নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একাকিত্বের কথন

কাওছার০

নীরব কথক

কাওছার০ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তানিয়া" (থ্রিলার)

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:১৭

-"শুনতে পাচ্ছেন মিঃ তানভীর?"







আমি ঠিকই শুনতে পাচ্ছি।কিন্তু জবাব দেয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার।মুখ ফুটে কিছু বললেই একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকবে তারা।আর জবাব না দিলে...



তাই চুপ করেই আছি।







-"মিঃ তানভীর,আপনি শুনেও না শোনার ভান করছেন।এভাবে সময় নষ্ট করলে ব্যাপারটা ভালো হবে না।আমরা তাহলে এখনকার চেয়ে কঠোর হতে বাধ্য হবো।"







শালা চাপা মারার আর জায়গা পায় না।আর কি কঠোর হবে!অলরেডি নখ তুলে সুই গেঁথে দিয়েছে মাংসে।হাতে পায়ে অসহ্য ব্যাথা করলেও সহ্য করে নিচ্ছি।







-"মিঃ তানভীর,আপনি আপনার স্ত্রীকে কেনো খুন করেছেন?"







পাগলটা এসব কি বলছে!আমি আমার স্ত্রীকে খুন করতে যাবো কেনো?গতকাল রাতেই তো তানিয়াকে...



আহ!সেই মাপের ফিলিংস।এখনো চোখে ভাসছে।তানিয়া যা খেল দেখিয়েছিলো গতকাল রাতে!ভাবাই যায় না।আমার মধ্যেও আদিম এক বন্য নেশা চেপে গিয়েছিলো।এখনও চোখে ভাসছে সব কিছু।আর এই পাগলটা বলছে আমি নাকি আমার স্ত্রীকে খুন করেছি।ইচ্ছে করছে কসিয়ে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেই শালাকে।শালা মিথ্যা কথা বলার আর জায়গা পেলো না।







-"মিঃ তানভীর।আমরা জানতে চাচ্ছি আপনার স্ত্রীকে আপনি কেনো খুন করেছেন?







এবার মুখ খুলতে বাধ্য হলাম আমি।সেই কতক্ষণ থেকে ফাউল একটা কথা বলে যাচ্ছে।আমি নাকি আমার স্ত্রীকে খুন করেছি!







-"আমি কোন খুন করিনি।"



-"তাহলে কে করেছে?আমরা আপনার স্ত্রীর শরীরে অন্য কারো হাতের ছাপ পাই নি আপনারটা ছাড়া।"







কি সব বাজে বকছে এই লোক!আমার স্ত্রীর শরীরে আর কার ছাপ থাকবে?শালা আমার বউকে কি নষ্টা বলতে চাচ্ছে নাকি!একবার বলেই দেখুক না।শালার জ্বীব কেটে ফেলবো।







-"আমায় স্ত্রীর শরীরে আমার হাতের ছাপ থাকবে না তো কি অন্য কারো ছাপ থাকবে?"



-"হ্যাঁ,আমরা জানি তা।তাহলে ব্যাপারটা কি দাড়াচ্ছে মিঃ তানভীর?"







এই শালার নিশ্চিত কোন মুদ্রা দোষ আছে।তা না হলে বারবার কেনো মিঃ তানভির বলবে?শালার এতো মারার পরও সম্মান দিচ্ছে!নিকুচি করি আমি এই সম্মানের।







-"কি দাঁড়াবে মানে?আপনার কেনো মনে হচ্ছে আমিই আমার স্ত্রীকে খুন করেছি?অন্য কেউ তো খুন করতে পারে।হাতে গ্লাভস পড়ে কেউ যদি এসে মেরে যায় তখন আপনারা হাতের ছাপ পাবেন কোথায়?"



-"ভালো একটা যুক্তি দিয়েছেন।কিন্তু মিঃ তানভীর,আপনার জন্য একটা দুঃখের সংবাদ আছে।আপনার স্ত্রী যখন মারা যায় তখন আপনি বাসায়ই ছিলেন।"







ভালোই তো বিপদে পড়লাম এই পাগলটাকে নিয়ে!আমি বাসায় ছিলাম তাই আমি খুন করেছি আমার স্ত্রীকে!যত্তসব আজগুবী কথাবার্তা।







-"বাসায় ছিলাম তারমানে এই না যে আমি আমার স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য দায়ী।"







-"আপনি কি কাউকে সন্দেহ করছেন?"

-"নাহ।"

-"কেনো?"

