নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

করুণাধারা

করুণাধারা

জীবন যখন শুকাইয়া যায় করুণাধায় এসো

করুণাধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন জীবন- তের

২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৪৪

আগের পর্ব: নতুন জীবন- বারো
চৌদ্দ
এ্যানের এমন মৃত্যু দুঃখজনক হলেও সবাই  মেনে নিয়েছিল। প্রথমবার সন্তান সম্ভাবা হয়েছে এমন একজন তরুণী যখন স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর খবর পায়, তখন সেই ধাক্কা সামলাতে না পেরে মানসিক অবসাদে আত্মহত্যা করতেই পারে, এর মধ্যে কোন রহস্য থাকতে পারে এমনটা কেউই ভাবল না। কিন্তু এ্যালেনের মৃত্যু একটা রহস্য হয়েই রইল, অন্য সবার মতো আমরাও এটা নিয়ে ভাবলাম। এ্যালেনের সাথে শত্রুতা ছিল এমন সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল, কিছু পাওয়া গেল না। এছাড়া সন্দেহভাজন কয়েকজনকে বাজিয়ে দেখা হল, কিন্তু দেখা গেল তাঁরা কেউই জড়িত নয়। যে তীর দিয়ে  এ্যালেনকে হত্যা করা হয় সেটা বুড়ো উইলিয়াম টাইয়ের বানানো, টাই বলতে পারল না এটা কে ওর থেকে কিনেছিল; এমন তীর সে শয়ে শয়ে তৈরি আর বিক্রি করেছে। মানুষ এ্যালেনের মৃত্যু নিয়ে নানারকম জল্পনা কল্পনা করতে লাগলো, এমনও শোনা গেল যে এ্যান নিজেই খুন করে তারপর  আত্মহত্যা করেছে! অবশ্য প্রমানের অভাবে এই গুজবও থেমে গেল। কিছুদিন পর আলোচনার নতুন বিষয় পাওয়া যাওয়ায় এ্যালেনের মৃত্যু রহস্য ধামাচাপা পড়ে গেল!!

আমরা কিছুদিন খুব করে চোখকান খোলা রেখে দেখলাম, কোন ভাবে কেউ আমাদের এই খুনের সাথে সম্পর্কিত করে কিনা! যখন দেখলাম আমাদেরকে কেউ কোন সন্দেহ করছে না, তখন মনে হল মাথা থেকে মস্ত এক বোঝা নেমে গেল!

তারপর প্রায় একবছর কেটে গেছে। মাথার বোঝা নেমে গেলেও মনের ভেতর একটা দুশ্চিন্তা সবসময় কুড়ে কুড়ে খেত, মনে হত আমাদের একতা ছিন্ন হয়ে গেছে, নিজের নিরাপত্তার  খেয়াল রাখতে হবে। এ্যান তো অনেক আগে থেকেই আমাদের থেকে আলাদা হয়ে গেছিল, তাই ওর না থাকাটা মাইকেল বাদে আমরা কেউ সেভাবে অনুভব করতাম না; শুধু মাইকেল মাঝে মাঝে গভীর উদ্বেগ নিয়ে বলতো,
- আমাদেরই একজন আমাদেরকে ধরিয়ে দিতে যাচ্ছিল....

 সে বছর বসন্ত যেন এল জয়ের মালা নিয়ে! এলাকার সকল ক্ষেত- খামারেই ফসলের বাড়- বাড়ন্ত, শুধু দুটো ক্ষেত বাদে আর কোথাও কোন বিকৃতি দেখা গেল না। আগের দু'বছর লোকজনকে অনেক ক্ষেত জ্বালিয়ে দিতে হয়েছে বিকৃতি ধ্বংসের জন্য। মাঠভরা ফসল দেখে মানুষের মেজাজ সবসময় ফুরফুরে থাকে, পাড়া প্রতিবেশীর সাথে আড্ডা, গল্পগুজব চলতে লাগলো। বুড়ো জেকব পর্যন্ত বলতে ।।লাগলো,
- ঈশ্বর আমাদের খুব কৃপা করেছেন, আমাদের কর্তব্য এখন ঈশ্বরের পথে চলা, তাকে সন্তুষ্ট করা, নাহলে আবার তার কৃপা বন্ধ হয়ে যাবে।

জেকবের ধারণা মিথ্যে হল, ঈশ্বর মোটেও কৃপা করা বন্ধ করলেন না; সে বছর গ্রীষ্মের ফলনও ভালো হল, প্রচুর অবিকৃত শাকসবজি জন্মাল। অবস্থা এমন হল, ইন্সপেক্টর তার অফিসেই সবসময় বসে থাকতেন, কারণ কোথাও তদারকি করবার দরকারি হতো না!

