশ ভোঁশ করে কয়লার গুড়া মিশ্রিত কালো ধোঁয়া ছেড়ে কুউউ ঝিক ঝিক করে যখন কালো ইঞ্জিনগুলো প্রথমে ধীরে ধীরে চলা শুরু করতো এবং একটু পরেই স্পীড নেয়া শুরু করতো, তখন ট্রেনগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার খুব ভালো লাগত। আবার পূর্ণগতিতে চলার সময় যখন কোন স্টেশনে এ্যাপ্রোচ করতো, তখনও একটানা কুউউ ঝিক ঝিক লম্বা হুইসেল দিয়ে এ্যাপ্রোচ করতো। এই শব্দটা আমি প্রায় রেগুলার শুনতাম ঘুমাতে যাবার সময় এবং ফজরের ওয়াক্তে। এই দুই সময়ে একটা ট্রেন যেত, আরেকটা আসতো। মায়াবি কুউউ শব্দ শুনতে শুনতে আমি ঘুমিয়ে পড়তাম।

আমার ভাইবোনদের মধ্যে আম্মা আমাকেই সাধারণতঃ ছোটখাট সাহায্যের জন্য ডেকে নিতেন। অন্যদেরকে পড়ার টেবিল থেকে ওঠাতেন না। আমার পড়া থাকতো খুব কম। তাও যেটুকু থাকতো, সেটুকু নিমেষেই শেষ করে ফেলতাম। এ জন্যেই আমি স্পেয়ার প্লাগ ছিলাম। এতে আমি অবশ্য অনেক লাভবান হয়েছি।

"আজকালকার বাচ্চাদের সাথে কি নানা- নানীর এমন সম্পর্ক গড়ে ওঠে?" না, ওঠে না। কারণ, আজকাল নাতি-নাতনিরা যেমন মোবাইল ফোনে আসক্ত, নানি-দাদীরাও তেমনি। দুই পক্ষের মধ্যে হাতের স্পর্শ খুব কম হয়; মুখের শব্দ বেশি।

১১| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩

প্রামানিক বলেছেন: আপনার স্মৃতি কথা পড়ে অনেক ভালো লাগল।

২০ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

১২| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৪

ঢাবিয়ান বলেছেন: খুব ভাল লাগল আপনার স্মৃতিচারন। নানা / দাদা দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে দাদী/ নানীর অনেক আদর ভালবাসা পেয়েছিলাম। আমার দাদীরটা একটু বেশি ইউনিক ছিল। উনি প্যরা্লাইসিস হয়ে বিছানায় শয্যাসায়ী ছিলেন।একই সাথে দৃষ্টিশক্তিও হারিয়েছিলেন। এককালে তিনি ছিলেন উনাদের এলাকার জমিদার কন্যা। আভিজাত্য ছিল উনার সর্বসঙ্গী। যেই পালংকে তিনি শুয়ে থাকতেন সেটা ছিল রাজকীয় এক পালংক। ধবধবে সাদা চাদর বিছানো হত প্রতিদিন। দাদী সেই চাদরে ঘিয়ে কালারের কড়া স্ত্রী করা শাড়ি পড়ে শুয়ে থাকতেন। আমাদের কাজিনদের একটা মজার খেলা ছিল যে, আমরা চুপিচুপি উনার খাটের পাশে যেয়ে দাদীকে বলতাম আমাদের নাম বলতে হবে। দাদী সব নাতি/ নাতনীর মুখে হাত বুলিয়ে নাম বলে দিতে পারতেন। এত ভাল লাগতো বিষয়টা। উনার ভালবাসাটা অন্তর ছুয়ে যেত।

২০ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: দাদীকে নিয়ে খুব চমৎকার স্মৃতিচারণ করেছেন। তাদের ভালোবাসা ছিল নির্ভেজাল।

১৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৫:০৫

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
কত মধুর আর রঙ্গিন দিন ছিল। সুন্দর স্মৃতিচারণ। ছোটবেলায় খোলাহাটি থাকতে মালভোগ কলা খেয়েছি, এখনও স্বাদ মনে আছে। ভালো থাকুন।

২০ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:২০

খায়রুল আহসান বলেছেন: "কত মধুর আর রঙ্গিন দিন ছিল" - আসলেই, সেসব মধুর রঙ্গিন স্মৃতি ভোলার নয়। ভুলিনি বলেই তো আজ এত যুগ পরেও লিখতে পেরেছি।
লেখাটা পড়ে এখানে মন্তব্য রেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ।

১৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:৪৩

শায়মা বলেছেন: নানীবাড়ির স্মৃতি কত মধুময়!!!
মা আর নানীর বিদায়বেলা দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পেলাম ভাইয়া।

২১ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৮:২৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: "নানীবাড়ির স্মৃতি কত মধুময়" - হুম, সে জন্যেই তো আজও সেগুলো স্মৃতিতে অম্লান!
সংবেদনশীল মনের মানুষেরা অনেক কিছুই 'দিব্যদৃষ্টিতে' দেখতে পান, অন্যেরা যা পারে না।

১৫| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:৩৮

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: "আজি এ প্রভাতে রবির কর
কেমনে পশিল প্রাণের পর,
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাতপাখির গান!
না জানি কেন রে এত দিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ।
জাগিয়া উঠেছে প্রাণ,
ওরে উথলি উঠেছে বারি,
ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি।"

সত্যিই দারুন অনবদ্য হয়েছে আপনার ছোটবেলার নানু বাড়ির স্মৃতিচারণমূলক এ লিখা। পড়তে পড়তে আমিও ছোটবেলার স্মৃতিতে হারিয়ে যাচ্ছিলাম বার বার।

ভাল থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন।

২১ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার উদ্ধৃতিসহ প্রেরণাদায়ক মন্তব্যের জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আল্লাহতা'লা আপনার দোয়া কবুল করুন!

১৬| ১৮ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার ছেলেবেলার সময়টা সহজ সরল ছিলো।
মানুষ গুলো ভালো ছিলো।

২১ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:২৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: জ্বী, অবশ্যই।

১৭| ১৮ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:০৮

আরোগ্য বলেছেন: আমার স্মৃতি কথা পড়ে আমারও স্মৃতি চারণ হচ্ছে। আমার শৈশবেও কিন্তু মাগরিবের আগে খেলা ছেড়ে ঘরে হাজির থাকার নিয়ম ছিল। আমি আমার নানুর কাছেই বড় হয়েছি। ছোটবেলায় দেখতাম নানুর এক মামাতো কিংবা ফুপাতো বোন রোজার মাসে নানুর কাছে চলে আসতো, ঈদের চাঁদ উঠলে চলে যেত, খুব মন খারাপ লাগতো তখন। আমার খুব পছন্দের নানী ছিল, কত মজা করতাম, নানী টিচারকে বলতে সিটার আবার আমার এক কাজিনের নাম ছিল আফরিন, নানী বলতে আসমিন। মাঝে মাঝে নানুর এক বান্ধবীও কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে আসতো, নানুর চেয়ে বেশ বুড়ো ছিলো তাই তার চোখের মনি কেমন ঝাপসা সাদাটে হয়ে গিয়েছিল। তখন সেটা বুঝতাম না, আমি অবাক হয়ে দেখতাম চোখগুলো, এখন আমার নানুর চোখও এমন দেখায়। নানুর ননদও আসতো ওই নানিটা খুব গল্প জানে তাই তাকেও খুব ভালো লাগতো। আর পাশের বাড়ি ছিলো নানুর ছোট বোন আমি তাকে বান্ধবী বলতাম আর মাঝে মাঝে গিয়ে গল্প করতাম। আমার শৈশবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ছিলেন আমার মায়ের ছোট মা অর্থাৎ আমার মা খালা মামাদের যিনি কোলে করে বড় করেছেন, নানুর সহযোগী বলা যায়। আমি ছোট বলে ডাকতাম। উনার স্মৃতিচারণ করলে মন্তব্য বড় হয়ে যাবে। আর এক নানী আছেন তিনি নানুর ভাবী, কখনো তাকে দেখতে গেলে হাতে কিছু গুজে দেই আর অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে সেই সাথে খুব দোয়াও করে। মুরুব্বিদের সাথে সময় কাটাতে আমার ছোট বেলা থেকেই ভালো লাগে তাই আপনার পোস্টে মন্তব্যের ঘরে স্মৃতি চারণ করে গেলাম। আরেকটি কথা আমিও কিন্তু মেহমান আসলে যাবার বেলার এগিয়ে দিতে এবং তাদের গাড়ি হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া অবধি চেয়ে থাকতে খুব পছন্দ করি।

আশা করি অনাকাঙ্ক্ষিত দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য বিরক্ত বোধ করবেন না। আল্লাহ আপনার নানা নানীকে বেহেশত নসীব করুক এবং আমার যেসকল নানীরা পরপারে চলে গেছেন তাদেরও। এবং আমার নানুকে হায়াতে তাইয়েবা দান করুন।