-"কারণ আমাদের সাথে কারো এমন কোনো শত্রুতা ছিলো না যে জার জন্য আমার স্ত্রী খুন হবে।"

-"গুড পয়েন্ট।আচ্ছা মিঃ তানভীর আপনি গতকাল রাতে কখন ঘুমিয়ে ছিলেন?"

-"গতকাল রাতে তানিয়াকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলাম রাত তিনটার সময়।"

-"গতকাল রাতে এতো দেরিতে ঘুমিয়েছিলেন যে?"







আজব তো!এই লোক জানলো কিভাবে যে আমি দেরিতে ঘুমিয়েছিলাম?







-"আমি দেরিতে দেরিতে ঘুমাই না তাড়াতাড়ি ঘুমাই তা আপন জানলেন কিভাবে?"







আরে!এই শালা দেখছি হাসছে।আমি কি কোনো হাসির কথা বলেছি নাকি!শালার মাথায় নিশ্চিত বড় ধরনের কোনো সমস্যা আছে।তা না হলে অযথা হাসবে কেনো?







-"আপনি নিজেকে খুব চালাক ভাবেন তাই না মিঃ তানভীর?"

-"আমি নিজেকে চালাক ভাববো কেনো?যে নিজেকে চালাক ভাবে সেই সবচেয়ে বেশি বোকা।"

-"ভালো কথা বলেছেন তো।আপনি গতকাল রাতে কখন ঘুমিয়েছিলেন তা আপনার বাড়ির দাড়োয়ান আমাদের জানিয়েছে।আপনি প্রতিদিনই এগারোটার মাঝে ঘুমিয়ে পড়তেন।কিন্তু গতকাল রাতেই আপনি দেরিতে ঘুমিয়েছিলেন।কেনো?"







আজব তো!আমি দেরিতে কেনো ঘুমিয়েছিলাম এই কথাও নাকি এই শালাকে বলা লাগবে!গতকাল রাতে কি করেছি তা বলি কিভাবে?শালার তাহলে তো পার্সোনাল বলে কিছু থাকবে না।







-"কি ব্যাপার কথা বলছেন না যে?"

-"গতকাল রাতে কি করেছি তা কি জানা আপনার জরুরী?"

-"অবশ্যই জরুরী।আপনার প্রত্যেকটা কথার মধ্য থেকেই আমাদের ক্লু বের করতে হবে।তাই আপনি গতকাল রাতেই কেনো দেরিতে ঘুমিয়েছিলেন তা বলতে হবে।"







শালার এ দেখি আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ এসে গেলো।নিজের বউয়ের সাথে কি কি করেছি তাও বলা লাগবে।এই আধুনিক যুগে এসেও যদি এমন হয় তাহলে মান-সম্মান থাকে কেমন করে?







অগ্যতা গতকাল রাতে তানিয়ার সাথে কি কি করেছি বেহায়া নির্লজ্জের মত বলতে লাগলাম।বলার মাঝখানে একবার সামনের দিকে তাকিয়েছিলাম।তাকিয়ে দেখি শালা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।এই শালার মনে হয় হায়া-লাজ বলতে কিছু নেই।







ফার্স্ট টু লাস্ট বলা শেষে থামলাম।নিজের কাছেই অবাক লাগছে এই ভেবে যে তানিয়ার সাথে আমি গতকাল রাতে পার্সোনাল কি কাজ করেছি তা এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলেছি!নিজেকে কেমন যেনো বেহায়া মনে হচ্ছে।







-"হুম,বুঝলাম।তারপর আপনি ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন,রাইট?

-এরপর গোসল করেছি দুইজন।তারপর ঘুমিয়েছি।

-এবং সকালে উঠে আপনি আপনার স্ত্রীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।"

-"হুম।"







শালা মনে হয় চিন্তায় পড়ে গেছে।আমার হাসি পাচ্ছে এই অবস্থায় থেকেও।







-"রহিম।"







রহিম বাইরে দাঁড়ানো সিকিউরিটি গার্ডের নাম।আমার বেশ ভালোই লেগেছে তাকে।আমাকে এখানে নিয়ে আসার পর থেকে তাকে প্রায় তিন বার ডাকা হয়েছে।অবশ্য প্রত্যেকবারই সে প্রথমে খাবার নিয়ে এসেছে।আমার খাওয়া শেষ হলে তারপর একটা ডাক্তার নিয়ে আসে সে।ডাক্তার কি সব যেনো দেখে,তারপর রহিমের কানে কানে কি যেনো বলে চলে যায়।আমি অবশ্য বুঝেছি কানে কানে কি বলে।ঔষধের কথা বলে যায়।শালার এগুলো মানুষ নাকি অন্য কিছু!মেরে তারপর ঔষধ দিয়ে যায়!এদের দয়া দেখে আমার নিজেরই মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।







রহিম বরাবরের মতই খাবার নিয়ে আসে।আমার হাত পায়ের অবস্থা ভালো না থাকায় খাইয়ে দেয়।ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা হলেও দিতে পারি না।এতো টর্চারের পরো যে খেতে দেয় এটাই বা কম কিসে!







