নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবাক হয়ে আমি দরজা দুটোর দিকে তাকিয়েই থাকতাম। দু'টো দরজাই বন্ধ। কিন্তু দরজায় কোন ছিটকিনি দেখা যাচ্ছেনা। বাবা বলেছেন এই দরজা নিজে নিজেই খোলে আর বন্ধ হয়, অনেকটা আলিবাবা ও চল্লিশ চোর গল্পের ধনভাণ্ডারের দরজার মত। একথা শোনার পর থেকেই এই দরজার প্রতি আমার দুর্নিবার আকর্ষণ - মাঝে মাঝেই এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। কিন্তু দরজা খোলে না,কারণ এটা লিফটের দরজা,বাবা বলেছেন এটা কারেন্ট দিয়ে চলবে, দরজা খুল্লেই ভিতরে ছোট একটা ঘর মানুষদের নিয়ে একতালা থেকে ছয়তালা পর্যন্ত ওঠানামা করবে। এই ব্যাপারটা কিছুতেই বুঝতে পারছিলামনা। মানুষেই না সিঁড়ী দিয়ে উপর নীচের ঘরে যাতায়াত করে-মানুষ দাঁড়িয়ে থাকবে আর ঘর ওঠানামা করবে এমন আশ্চর্য ব্যাপার কি সম্ভব ! সম্ভব কিনা তা আর যাচাই করে দেখার সুযোগ হয় নি কারণ আমরা থাকাকালীন লিফটে কারেন্ট লাগেনি। অবশ্য এর আআগে জীবনে একবারই লিফট দেখেছি ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে, সেটা একটা খাঁচার মত, কলাপসিবল গেট লাগানো। খাঁচায় বন্দী হয়ে ওঠানামা ব্যাপারটা মোটেও ভাল লাগে নি। তাই এই লিফটটা দেখার জন্য এত আকুলতা। লিফটট এক মস্ত বাড়ীতে লাগান হয়েছিল কিন্তু তখনো চালানো হয় নি। মফস্বল শহর থেকে দুই চার দিনের জন্য ঢাকায় আসলে আমরা এই বাড়ীটাতে থাকতাম। সামনে পিছনে দু'টো বাড়ী, সামনের বাড়ীটার বাসিন্দারা স্থায়ী ভাবে থাকতেন আর পিছনের বাড়ীটার বাসিন্দারা অল্প সময়ের জন্য থাকতেন। একে বলা হত সার্কিট হাউস। প্রথমবার এই বাড়ী দেখেও আমি খুব অবাক হয়েছিলাম - এত উঁচু বাড়ী হয়! মফস্বলে তো হাতে গোনা কয়েকটা দোতালা বাড়ী দেখেছি, আর ঢাকার সব সরকারি কলোনির বাড়ী তিনতালা। উঁচু বাড়ী বলতে ছিল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, শাহবাগ হোটেল আর সেকেন্ড ক্যাপিটালে (আজকের শেরে বাংলা নগরে) বানানো হচ্ছিল একটি মস্ত উঁচু বাড়ী, কিন্তু সেসবে যাবার সৌভাগ্য তো আমার হবে না। তাই যখন এই ছয়তালা বাড়ীটা দেখলাম আর শুনলাম এই বাড়িতে পাচ তালায় থাকতে পারব, তখন আমার খুশি দেখে কে! তখন পর্যন্ত লিফটের কথা জানতাম না।
আমাদের পুরো পরিবারের জন্য দেড়খানা ঘর। তাতে কি, বিশাল জানালা দিয়ে নীচে বহুদূর অবধি দেখা যায়, ময়মনসিংহ রোড (এখন কাজী নজরুল ইসলাম রোড) ধরে মাঝে মাঝে গাড়ী, বেবি টেক্সির ছুটে চলা দেখা যায়, দেখা যায় একটা সুন্দর দোতলা বাড়ী, তারপরই হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল । আমি জানালার পাশে বসে শুধু রাস্তা দেখতাম, দিনে রাতে তার রূপ আলাদা। একদিন অনেক রাতে ঘুম ভেংগে গিয়েছিল, ঘরে সবাই বিছানাতে, মেঝেতে ঘুমাচ্ছে। আমি জানালার পাশে গিয়ে দেখলাম স্ট্রীট লাইট এর আলোতে কি অপরূপ দেখাচ্ছে নীচের সবকিছুকে। দেখে মুগ্ধ হলাম আর তারপর দশকের পর দশক এই মুগ্ধতাকে বুকের মধ্যে রেখে দিলাম।
সেটা ১৯৬৯ সাল, সেবছর মানুষ প্রথমবার চাঁদে গেছে। তবুও, একটা ছয়তালা বাড়ীতে কদিন থাকার আনন্দে আমার মন ভরে গিয়েছিল।
তারপর কতকাল কেটে গেল। কোরবানির ঈদের রাতে যাচ্ছিলাম কাজী নজরুল ইসলাম রোড ধরে। ঈদের রাত বলেই হয়ত রাস্তা একেবারে খালি ছিল। হঠাত বাঁয়ে তাকিয়ে দেখি সেই ছয়তালা বাড়ী দু'টো - পাশের দোতালা বাড়ীটা এখন মস্ত বহুতল বাড়ী । তার নাম এখন UNIQUE HEIGHTS। চেষ্টা করলাম গাছের ফাঁক দিয়ে আমার জানালাটা দেখার, যদি কেউ আমার মত জানালায় বসে থাকে। অবশ্য জানি এখন আর কেউ জানালায় বসে রাস্তা দেখে না। তাই কি কেউ দেখে-.এখনতো স্মার্ট ফোন, ট্যাব কত কিছু আছে। যখন খুশী হাতের মুঠোর মধ্যে বিশ্বজগত দেখা যায়।
ছবি: গুগল ম্যাপ। জানালা থেকে আগে রাস্তা দেখা যেত। এখন রাস্তা থেকে জানালা দেখার চেষ্টা করেও দেখতে পাইনি গাছের জন্য।
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৩
করুণাধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। যতবার আমি ওই বাড়ীর পাশের রাস্তা দিয়ে যাই ততবারই আমি জানালাটা খুঁজতে থাকি। সময় কত দ্রুত চলে যায়। হায়!
