নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলো –অন্ধকারে যাই- মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয়,- কোন এক বোধ কাজ করে! স্বপ্ন নয়- শান্তি নয়-ভালোবাসা নয়, হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়! আমি তারে পারি না এড়াতে, সে আমার হাত রাখে হাতে; সব কাজ তুচ্ছ হয়,-পণ্ড মনে হয়। -জীবনানন্দ দাশ

কুশন

আমার জন্ম ফরিদপুরের সালতা গ্রামে। বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। আমার বাবা একজন কৃষক। বাবার সাথে বহুদিন অন্যের জমিতে কাজ করেছি।

কুশন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কনফুসিয়াসের গল্প

১৫ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:৫২



আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে জন্মেছিলেন কনফুসিয়াস। মোটমাট তার লেখা বইয়ের সংখ্যা ১৩টি। মানুষের জীবনের প্রায় সবকিছু সম্পর্কেই কনফুসিয়াস দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সে সব মিলিয়ে একটা জীবন দর্শনই হয়ে গেল, তার নাম দেয়া হল কনফুসিয়াসবাদ। চিন-তাইওয়ান ও হংকং আপামর জনসাধারণ আগস্ট মাসের ২৯ তারিখে এই জ্ঞানী মানুষটির জন্মবার্ষিকী আনন্দ উৎসব সহকারে পালন করে।

কনফুসিয়াসের মা ছিলেন অসাধারণ এক নারী। নৈলে ছেলে পরবর্তীকালে অত বড় মানবতাবাদী হল কি করে? বড় হয়ে কনফুসিয়াস বলেছিলেন- Forget injuries, never forget kindnesses. ছাত্রদের বললেন: প্রকৃতি ও জীবনের কী মানে। (রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কী সাদৃশ্য দেখুন।) সারা চিনে তাঁর বিদ্যালয়ের কথা ছড়িয়ে ছিল। নানা রাজ্য থেকে ছাত্ররা তাঁর বিদ্যাপীঠে আসতে লাগল। চিনে তখন দার্শনিক লাও-ৎ সের তাওবাদ ভীষন জনপ্রিয়।

সব কিছুর প্রতিই কেমন এক তীব্র কৌতূহল বোধ করত কিশোর কনফিসুয়াস। এমন কী নিজের শরীরের প্রতিও। বড় হয়ে কনফুসিয়াস যে কারণে বলেছিলেন- “সব কিছুরই রয়েছে সৌন্দর্য- কিন্তু, খুব কম লোকই তা দেখতে পায়।” মেয়েদের শরীরের প্রতিও, কনফুসিয়াসের ছিল এক অফুরন্ত কৌতূহল।

মা জ্ঞানী ছিলেন বলেই ঠিকই বুঝলেন ছেলের অস্থিরতা। মেয়ে এক প্রকার ঠিক করেই রেখেছিলেন। বিয়ের ব্যবস্থা করলেন ছেলের। কনফুসিয়াসের তখন ১৯ বছর বয়েস। চীনের এই কিংবদন্তী মানুষটির জন্ম হয়েছিল খ্রিস্টের জন্মেরও ৫৫১ বছর আগে, চীনের সানদঙ প্রদেশে। তার আসল নাম কিন্তু কনফুসিয়াস নয়। আদতে কনফুসিয়াস কোন চীনা নামই নয়, ল্যাটিন নাম। ছোটবেলায় চৈনিক বা চীনা ভাষায় তার নাম রাখা হয় ‘কোঙ কিউ’। পুরো চীনে ঘুরে ঘুরে তরুণদের মাঝে তার শিক্ষা প্রদান করতে শুরু করেন, তখন তার নাম হয়ে যায় ‘কোঙ ফু-জু’ বা কোঙ-এর মহাশিক্ষক। এই ‘কোঙ ফু-জু’ই পরে ল্যাটিনে রূপান্তরিত হয়ে কনফুসিয়াস হয়।

কনফুসিয়াসের কথাঃ
১/ প্রতিশোধ নিতে যাওয়ার আগে দুটি কবর খুঁড়ো।
২/ সব কিছুরই রয়েছে সৌন্দর্য- কিন্তু, খুব কম লোকই তা দেখতে পায়।
৩/ যারা মিতব্যায়ী নয়- তারা আজ হোক, কাল হোক ভুগবেই।
৪/ অজ্ঞতা হল মনের রাত্রি। যে রাত্রি চন্দ্রশূন্য, নক্ষত্রশূন্য ।
৫/ ভবিষ্যৎকে মুঠোয় নেওয়ার জন্য অতীতকে বিশ্লেষন কর।


কনফুসিয়াসের পরিবার কিন্তু বেশ অভিজাত ছিল। তারা পারিবারিকভাবে ছিলেন সঙ প্রদেশের রাজকর্মচারি। কিন্তু কনফুসিয়াস কে খুব অল্প বয়সেই অর্থ উপার্জনের জন্য পথে বেরোতে হয়। অর্থ উপার্জনের জন্য ছোটবেলায় নানা কাজ করেছিলেন কনফুসিয়াস। প্রথমে তিনি সরকারি উদ্যান আর শস্যের গুদাম দেখাশোনার কাজ নেন। সেটা ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন হিসাব রক্ষকের কাজ। এরপরে তিনি ‘রু’ নামের একটি চাকরি গ্রহণ করেন। ‘রু’ হলো জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এসব উপলক্ষে যে সব সামাজিক অনুষ্ঠান পালিত হয়, সেগুলো পরিচালনা করার কাজ। তিনি যখন এই কাজ করছিলেন, তখনই তিনি ছয় কলায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন- সদাচারণে, সঙ্গীতে, ধনুর্বিদ্যায় মানে তীর- ধনুক চালনায়, শকট চালনায়, লেখালেখিতে আর গণিতশাস্ত্রে।

