![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।
মদীনা শরীফে আমরা ২৪ মে আসরের ওয়াক্ত থেকে ০১ জুন আসরের ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত অবস্থান করেছিলাম। শেষোক্ত তারিখে আর আধ ঘণ্টার মত বেশি অবস্থান করে রওনা দিতে পারলে আমরা মাসজিদে নবুবীতেই আসরের নামায পড়ে রওনা দিতে পারতাম। সেক্ষেত্রে মাসজিদে নবুবীতে আমাদের টানা ৪০ ওয়াক্ত নামায আদায় হতো। মাসজিদে নবুবীতে এই একটানা ৪০ ওয়াক্ত নামায পড়াটা কতটা আবশ্যকীয়, তা নিয়ে আমার তেমন কোন দুশ্চিন্তা নেই। তবে মাসজিদে নবুবীর প্রাঙ্গণে পা রাখলেই আমি দেহ-মনে অপার্থিব শান্তি অনুভব করি। তাই মদীনায় আর মাত্র আধ ঘণ্টা অতিরিক্ত অবস্থান করতে পারলে আমরা মাসজিদে নবুবীতে আরেকটি ওয়াক্ত নামায বেশি পড়তে পারতাম, ৪০ ওয়াক্তও পুরো হতো। সেটা না হওয়াতে মনে একটা আক্ষেপ রয়ে গেছে; মনের ইচ্ছে বলে কথা!
মদীনায় আমাদের হোটেল থেকে মাসজিদে নবুবী পর্যন্ত যাতায়াতের পথ চিনতে এবং ধাতস্থ হতে আমাদের দেড় দিনের মত সময় লেগেছিল। ঐ দেড়দিন স্ত্রী-পুত্রসহ আমরা তিনজন একত্রে রওনা দিতাম, স্ত্রীকে মহিলাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে সুবিধামত বসিয়ে দিয়ে আমরা দু’জন সম্ভব হলে মাসজিদের ভেতরে প্রবেশ করতাম, না হলে মাসজিদের বহিরাঙ্গণেই নামাযের জন্য বসে যেতাম। নামাযের পর সাথে নেয়া পানির বোতলে জমজমের পানি ভরে পুনরায় একত্রে হোটেলে ফিরে আসতাম। হোটেল থেকে মাসজিদে নবুবীতে প্রবেশের গেইট আমাদের জন্য পাশাপাশি ৩১৫ কিংবা ৩১৬ এর যে কোন একটা ছিল। সেটা ছিল হোটেল থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ। পথ চিনে যাবার পর আমরা মাসজিদে যাবার সময় একত্রে রওনা হলেও, ফেরার সময় যার যার সুবিধা অনুযায়ী ফিরতাম, তবে ফেরার পূর্বে একে অপরের সাথে ফোনে কথা বলে নিতাম। ধীরে ধীরে আমরা সহযাত্রীদের সাথে যতই পরিচিত হতে থাকলাম, আমাদের মাঝে ততই অন্তরঙ্গতা বাড়তে থাকলো। আমার মত আমার স্ত্রীও মানুষের সাথে মিশতে ভালোবাসেন এবং তাদের গল্প শুনতে ভালোবাসেন। মাসজিদে যাওয়া আসার পথে এবং সেখানে অবস্থানকালে আমাদের মহিলা সহযাত্রীদের সাথে টুকটাক আলাপে সালাপে আমার স্ত্রীর সখ্য গড়ে উঠতে থাকলো। মহিলা সহযাত্রীদের অধিকাংশই বয়সে ছিল আমাদের সন্তানসম, কিন্তু তারা হজ্জ্বের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিলেন বিধায় হজ্জ্বের বিধি বিধান সম্পর্কে তারা অনেক কিছু জানতেন। তাদের ধর্মীয় জ্ঞানের গভীরতা দেখে আমার স্ত্রী অবাক হয়ে যেতেন এবং হোটেলে ফিরে আমার সাথে সেসব গল্প করতেন। তাদের সাথে মিলে তিনি রিয়াজুল জান্নাতে আমাদের চেয়ে অতিরিক্ত একটি রাত বেশি অবস্থান করেছিলেন। রিয়াজুল জান্নাতে যাবার জন্য ‘নুসুক’ অ্যাপ ব্যবহার করে আমার স্ত্রীর রেজিস্ট্রেশন ওদেরই একজন করে দিয়েছিলেন। এর জন্য তিনি তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতার কথা আমার কাছে প্রকাশ করে থাকেন।