ক্ষেতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হচ্ছিল, কিন্তু আমাদের সবাই নিশ্চিন্ত, শান্তিময় দিন পার করছিলাম। কিন্তু এমন শান্তিময় দিনে অশান্তি নেমে এল পেট্রার কারণে...

এক রোদ ঝলমলে সকালে পেট্রা কাউকে না জানিয়ে একা একা বেড়িয়ে পড়ল ওর ছোট্ট টাট্টু ঘোড়ার পিঠে চেপে। একা বাড়ি থেকে বেরোনো ওর জন্য নিষিদ্ধ ছিল, ও এই নিষেধ তো মানলোই না বরং খোলা মাঠ পেরিয়ে জঙ্গলে গিয়ে ঢুকল। এমনিতে ওয়াকনুকের জঙ্গল তেমন ভয়ংকর কিছু নয়, হিংস্র প্রাণী ছিল না বললেই চলে, কিন্তু কালেভদ্রে তাদের দেখাও যেত, যখন প্রান্তভূমি এলাকার অদ্ভুত কোন প্রাণী জঙ্গলে চলে আসত! সেজন্য জঙ্গলে যেতে হলে অস্ত্র ছাড়া যাবার কথা কেউ ভাবতেই পারত না, অথচ পেট্রা এমনিই চলে গেছিল!

আমি আমাদের কামারশালায় হাতুড়ি পেটাচ্ছিলাম, হঠাৎ পেট্রার আর্তনাদ মাথার মধ্যে হাতুড়ির বাড়ির মতোই লাগলো, আগেরবারের মতোই অপ্রত্যাশিতভাবে, যদিও এবারের আর্তনাদের আকুলতা আগেরবারের মতো আমার মধ্যে ছুটে যাবার ভয়ংকর তাড়না সৃষ্টি করছিল না, কিন্তু এর মধ্যে আতঙ্ক আর উদ্বেগ এত তীব্র ছিল যে তৎক্ষণাৎ ছুটে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই মাথায় আসছিল না। তাছাড়া  চিৎকারে কোন থামাথামি ছিল না, ওর চেতনার সবটুকু জুড়ে বসেছিল প্রচন্ড আতঙ্ক, ও এমনভাবে তার বিচ্ছুরণ করছিল, যে মনে হল আমার সমস্ত চেতনাকে তা গ্রাস করে ফেলেছে। আমি অন্যদের জানাতে চাইলাম যে পেট্রাকে আমিই সামলাবো, আর কেউ যেন না আসে। কিন্তু জানাবো কী করে, আমার সমস্ত অনূভুতি যেন অসাড় হয়ে গেছে! কানফাটানো আওয়াজের মধ্যে যেমন নিজের কথাও শোনা যায় না, এটা অনেকটা সেরকম। সমস্যা হচ্ছে পেট্রা তার সমস্যা কী সেটা জানাচ্ছিল না, মনে হচ্ছিল যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রচন্ড প্রতিবাদ জানাচ্ছে, সেই প্রতিবাদে কোন ভাবনার প্রকাশ বা কোন নিয়ন্ত্রন নেই! আমার মনে হচ্ছিল, ও সচেতনভাবে এটা করছিল না, মনের অবচেতন থেকে এই আর্তনাদ বেরিয়ে আসছিল... আমি শুধু এটুকু বুঝলাম যে এটা কোন বিপদগ্রস্তের সাহায্য চেয়ে আকুলতা, আর এটা আসছে বেশ দূরে থেকে।

আমি কামারশালা থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে প্রথমেই বাসায় ঢুকে বন্দুক নিলাম, জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের জন্য এটা সবসময় দরজার কাছে ঝুলানো থাকে। চটপট একটা ঘোড়ায় চেপে বসলাম, কোন দিকে যেতে হবে সেটা বুঝতে পারছিলাম, ধূলা উড়িয়ে ঘোড়া ছুটল পশ্চিমের বনের দিকে।

পেট্রা যদি এই তীব্র আহ্বান কয়েক মূহুর্তের জন্যও থামাতো, আমি হয়তো অন্যদের সাথে যোগাযোগ করার একটা সুযোগ পেতাম। কিন্তু পেট্রা এক মূহুর্তের জন্যও থামছিল না...

