নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

হালাল সুদ

১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:১৩


আমাদের গল্প ফেনীর এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু। ইমাম সাহেব (মরহুম), যিনি চিটাগাংয়ে ইমামতি করে কুল কিনারা করতেন, তিনি একদিন বউয়ের বড় ভাইয়ের আবদারে ঢাকার মিরপুরে জমি দেখতে এলেন; কিন্তু বিধি বাম। কুমিল্লায় চৌদ্দগ্রামের কাছে এস আলম বাসের সাথে ভাগ্যের এক ধাক্কা খেলেন তাঁরা। ইমাম সাহেব আর ফিরলেন না, কিন্তু রেখে গেলেন চারটি সোনার টুকরো পুত্রসন্তান।

এই দুর্ঘটনার পর শ্যালক মিয়া নিজেকে দোষী ঘোষণা করে বসলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, এই চারটি এতিমের লেখাপড়া থেকে শুরু করে কেরিয়ার গড়ার দায়িত্ব তাঁর। বোনকে সে কথা বলতেই বোন দিলেন এক মোক্ষম রায়, “আমার স্বামী যে লাইনে ছিলেন, ওরাও সেই হুজুর লাইনে পড়বে। শোনো ভাই, হুজুরেরা কখনো ভাতে মরে না!” শোকাহত বোনের কথায় ভাই শেষ পেরেক মারলেন। শুরু হলো চার এতিমের হুজুর লাইনে পড়ার দীর্ঘ যাত্রা, আর সমস্ত খরচ বহন করতে লাগলেন এই মামা।

চার ভাইয়ের মধ্যে বড়, আমাদের ফয়েজুল্লাহ। সে যে মাদ্রাসায় পড়তো, সেটা ছিল তার চাচাদের অধীনে। আহা! বিনামূল্যে বিদ্যার্জন! তবে সেখানে ডালের পানি আর সাদা ভাত খেয়ে তার শরীর লিকলিকে হয়ে গেল ! ঘনঘন অসুখ তার নিত্যসঙ্গী।একবার হলো মারাত্মক টাইফয়েড। কিন্তু শাশুড়ি বাড়ির লোকেরা তো সব হুজুর ! তারা দিলেন ইসলামিক দাওয়াই। আর সেই ফলস্বরূপ, বেচারা ফয়েজুল্লাহর একটি চোখ গেল নষ্ট হয়ে। "আল্লাহ চোখ দিয়েছেন, আল্লাহই নিয়েছেন,"- শশুর বাড়ির সান্ত্বনা।

মামা একদিন গ্রামে এসে ভাগ্নের এই অবস্থা দেখে রক্ত গরম। তীব্র রোষে তিনি শশুর মশাইকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করলেন। কিন্তু ফয়েজুল্লাহর মায়ের এক কথা: "সবই খোদার ইচ্ছা!" মায়ের জেদ আর ভাগ্যের পরিহাসে সেই লিকলিকে শরীর আর এক চোখ নিয়ে ফয়েজুল্লাহকে আবার সেই মাদ্রাসাতেই ফিরতে হলো। কেন? কারণ সেখানে বিনা বেতনে পড়া যায়, আর মামার দেওয়া বইখাতার খরচটাই তখন বড় বাঁচোয়া !

মাদ্রাসার ভেতরের দৃশ্য ছিল আরও মনোরম। মাছ-গোশত যা দান খয়রাত আসতো, সব হুজুর-স্যাররা ভাগাভাগি করে খেতেন। ছাত্রদের পাতে জুটতো সপ্তাহে একদিন মুরগির মাংস, সেটাও সম্ভবত মুরগির স্বপ্ন মাত্র। অথচ ফ্রিজ খুললে দেখা যেতো গরু-খাসির মাংসের পাহাড়। ছাত্ররা অপুষ্টিতে ভুগত, আর তাদের স্বপ্ন একটাই: বড় হয়ে এই মাদ্রাসার টিচার হওয়া, আর এই দখলীকৃত মাছ-গোশতের ভাগের অংশীদার হওয়া। ফয়েজুল্লাহ আর তার ভাইয়েরাও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ফয়েজুল্লাহর ছোট ভাই তো অপুষ্টির জেরে অর্থোপেডিক সমস্যার শিকার হয়ে পঙ্গু হওয়ার দশা। এইবার আর খোদার ইচ্ছার ওপর ভরসা না রেখে সে বুদ্ধিমত মামাকে ফোন দিলো। মামা তাকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করালেন, আর সে প্রাণে বাঁচলো। মামা তো জানতেন না, তার ভাগ্নেদের মনের গভীরে জন্ম নিচ্ছে এক প্রোটিন-যুক্ত স্বপ্নের বীজ!