-"রহিম,একটু পানি দাও তো।"







রহিম জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালে।মুখের কাছে গ্লাস এনে আমাকে পানি খাইয়ে দেয়।গ্লাসটা রেখে রহিম হটাত করে আমাকে প্রশ্ন করে বসে।







-"আইচ্ছা স্যার,আপনি কি আসলেই আপনের বউরে খুন করছেন?"







চমকে গেলাম রহিমের কথা শুনে।অবশ্য চমকেও লাভ নেই।এরকম প্রশ্ন রহিম করতেই পারে।আমি কি উত্তর দেবো তাই ভাবছি।এতক্ষণ আমার উপর যে অত্যাচারগুলো করা হয়েছে তা রহিম বাইরে দাঁড়িয়ে দেখেছে।তারপরো কি রহিম বুঝতে পারছে না কিছু?







-"তুমি কি এখনো কিছু বুঝতে পারছো না কিছু? তোমার কি মনে হয় আমি আমার স্ত্রীকে খুন করতে পারি?"

-"এইসব আমারে কইয়া লাভ নাইক্কা।বহুত অপরাধী দেখছি জীবনে।কাউরেই বিশ্বাস করা যায় না।সবাই একি কথা কয়।"







কথাটা কেমন যেনো লাগলো আমার কাছে।রহিমকে কিছু বলার দরকার মনে হলো।







-"রহিম,একটু কাছে আস তো।"

-"ক্যান?যা কইবেন কইয়া ফালান।কাছে যাইতে হইবো ক্যান?"

-"তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে কিছু করবো এই অবস্থায় থেকে?আমার পক্ষে কি কিছু করা সম্ভব এই অবস্থায়?"







কথাটা মনে হয় রহিমের মাঝে জাদুর মত কাজ করলো।আমার কাছে এসে বসলো।







-"কন কি কইবেন?"







আমি মুখটা রহিমের কানের কাছে নিয়ে গেলাম।বেশি না,মাত্র পাঁচটা শব্দ উচ্চারণ করেছি।এরপর আমার উপরের পাটির দুইটা শ্বদন্ত দাত বসিয়ে দিলাম রহিমের ঘাড়ে।আহ!কি শান্তি।রক্তের ধারা আমার মুখের ভেতর দিয়ে যেতে লাগলো।ঠান্ডা পানি যেমন কলিজা ঠান্ডা করে দেয় ঠিক তেমনি ভাবে রক্ত আমার কলিজাটাকে ঠান্ডা করে দিলো।যতক্ষণ পর্যন্ত রক্ত না শেষ হলো ততক্ষণ পর্যন্ত আমি রক্ত চুক চুক করে খেতেই লাগলাম।রহিমের শরীরে যখন রক্ত যখন শেষ হলো তখন তাকে ছেড়ে দিলাম।নিস্তেজ দেহটা ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো আস্তে আস্তে।







বেশ ভালো লাগছে এখন।বেশ ভালো।কিছুক্ষণের জন্য চোখটা বন্ধ করলাম।কল্পনায় দেখতে পেলাম তানিয়াকে।আমার তানিয়াকে।যাকে আমি গতকাল রাতে মেরে ফেলেছি।অবশ্য আমি তাকে বাচিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তার রক্তের মাঝে বিশেষ কি যেনো ছিলো।তাই আর নিজেকে থামাতে পারি নি।রক্তশূন্য করে তারপর ছেড়েছিলাম তানিয়াকে।



আমি জানি ঠিক পনের মিনিট পর সেই লোকটা আবার আসবে।অবশ্য এই পনেরো মিনিটের হিসাবটা আমার মনের হিসাব।দুই এক মিনিট এদিক সেদিক হতে পারে।ব্যাপার না।



ঠোটের চারপাশ জিহবা দিয়ে চাটলাম।নাহ,রক্তের স্বাদটা মন্দ না।তবে তানিয়ার রক্তের স্বাদটাই সব থেকে আলাদা ছিলো।একেবারে আলাদা.....(সমাপ্ত)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: অতি সাধারণ মানের থ্রিলার।

২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:২৮

মশিকুর বলেছেন:
কেন যেন কিছুই জমলো না :( তানিয়াকে মারল কেন? রহিমকেই বা কেন কামড়ালো?? :( :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.