 শব্দ অনুসরণ করে গাছপালার মধ্যে দিয়ে আগাতে আগাতে থেমে গেলাম, সামনে গাছের ফাঁক গলে যাওয়া যাবে না। ঘুরে আরেক দিক দিয়ে আগাতে লাগলাম, এবার গাছের ফাঁকে ফাঁকে সরু, আঁকাবাঁকা পথে মাথা ঝুঁকিয়ে আগাতে আগাতে গাছপালা কমে এল, অবশেষে বনের মধ্যে একটা খালি জায়গায় এসে পৌঁছালাম।

পেট্রাকে দেখলাম না, কিন্তু ওর টাট্টু ঘোড়াকে দেখতে পেলাম। ফাঁকা জায়গাটায় আমার ঠিক উল্টা পাশে ঘোড়াটা পড়ে ছিল, ওর পেট চিরে ফেলা। একটা বিশাল জন্তু এত মনোযোগ দিয়ে ঘোড়ার পেটের মাংস খুবলে খাচ্ছিল যে আমার আগমন টেরই পেল না। জন্তুটা একটা বিকৃত প্রাণী, লালচে খয়েরী পশমের উপর হলুদ আর গাঢ় খয়েরী দাগ, সামনের দুই পায়ে বড় বড় বাঁকা  নখ, দুই থাবা রক্তে মাখামাখি। থ্যাবড়া মুখে হলুদ দুটো জ্বলজ্বলে চোখ, বিরাট দুই কান আর হাঁ করা মুখের মধ্যে শ্বদন্ত দেখা যাচ্ছে, এই দাঁত আর থাবা দিয়ে ঘোড়াকে চিরে খাচ্ছিল...

আমি কাঁধ থেকে বন্দুক নামালাম, এই শব্দে জন্তুটা মাথা ঘুরিয়ে জ্বলজ্বলে চোখে কিছুক্ষণ আমাকে দেখে খাওয়া বাদ দিয়ে গুঁড়ি মেরে বসল। আমি যেই বন্দুক চাপতে যাব, তখনই একটা তীর উড়ে এসে প্রাণীটার গলায় বিঁধে গেল! ওটা বিশাল একটা ঝাঁপ দিয়ে চার পা ছড়িয়ে আমার ঠিক সামনে এসে পড়ায় আমার ঘোড়া ভয় পেয়ে পিছু হটে গেল, ফলে আমার গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো। কিন্তু জন্তুটা উঠে দাঁড়াবার আগেই ওর মাথায় আর পিঠে আরো দুটো তীর এসে বিঁধল।

 ঘোড়ায় চেপে রোজালিনকে আসতে দেখলাম আমার ডান দিক দিয়ে, হাতে ধনুক ধরা। মাইকেল এল উল্টা দিক থেকে, প্রাণীটাকে লক্ষ্য করতে করতে ধনুকে তীর জুড়ে তৈরি হয়ে। আমরা তিনজন এক জায়গায়, পেট্রা নিশ্চয়ই আমাদের দেখতে পাচ্ছিল, কিন্তু ওর আর্তনাদ কমছিল না।
- পেট্রা কোথায়? রোজালিন জিজ্ঞেস করল।

