নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরের বাড়ির পিঠা খাইতে বড়ই মিঠা ।

কিরকুট

আমি মানুষ, আমি বাঙালি। আমার মানবিকতা, আমার সংস্কৃতির উপর আঘাত হানতে চাওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাওয়া প্রাণী মাত্রই আমার কাছে পিশাচ। আমার দেশের উপর আঘাত হানতে চাওয়া প্রাণীদের পালনকারী, প্রশ্রয়দানকারী মাত্রই আমার কাছে পিশাচ, রাক্ষস। হোক সে যে কোনো সাম্প্রদায়িক কিংবা ঢেঁড়স চাষ পরামর্শক।

কিরকুট › বিস্তারিত পোস্টঃ

মান্দায়ীরা: প্রাচীন একেশ্বরবাদীদের বিস্ময়কর জাতি

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:১৫



পৃথিবীতে কিছু বিশ্বাস আছে, যাদের গল্প শুনলে মনে হয় ইতিহাসের গভীর থেকে কোনো আলো উঠে আসছে। মান্দায়ীরা তেমনই এক সম্প্রদায়। তারা এমন এক ধর্মের ধারক বাহক, যার শিকড় ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম ও ইহুদিধর্মেরও আগের সময়ের। আজ এই জনগোষ্ঠী প্রায় বিলুপ্তির পথে, তবুও তাদের সংস্কৃতি মানবসভ্যতার জন্য এক অনন্য ঐতিহাসিক সম্পদ।

মান্দায়ীরা কারা

মান্দায়ীরা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন একেশ্বরবাদী গোষ্ঠী। তাদের জন্মভূমি ইরাক ও ইরানের দক্ষিণাঞ্চল, যেখানে টাইগ্রিস আর ইউফ্রেটিস নদী যুগ যুগ ধরে জীবন বয়ে এনেছে। ইতিহাসবিদদের ধারণা, কোরআনে উল্লেখিত “সাবিইন” হয়তো এদেরই পূর্বসূরি। এই সম্ভাবনা তাদের ধর্মীয় পরিচয়কে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।

তাদের ঈশ্বরবিশ্বাস

মান্দায়ীরা একজন সর্বোচ্চ স্রষ্টাকে মানে যাকে হাইয়ি রাব্বা বলে ডাকে, যার অর্থ মহান জীবন। তাদের মতে, সব সৃষ্টি এসেছে আলো থেকে, আর মানুষের আত্মাও মৃত্যুর পরে সেই আলোর জগতে ফিরে যায়। এই আলোকদর্শনই তাদের ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু, যা আধ্যাত্মিক পবিত্রতার এক স্বতন্ত্র ভাবনা তৈরি করেছে।

নবী ইয়াহইয়া: তাদের একমাত্র পথপ্রদর্শক

মান্দায়ীদের ধর্মে একমাত্র নবী হলেন ইয়াহইয়া বা জন দ্য ব্যাপটিস্ট। তারা মনে করে তিনিই সত্যপথের দিশারি। খ্রিস্টধর্মের বিপরীতে তারা যিশুকে নবী বা দেবত্ব কোনোভাবেই মানে না। এই অবস্থানই মান্দায়ীদের আলাদা করে চিহ্নিত করেছে ইতিহাসে।

পবিত্র পানির প্রতি তাদের অদম্য টান

মান্দায়ী ধর্মের মূল স্রোতই হলো পানি। পবিত্র নদী ছাড়া তাদের কোনো ধর্মীয় আচার পূর্ণ হয় না। প্রায় সব অনুষ্ঠানই নদীর তীরে হয়। সাদা পোশাক পরে তারা প্রবাহমান জলে দাঁড়ায়, আর প্রার্থনা করে আলোর দিকে ফিরে যাওয়ার।

মাসবুতাহ: শুদ্ধতার আচার

তাদের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান “মাসবুতাহ” যা মূলত পাপমোচন ও পবিত্রতার প্রতীক। প্রতি সপ্তাহে তারা বিশেষভাবে নদীতে স্নান করে, আর এই স্নান তাদের আধ্যাত্মিক জীবনকে নতুন করে শুরু করার পথ দেখায়।

তাদের ধর্মগ্রন্থ ও পুরোহিত

মান্দায়ীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ “গিনজা রব্বা”, অর্থাৎ মহা ধনভান্ডার। পাশাপাশি “কোলাস্তা” এবং “বুক অব জন” তাদের ধর্মচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ। তাদের পুরোহিতদের বলা হয় তর্মিদা, আর উচ্চতর পুরোহিতরা গানজিব্রা নামে পরিচিত। সাদা লম্বা পোশাক আর টারব্যান পরিহিত এই পাদ্রিদের দেখা যায় নদীর তীরে নানা আচার সম্পাদন করতে।