মাসজিদে নবুবীর অভ্যন্তরে মাঝে মাঝে মাগরিবের নামাযের পূর্বে ইফতারি দেয়া হতো। আমরাও দুই/তিন দিন পেয়েছিলাম। এ ছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাঝে মাঝে খেজুর, জুস ইত্যাদি বিলি করা হতো। আমাদের এজেন্সী তিনবেলা যে আহারের ব্যবস্থা করেছিলেন, তা প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও শেষের দিকে একঘেঁয়ে হয়ে গিয়েছিল। তবে এত বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য আহারের আয়োজন করা কোন চাট্টিখানি কথা নয় জেনে রুচির সাথে আপোষ করতে অসুবিধে হয়নি। তবে এজেন্সীগুলো হাজ্জীদেরকে নিজ ব্যবস্থায় আহারের অপশন দিয়ে পৃথক একটি প্যাকেজ তৈ্রি করলে অনেকের সুবিধে হতো। ফলের মধ্যে মাঝে মাঝে তারতম্য আনতে পারলে ভালো হতো। সকালে নাশতার সাথে বা পরে কলা একটি উপাদেয় ফল হিসেবে খাওয়া যায়, কিন্তু মক্কা মদীনায় মনে হয় কলা তুলনামুলকভাবে একটি উচ্চমূল্যের ফল। একটানা পুরো মাস ধরে বাংলাদেশি হোটেলের খাওয়া না খেয়ে অন্ততঃ কয়েকটা দিন একটু অন্য স্বাদের আহার গ্রহণ করতে পারলে মন সন্তুষ্ট হতো বলে মনে করি। তবে এর সাথে এ কথাটাও মনে রাখি এবং পাঠককে মনে করিয়ে দিতে চাই যে একসাথে এত লক্ষ লোকের আহার সংস্থান করাটা একটি অতি দুঃসাধ্য কর্মযজ্ঞ বটে।
হজ্জ্বের মওশুমে মক্কা মদীনার দুই হারাম শরীফে নিয়োজিত পরিচ্ছন্নতাকর্মী তথা ক্লীনারগণ তাদের কর্তব্য পালন ছাড়াও নীরবে যে সেবাটি দিয়ে যান, সে সম্বন্ধে দু’চারটি কথা না বললেই নয়। ক্লীনারদের মধ্যে সিংহভাগ জনবল বাংলাদেশি। তারপরে পাকিস্তানি এবং ভারতীয়। ভারতীয় বাংলা থেকে আগত (যেমন মুর্শি্দাবাদ, মালদহ এবং কোলকাতা থেকে) কিছু মুসলিম ক্লীনারকে দেখেছি এবং তাদেরকে আমি খুব ভালো পেয়েছি। পথহারা হাজ্জ্বীদের জন্য এই ক্লীনারগণ ছিলেন বাতিঘর এর মতো। পথহারা নাবিকগণ যেমন বাতিঘর দেখে তাদের পথ সম্পর্কে নিশ্চিত হন, দূর থেকে এদেরকে দেখে পথহারা হাজ্জ্বীগণ এদের কাছে তেমনি ছুটে আসেন পথ নির্দেশের জন্য। তারাও স্বতঃস্ফূ্র্তভাবে সঠিক পথ বাৎলে দিয়ে হাজ্জীদেরকে নীরবে সাহায্য করে যান। আমার দৃষ্টিতে হজ্জ্বযাত্রীদেরকে পথ নির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করার ব্যাপারে উপমহাদেশীয় উল্লেখিত তিন দেশের মধ্যে পাকিস্তানীরা ছিল কথায়, আচরণে,মেজাজে ও মননে সবচেয়ে কম আগ্রহী এবং দৃশ্যতঃ অনীহ। তবে ব্যতিক্রম তো সবার মাঝে আছেই।