২২ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:১০

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার কিছু কিছু লেখা পড়ে এবং আপনার ও পদাতিক চৌধুরী এর মধ্যে বিভিন্ন পোস্টে বিনিময়কৃত মন্তব্য/প্রতিমন্তব্যের মাধ্যমে আমি আগে থেকেই জানি যে আপনি আপনার নানুর প্রতি ভীষণভাবে এ্যাটাচড এবং আপনি আপনার নানুর কাছেই বড় হয়েছেন। আপনার মূল নানু এবং তার কাছে বেড়াতে আসা অন্যান্য নানিদের স্মৃতিচারণ পড়ে খুব ভালো লাগল। এ জীবনে কত মানুষ আমাদের কোমল মনে গভীর রেখাপাত করে যায়!

আমার শৈশবের স্মৃতিকথার সাথে আপনারও শৈশবের অনেক স্মৃতিকথা মিলে গেল জেনে প্রীত হ'লাম।

১৮| ১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৮

সুনীল সমুদ্র বলেছেন: অনেকদিন পর ব্লগে ঢুকেই একটা চমৎকার সুন্দর লেখা পড়ার সুযোগ হলো। ৬২ থেকে ৬৭। আমার জীবনের প্রথম সাত বছর। এই সময়কালের কোনো কথা ঠিক হুবহু মনে পড়ে না ..... আমার ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে ১৯৭০ থেকে। ..... আমার বাবার সরকারি চাকুরীর বদলী-জনিত কারণে আমরা তখন ঢাকা ছেড়ে ময়মনসিংহ থাকি ... । .... সেই বছর কাজী জহিরের 'ময়নামতি' ছবি মুক্তি পেয়েছিল ময়মনসিংহের ছায়াবানী, পূরবী সিনেমা হলে, পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল শহরের দেয়াল, এইসব হালকা হালকা ছোট্ট ছোট্ট স্মৃতি মনে পড়ে ! .....আপনার লেখার সময়কাল অপেক্ষাকৃত 'কিছু আগের সময়কাল' হলেও আমার ছোটবেলার অজস্র স্মৃতির সাথে অনেক মিল খুঁজে পেলাম ! .... বাসায় আত্মীয়-স্বজন আসার গল্প, তাদের চলে যাওয়ার সময় কালের নীরব কষ্ট, ট্রেনে চড়ে নানাবাড়ি বেড়াতে যাওয়া, নানীর আদর .... ইত্যাদি অনেক কিছুই এতোটা মিলে গেল যে, রীতিমতো আবেগময় ভালো লাগায় ভেসে বেড়ালাম অনেকক্ষণ । আপনার লেখা বরাবরের মতোই ভালো লাগলো । শুভকামনা রইলো অনেক।

২৫ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেকদিন পরে আমার কোন একটা পোস্টে এলেন যদিও, তথাপি এই নাতিদীর্ঘ মন্তব্যটা দিয়েই মন কেড়ে নিলেন!
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, আমার ৪/৫ বছরের কিছু স্মৃতিকথাও স্পষ্ট মনে আছে। আমার জন্ম হয়েছিল চট্টগ্রামে, আব্বার সরকারি চাকুরি উপলক্ষে তখন আমরা চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে থাকতাম। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারির পর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বছরের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক স্কাউট জাম্বরি উদ্বোধন উপলক্ষে চট্টগ্রামে এসেছিলেন। তার আগমন উপলক্ষে তখন জাম্বরি মাঠকে আন্তর্জাতিক মানে প্রস্তুত করার জন্য দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা ধরে কাজ চলতো। সারাদিন ধরে বুলডোজার, ক্যাটার পিলার, এক্সক্যাভেটর ইত্যাদির ঘরঘর শব্দ করে ঘন কালো ধোঁয়া উদগীরণের স্মৃতি আমার মনে আছে। সেই সাথে বাতাসে সবসময় লেগে থাকতো পোড়া মবিল ও ডিজেলের গন্ধ। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর।

কাজী জহিরের 'ময়নামতি' ছবিটি তখন সুপারহিট ছিল। বশীর আহমেদ গীত "অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায়" গানটি গণমানুষের কণ্ঠে কণ্ঠে শোনা যেত। এ ছাড়াও আবির্ভাব, এত টুকু আশা, জোয়ারভাটা ইত্যাদি ছায়াছবিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।