চারপাশে তাকিয়ে অবশেষে পেট্রাকে পেলাম; ৮/৯ হাত উঁচু একটা গাছের দুই শাখার মাঝখানে বসে দুহাতে একটা শাখা আঁকড়ে আছে। রোজালিন ঘোড়া নিয়ে গাছের নিচে গিয়ে পেট্রাকে নেমে আসতে বলল, কিন্তু পেট্রা একটুও নড়ল না। আমি ঘোড়া থেকে নেমে গাছে উঠে পেট্রাকে নামতে সাহায্য করলাম,  রোজালিন পেট্রাকে ওর ঘোড়ায় বসিয়ে শান্ত করতে চেষ্টা করল কিন্তু মরা ঘোড়ার দিকে তাকিয়ে পেট্রার দুঃখ বেড়ে যাচ্ছিল। আমি রোজালিনকে বললাম,
- ওকে থামাতে হবে। ও আমাদের সবাইকে এখানে জড়ো করে ফেলবে।

প্রাণীটা মারা গেছে নিশ্চিত হয়ে মাইকেল ততক্ষণে আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে, উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
- ও এমন করতে থাকলে তো বিপদ হবে! প্রবল আতঙ্কে ও মনের আর্তনাদ থামাতে পারছে না... বরং মুখে চিৎকার করলে হয়তো মনের আর্তনাদ থামবে। ঘোড়ার সামনে থেকে ওকে সরিয়ে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে দেখি।

আমরা একটা ঝোপের আড়ালে সরে এলাম। মাইকেল ওকে শান্ত করার চেষ্টা করল, কিন্তু ওর আর্তনাদের মাত্রা একটুও কমল না। আমি প্রস্তাব দিলাম,
- তিনজন একই সাথে ওকে ভাবনা- আকার পাঠাই, ভালবাসা-সহানুভূতি- সহমর্মিতার ভাবনা-আকার...

কিছুক্ষণ চেষ্টা করলাম, এক মূহুর্তের জন্য থেমেই পেট্রা আগের অবস্থায় ফিরে গেল। রোজালিন হতাশ হয়ে বলল,
- লাভ নেই। আমরা অসহায় দৃষ্টিতে পেট্রাকে দেখতে লাগলাম। ওর আর্তনাদে ভয়ের মাত্রা কমে এলেও কাতরতা আর বিহ্বলতা কমছে না। হঠাৎ পেট্রা কাঁদতে শুরু করল, রোজালিন আদর করে ওকে জড়িয়ে ধরল।
- ওকে কাঁদতে দাও। এতে কষ্ট কমে আসবে, মাইকেল বলল।

যখন আমরা পেট্রাকে শান্ত করার চেষ্টা করছি,
তখনই রেচেল হাজির হল ঘোড়ায় চড়ে! একটু পরেই অন্যদিক থেকে একটা ছেলে, আগে কখনও না দেখলেও আমি বুঝলাম এটা মার্ক!

অবশেষে যে ভয়টা আমরা সবসময় পেতাম তাই ঘটল, আমরা সবাই একসাথে জমায়েত হলাম; মনে হচ্ছিল বাকি দুজন মেয়েও চলে আসবে... এমন হলে যে বিপদ হবে সেটা আমরা সবাই জানি। তাই আমি খুব অল্প কথায় ওদের দুজনকে বোঝালাম কী ঘটেছে, তারপর ওদের দুজন আর সাথে মাইকেলকেও বললাম সেখান থেকে চলে যেতে, আমি আর রোজালিন
পেট্রার সাথে থাকব। ওরা তিনজন এক মূহুর্তেই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারল, তৎক্ষণাৎ তিনজন তিন দিকে ঘোড়া ছোটাল।

পেট্রার কান্না থামাতে চেষ্টা করতে করছি, এমন সময় দেখি ঝোপঝাড়ের মাঝ দিয়ে ঘোড়ায় চেপে স্যালী আর ক্যাথেরিন এসে হাজির,  দু'জনেই  হাতে তীরধনুক। আমি ভেবেছিলাম ওদের তিনজনের কারো সাথে স্যালী আর ক্যাথেরিনের দেখা হবে, ফলে ওরা ফিরে যাবে। বোঝা যাচ্ছে কারো সাথে দেখা হয়নি। ওরা দুজন  কৌতুহল নিয়ে পেট্রাকে দেখতে দেখতে আমাদের কাছে এল, আমি আরেকবার ঘটনাটা বললাম, তারপর ওদের বললাম তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে। ওরা ফিরে যাবার জন্য ঘুরল, তখনই দেখি ফাঁকা জায়গায় ঘোড়ার পিঠে এক বিশালদেহী লোক বসে আছে। লাগাম টেনে ধরে লোকটা জানতে চাইল,
- হচ্ছে কী এখানে?
লোকটা আমার অচেনা, তাই তার সন্দেহকে পাত্তা না দিয়ে আমি উল্টা তার ২৭) পরিচয়পত্র দেখতে চাইলাম। লোকটা বিরক্ত হয়ে পরিচয়পত্র দেখাল। দেখলাম পরিচয়পত্র আসল, লোকটা আবার বলল,
- এখানে কি হচ্ছে?