পূর্ব নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী ৩০ মে ২০২৫ তারিখের মধ্যরাতের পর আমি এবং আমার ছেলে শেষবারের মত রিয়াজুল জান্নাতে প্রবেশের জন্য মাসজিদে নবুবীতে যাই। সেখানে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় রেজিস্ট্রেশন আমার ছেলেই করে দিয়েছিল। এবারে সময়টা মধ্যরাতের পরে হওয়াতে আগের বারের চেয়ে ভিড়-ভাট্টা সামান্য কম বলে অনুভূত হয়। একজন বাংলাদেশি ক্লীনার আমাদের কাছে এসে স্বেছায় কিছু প্রয়োজনীয় ব্রীফিং দিয়ে গেল। ফলে আগের বারের চেয়ে এবারে আরেকটু স্বস্তিতে এবং মনযোগের সাথে চারিদিক পর্যবেক্ষণ করে করণীয় পালন করতে পেরেছিলাম। রিয়াজুল জান্নাতে পিতা-পুত্র পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যার যার মনের দোয়া-প্রার্থনা করলাম। সেখানে অবস্থানের বরাদ্দকৃত সময়সীমা অতিক্রান্ত হবার পর লাইন ধরে Exit Gate দিয়ে বের হয়ে অন্য গেইট দিয়ে মাসজিদে নবুবীর অভ্যন্তরে ফজরের নামাজের জন্য পুনরায় প্রবেশের লক্ষ্যে আমরা সারিবব্ধ হয়ে এগোচ্ছিলাম। এমন সময় আমি আমার বাম কাঁধে কার যেন স্পর্শ অনুভব করলাম। বামে তাকিয়ে দেখি, আমাদের লাইনের বাইরে বাঁ পাশ দিয়ে আমাদের সমান্তরালে চলা অত্যন্ত সুশ্রী ইউনিফর্মধারী একজন তরুণ অফিসার আমার দিকে স্মিত হেসে তার ডান হাত কপালে তুলে আমাকে স্যালুট জানালেন। স্যালুট থেকে হাত নামিয়ে তিনি সেই হাসিমুখেই “থাম্বস আপ” এর মত একটি ভঙ্গি করলেন। আমিও মাথা নাড়িয়ে একটু হেসে ডান হাত কপালে ঠেকিয়ে তার সৌজন্যের প্রত্যুত্তর দিলাম। ঐ মুহূ্র্তে এর চেয়ে বেশি আমার আর করার কিংবা বলার কিছু ছিল না। জীবনে যতবার আমি মক্কা মদীনায় গিয়েছি, কোনদিনও কোন ইউনিফর্মধারী ব্যক্তির মুখে আমি এমন স্মিত হাসি দেখিনি। তার পোশাকের রঙটাও অন্যান্য ইউনিফর্মধারী ব্যক্তিদের চেয়ে ব্যতিক্রমী ছিল। অনেকটা গাঢ় খাকি রঙের। কয়েক সেকেন্ড পরেই আমি পুনরায় তাকে দেখার জন্য ঘাড় ফেরালাম। ততক্ষণে তিনি যেন কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছেন!
ঢাকা
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শব্দ সংখ্যাঃ ৯০৮
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০১
খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রথম মন্তব্য এবং প্রথম 'লাইক'টির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে গেলাম।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৩
করুণাধারা বলেছেন: বরাবরের মতোই আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। এখনকার মতো লাইক দিয়ে গেলাম।