"বাসায় আত্মীয়-স্বজন আসার গল্প, তাদের চলে যাওয়ার সময় কালের নীরব কষ্ট, ট্রেনে চড়ে নানাবাড়ি বেড়াতে যাওয়া, নানীর আদর .... ইত্যাদি অনেক কিছুই এতোটা মিলে গেল যে, রীতিমতো আবেগময় ভালো লাগায় ভেসে বেড়ালাম অনেকক্ষণ" হুম! সবকিছুতেই তখন ভালোবাসার ছোঁয়া ছিল বলেই স্মতি অমলিন রয়ে গেছে!

১৯| ১৯ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১২

মৌরি হক দোলা বলেছেন: নস্টালজিক লেখা। ভালো লেগেছে অনেক। :)

২৫ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:০৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: লেখা ভালোলাগার কথাটি এখানে জানিয়ে যাবার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

২০| ২০ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:০১

মেহবুবা বলেছেন: নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসলো যেন। আপনি আমার থেকে বয়সে বড় তবে অনেক ঘটনা ঘুরে ফিরে এক। আপনি আমাদের স্কুলে পড়েছেন কিছুদিন, ছেলেদের শাখায়।
আরোগ্য এর মন্তব্য বেশ। ওখানে আছে মাগরিবের আগে খেলা ফেলে ঘরে ঢোকা একদম মিল এবং এত বছর বাদে আমার মধ্যে সেটা এখনো কাজ করে।

২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৮:১০

খায়রুল আহসান বলেছেন: তবে অনেক ঘটনা ঘুরে ফিরে এক - জ্বী, সে কারণেই এসব স্মৃতিকথার সাথে সেই সময়ের কাছাকাছি বয়সের লোকজন মোটামুটি রিলেট করতে পারে এবং স্মৃতিকাতর হয়।

"আপনি আমাদের স্কুলে পড়েছেন কিছুদিন, ছেলেদের শাখায়" - আমার বড় বোন পড়তেন আপনাদের শাখায়।

২১| ২৫ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৪:০১

নীল-দর্পণ বলেছেন: আপনার নানীর কথা পড়তে পড়তে মনে হল আমার দাদীকে দেখতে পেলাম। ছোটফুফু নীলফামারি জেলার সৈয়দপুরে থাকতেন ফুপার রেলে চাকরীর সূত্রে। বছরে ১/২বার আসতেন। যাওয়ার সময় অনেক দূর ফুপুকে বিদায় দিতে দিতে যেতেন। একসময় বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে থাজতেন। যতক্ষণ চোখের আড়াল না হতো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতেন আর চোখ মুছতেন। আমার ঢাকায় ফেরার সময়েও পিছুপিছু অনেকদূর রাস্তায় হেঁটে আসতেন। দাদী নেই, নানীর এখন রাস্তায় আসাতো দূরের কথা ঘর থেকে বের হয়ে বিদায় দেবার শক্তি নেই।

যত বয়স হয় মানুষ মনে হয় এসব স্মৃতি নিয়েই বাঁচে। খুব ছোট ছোট স্মৃতিও এখন ভালো লাগে যা ঐসময়ে ঐ বয়সে এতটা উজ্জল ছিল না।

খুব ভালো লাগল আপনার লেখা পড়তে, চোখ ভিজে গেছে আমারও!

২৬ শে আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:৩৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: "দাদী নেই, নানীর এখন রাস্তায় আসাতো দূরের কথা ঘর থেকে বের হয়ে বিদায় দেবার শক্তি নেই" - হুম! দীর্ঘশ্বাস!
"চোখ ভিজে গেছে আমারও!" - :(
আপনি আমার আরব মরুর বুকে জীবিকার সন্ধানে যাওয়া পলিমাটির দেশ বঙ্গ ব-দ্বীপের কর্মঠ ছেলেদের নিয়ে কিছু কথা পোস্টটাতে মন্তব্য করেছিলেনঃ "আপনার লেখা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আরো অনেক কিছু নিয়েই লিখবেন। হুট করেই পড়া শেষ হয়ে গেল।" এবং "সময় সুযোগ করে আরো লিখবেন সেখানের গল্প অভিজ্ঞতা এই আশা রাখছি।" - আপনার অনুরোধের কথা স্মরণ করেই নতুন একটা সিরিজ লেখা শুরু করলাম। আশাকরি, সময় করে পড়ে দেখবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.