নতুন রক্তদাতা তৈরি/ রক্ত ম্যানেজ করার কিছু কৌশলঃ-

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৮

নতুন রক্তদাতা তৈরি/ রক্ত ম্যানেজ করার কিছু কৌশলঃ-
..............................................................................
নতুন রক্তদাতা অথবা রক্ত ম্যানেজ করার জন্যে অনেকেই অনেক পদ্ধতিতে কাজ করে থাকেন। আমিও আমার কিছু নিজস্ব পদ্ধতি এবং অন্যদের থেকে শিখা কিছু পদ্ধতির মিশ্রণে কাজ করি। আজ সবার সাথে সেটা শেয়ার করছি, যারা আমার এই লিখাগুলির বাইরেও অন্য কোনভাবে কাজ করেন তবে অবশ্যয় কমেন্টে বা আমাকে ইনবক্সে বললে আমি পোস্টে সেটা দিয়ে দিব এবং আমরা সবাই অনুসরণ করতে পারবো সেই পদ্ধতি।

#রক্তদাতা বৃদ্ধি করতে হলে সবচেয়ে যে জিনিসের বেশী প্রয়োজন সেটা হল সচেতনতা। আপনি যদি মানুষকে সঠিকভাবে সচেতন করতে পারেন তবে সবাই রক্তদানে এগিয়ে আসবে। এই সচেতনতা সৃষ্টির জন্যে আপনাকে প্রচুর কথা বলতে হবে মানুষের সাথে, পাশাপাশি কিছু তথ্য জানতে হবে রক্ত এবং রক্তদান সম্পর্কিত। মানুষের কাছে আপনার কথাগুলি তুলে ধরতে হবে। তুলে ধরতে হবে রক্তদানের উপকারিতা। প্রয়োজনে মানুষকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে।
#আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে প্রচুর মানুষের রক্তের গ্রুপ জেনে রাখা। আচ্ছা আপনি তো রক্ত নিয়ে কাজ করছেন , ইভেন আপনি প্রচুর মানুষের রক্তের গ্রুপ জানেন, আচ্ছা আপনি কি আপনার পরিবারের সকল সদস্যের রক্তের গ্রুপ জানেন? নিকটাত্মীয় সবার রক্তের গ্রুপ কি জানেন? সব বন্ধুর? আপনার সব শিক্ষকের? তাহলে আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে যার সাথে আপনার পরিচয় হবে , তার নাম আর কুশলের পাশাপাশি তার রক্তের গ্রুপ জেনে নিবেন। সাথে জেনে নিবেন তার ওজন, বয়স ১৮ + কিনা, শারীরিক সক্ষমতা আছে কিনা। (তবে অনেক ক্ষেত্রে মানুষ ভয়ে মিথ্যা বলে আপনি একটু যদি বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ঘটাতে পারেন তবে সে বাধ্য হবে সঠিক ইনফরমেশন দিতে)।
#আচ্ছা রক্তের গ্রুপ তো জানলেন এখন আপনার কাজ কি? রক্তের গ্রুপ জানার পরে আপনার কাজ হচ্ছে তাকে একটু মোটিভেট করা। সে ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু তথ্য জেনে রাখতে হবে। আবার কিছু পয়েন্ট অনুসারে কাজ করলে ভালো ফল পাবেন বলে আমি মনে করি। পয়েন্ট গুলা হচ্ছে, প্রথমেই আপনি তাকে রক্তদানের কথা বলতে পারবেন না। আপনি প্রথমে তাকে শুনাবেন রক্তদানের উপকারিতা, তাকে বুঝাতে হবে রক্ত দিলে কোন ক্ষতি হয়না। প্রয়োজনে আপনি তার পরিচিত আশেপাশের কোন মানুষের উদাহারন দিতে পারেন, উদাহারন দেয়ার ক্ষেত্রে সঠিক মানুষটি বাছাই করে উদাহারন দিতে পারলে ভালো হয়। (বিশেষ করে সবার প্রিয় কোন ব্যক্তির উদাহারন দিতে পারেন, আর যদি আপনার পরিচিত কোন হ্যাংলা পাতলা রক্তদাতা থেকে থাকে তবে তার উদাহারন দিলে ভালো হয় এতে করে ভুল ধারণা ভাঙবে মানুষের)। মানুষের শরীরে রক্তের পরিমাণ, কতটুকু আমাদের কাজে লাগে কতটুকু রক্তদিলে শরীরের ক্ষতি হয়না, কতদিনের মাঝে আবার রক্ত পরিপূর্ণ হয় এইসব তথ্য আপনি তাকে জানিয়ে দিবেন। তারপরে আসেন রক্ত কাদের লাগে সেটা একটু বলেন। এটাও বলতে পারেন যে রক্তের অভাবে মানুষ মরেছে এমন ঘটনাও আছে, আবার দরিদ্র মানুষদের এখনো রক্ত কিনতে হচ্ছে দালাল আর নেশাখোরদের খপ্পরে পড়ে। আপনি সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতে পারেন তাকে কিভাবে তার দেয়া রক্তের কারণে একটা মানুষ বেঁচে যেতে পারে। তাকে কিছু পরিসংখ্যান দেখাতে পারেন কি পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন হয় দেশে। এরপরে খুব ইমোশনাল ভাবে তাকে আপনি রক্তদানের কথা বলুন। সম্ভব হলে তাৎক্ষণিক ভাবে তাকে সরাসরি রক্তদান কিভাবে হয় কোন হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে দেখান এতে তার সাহস বাড়বে।
