নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Don\'t be afraid to tell the truth. Because the victory of truth is inevitable.

কাওছার আজাদ

সত্য ন্যায়ে সন্ধানে, আকাশে উড়িয়ে শান্তির নিশান। মুক্তমনে উদার কণ্ঠে, গেয়ে যাবো সত্যের জয়গান।

কাওছার আজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘আমার হাতে গড়া চিরকুমার গ্রুপের কি হবে…’

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:১৬

আমি স্কুল থেকে এসে কেবল বাড়িতে পা রাখলাম। আর ঐ সময়ই নাসিমা আপু আমার কানটা শক্ত করে ধরে রুমে আম্মুর কাছে নিয়ে গেল। অতঃপর বলতে শুরু করল, ‘দেখ আম্মু তোমার আদরের নিষ্পাপ ছেলেটা হেড মাস্টারের মেয়ের সাথে প্রেম নামক সম্পর্ক জড়িয়েছে।’
আম্মু বলতে লাগল, ‘প্রেম করতেছে?’
– ‘হ্যাঁ আম্মু, আমার কাছে প্রমাণ আছে।’
– ‘এটা তো ভাল কাজ। এতে তোর কি হয়েছে? যাহ, দূর হও এখান থেকে। যত্তোসব দালালি।’
নাসিমা আপু একেবারে আহাম্মক হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আর আমি মনে মনে হাসছি আর বলছি- বুঝো মজা! আমার কান ধরে না ঘরে নিয়ে আসলে? এখন তুমিই তোমার কান ধরে ঘর থেকে বের হয়ে গেলে। তৎক্ষণাৎ আম্মু আমাকে বলল, ‘কি কথা সত্যি তো? তুই মাস্টারের মেয়ের সাথে লুতুপুতু...’
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, ‘আম্মু আমার কোনো দোষ নেই। মেয়েটাই আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে।’
এবার আম্মু নো তৈরি, নো প্রস্তুতি ও ডিরেক্ট অ্যাকশনে দুই গালে দুই থাপ্পড় দিয়ে বলতে লাগল, ‘হারামির বাচ্চা! তুই এই বয়সে প্রেম করিস? তোর সাহস তো কম নয়!’
– ‘আম্মু, একবার বোঝার চেষ্টা কর। আমার কোনো দোষ নেই।’
– ‘চুপ কর বেয়াদব। আর একটা কথা বললে ঝাঁটার বারী দিয়ে তোর প্রেমের গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ব।’
– ‘আম্মু, তুমি কিন্তু প্রমাণ ছাড়াই ওর কথা বিশ্বাস করে আন্দাজী বকতেছ।’
– ‘হারামজাদা, তুই নিজেই তো স্বীকার করলি। এখানে আবার প্রমাণ খুঁজব কেন?’
– ‘না মানে...’
কষি জোরে আবার এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। ও আল্লাহ গো, আমাকে বাঁচাও। আমি আরো আছি? লেজ গুটিয়ে দিলাম ছেচড়া দৌড়। প্রেম নাই শুরু করতেই যে পিটুনী! আহা রে, আমার কপালে কোনো প্রেম নাই।
তখন থেকে শপথ নিয়েছি, জীবনে প্রেম তো করবই না। সাথে বিয়েও কখনো করব না। সারা জীবন চিরকুমার হয়ে বসে থাকব।
.
দেখতে দেখতে আমার বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। একটা কম্পানিতে ছোট-খাট পদে চাকরিও করছি। ইতোমধ্যে নাসিমা আপুরও বিয়ে হয়ে গেছে। আমাকে বিয়ে করানোর জন্য মা-বাবা, বোন ও দুলাভাই সবাই উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু আমি তাদের কথায় কোনো গুরুত্ব দিচ্ছি না। সেই ছোটকাল থেকে একটাই নিয়ত ছিল, সারা জীবন চিরকুমার হয়ে থাকব। কিন্তু এদের জন্য সেটাও তো দেখছি ভেঙে যাচ্ছে। নাসিমা আপু আমাকে বারবার বোঝাতে লাগল, ‘আম্মুর বয়স হয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে এত কাজ সে একায় কিভাবে করবে? তাছাড়া আমিও তো আর এখানে থাকি না। প্লিজ, তুই আম্মুর কথা ভেবে বিয়েতে রাজি হয়ে যা।’
– ‘হাহাহা, ছোটকালে প্রেম করার জন্য আম্মুর থেকে মার খাইয়ে নিয়েছিলি। মনে আছে?’
– ‘কেন থাকবে না। তবে এটার সাথে তোর বিয়ে করার সম্পর্ক কি?’
– ‘না, কিছু নয়। প্লিজ, তুই আমাকে একা থাকতে দে।’
– ‘প্লিজ, তোর পায়ে ধরি। আমি তোর বোন বলছি, আমার কথা কি রাখবি না?’
– ‘তুই কি শুরু করলি রে আপু? উফ, পা ছাড় না…’
– ‘আগে বল, তুই রাজি।’