ভাবলাম বলি, নিজের চরকায় তেল দিতে; কিন্তু ঝামেলা বাড়তে পারে ভেবে তাকে পুরো বৃত্তান্ত বললাম, যে আমার বোনের ঘোড়া আক্রান্ত হবার পর ওর চিৎকার শুনে আমরা ছুটে এসেছি। আমার কথা শুনে লোকটা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকল, মনে হয় ঠিক বিশ্বাস করল না। তারপর স্যালী আর ক্যাথেরিনের দিকে ফিরল,
- কিন্তু তোমাদের ব্যাপার কী? এভাবে এখানে ছুটে এলে কেন?
- বাচ্চাটার চিৎকার শোনার পর ছুটে আসব না? স্যালী বলল।
- আমি তোমার পেছনেই ছিলাম, কিছু শুনতে পাই নি!! লোকটা বলল।

স্যালী ক্যাথেরিনের সাথে মুখ চাওয়াচাওয়ি করল, তারপর সংক্ষেপে বলল,
- আমি তো শুনেছি।
- আমার তো মনে হচ্ছিল কয়েক মাইলের মধ্যে থাকা সবাই ওর চেঁচানী শুনেছে, বেচারা ঘোড়াটার ডাকও শুনতে পাননি? চলুন, ঘোড়াটাকে দেখবেন।
কথার মোড় ঘোরানোর জন্য আমি বললাম। লোকটা ঘোড়া আর জন্তুটাকে দেখে একটু থমকালো, কিন্তু ঠিক সন্তুষ্ট হল না। এবার রোজালিন আর পেট্রার পরিচয়পত্র দেখতে চাইল। আমি কারণ জানতে চাইলে বলল, আমরা প্রান্তভূমির গুপ্তচর কিনা তা যাচাই করছে।
- আমাদের দেখে আপনার প্রান্তিক মানুষ বলে মনে হচ্ছে?
লোকটা আমার প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলল,
- জঙ্গলের উপর আমরা নজর রাখি ওদের ধরার জন্য। তোমরা এভাবে জঙ্গলে ঘোরাঘুরি না করলে ভালো হয়।
কিছুতেই লোকটা যেন সন্তুষ্ট হবার নয়! সে কিছুক্ষণ ঘোড়াটা দেখে স্যালীকে জিজ্ঞেস করল,
- দেখে মনে হচ্ছে প্রায় আধা ঘন্টা আগে ঘোড়াটা মরেছে। তোমরা দুজন কিভাবে ঠিক জায়গামতো এসে পৌঁছালে?
- আসলে এদিক থেকে ডাকছিল, কাছাকাছি আসতেই বাচ্চাটার চিৎকার শুনি; স্যালী বলল।

আমি ওদের দিকে ফিরলাম,
- ভাগ্যিস তোমরা ছুটে এসেছিলে! আমরা আগে পৌঁছে না গেলে তোমরাই নিশ্চয় ওকে রক্ষা করতে। যাক, সব তো মিটে গেছে, এখন বাড়ি যাওয়া যাক, প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছে ও। সাহায্য করতে আসার জন্য তোমাদের অনেক ধন্যবাদ।

ওরা দুজন আমার ইঙ্গিত ধরতে পারল।
পেট্রা আর আমাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ওরা ফিরতি পথ ধরল। লোকটা কিন্তু দাঁড়িয়েই থাকল, মনে হচ্ছিল ও কোন হিসাব মেলাতে পারছে না! দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে থেকে অবশেষে আমাদের বলল আর যেন জঙ্গলে ঘোরাঘুরি না করি, তারপর ওরা দুজন যেদিকে গেছে সেদিকে জোরে ঘোড়া ছোটাল।

==================================================================================
এইটুকু লিখেছিলাম মার্চের মাঝামাঝি, তারপর খুব তাড়াতাড়ি সব বদলে যেতে লাগল, আমাদের জীবনে আর ব্লগে; আমারও পোস্ট করার ইচ্ছা চলে গেল। পরে একসময় ভাবলাম এটা শেষ করা দরকার, তাই আরো কয়েক পর্ব লিখে ফেললাম, এখন পরপর দিয়ে শেষ করে দিতে চাই...