২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:০৮
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ভালো লাগলো স্মৃতিচারণ!
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:১৬
করুণাধারা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
৩| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৪
জনৈক অচম ভুত বলেছেন: জানালার ধারে বসে রাস্তা, আকাশ দেখায় যে সুখ, স্মার্টফোনে গোটা বিশ্ব দেখেও কি তা পাওয়া যায়?
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৭
করুণাধারা বলেছেন: না, তা পাওয়া যায় না। অথচ এখন তো জানালায় বসলে তিন ফুট দূরে পাশের বাড়ীর দেয়াল ছাড়া কিছু দেখা যায়।না। তাই আমি নতুন জানালা খুঁজে নিয়েছি - "সামু"। এখন আমার যখন ইচ্ছা সামুর জানালায় বসে দেখি নানা বয়সের, নানা ভাবনার বিচিত্র সব মানুষদের। খুব ভাল লাগে।
অনেক ধন্যবাদ, আমার ব্লগে আসার জন্য।
৪| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:৫৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: অল্প কথায় খুব সুন্দর স্মৃতিচারণ। + +
স্ট্রীট লাইট এর আলোতে কি অপরূপ দেখাচ্ছে নীচের সবকিছুকে - আটপৌরে জীবনের অনেক কিছুই গভীর নিশীথে, নিভৃত নির্জনে মনহারিণী রূপ নেয়, যা দিনের আলোয় জনসমক্ষে চোখেই পড়েনা।
তাই আমি নতুন জানালা খুঁজে নিয়েছি - "সামু"। এখন আমার যখন ইচ্ছা সামুর জানালায় বসে দেখি নানা বয়সের, নানা ভাবনার বিচিত্র সব মানুষদের। খুব ভাল লাগে -- আপনার এ দার্শনিক মন্তব্যটা স্পর্শ করে গেল! খুব ভাল লেগেছে।
২৪ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৫৪
করুণাধারা বলেছেন: অজস্র ধন্যবাদ খায়রুল আহসান, মন্তব্য করে কেবল অনুপ্রেরণা নয়, আমাকে ব্লগে ফিরে আসতে সাহায্য করবার জন্য।
আমার মনে হচ্ছে আমার বর্তমান বিপর্যস্ত অবস্থায় আপনার কাছ থেকে তথ্য সহায়তা পেতে পারি। আপনার ছেলেকে নিয়ে যে পোস্ট দিয়েছিলেন তাতে খুব অল্প হলেও আপনার background জানতে পেরেছিলাম। যদি পারেন, কিছু জানান প্লিজ।
সমস্যা হল আমাদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট নিয়ে। এটার ব্যবস্থা এমন যে ১৭ ডিজিটের বার্থ সার্টিফিকেটের নাম্বার ছাড়া তা করা সম্ভব হয় না। যারা এদেশে জন্মেছে তারা সহজেই এটা পেতে পারে, যারা এখন বিদেশে জন্মেছে আর এদেশের পাসপোর্ট চায় তারাও সেদেশের বাংলাদেশী দূতাবাসে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন করে এই নাম্বার নিয়ে পাসপোর্ট পেতে পারে। কিন্তু এমন যদি হয়,যে এএকজন ২০/২৫বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে জন্ম নিল এবং কবছর পর স্থায়ীভাবে দেশে চলে আসল। সে যখন এম আর পি করতে যাবে, তখন এই নাম্বারটা কিভাবে পাবে? নেট থেকে আমি যা জানতে পারলাম তা এই, জন্মের দেশে গিয়ে জন্মের প্রমান দেখালে দূতাবাস সেই নাম্বার দেবে। এটা কঠিন নিয়ম। সহজ কোন নিয়ম আছে কি?
সহজতম হয় বিদেশে জন্মের কথা না বলে বার্থ সার্টিফিকেট নেয়া। কিন্তু তাতে সারাজীবনের জন্য মিথ্যাকথনের অপরাধবোধ বুকে নিয়ে বেড়াতে হবে।
আশাকরি আপনি কিছু জানাতে পারবেন।
ভাল থাকুন- শুভকামনা।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১০
সামিয়া বলেছেন: খুব সুন্দর সৃতি