যেখানেই যেতেন লোকজন ভিড় করত। তিনি লোকদের উপদেশ দিতেন। অনেকেই তাঁর কথা শুনল। মুগ্ধ হল।কেবল ভোগী যুবরাজরা তাঁর কথায় কান দেয়নি। কেননা, তারা মনে করত তাদের জন্ম হয়েছে মেয়েদের নিয়ে বাগান বাড়িতে ফূর্তি করার জন্য। কয়েক বছর পরেই তিনি এই চাকরি ছেড়ে দিয়ে শিক্ষকতা শুরু করলেন। প্রথমে তিনি প্রায় ১৬ বছর ঘুরে বেড়ালেন নানা জায়গায়। শিখলেন মানুষের জীবন সম্পর্কে, জগৎ সম্পর্কে। এরপর তিনি তার এই অর্জিত জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিলেন, বিশেষ করে তরুণদের মাঝে। তখন চীনে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য ছিল। অভিজাত লোকেদের সন্তানরা ছাড়া অন্যেরা শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পেত না। প্রথম থেকেই কনফুসিয়াস এই প্রথার বিরোধিতা করলেন। বললেন, শিক্ষার আবার বৈষম্য কী? মেধা অনুসারে সবারই শিক্ষার সমান অধিকার রয়েছে। কনফুসিয়াসের মৃত্যুর পর Analects বইটি শিষ্যরা লিখেছিল। তাঁর মৃত্যর প্রায় দুই বছর পর লু রাজ্যের রাজা কনফুসিয়াসের বসত বাড়ীটিকে একটি মন্দিরে পরিণত করেন। এর ভিতরে কনফুসিয়াসের কাপড়-চোপড় আর অন্যান্য জিনিসপত্র রাখা হয়।

কিছুদিনের মধ্যেই কনফুসিয়াসের খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। জি কাঙজি নামের এক জমিদার তাকে লু প্রদেশের রাজপ্রাসাদে নিয়ে গেলেন। সেখানে তার ভালো একটা চাকরিও হয়ে গেল। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি পূর্তমন্ত্রী হয়ে গেলেন। কিছুদিনের জন্য অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। চার বছরের মাথায় তিনি এখান থেকেও পদত্যাগ করলেন। এবার শিষ্যদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন ভ্রমণে। গোটা চীন দেশই ভ্রমণ করবেন তিনি। গোটা চীনদেশে ঘুরে ঘুরে তার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা ধ্যান-ধারণা প্রচার করতে লাগলেন কনফুসিয়াস। কনফুসিয়াসের মন্দির, কনফুসিয়াসের সমাধিস্থান এবং কনফুসিয়াসের প্রাসাদ জুড়ে রয়েছে ১৭ হাজারেরও বেশি প্রাচীন গাছ। ১৯৯৪ সালে 'কনফুসিয়াসের মন্দির, কনফুসিয়াসের সমাধিস্থান আর কনফুসিয়াসের প্রাসাদ ইউনেস্কোর বিশ্ব সংস্কৃতি উত্তরাধিকার তালিকাভূক্ত করা হয়।

কনফুসিয়াসের শিষ্য বা ছাত্ররা সংখ্যায় ছিল প্রায় তিন হাজার। এদের মধ্যে প্রায় ৭২ জন তারই মতো ছয় কলায় পারদর্শী হন। এদের অনেকেই পরবর্তীতে লু প্রদেশের রাজদরবারে নানা পদে চাকরি পান। তারাই পরে চেষ্টা করেন তাকে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনার। তাদেরই প্রচেষ্টায় শেষ জীবনে লুতে ফিরে আসেন কনফুসিয়াস। বাকি জীবন লুতে থেকে শিক্ষকতা করে আর বই লিখেই কাটিয়ে দেন তিনি। কনফুসিয়াস মূলত নীতিবাদী দার্শনিক ছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল শিক্ষার মূল ভিত্তি হচ্ছে নীতিজ্ঞান।

লুতে ফিরে আসার ৫ বছর পর, খ্রিষ্টের জন্মের ৪৭৯ বছর আগে মৃত্যু হয় এই চৈনিক মহামানবের।কুফু নগরীর উত্তরে, সি নদীর তীরে সমাহিত করা হয় তাকে। ততোদিনে তিনি পুরো চীনেই জনপ্রিয়। সবাই তার সমাধি দেখতে আসতে শুরু করে। নির্মাণ করা হয় কনফুসিয়াস মন্দির। পরে গোটা চীন জুড়েই নির্মাণ করা হয় অসংখ্য কনফুসিয়াস মন্দির। শুধু চীনাদেরই বা বলছি কেনো, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনামের অসংখ্য মানুষ এখনো কনফুসিয়াসের শিক্ষার অনুসারী।

তথ্যসুত্র- কনফুয়াসের জীবনী গ্রন্থ থেকে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০২১ ভোর ৬:১৯

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: সুন্দর এবং তথ্যবহুল পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

ভালো থাকবেন।

২০ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:১০

কুশন বলেছেন: আপনিও ভালো থাকবেন।

২| ২১ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:৩৭

জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: চিনে অধিকাংশ মানুষই কোন ধর্মকর্মে বিশ্বাসী নন। তারা কনফুসিয়াসের নৈতিক দার্শনিক তত্ত্ববাদে বিশ্বাসী। সেখানে মানবাতাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সুন্দর লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আরো লিখবেন। শুভেচ্ছা রইল।

২২ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ১:০১

কুশন বলেছেন: সুন্দর মন্তব্য করেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.