 











মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +১৩/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০৯

মা.হাসান বলেছেন: সময় আসলে অনেক বদলে গেছে গত দু মাসে। আরো বদলাবে সামনের দু মাসে। আপনি যে জীবনের ছবি এঁকেছেন, এরকম না হলেও একটা পরিবর্তিতো সমাজ ব্যবস্থায় আমরা শিঘ্রই উপস্থিত হতে যাচ্ছি। সব কিছুর মূল্য বদলে যাচ্ছে।

অন্য সময় হলে অনুযোগ করতাম সংক্ষেপ না করে পুরোপুরি লেখার জন্য । এখন যে পরিস্থিতি তাতে আপনার সিদ্ধান্তের সাথে সহমত।
গল্পের বিষয়ে কথা না। পেট্রার মতো আমাদেরও যদি কোনো আশা দেখানোর কেউ থাকতো তো ভালো হতো।
অনেক শুভকামনা।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০০

করুণাধারা বলেছেন: সিরিয়াস মন্তব্য আর প্লাসের জন্য ধন্যবাদ অনেক।
ঠিকই বলেছেন, এক ধাক্কায় যেভাবে মানুষকে মনুষ্যত্ব হারাতে দেখছি, তাতে শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর অনেক কিছুই বদলে যাবে, অনেকেরই ক্ষমতার পালাবদল হবে। এই গল্পে কিন্তু আছে একদার অসীম ক্ষমতাধরের বিনাশ আর নতুন শক্তির উদ্ভাস। আমার মনে হচ্ছে এমন কোন একটা ধাক্কা আসবে।

টেলিপ্যাথির মাধ্যমে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করছে, এই জিনিসটা ভাবতে আমার খুব ভালো লাগে...

ভালো থাকুন।

২| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো লাগলো ।
চরম বাস্তবতার নিখুঁত প্রকাশ।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০২

করুণাধারা বলেছেন: আপনাকে নিয়মিত পাই- এটা খুব আনন্দদায়ক নেওয়াজ আলি।

ভালো থাকুন, শুভকামনা।

৩| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২৩

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: ভালো লাগলো ।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০৪

করুণাধারা বলেছেন: আপনাকে আমার ব্লগে পেয়ে খুব ভাল লাগল হাসু মামা।
ভালো থাকুন এই দুর্যোগের দিনে।

৪| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: লেখায় সময় কি আপনি তাড়াহুড়া করেন??

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০৬

করুণাধারা বলেছেন: আপনি ধরে ফেললেন কী করে সেটা আগে বলেন!!

৫| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:০৫

মুক্তা নীল বলেছেন: আপা
এবার অনেকদিন পর নতুন জীবন পর্বটি দিলেন কিছুটা পরিষ্কার হলাম এ্যলেনের মৃত্যুর বিষয়টিতে।
এরই মাঝে পেট্রোতো তো বড় হয়ে গেলো এবং আগামী ভালই হবে আশা করছি যেহেতু রোজালিন ওর সাথে আছে ।
ডেভিড ও রোজালিন সেই শুরু থেকেই অনেকটা যুদ্ধ করেই এগিয়ে যাচ্ছে সমস্ত প্রতিকূল পরিবেশ ও অবস্থার সাথে ।
ভালো ও নিরাপদে থাকুন ।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১২

করুণাধারা বলেছেন: এটা আর চালিয়ে যাব কিনা তা নিয়ে দোটানায় ছিলাম, সেজন্য এই পর্ব দিতে এত দেরি হল। কাটছাঁট করে লিখে রোজার আগেই শেষ করব ভেবেছিলাম, কিন্তু সারাদিন ওয়াইফাই না থাকায় হয়ত সেটা করতে পারব না। দেখা যাক।

