নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশে কি সমকামী বিবাহ চালু হবে ?

১২ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:০০


ঢাকার এক কফি শপে বসে আছি। পাশের টেবিলে দুজন তরুণ তর্ক করছে। একজন বলছে, "ভাই, এটা কী ঘটছে দেখেছো কিছু ? একদিকে গান বাজনা বন্ধ, অন্যদিকে সমকামী বিবাহের দাবি?" অপরজন হাসতে হাসতে বলল, "এটাই তো বাংলাদেশ ভাই। এখানে সবকিছুই সম্ভব, শুধু যুক্তি খুঁজে পাওয়া সম্ভব না।"আমি চুপচাপ বসে শুনছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, এই দেশে বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ হওয়া আসলেই এক বিরল অভিজ্ঞতা। কারণ যা দেখছি, তাতে মাথা খারাপ না হলে উপায় কী?

প্রথমে আসি তৌহিদি জনতার গান বাজনা বন্ধের মিশনে। রূপগঞ্জে তারা ঘোষণা দিলো, আর কোনো গান বাজবে না। কারণ? মসজিদ আর মাদরাসার পাশে নাকি বখাটেরা গান বাজায়। খুবই যৌক্তিক। এরপর ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ স্মরণ অনুষ্ঠানে তারা হাজির। পুলিশ বুঝিয়ে শান্ত করল যে সেখানে কোনো অশালীন গান হচ্ছে না। তৌহিদি জনতা চলে গেল। তারপর আবার বায়তুল মোকাররমের সামনে হাজির হয়ে দাবি তুলল, মাওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম সরিয়ে ফেলতে হবে। কারণ সেখানে নাকি গান বাজনা আর অশালীন কার্যক্রম হয।এতদিন ভেবেছিলাম স্টেডিয়াম খেলাধুলার জায়গা। কিন্তু না, এটা আসলে মসজিদের পাশে গান বাজনার আখড়া। কী আশ্চর্য!

কফি শপের সেই তরুণ দুজনের একজন এবার মোবাইল থেকে একটা নিউজ পড়ে শোনাল। "দেখো,সাহারা নামের একজন ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমকামী বিবাহের জন্য অনশন করছে। দুই-তিনদিন ধরে অনশন চলছে।" অপরজন জিজ্ঞেস করল, "তো তৌহিদি জনতা কই?" প্রথমজন বলল, "এইটাই তো প্রশ্ন। গান বাজনায় এত উত্তেজনা, কিন্তু সমকামী বিবাহের দাবিতে কোনো প্রতিবাদ নাই? এটা কেমন কথা?"

আমি মনে মনে ভাবলাম, আসলেই তো। শেখ হাসিনার আমলে সামিনা লুৎফা সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলায় তৌহিদি জনতা এত রেগে গিয়েছিল যে তাকে শিক্ষা কমিটিতে নেওয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু এখন? এখন কেউ রাজু ভাস্কর্যের সামনে খোলাখুলি সমকামী বিবাহের দাবি তুলছে, অনশন করছে, আর তৌহিদি জনতা নিশ্চুপ। এটা কি মানে পশ্চিমা বিশ্বের চোখে ধুলো দেওয়ার চিত্রনাট্য? "দেখো, আমরা কত প্রগতিশীল। এখানে সমকামী বিবাহের দাবি উঠছে, এবং কেউ প্রতিবাদ করছে না।"

আরেকটা মজার ব্যাপার হলো, জুলাই আন্দোলনের পর থেকে সরকার এই ধরনের ঘটনাগুলো এড়িয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন মৌখিক শাসন করছে, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কেন? হয়তো ইন্টারিম সরকার নিজেদের এই ঝামেলায় জড়াতে চায় না। অথবা হয়তো তারা বুঝতে পারছে না কী করবে। একদিকে তৌহিদি জনতার চাপ, অন্যদিকে বিদেশি শক্তির নজরদারি। সরকার যেন দুই আগুনের মাঝখানে পড়ে গেছে।

বিদেশি শক্তির প্রভাব তো দেখাই যাচ্ছে। তারা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে বৈঠক করছে, সরকারের সাথে আলোচনা করছে। সরকার এখন নিজেদের রেপুটেশন নিয়ে বেশ বিব্রত। একদিকে মৌলবাদী শক্তি, অন্যদিকে পশ্চিমা চাপ।কোনটা সামলাবে?কফি শপের সেই দুই তরুণের একজন এবার বলল, "ভাই, আমার মনে হয় এই সাহারার অনশনটা একটা চিত্রনাট্য। সরকার হয়তো বিদেশিদের দেখানোর জন্য এটা করাচ্ছে।" অপরজন বলল, "হতে পারে। কিন্তু এতে লাভ কী? পশ্চিমারা কি এতটাই বোকা যে তারা বুঝবে না?"

আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। বললাম, "ভাই, আমার মনে হয় না পশ্চিমাদের টুপি পড়ানো যাবে। তারা জানে কী হচ্ছে। কিন্তু আসল সমস্যা হলো, আমরা নিজেরাই জানি না আমরা কী চাই। একদিকে বলছি ইসলামী মূল্যবোধ, অন্যদিকে প্রগতিশীলতার নাটক। এই দুইয়ের মাঝে আমরা আটকে আছি।" দুজনই আমার দিকে তাকাল। একজন বলল, "তাহলে সমাধান কী?" আমি হাসলাম। বললাম, "সমাধান? সমাধান হলো সৎ হওয়া। যদি আমরা গান বাজনা বন্ধ করতে চাই, তাহলে সেটা স্পষ্টভাবে বলি। আর যদি আমরা প্রগতিশীল সমাজ চাই, তাহলে সেটাও স্পষ্টভাবে বলি। কিন্তু এই দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা বন্ধ করতে হবে।"

এই চিত্রনাট্য দিয়ে হয়তো কিছুদিন চলবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্য বেরিয়ে আসবে। কারণ মিথ্যা দিয়ে বেশিদিন চলা যায় না। আর যদি এই চিত্রনাট্যই আমাদের নতুন পরিচয় হয়ে যায়, তাহলে বলতে হবে আমরা সত্যিই একটা অদ্ভুত জাতি। যারা একই সাথে গান বাজনা বন্ধ করতে চায় এবং সমকামী বিবাহ চালু করতে চায়। কিন্তু দুটোই করে একটা অদ্ভুত নাটক দেখানোর জন্য। কফি শপ থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটতে লাগলাম। মনে হলো, বাংলাদেশে বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ হয়ে টিকে থাকা সত্যিই কঠিন। কারণ এখানে যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না, শুধু অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে। আর আমরা সেগুলো দেখে হয় হাসি, নয়তো কাঁদি। কিন্তু কিছুই করতে পারি না।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:১৪

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন:
এনসিপি ক্ষমতায় এলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সমকামিতা সহ সমকামী সম্পর্ক LGBTQ বৈধ করে দিবে। দেশের বড় জেলা শহর সহ পর্যটন স্পটে গে ক্লাব চালু হবে। এ বিষয়ে তারা মার্কিন দূতাবাসের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

১২ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:১৬

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনি এতো চেতি আসেন কেন এনসিপির উপর ? ঠানডা হওন ।

২| ১২ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:২৬

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন:

ইহা হাসি-তামাসা বা কিংবা রাগ-খোভ থেকে বলি নাই। জুলাই আন্দোলন সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ থাকলে ও পরাশক্তির একটা অদৃশ্য হাত ছিল। কোন কিছু এমনি এমনি হয় না; গিভ এন্ড চাওয়া পাওয়া অনেক বিষয় থাকে। এনসিপি দল এমনি এমনি গঠন হয় নাই। LGBTQ কে সামনে আরো আবেগ রং চটা মেখে এমনভাবে উপস্থাপনা করা হবে যে আপনার মনে হবে একে বৈধতা দেওয়া উচিত।

৩| ১২ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:২৮

মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌ বলেছেন: "এটাইতো বাংলাদেশ ভাই। এখানে সবকিছুই সম্ভব, শুধু যুক্তি খুঁজে পাওয়া সম্ভব না।" এক কথায় এত সুন্দর করে বাংলাদেশকে ডিফাইন করলেন! অসাধারণ ভাই!

৪| ১২ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:০৩

কামাল১৮ বলেছেন: চালু হবে কি,অলিখিত ভাবে চালুতো আছেই।হুজুররা যেটা করছে এটাকে কি বলে।একজন মাদ্রাসার প্রিন্সিপল আছে সে এখন নাস্তিক নিয়মিত লাইভে কথা বলে।সে আবার কোরানে হাফেজ।তার নাম মুফতি মাসুদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.