নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুদায়বিয়ার সন্ধি এবং মহানবী (সা) এর অসামান্য নীতিবোধ !

১২ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৫:১১



মক্কার কিছু দূরে হুদায়বিয়া নামে এক গ্রাম । বসেছে সেখানে এক বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত আছেন মহানবী (সো) এবং উল্লেখযোগ্য কয়েকজন সাহাবী । মুশরেক কুরাইদের পক্ষ থেকে উপস্থিত রয়েছে কয়েকজন প্রভাবশালী সরদার । হুদায়বিয়া সন্ধির শর্তাবলি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে তখনও লেখার কাজ শুরু করা হয়নি। এমন সময় মক্কা থেকে আবু জান্দাল নামে একজন নও-মুসলিম সভাস্থলে এসে হাজির হলেন । তার হাত-পা শিকল দিয়ে বাধা। সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন। মুসলমান হওয়ার অপরাধে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। পৌত্তলিক ধর্মে ফিরে যাবার জন্য আত্মীয়-স্বজনরা তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে। কত দিন আর নির্যাতন সইবেন তিনি! তাই মুক্তির আশায় তিনি উদগ্রীব হয়ে উঠলেন। আবু জান্দাল জানতে পারলেন, মহানবী (সা) তার চৌদ্দশ সাহাবাসহ হুদায়বিয়া গ্রামে এসে যাত্রাবিরতি করছেন। অনেক আশা আবু জান্দালের মনে। তার আশা, একবার কোনক্রমে যদি মহানবী (সা)-এর কাছে গিয়ে পৌঁছতে পারেন, তা হলেই তিনি মুক্তি পেয়ে যাবেন । আবু জান্দাল ঠিকই হুদায়বিয়ার বৈঠকে গিয়ে হাজির হলেন। তারপর মহানবী (সা)-কে তার সব কথা খুলে বললেন এবং নবীজীর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলেন।

আবু জান্দালের নির্যাতনের কাহিনী শুনে উপস্থিত মুসলমানদের মনে বেদনার তরঙ্গ খেলে গেল। হুদায়বিয়ার বৈঠকে কুরাইশদের পক্ষে উপস্থিত ছিল আবু জান্দালের পিতা। নাম সুহাইল। আবু জান্দালকে বৈঠকে উপস্থিত দেখে তার পিতা বেশ ক্ষুব্ধ হলো। তাই পুত্রের মুখের ওপর বসিয়ে দিল কয়েকটি চপেটাঘাত। তারপর আবু জান্দালকে তার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য মহানবী (সা)-এর কাছে দাবি জানাল। সুহাইল বলল, হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্তানুসারে আবু জান্দালকে আপনারা ধরে রাখতে পারেন না। আপনারা তাকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে বাধ্য। সুহাইলের কথা শুনে মহানবী (সা) বললেন, সন্ধি তো এখনও লিখিত হয়নি। তাতে স্বাক্ষর করা হয়নি। সুতরাং এর শর্ত এই মুহূর্তেই মেনে নেয়া কি খুবই জরুরি? সুহাইল নাছোড়বান্দা। সে বলল, সন্ধি লিখিত না হলেও কথা তো পাকাপাকি হয়ে গেছে। সুতরাং আবু জান্দালকে আমি অবশ্যই ফিরে পাব। মহানবী (সা) সুহাইলের কথার আর কোনো জবাব দিলেন না। তবে তিনি আবু জান্দালের নিরাপত্তার ব্যাপারে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। মহানবী (সা)-কে চিন্তিত দেখে মুসলমানরা আতঙ্কিত হলো । তারাও আবু জান্দালের জন্য শঙ্কিত হলো। কী জানি, তাদের এক ভাই আবার কাফেরদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হয় কি না।

