নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২৫ জন তরুণের হাস্যোজ্জ্বল ছবি- এই ছবি দেখে ভাবা কঠিন যে, এই তরুণেরা তাদেরই মত এক তরুণকে ধরে পিটিয়েছে, যতক্ষণ সে মরে না যায়!! এই তরুনদের প্রত্যেকেই মেধাবী, স্কুল- কলেজের পরীক্ষায় এরা সর্বোচ্চ ফলাফল পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গনে পা রেখেছিল; চোখে ছিল সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন। এদের মধ্যে অল্প কয়েকজন স্বচ্ছল পরিবার থেকে এসেছে, বাকিদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের। কারো বাবা ভ্যান চালক, কারো বাবা বাসচালক, কারো বাবা মুদি দোকানদার। দারিদ্র এই অদম্য মেধাবীদের দমাতে পারেনি, আধপেটা খেয়েও সোনালী পাঁচ পেয়ে অনেকের আর্থিক সহায়তায় তারা স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেছে, তাদের নিয়ে পরিবার স্বপ্নের জাল বুনেছে; সেসময় কেউ কখনোই ভাবেনি এই ছেলেরা একদিন খুনিতে পরিণত হবে। তারা নিজেরাও কি কখনো ভেবেছিলে যে, সোনালী মানব থেকে তারা একসময় দানবে পরিণত হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল অঙ্গন থেকে তারা পৌঁছাবে কারাগারের অন্ধকারে!!
সোনালী মানব থেকে দানবে পরিণত হওয়ার কাজ ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়েছে:
১) ১৮/১৯ বছরের একটি ছেলে পরিবার ছেড়ে, পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে, বুয়েটের হলে বাস করতে আসে। এদের অনেকেই রাজধানী দূরের কথা, কোন শহরেই কখনো বাস করেনি। তাই প্রথমদিকে নতুন পরিবেশে এসে কিছুটা হকচকিয়ে যায়, কষ্ট হলেও ভয়ে মুখ বুজে সহ্য করে র্যাগিং এর নামে বড় ভাইদের অত্যাচার।
২) এদিকে নবাগত ছাত্ররা হলে ওঠার পর থেকেই বড় ভাইয়েরা একদিকে র্যাগিং করে আর দলে ভেড়ানোর জন্য শিকার খুঁজতে থাকে । এক্ষেত্রে সহজ শিকার হয় সেই সব ছাত্ররা, যারা পছন্দমত বিভাগ না পাওয়ায় অথবা অন্য কোন কারণে পড়াশোনায় অমনোযোগী, যাদের সামনে তেমন কোন লক্ষ্য নেই, বুয়েটে পড়ছে কিন্তু জানে না পড়া শেষে কি করবে! এরা দেখে বড় ভাইদের দলীয় অনুষ্ঠানে হলের প্রভোস্ট, অন্য শিক্ষকেরা এবং এমনকি ভিসি পর্যন্ত কখনো অতিথি হয়ে আসেন, দেখে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে বড় ভাইদের প্রভাব, এবং ঝকমকে মোটরসাইকেলে বড় ভাইদের দাবড়ে বেড়ানো। পড়াশোনা করে কোথায় কবে প্রতিষ্ঠা পাবে, তার চাইতে বড় ভাইদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ক্ষমতা এবং অর্থোপার্জন এদের কাছে বেশী লোভনীয় মনে হয়। হাতেনাতে ফল পেয়েও যায়, খবরে প্রকাশ, আবরার হত্যায় অভিযুক্ত একজন বাসচালকের ছেলে বুয়েটে ঢোকার দেড় বছরের মধ্যে বাবাকে ট্রাক কিনে দিয়েছে, হত্যার ১০ দিন আগে আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে নিজের জন্য মোটরসাইকেল কিনেছে!
৩) যোগ দেবার কিছুদিনের মধ্যেই কিছু শিক্ষকদের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক স্থাপন হয়, লেখাপড়ার সাথে যার কোনো সম্পর্ক নেই। পদলোভী শিক্ষকেরা নানা পদ পেতে এই ছাত্রনেতাদের সাহায্য নেন, বিনিময়ে তারাও ছাত্রনেতাদের স্বার্থ দেখভাল করেন। নিরীহ যে ছেলেটা জীবনে কাউকে একটা চড় মারে নাই, প্রভুত ক্ষমতা এবং অর্থ প্রাপ্তির সাথে সাথে তার মনুষ্যত্ব ক্রমশ বিলীন হতে থাকে, সে একটি রোবটে পরিণত হয়, যে রোবট বড়ভাই আদেশ করলেই বিরুদ্ধ মতের যে কোন মানুষকে নির্মমভাবে পেটাতে পারে... এক সময় সেও একজন বড় ভাইয়ের পরিণত হয়! এই চক্র চলতেই থাকে...
আবরার হত্যায় অভিযুক্ত অনীক কাঁদতে কাঁদতে আদালতকে বলে, বড় ভাইদের নির্দেশ অনুযায়ী আবরারকে মারপিট না করে তার উপায় ছিলনা!
১৩ নভেম্বর আবরার হত্যায় ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এই ২৫ জন সহ মোট ২৬ জনকে আজ বুয়েট স্থায়ী ভাবে বহিষ্কার করেছে। আশা করা যায়, এর ফলে বুয়েট প্রশাসনের ইজ্জত রক্ষা হয়েছে।
সোনার ছেলে কি করে দানবে পরিণত হয়, তার সবচেয়ে সুন্দর বর্ণনা দিতে পারবেন হলগুলোর প্রভোস্ট, তিন সহ- প্রভোস্ট, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক আর ভিসি! বিশ্ববিদ্যালয়ে তারাই ছিলেন অভিভাবকহীন এই ছেলেদের অভিভাবক। একমাত্র তারাই দেখেছেন আর জেনেছেন, কোন যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে ছেলেগুলো বদলে গেছিল। শুধুমাত্র তারাই বলতে পারবেন, কিভাবে একদার দুর্বল- মুখচোরা ছেলেগুলো নানা অনুষ্ঠানে তাদের সাথে বন্ধুর মত আচরণ করতে পারার মত আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পেরেছিল!
অবশ্য এদের মধ্যে একজন, শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করার পর ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। বাকিরা পদত্যাগ করেননি, সুস্থও আছেন; আশা করি একদিন তারা আমাদের জানাবেন, ঠিক কোন প্রক্রিয়ায় সোনার ছেলেরা দানব হয়ে ওঠে!
©somewhere in net ltd.