চার ভাইয়ের পড়া শেষ হলো। বাকি তিন ভাই দেওবন্দ থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নিলো। আর ফয়েজুল্লাহ? দুর্বল শরীর আর একটি নষ্ট চোখ নিয়ে তিনি কোনোমতে লোকাল ইমামতি ও শিক্ষকতা শুরু করলেন। অবিবাহিত অবস্থায় ইমামতি করা নাকি আদর্শ পরিপন্থী', তাই দ্রুত বিয়ে করে নিলেন। গ্রামের মসজিদে ইমামতি করে তিন হাজার আর মাদ্রাসায় পড়িয়ে তিন হাজার : মোট ছয় হাজার টাকা। সংসার চলে না। এখন অবশ্য দান-খয়রাতের মাছ-গোশতের সামান্য একটা ভাগ তিনি পান, কিন্তু পেটের ক্ষুধা তো আর মাছের কাঁটা দিয়ে মেটে না!

বন্ধুরা বুদ্ধি দিল: “দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নাও, আর বউয়ের সোনার গয়না বন্ধক দাও। সৌদি গিয়ে ইমামতি করবে, দেখবে টাকা উড়ছে!” আশ্চর্যজনক ব্যাপার ! যেই মানুষ সারা জীবন সুদকে হারাম জেনে জেনেছেন, সেই তিনিই উচ্চ সুদে লোন নিলেন! বউয়ের সোনার গয়না বন্ধক, ফ্রি ভিসায় এক আত্মীয়ের মাধ্যমে সৌদি যাত্রা। কারণ? হুজুরেরা কখনো ভাতে মরে না, তবে ভালোভাবে বাঁচার জন্য হয়তো সুদ নেওয়াই যায় !

সৌদিতে গিয়ে দেখা গেল ফয়েজুল্লাহ ইমামতি নয়, পেলেন এক শেখের রিসোর্টের থালাবাসনের কাজ। তিনি, যিনি গ্রামে দুই হাত পকেটে ভরে কেবল হুজুরগিরি করে বেড়াতেন, এখন শেখের পার্টির উচ্ছিষ্ট থালাবাসন মাজেন। ইগোতে লাগে, খুব লাগে। কিন্তু চড়া সুদের ঋণের কথা মনে পড়লেই তিনি 'খোদার ইচ্ছা' মনে করে থালা মাজেন। এভাবে এক বছর কাটানোর পর দেবদূতের মতো এগিয়ে এলেন তার ছোট খালার জামাই। তিনি ফয়েজুল্লাহকে একটা মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ পাইয়ে দিলেন। ভিসা ঠিক করে ফয়েজুল্লাহ আবার দেশে আসলেন। এবার মুয়াজ্জিন ভিসায় সৌদি গেলেন, মাসিক বেতন চল্লিশ হাজার টাকা!

সব সুদ শোধ হলো, মায়ের দাঁতের চিকিৎসার জন্য টাকা গেল। ফয়েজুল্লাহর সংসারে এখন কোনো দুঃখ নেই। আর তার বাকি তিন ভাইয়ের চোখে? তাদের চোখে এখন সুদূর সৌদি আরবের চল্লিশ হাজার টাকার মুয়াজ্জিনের ভিসার স্বপ্ন। কারণ, তারা এখনমনে করে : হুজুর লাইনে ভাতে না মরলেও, প্রবাসে গিয়ে আরো ভালো ভাবে সংসার চালানো যায় ।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৩০

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



আল্লাহকে মানুষ অনেক অনেক বড় করেছেন; তিনি সকল সমস্যা সমাধান করতে পারেন।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৩৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ভালো হইয়া যান , ভালো হতে টেকা লাগে না । হক মাওলা.

২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৪০

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন:

আপনি ও দেখি এক জিনিস!!! জুলাই ব্যবসায়ীদের তাজা খবর রেখে পুরান, বাঁশী নিউজ নিয়ে পোষ্ট।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৪৬

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমি হতাশ । এখন হতাশা নিয়ে লিখলেই আমারে টানা মারা শুরু করবেন । এনসিপি-ইনটেরিম ভালো নাই রিলেশন কখন কোন বোম ফাটায় । :-<

৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৪২

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:




বিশ্বে যা দেখছেন, সবই করেছে মানুষ: ধর্ম আবিস্কার থেকে AI, অপজ্ঞান থেকে জ্ঞান।

১৪ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৪৭

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সবই হক মাওলার কেরামতি। মানুষ কেবল উছিলা ।

৪| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:১৭

শ্রাবণধারা বলেছেন: ফয়েজুল্লাহ হুজুর অবশেষে সৌদি আরবে তার কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেয়েছেন জেনে খুশি হলাম।
আমি মধ্যপ্রাচ্যে কাজের প্রয়োজনে কয়েক বছর ছিলাম। সেখানে আপনার উল্লেখিত ঘটনার মতো বাংলাদেশি অনেক মুয়াজ্জিনকে দেখেছি।

আর ফয়েজুল্লাহ হুজুর সৌদি আরবে আসরের জন্য সুদে টাকা ধার নিয়েছেন, এটি খুবই বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশের কোনো ব্যাংক যেহেতু তাকে লোন দেয়নি, দাদন ব্যবসায়ীর ছাড়া তার আর উপায় কী ছিল?

আপনি অকারণে তাকে পচালেন! আপনাকে মাইনাস! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.