নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

করুণাধারা

করুণাধারা

জীবন যখন শুকাইয়া যায় করুণাধায় এসো

করুণাধারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলোচনা হতে হবে টিভি ক্যামেরার সামনে লাইভ, অতীতে দেখা গেছে কয়েকজন প্রতিনিধি রুদ্ধদ্বার কক্ষে আলোচনায় বসেন, আলোচনা শেষে শুকনো মুখে সাংবাদিকদের জানান যে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে, আন্দোলন বন্ধ করে ক্লাসে ফিরে যাবো!!

১৮ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:০৯

(০৮ জুলাই, ২০১৮ এর কোটা আন্দোলনের পর দেয়া পোস্ট এখানে রিপোস্ট করলাম।
সেই জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনের পরিসমাপ্তি হয় সবগুলো কোটা বাতিল করে দিয়ে!! এভাবেই অতীতের অনেক আন্দোলন বাতিল করে দেয়া হয়েছে! আমি এখানে লিখেছি বুয়েটে চলমান ২০১২ সালের এক সর্বাত্মক আন্দোলন সম্পর্কে, কিভাবে আলোচনার নামে সেটাকে ভন্ডুল করে দেয়া হয়। বুয়েটে ভিসি এবং প্রোভিসি একত্রিত হয়ে বুয়েট ধ্বংসের পরিকল্পনায় নেমেছিলেন, তাদের অন্যায় এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে সেই সময় বুয়েটের শিক্ষকেরা আন্দোলনের নামেন। পরবর্তীতে তাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন ছাত্রলীগ বাদে সমস্ত ছাত্র এবং কর্মচারীরা। বুয়েটে দিনের পর দিন, মাসের কয় মাস অচলাবস্থা বিরাজ করে কিন্তু সরকার কোন পদক্ষেপ নেয় না। শেষ পর্যন্ত আলোচনায় ডাকা হল অল্প কজন শিক্ষক এবং ছাত্রদের। আলোচনা শেষে তারা জানালেন দাবী আদায় হয়েছে। দেখা গেল দশটা দাবির মধ্যে মাত্র একটা দাবি, প্রোভিসির পদত্যাগ মানা হয়েছে!! সেই আন্দোলনের বিবরণ পড়ার প্রয়োজন নেই, শুধু আন্দোলনের ফলাফল সম্পর্কিত নিচের দিকে কিছু অংশ হাইলাইট করেছি। ‌এটা দয়া করে পড়বেন, তাহলে রুদ্ধদ্বার কক্ষে আলোচনার ফলাফল নিয়ে অগ্রিম ধারণা করতে পারবেন।)

চলমান( নাকি ইতিমধ্যে থেমে গেছে!) কোটাবিরোধী আন্দোলন আমি খুব কৌতুহল নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি- ইতিহাসের নাকি পুনরাবৃত্তি হয়! ২০১৮ এর জুলাইয়ে এই আন্দোলন দেখতে দেখতে আমার মনে পড়ছে আরেক জুলাই, ২০১২ সালের এক আন্দোলনের কথা। সেই আন্দোলনও, এই আন্দোলনের মতই, শুরু হয়েছিল এপ্রিল মাসে।

আন্দোলন শুরু হয়েছিল বুয়েটে, তখনকার ভিসি ও প্রোভিসির পদত্যাগ দাবি করে। পদত্যাগ দাবি করা যায় হচ্ছিল কারণ এই ভিসি এবং প্রোভিসি মিলে বুয়েটে  নানা অনিয়ম করে যাচ্ছিলেন, যা বুয়েটের সততা ও নিয়মতান্ত্রিক ঐতিহ্যের
 সম্পূর্ণ পরিপন্থী ছিল। ১৯৬২ সালে বুয়েট প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই বুয়েটের শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়োগ, ছাত্রদের ভর্তি এবং ছাত্রদের আচরণ বিধি নির্দিষ্ট ছিল, নিয়ম তান্ত্রিক ছিল, এবং দীর্ঘকাল তা কঠোরভাবে মেনে চলা হতো। এর প্রথম ব্যত্যয় ঘটে ২০১০ সালে- যখন নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি এবং প্রো-ভিসি অন্যায় ভাবে, সমস্ত নিয়ম লংঘন করে, অনুগত কর্মচারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও অনুগত ছাত্রদের নানা অন্যায় সুবিধা দিয়ে, বুয়েটের সমস্ত আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেনা। (তাদের নিজেদের নিয়োগেও ছিল আইন লঙ্ঘন করে) তাদের দুজনের কার্যক্রমে ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুয়েটে অশুভ শক্তি জাঁকিয়ে বসেছিল।  এর অবসান করতে সচেষ্ট হয়ে ওঠেন বুয়েটের  শিক্ষক সমাজ। তারা বুয়েটের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানোর জন্য  দু' বছরে দু'বার চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট, যিনি বুয়েটের চ্যান্সেলর, তার সাথে দেখা করতে,(১) কিন্তু তারা দেখা করতে পারেননি। আর কোন উপায় না পেয়ে বুয়েটের শিক্ষকরা ভিসি ও প্রো ভিসির পদত্যাগ দাবি করে ২০১২ সালের ৭ই এপ্রিল তারিখ থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন। কর্মবিরতি শুরুর আগে তারা এক  প্রেস কনফারেন্স করেন। সেখানে তারা ভিসি, প্রোভিসির বিরুদ্ধে ১৬ টি অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরেন,  এবং জানান যে, আর কোন উপায় না পেয়ে এই অন‍্যায়ের প্রতিবাদে তারা কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন।(১)

বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের ব্যাপারে, ৫ই মে তে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্বাসের পরে তারা কর্মবিরতি তুলে নেন এবং  ক্লাস নেয়া শুরু করেন।(২),(৪)

 আশ্বাস দেয়া সত্বেও দু'মাসের মধ্যেও সমস্যা সমাধানে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয় না।(২),(৪) ফলে শিক্ষকরা সাত জুলাই থেকে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভিসি ও তার প্রশাসন ঈদ-উল-ফিতরের ছুটি একমাস আগেই  শুরু করে ৪৪ দিনের জন্য বুয়েট বন্ধ ঘোষণা করে।(৩) এই স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করতে এবার শিক্ষকদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেয় ছাত্ররাও। এরপর ১১ই জুলাই বিভিন্ন বিভাগের ২৪জন শীর্ষ পদে থাকা শিক্ষক পদত্যাগ করেন,(৩) শিক্ষক সমিতির ঘোষণা দেয় যে তাদের দাবি মানা না হলে তারা সকলে ২২ জুলাই একযোগে পদত্যাগ করবেন। কিন্তু তারা পদত্যাগ স্থগিত রাখেন ৩০ জুলাই পর্যন্ত, কারণ শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন যে এই সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনা করে সমাধান বের করা হবে। (৩)

এর কদিন পরেই হাইকোর্ট আদেশ দেয়, বুয়েট ক্যাম্পাসে কোন আন্দোলন করা চলবে না-
 শিক্ষকরা যেন নতুন শিক্ষা বছরের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেন।(৩) এরসাথে আসে ভিসির হুমকি, শিক্ষকরা কর্মসূচি চালিয়ে গেলে তিনি সকলকে বরখাস্ত করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেবেন! (৩) তখনো সমস্যার সমাধানে কোন উদ্যোগ নেই!

  আন্দোলন সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে যখন বুয়েটের সকল ছাত্র এবং কর্মচারী-কর্মকর্তারা শিক্ষকদের সাথে যোগ দেন, কারণ ততদিনে এটা বুয়েটের ঐতিহ্য রক্ষার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য এর বিরুদ্ধেও অল্প কিছু মানুষ ছিল - এরা অন‍্যায‍্যভাবে সুবিধাভোগী শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং ছাত্রলীগ। এরা বলতে লাগলো যে বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষকরা ভিসি এবং প্রোভিসি পদ দখল করার জন্য এই আন্দোলন করছেন (২) এবং যেসব ছাত্রছাত্রী আন্দোলন করছে তারা বুয়েটের শিক্ষার্থী নয় বরং শিক্ষকরা তাদের ভাড়া করে এনেছেন আন্দোলন করার জন্য! এই মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীরা তাদের বুয়েটের আইডি কার্ড হাতে নিয়ে মৌন মিছিল করে- তা টিভি এবং পত্রিকায় দেখানো হয়।

দেখা গেল আরেক দল ছাত্রও মিছিল করছে- বলা হল, এরা ক্লাস করতে ইচ্ছুক বুয়েটের ছাত্র, এরা আন্দোলন সমর্থন করে না। এরা অবস্থান ধর্মঘটরত  আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের উঠিয়ে দেবার চেষ্টা করে, কিন্তু সফল হয় না। এরা যে বহিরাগত সেটা প্রমাণের জন্য একটা সাক্ষাৎকার ভাইরাল হয়ে যায়:

- আপনি কি বুয়েটের ছাত্র?
-  হ্যাঁ আমি বুয়েটের ছাত্র।
-  তা আপনি কোন ডিপার্টমেন্ট এ পড়েন?
 (কিছুক্ষণ ভেবে), -কমার্স ডিপার্টমেন্টে।

বহিরাগতদের দিয়ে যখন আন্দোলন বানচাল করা গেল না, তখন আন্দোলনরত ১০০ জন ছাত্র- শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ভিসির অফিস ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে শাহবাগ থানায় দুটি মামলা হয়। আন্দোলনরতরা পাল্টা অভিযোগ করে যে  ছাত্রলীগের ছেলেরা এই কাজ করেছে।(৪)