– ‘আচ্ছা, ঠিক আছে।’
– ‘তাহলে কালকে পাত্রি দেখতে যাবি তো?’
– ‘আজিব তো, আমি পাত্রি দেখতে যাব কেন? তোমরা তাহলে কি জন্য আছো?’
– ‘তবুও তোর পছন্দ বলতে তো কিছু একটা আছে।’
– ‘আমার পছন্দ? হাহাহা, আমার গায়ে শার্টটা দেখতেছিস? এটা কার পছন্দে কিনেছিলাম?’
– ‘আমার…’
– ‘তাহলে আমি যাকে বিয়ে করব, এটা তোর পছন্দের মেয়েকেই।’
নাসিমা আপু একটা মুচকি হেসে দিয়ে চলে গেল।
.
অবশেষে তিন দিন পর আমার বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো। ফুলশয্যার রাতে এক গাছা বকুল ফুলের মালা হাতে নিয়ে বউকে বরণ করতে যাব, ঠিক ওই সময় আমি চমকে উঠলাম। একি কাণ্ড? এ তো দেখছি সেই হেড মাস্টারের মেয়ে আতিকা। যে কিনা নবম শ্রেণিতে পড়ারত অবস্থায় আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। যদিও আমি তার প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলাম, কিন্তু আম্মুর পিটনী খেয়ে সেসব কিছু স্মৃতিস্পট থেকে মুছে ফেলেছিলাম।
আমি তার থেকে পিছনে সরে গিয়ে বলতে লাগলাম, ‘এই মেয়ে তুমি এখানে কেন?’
– ‘মানে?’
– ‘কানে কম শুনো নাকি? এখানে কেন?’
– ‘আশ্চর্য তো, আমাকে বিয়ে করেছেন তাই এসেছি।’
.
আমি তার সাথে আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে আপুর কাছে গেলাম। আপু বলতে লাগল, ‘কি রে, তুই এখানে?’
– ‘আমার সাথে চলো।’
– ‘আরে কি হয়েছে, বলবি তো।’
আমি কিছু না বলে আপুকে আমার রুমে এনে বললাম, ‘এটা কে?’
– ‘কে আবার? তোর বউ।’
– ‘এই হলো তোর পছন্দ?’
– ‘কেন, তোর পছন্দ হয়নি?’
আমি ভ্যাবাচ্যাকায় পড়ে গেলাম। কি বলে উত্তর দিব বুঝতে পারছি না। যদি ‘পছন্দ হয়নি’ বলি, তাহলে আতিকা মন খারাপ করবে। আবার যদি ‘হ্যাঁ’ বলি, তাহলে আপু রেগে গিয়ে বলবে, ‘এত নাটক করার কি দরকার ছিল?’ তাই আমি কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
নাসিমা আপু আমার কান টানতে টানতে আতিকাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো, ‘এই বলদটাকে সাইজ করার দায়িত্ব তোমার। বলদ নাকি চিরকুমার গ্রুপের সভাপতি।’ আপু এসব কথা বলে দরজা লেগে দিয়ে চলে গেল। আর আমি সত্যিই বলদের মতো দাঁড়িয়ে আছি।
এবার আতিকা আমাকে বলতে লাগল, ‘হায় বলদ, ওভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে এদিকে আসো।’
– ‘কি, আমি বলদ!’
– ‘তা আমি বলেছি নাকি? আপুই তো তোমাকে বলদ বলল। আচ্ছা, বাদ দাও। তুমি কি আমাকে পেয়ে সন্তুষ্ট না?’
– ‘কি বলো, তোমাকে পেয়ে অবশ্যই আমি অনেক খুশিবোধ করছি। কিন্তু চিরকুমার গ্রুপের কি হবে! আমার সভাপতিত্ব তো আর থাকবে না।’
– ‘ধুর, রাখো তোমার চিরকুমার গ্রুপের সভাপতি। মহাপুরুষ হতে হলে বিয়ের কোনো বিকল্প নেই। কেননা, এই পৃথিবীতে যারা মহাপুরুষ হতে পেরেছিল, এর পিছনে অবশ্যই তাদের স্ত্রী কিংবা মায়ের হাত রয়েছিল।’
– ‘তা ঠিক আছে। কিন্তু আমি তো মহাপুরুষ হতে চাই না। আমি শুধু তোমার ভালোবাসা পেয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’
– ‘হিহিহি, অনেক রাত হয়েছে। আমার ঘুম ধরছে। চলো ঘুমাই।’
সে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। আর আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলতেছি, ‘আমার হাতে গড়া চিরকুমার গ্রুপের কি হবে…’
.
লেখা : কাওছার আজাদ (কচু)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:২৮

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: মজা পেলাম :)

২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৩৯

কাওছার আজাদ বলেছেন: @আর্কিওপটেরিক্স, হাহাহা, পড়ার জন্য থ্যাংকস ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.