করোনার এই উদ্বেগময় সময়ে ভালো থাকুন, অনেক শুভেচ্ছা রইল মুক্তা নীল।

৬| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৪৯

শের শায়রী বলেছেন: জানিনা বোন আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা, করোনা শুরু হবার পরই আপনার এই গল্পের কথা বারবার মনে পড়ছিলো, হয়ত পরিস্থিতি ভিন্ন কিন্তু পরিবর্তিত সমাজ ব্যাবস্থা ঠিকই চলে এসেছে এক রকম সামনে আরো কতটুকু পরিবর্তিত হয় তাই দেখার বিষয়। গল্পটা এক দম সময় উপযোগী। আমরাও কারো মাধ্যমে আশা দেখতে চাই। পরের পর্বের অপেক্ষায়।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩১

করুণাধারা বলেছেন: আমি গল্প অনেক কাটছাঁট করেছি, কিন্তু মাঝে দীর্ঘ বক্তব্য রেখে দিয়েছি, যেখানে মানবসমাজের ভুল কর্মকাণ্ড আর তার পরিনতি নিয়ে বলা হয়েছে।

পরের পর্বগুলো তাড়াতাড়ি দেবার ইচ্ছা আছে।

ভালো থাকুন, শুভকামনা রইল।

৭| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৪:৩৩

সোহানী বলেছেন: ব্লগে ঢুকলেই আপনার এ লিখার পর্ব আসলো কিনা তা চেক করি........।

আপু, জানি এ একটা বিভীষিকার মাঝে আমরা যাচ্ছি। তারপরও বলবো ভালো থাকুন।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৮

করুণাধারা বলেছেন: মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম সোহানী। আমার মনে হচ্ছিল একজন পাঠক থাকলেও যে গল্প শুরু করেছি, তা শেষ করা দরকার। ভালো লাগছে জেনে আপনি অপেক্ষায় ছিলেন।

আসলেই এখন বিভীষিকাময় সময়। ভালো থাকার চেষ্টা করছি, আপনিও ভালো থাকুন।

৮| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:০৮

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ধন্যবাদ আপু নতুন পর্ব দেয়ার জন্য।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৪০

করুণাধারা বলেছেন: ধন্যবাদ মনিরা, এই পর্ব পড়ার জন্য। :)
শুভকামনা রইল।

৯| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:০৭

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: টানটান উত্তেজনায় পেট্রোর ঘটনাটি নিষ্পত্তি হল। তবে ঘটনাটা ভয়ঙ্করের দিকে যাচ্ছিল। বিশাল আকৃতির লোকটি ওদের যুক্তি বিশ্বাস করেছে বলে মনে হলো না। বিশাল বপুর নিরাপত্তা রক্ষীর স্যালী ক্যাথেরেনের দিকে ছুটে যাওয়াটা সন্দেহ বাড়িয়ে দিল। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
শুভেচ্ছা নিয়েন আপু।

২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৩৬

করুণাধারা বলেছেন: উত্তর দিতে দেরি করে ফেললাম পদাতিক চৌধুরী! আসলে আমি যখন ঠিক করলাম কাটছাঁট করে কাহিনী শেষ করব, তখন রমজান মাস একেবারে চলে এসেছে। তাই পোস্ট দিতে গিয়ে মন্তব্যর উত্তর দিতে দেরি করে ফেললাম।

নিয়মিত মন্তব্য আর প্লাস দিয়ে অনুপ্রাণিত করে গেছেন, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। শুভকামনা রইল।

১০| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৫৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: করুণাধারা,




বেশ অনিয়মিত ভাবে এই দীর্ঘ লেখাটি দিচ্ছেন এখানে। এতে অনেক পর্বই অদেখা থেকে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আজকেই আবার পরের পর্বটি দিয়েছেন। আগেরগুলো আবার দিয়েছেন বেশ বিরতি নিয়ে। ফলে "পর্ব- নয়" ‌এর পরে আর দেখা হয়নি।
তাই মাঝখান থেকে এটা এখন পড়বোনা বাকীগুলো পড়া শেষ না করে।