ভিসিপক্ষ এত কিছু করার পরও জনমত বিপুলভাবে যায় আন্দোলনকারী  ছাত্র-শিক্ষকদের পক্ষে, গুটিকয় মানুষ ছাড়া সকলেই আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানাচ্ছিলেন।   পত্রিকা ও টিভির খবরে আন্দোলনের খবর নিয়মিত প্রকাশ হতে লাগল; পত্রিকায় নিবন্ধে, টিভির টকশোতে বক্তারা মত প্রকাশ করতে লাগলেন যে, আন্দোলন সম্পূর্ণ যৌক্তিক।

প্রচারণা চালানো হলো যে, বিএনপি-জামাত আন্দোলনে উস্কানি দিচ্ছে (৪)। প্রমাণ? ছাত্র-ছাত্রীদের মৌন মিছিলের সামনে থাকা ছাত্রীদের অনেকেরই মাথায় হিজাব দেখা গেছে।  সুতরাং তারা জামায়াতী, তাহলে সকল ছাত্রী জামায়াতী, এইভাবে প্রমাণ করা যায় যে, আন্দোলনরত  ছাত্র-শিক্ষক সকলেই জামাত-বিএনপি'র লোক!!!!

এদিকে ভিসি-প্রোভিসি পদত্যাগ করেছিলেন না।
বেশ কিছুদিন আন্দোলন চলার পর অচলাবস্থা নিরসনে অবশেষে শিক্ষামন্ত্রীর উদ্যোগ নিলেন। তিনি আলোচনার জন্য আন্দোলনরত ছাত্র- শিক্ষক প্রতিনিধিদের ডাকলেন। বেশ একটা অনমনীয় মনোভাব নিয়ে প্রতিনিধিদল আলোচনা করতে গেলেন, আর বাকিরা আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করতে লাগলেন।

 দীর্ঘসময় রুদ্ধদ্বার কক্ষে কি আলোচনা হলো তা কেউ কোনদিন জানতে পারল না। আলোচনার পর প্রতিনিধিদল বেরিয়ে এসে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের শুকনা মুখে জানালেন যে,  আলোচনা সফল হয়েছে। পরদিন থেকেই ছাত্র-শিক্ষকেরা ক্লাসে ফিরে গেলেন। ক'দিন পর প্রোভিসি পদত্যাগ করলেন, ভি সি রয়ে গেলেন বহাল তবিয়তে- ২০১৪ সালে  অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত । দুর্নীতির অভিযোগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হবার পর তাকে বুয়েটে  নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, বুয়েটে তিনি রয়েই গেলেন!!!

 এপ্রিল-জুলাই, আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি-ভঙ্গ,  বিএনপি-জামাত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ, ভাংচুর, মামলা- ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে। শেষ অবধি কি হয় দেখার জন্য আমি গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, I am a curious onlooker.

এই পোষ্টের সমস্ত তথ্যসূত্র তৎকালীন কিছু সংবাদপত্র।


তথ্যসূত্র:
১)https://www.google.com/amp/s/www.thedailystar.net/news-detail-230315?amp

২) https://www.thedailystar.net/news-detail-239751

 ৩)https://m.bdnews24.com/en/detail/campus/319897?


 ৪)https://m.bdnews24.com/en/detail/bangladesh/320801?



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৯

আরোগ্য বলেছেন: তবে কি আপা এই সংলাপ বসতে যাচ্ছে? দুঃখজনক! পোস্ট পুরোটা পড়তে পারিনি।

২৯ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ১০:০৯

করুণাধারা বলেছেন: ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আগে উত্তর দেয়া হয়নি।‌ ইতিমধ্যে বেশ ক'দিন কেটে গেছে, দেখলাম এই ছাত্ররা অনেক ম্যাচিউরড, তাঁরা সংলাপের ফাঁদে পা দেয়নি। আসলে কোনও ফাঁদ পেতেই এদের কাবু করা যাচ্ছেনা।‌ নিপীড়িত এই আন্দোলনকারীদের জন্য প্রার্থনা।

২| ১৯ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ১২:০৫

ভুয়া মফিজ বলেছেন: এই সরকারকে বিশ্বাস করার মতো বোকামী আর নাই। সাপকেও বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু হাসিনার আওয়ামী লীগকে না।

২৯ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ১০:১৩

করুণাধারা বলেছেন: এই সরকারকে বিশ্বাস করার মতো বোকামী আর নাই। সাপকেও বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু হাসিনার আওয়ামী লীগকে না।

খুব ভালো লাগছে দেখে যে, এরা সরকারের কথা বিশ্বাস করার মতো বোকামি করে নাই। এদের জন্য তাই প্রার্থনা... এত অত্যাচারের পরেও যারা ন্যায়ের জন্য লড়াই করছে, তারা যেন বিজয়ী হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.