মান্দায়ীদের বর্তমান অবস্থা

ইরাক যুদ্ধ, রাজনৈতিক সহিংসতা, জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও নিপীড়নের কারণে মান্দায়ীদের অস্তিত্ব এখন ঝুঁকির মুখে।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা মান্দায়ীদের মোট সংখ্যা প্রায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার। অনেকে নিরাপত্তার জন্য চলে গেছেন অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন ও যুক্তরাষ্ট্রে। নিজ ভূমি ইরাক ও ইরানে তাদের উপস্থিতি এখন খুবই সীমিত।

কেন মান্দায়ীরা এত গুরুত্বপূর্ণ

০১। তারা বিশ্বের প্রাচীনতম একেশ্বরবাদী সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রতিনিধি
০২। ইয়াহইয়া নবীর একমাত্র ধারাবাহিক অনুসারী
০৩। কোরআনের “সাবিইন”-এর সম্ভাব্য জীবিত বংশধর
০৪। পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম যা পুরোপুরি নদীকেন্দ্রিক
তাদের ভাষা, আচার, পোশাক ও সংগীতে মানবসভ্যতার আদিম চিহ্ন রয়ে গেছে

মান্দায়ীরা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ধর্ম কেবল আচার নয়; এটি মানুষের দীর্ঘ যাত্রাপথ। যেমন নদী নীরবে বয়ে চলে, তেমনই ইতিহাসের কিছু আলোও নিভে যায় না, কেবল সময়ের সাথে প্রবাহিত হতে থাকে। এই বিলুপ্তপ্রায় জলজাতি সভ্যতার সেই চিরন্তন আলোর স্মৃতি বহন করে চলেছে নীরবে, নিরন্তর।

সুত্রঃ
আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিবেদন

UNHCR & Minority Rights Group International
মান্দায়ীদের বর্তমান নির্যাতন, অভিবাসন সংকট এবং জনসংখ্যা হ্রাস নিয়ে প্রতিবেদন।

U.S. Department of State – International Religious Freedom Reports
ইরাক ও ইরানে মান্দায়ীদের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য।

Jorunn Jacobsen Buckley – The Mandaeans: Ancient Texts and Modern People
মান্দায়ীদের ইতিহাস, ধর্মীয় আচার ও সমসাময়িক সংকট নিয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আধুনিক গবেষণা।

E. S. Drower – The Mandaeans of Iraq and Iran
মান্দায়ী সংস্কৃতি, আচার, পুরোহিতগোষ্ঠী ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ক্লাসিক কাজ।
(E. S. Drower কে মান্দায়ী গবেষণার “সর্বাধিক কর্তৃত্বপূর্ণ কণ্ঠ” বলা হয়।)

E. S. Drower – The Canonical Prayerbook of the Mandaeans (Qolasta)
মান্দায়ীদের অন্যতম পবিত্র গ্রন্থ কোলাস্তার অনুবাদ ও বিশ্লেষণ।

Rudolf Macuch – Handbook of Classical and Modern Mandaic
মান্দায়ীদের ভাষা ও ধর্মগ্রন্থের ভাষাতাত্ত্বিক ভিত্তি নিয়ে প্রামাণ্য গবেষণা।

Edmondo Lupieri – The Mandaeans: The Last Gnostics
মান্দায়ী ধর্মকে গনোস্টিক ঐতিহ্যের আলোকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছে।

Mark Lidzbarski – Ginza Rba: The Great Treasure
মান্দায়ীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ “গিনজা রব্বা”–র অনুবাদ ও ব্যাখ্যা।



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৩

অগ্নিবাবা বলেছেন: ৫০জন বলদ পাইলে আমিও একটা নতুন ধর্ম বানাইতে পারি।

২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪১

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: ভালো বিষয় নিয়ে একটা ভালো পোস্ট দিয়েছেন।

৩| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪১

আলামিন১০৪ বলেছেন: নূরুন আলা নূর..আলোর উপর আলো.।
Allah is the Light of the heavens and the earth. His light1 is like a niche in which there is a lamp, the lamp is in a crystal, the crystal is like a shining star, lit from ˹the oil of˺ a blessed olive tree, ˹located˺ neither to the east nor the west,2 whose oil would almost glow, even without being touched by fire. Light upon light! Allah guides whoever He wills to His light. And Allah sets forth parables for humanity. For Allah has ˹perfect˺ knowledge of all things.

৪| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৬

হুমায়রা হারুন বলেছেন: চমৎকা্র পোস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.