মহানবী (সা)-এর সামনে তখন উভয় সঙ্কট। একদিকে সন্ধির মর্যাদা রক্ষা করার তাগিদ, আর অন্যদিকে একজন মুসলমানকে কাফেরদের হাতে ফেরত দেয়া না দেয়ার প্রশ্ন। সন্ধির শর্ত যেহেতু আগেই নির্ধারিত হয়েছে, তাই সন্ধির শর্ত পালনই মহানবী (সা)-এর কাছে বড় হয়ে দেখা দিল। আবু জান্দাল বুঝতে পারলেন, তার আশা পূরণ হবে না। তাকে অবশেষে কাফেরদের হাতেই ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে তিনি করুণভাবে কেঁদে উঠলেন। মুসলমানদের উদ্দেশ করে বললেন, আমি মুসলমান হয়ে আপনাদের কাছে আশ্রয় নিতে এলাম, আর আপনারা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। কত অত্যাচার, কত যন্ত্রণা যে আমাকে ভোগ করতে হবে, তা তো আপনারা ভালোভাবেই জানেন।

আবু জান্দালের কথা শুনে উপস্থিত প্রতিটি মুসলমানের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল। মন তাদের বিদ্রোহী হয়ে উঠতে চাইল। তারা মনে মনে ভাবলেন, দরকার হলে আবু জান্দালকে রক্ষার জন্য তারা লড়বেন। কিন্তু মহানবী (সা)-এর শান্ত-সৌম্য মুখের দিকে তাকিয়ে তারা আর কিছুই বলতে পারলেন না। অবশেষে আবু জান্দালকে তার পাষণ্ড পিতার হাতে তুলে দেয়া হলো। এ সময় মহানবী (সা)-এর কোমল প্রাণ বেদনায় কেঁদে উঠল।

মহানবী মুহাম্মদ (সা) আবু জান্দালকে সান্তনা দিয়ে বললেন, হে আবু জান্দাল! আল্লাহর নামে ধৈর্য ধর, আল্লাহই তোমার মুক্তির ব্যবস্থা করে দেবেন। এরপর চোখ মুছতে মুছতে আবু জান্দাল আবার ফিরে চললেন মক্কায়। নীতিবোধের কাছে পরাজিত হলো আবু জান্দালের করুণ আর্তনাদ। মহানবী (সা) কোনভাবেই ন্যায়নীতির অন্যথা হতে দিলেন না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৯

পারস্যের রাজপুত্র বলেছেন: এর পরে আবু জান্দাল (রাঃ) মক্কা থেকে পালিয়েছিলেন। কুরাইশদের কাফেলা যাতায়াত করে এরকম এক স্থানে ঘাঁটি গেড়েছিলেন। উনার সাথে উনার মত আরও নির্যাতিত মুসলিমরা জোটবদ্ধ হয়ে একটা অস্থায়ী ঘাঁটি তৈরী করেন। কুরায়েশদের বানিজ্য কাফেলা লুট করে উনাদের জীবিকা নির্বাহ হত। যাঁকে কুরায়েশরা অন্যায় ভাবে বন্দি করে নির্যাতন করছিল তার আক্রমন সহ্য করতে না পেরে সেই কুরায়েশরাই মহানবী (সাঃ) এর কাছে তাঁর নামে নালিশ দিতে আসল।

মহানবীর কথার উপরে আমল করে ধৈর্য ধরার কারণে আল্লাহ তায়ালা আবু জান্দাল (রাঃ) কে শিকারে থেকে শিকারিতে পরিনত করেন।

হুদাইবিয়ার সন্ধি মুসলমানদের জন্য একটা কৌশলগত বিজয় ছিল। প্রথমে অনেকে বিষয়টা বুঝে নাই। এই সন্ধির ফলে মক্কার দিক থেকে আর আক্রমন আসার সম্ভবনা ছিল না। ফলে নবিজী (সাঃ) আরবের চতুর্দিকে দাওয়াতি কাফেলা পাঠানো আরম্ভ করেন এবং মক্কার বিপরীত দিকে আরেক শত্রু ইয়াহুদিদের খায়বরের ঘাঁটি আক্রমন করেন এবং বিজল লাভ করেন।

১২ ই মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.