#আপনার শিক্ষকদের এভাবে উৎসাহী করতে পারেন যে, স্যার দেখেন আপনি যদি রক্তদান করেন তবে আপনাকে ভালোবাসে এমন অনেকেই সাহস পেয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে রক্তদান করবে। দেখবেন এভাবে একটু সুন্দর করে বলতে পারলে আপনার স্যার নিশ্চিত রক্ত দিবেন। আমার বেশীরভাগ শিক্ষক রক্তদাতা।
#আচ্ছা আপনার বয়ফ্রেন্ড/ অথবা গার্ল ফ্রেন্ড নিয়মিত রক্ত দিচ্ছে তো? আপনি তাকে যদি রক্তদান করাতে না পারেন তবে আপনি একজন ব্যর্থ স্বেচ্ছাসেবক।
#আচ্ছা রুগীর লোকদের থেকে নতুন রক্তদাতা তৈরি করছেন তো? নাকি তাদের আপনি রক্ত শুধু দিয়েই যাচ্ছেন? এভাবে রক্ত দিয়ে গেলে তো তারা জীবনেও সচেতন হবেনা। তাহলে আপনার আর কাজ করে কি লাভ হল? প্রয়োজনে আপনি কঠোর হন, এক্সচেঞ্জ প্রথা চালু করুন (ক্ষেত্র বিশেষে ছাড় দিতে হবে)। দরকার হলে এক্সচেঞ্জ ছাড়া ব্লাড দিবেন না। দেখবেন একবার জোর করে রক্ত নিলে পরবর্তীতে ভয় কেটে এমনিতেই রক্ত দিবে( বহু প্রমান পাইছি আমি) হুম তবে এটা করতে যেয়ে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করা যাবেনা। আর এমন কিছু করা যাবেনা যাতে করে স্বেচ্ছাসেবকদের বদনাম হয়।
#ক্যাম্পেইন গুলা থেকে ডোনার উঠে আসতেছে তো? নাকি অযথায় শুধু ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছেন? প্রত্যেকটা ক্যাম্পেইনে মোটিভেশনাল কথা বলার জন্যে একজন কে রাখুন। এই দিকে বেশী নজর দেয়া উচিৎ। ঠিকমত কাউকে যদি বুঝিয়ে দিতে পারেন তবে সে এমনিতে নিজ দায়িত্বেই নিজের ব্লাড গ্রুপ জেনে নিবে।
#আপনার আশেপাশের ১০ টা বাড়ি টার্গেট করুন, পরিচিত ১০ জন ছেলে টার্গেট করুন। এই ১০ টা বাড়িতে প্রত্যেক টা পরিবারে যদি ১ জন করেও ডোনার তৈরি করতে পারেন এবং সচেতন করতে পারেন দেখবেন আপনার এলাকা পুরা পরিবর্তন হয়ে যাবে। পুরা এলাকার সবার থেকে ১০ / ২০ টাকা করে তুলে যারা ব্লাড গ্রুপ জানেনা তাদের ব্লাড গ্রুপিং এর ব্যবস্থা করুন।
#একটা টার্গেট ফিক্সড করুন যে আমি যত জন মানুষকে চিনি তাদের ৫০ % কে রক্তদাতা হিসেবে তৈরি করবো। অর্থাৎ আমি যাদের সাথে চলাফেরা করবো তাদের ৫০ শতাংশ হবে রক্তদাতা। এই লক্ষে আজ থেকে কাজ শুরু করে দেন।
#ফেসবুকে চ্যাট করার সময় অপরিচিত সবার ব্লাড গ্রুপ জেনে নেন, এবং তাকে উৎসাহী করুন। দেখবেন অনেকেই রাজি হয়ে যাচ্ছে রক্তদানে।
#বাসে করে কোথাও যাচ্ছেন তো? আচ্ছা আপনার পাশের সিটের মানুষটার সাথে তো পরিচিত হতে পারেন? কথায় কথায় তাকে আপনি জানিয়ে দিতে পারেন রক্তদানের ডাক।
#ধরেন কোন বিয়ে বাড়িতে গেছেন , আড্ডার ফাঁকে কিন্ত নতুন পরিচিত অথবা আগের পরিচিত সবাইকে আপনি রক্তদানের দাওয়াত দিয়ে দিতে পারেন।
#আচ্ছা আপনি চাকরি করেন? তো আপনার কলিগ রা কি আপনার কাছ থেকে রক্তদানের আহ্বান পেয়েছে? তারা কি সচেতন?
#কোথাও বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন, আচ্ছা আপনি একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তো একটা কাজ করতে পারেন , অলস সময় না কাটিয়ে

০ টি +০/-০