শুধু আলোচিত ব্লগে লেখাটি দেখে এখানে এসে হাজিরা দিয়ে গেলুম।

ভালো থাকুন, থাকুন নিরাপদে।

২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:২০

করুণাধারা বলেছেন: বারোতম পর্বের পর এই তেরোতম পর্ব দিতে দীর্ঘ সময় নিয়েছি, তার কারণটা অবশ্য এই পর্বের শেষে বলে দিয়েছি, এখন কেন রোজ রোজ একটা করে সেটাও বলেছি :|

আগের পর্বগুলো তেমন বিরতি নিয়ে দেইনি কিন্তু, নবম পর্বের পর দশম পর্ব দিয়েছি তিনদিন পর। আগে পড়া যখন হয়নি, এখন
আশাকরি পড়ে দেখবেন, মনুষ্য সম্প্রদায় সম্পর্কে বলা লেখকের কথাগুলো এখনও কত প্রাসঙ্গিক!

হাজিরা দিতে অনিয়মিত হবেন না, এই আশা আর শুভকামনা থাকলো।

১১| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১১

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: আপনি ধরে ফেললেন কী করে সেটা আগে বলেন!!

লেখার সময় মেজাজ খারাপ থাকলে, তাড়াহুড়া থাকলে তা লেখাতে ছাপ পড়ে।

২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:২২

করুণাধারা বলেছেন: আপনি ভালো ভালো খাওয়া, টিভি দেখা আর ব্লগ লেখা ছাড়া আর কী করেন?

১২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৩৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম বড় বাঁচা বেঁচে গেল সবাই। ধরাইতো পড়ে যাচ্ছিল।

আর মার্চে তো সবার জীবন পুরো পৃথিবীর জীবন ধারাই বদলে দিয়েছে...
কবে এর শেষ হবে কে জানে?

যাই .. দেরী করার সুবিধা ;) ভোগ করি। একসাথে পর পর সবগুলো পড়তে পারার
:)

+++

২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:২৫

করুণাধারা বলেছেন: হ্যা, অতি স্মরণীয় মার্চ মাস এবারের!! ;)

আরেকবার ধন্যবাদ আমাকে অনুপ্রেরণা দেবার জন্য। ভালো থাকুন।

১৩| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২১

নীল আকাশ বলেছেন: সিরিজ কেন যেন মাঝখানে বাদ পরে গিয়েছিল। আজকে বসলাম শেষ করার জন্য।
লেখা ভালো হয়েছে। শেষ করে ফেলুন।
ধন্যবাদ।

৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫৮

করুণাধারা বলেছেন: আপনার উপস্থিতি, মন্তব্য আর প্লাসে অনুপ্রাণিত হলাম নীল আকাশ। অসংখ্য ধন্যবাদ।

শেষ করেছি- পড়ে ফেলুন। B-)

১৪| ০৯ ই জুন, ২০২০ রাত ১১:১৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: ভালই লাগছিল গল্পটা পড়ে যেতে, কিন্তু বিশাল আকৃতির লোকটি ওদের যুক্তি বিশ্বাস করে নাই বলে সন্দেহ হচ্ছে এবং এটা ভবিষ্যতে বিপদের কারণ হতে পারে বলে মনে আশঙ্কা জাগছে।
গল্পে ভাল লাগা + +।

১৭ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৪৮

করুণাধারা বলেছেন: ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা, মন্তব্য এবং লাইক দিয়ে অনুপ্রাণিত করায়।

বিপদাপদ না হলে গল্প জমে না, তাই হয়তো লেখক বিপজ্জনক চরিত্র আনছেন। দেখা যাক এই লোক কিভাবে বিপদ ঘটায়। আশাকরি সাথে থাকবেন।

ভালো থাকুন সবসময়।

১৫| ২৬ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:২২

আখেনাটেন বলেছেন: বিপদ ঘনিয়ে আসছে মনে হচ্ছে........অনেকেই হয়ত সন্দেহ করা শুরু করেছে।

২৮ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:১৯

করুণাধারা বলেছেন: বিপদ বলে বিপদ! ধরা পড়লে ঘাড়ের উপর থেকে মাথা নাই হয়ে যাবে...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.