নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

আখের গোছানো রাজনীতি: সেফ এক্সিট কি কৌশল ?

১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:৫৬


অন্তর্বর্তী সরকারের দিনকাল যেন এক দীর্ঘ নাটক, যেখানে চরিত্রগুলো মাঝে মাঝে পোশাক বদলায়, কিন্তু সংলাপ থাকে পুরোনোই। এক সকালে হঠাৎ এনসিপি জানিয়ে দিল, উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেকেই সেফ এক্সিটের চিন্তা করছেন, তাঁদের তালিকা তারা শিগগির প্রকাশ করবে। খবরটি ছড়াতেই রাজধানীর বাতাসে হালকা কৌতুকের গন্ধ। মনে হলো, কেউ যেন ঘোষণা দিচ্ছে, সরকার এখন এমন এক বাড়ি যেখানে সবাই লাগেজ গুছিয়ে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, শুধু গাড়ির হর্ণ বাজলেই বেরিয়ে পড়বে।

এর কিছুদিন পর এনসিপির সামান্থা শারমিন বললেন, প্রত্যেক উপদেষ্টা নিজের আখের গোছানোর কাজ করে রেখেছেন। সপ্তাহখানেক আগেও বলা হয়েছিল অনেক উপদেষ্টা, এখন সেটি হয়ে গেছে প্রত্যেক। এই সংখ্যার হঠাৎ পরিবর্তন রাজনীতির এক অদ্ভুত ভাষা। এখানে যুক্তি নয়, উদ্দেশ্য কথা বলে। শব্দগুলো কেবল সংবাদমাধ্যমের কালি নয়, একধরনের অস্ত্র, যার আঘাতে সরকারের প্রতি বিশ্বাস ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায়।

আখের গোছানো শব্দটি এখন ঢাকার রাজনৈতিক অভিধানে একটি নতুন সংযোজন। এটি শুনলেই মনে হয়, মন্ত্রণালয় ও সচিবালয় যেন আখের ক্ষেতে ভরা, সবাই সেখানে নিজের মিষ্টি ভাগ আলাদা করে রাখছে। কারও আখ একটু লাল, কারও একটু কালো, কিন্তু সবারই মনে এক প্রশ্ন কখন চাষাবাদের সময় ফুরিয়ে যাবে। এই সেফ এক্সিট নামের ধারণাটি যেন আধুনিক রাজনীতির এক প্রহসন, যেখানে নেতা মানেই এখন ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা পরামর্শদাতা।

এর মধ্যেই জামায়াতে ইসলামী ঘোষণা দিল, অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে মহা ষড়যন্ত্র চলছে। ষড়যন্ত্র শব্দটি আমাদের রাজনীতিতে এমন পরিচিত যে প্রায়ই মনে হয় এটি কোনো পদবী। যখন কিছু ব্যাখ্যা করা যায় না, তখন সবাই একসঙ্গে বলে ওঠে: ষড়যন্ত্র চলছে। তাহের সাহেব তো সরাসরিই জানালেন, তাঁদের কাছে উপদেষ্টাদের কণ্ঠ রেকর্ড আছে। এ এক নতুন পুরোনো গল্প, যেন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে লুকিয়ে থাকা স্বৈরাচারের ছায়া আবার ফিরে এসেছে। কে জানে, কোন বৈঠকে কে কী বলেছিল, সেটি হয়তো এখন কোথাও রেকর্ড হয়ে পড়ে আছে, কোনো দলের অফিসে, কোনো নিরাপদ ল্যাপটপে।

বিএনপি বলছে, প্রশাসনে জামায়াত-শিবিরের লোক ঢুকছে। আবার তথ্য উপদেষ্টা অভিযোগ করেছেন, বিএনপি ও জামায়াত দুই দলই প্রশাসনে নিজেদের লোক বসাচ্ছে। ফলাফল হলো, সবাই এখন অভিযোগ করছে, কিন্তু কেউ নির্দোষ নয়। এই রাজনীতির অদ্ভুত সাম্যতা, যেখানে প্রতিটি দলই প্রতিপক্ষের মতো একই অপরাধে লিপ্ত, শুধু মাইক্রোফোনের দিক বদলে যায়।

তাহলে হঠাৎ সবাই কেন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে? আসলে যখন কেউ বুঝতে পারে, তার ক্ষমতার সময় শেষের দিকে, তখনই সে নতুন গল্প তৈরি করতে শুরু করে। এই গল্পগুলো একদিকে ভবিষ্যতের প্রস্তুতি, অন্যদিকে বর্তমানের প্রতিশোধ। কেউ সেফ এক্সিটের অপেক্ষায়, কেউ ব্লেম গেমের মাধ্যমে নিজের দায় মুছে ফেলতে চায়। নৌকা যদি ডোবে, অন্তত যেন নিজের সাঁতারের দক্ষতা প্রমাণ করা যায় এমন এক মানসিকতা থেকেই জন্ম নেয় এইসব রাজনৈতিক কাহিনি।

গণ অধিকার পরিষদের রাশেদ খান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার গভীর চক্রান্ত শুরু হয়েছে। তাঁর বক্তব্যে এক ধরনের সতর্কতা আছে, কিন্তু এর মধ্যে রাজনৈতিক আত্মরক্ষার গন্ধও লুকানো। এখন সবাই চক্রান্ত নিয়ে কথা বলে, যেন এটি রাজনীতির স্বাভাবিক ব্যায়াম। সকালে কেউ ষড়যন্ত্রের শিকার, বিকেলে সে-ই অন্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করছে।

শেখ হাসিনার দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর মানুষ ভেবেছিল, রাজনীতিতে নতুন সংস্কৃতি আসবে। কিন্তু যা ঘটছে, তা পুরোনো নাটকের নতুন মঞ্চায়ন ছাড়া কিছু নয়। পুলিশ ও প্রশাসনে এখনো দলীয় লোক বসানো হচ্ছে, উপদেষ্টারা নিজের আখের গোছানো নিয়ে ব্যস্ত, কেউ আবার গোপনে কণ্ঠ রেকর্ড করে রাজনৈতিক বাণিজ্য করছে। এসব দেখে মনে হয়, পরিবর্তন কেবল মুখে, ভেতরে পুরোনো চরিত্ররা আগের মতোই সক্রিয়।

শেষ পর্যন্ত এই রাজনীতির মঞ্চে কারা থাকবে, আর কারা সেফ এক্সিটের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবে তা সময়ই বলবে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, জনগণ এখন কেবল দর্শক হয়ে বসে আছে, পর্দা নামবে কি না, তা দেখার জন্য। কেউ হাসবে, কেউ দীর্ঘশ্বাস ফেলবে, কিন্তু নাটকের নাম সেই পুরোনোটাই থাকবে: “নতুন বন্দোবস্তের পুরোনো মুখ।”


মুল লেখা: জামায়াত–এনসিপি হঠাৎ উপদেষ্টাদের ওপর ‘ক্ষুব্ধ’ কেন-মনজুরুল ইসলাম

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:২০

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: প্রত্যেক উপদেষ্টা নিজের আখের গোছানোর কাজ করে রেখেছেন।
...............................................................................................
আমরা মান + হুস
অতএব আমাদের স্বভাব কেন বদলাবে ???

১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:২৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পলিটিকাল দলগুলো যদি ইনটেরিম কে নিয়ে এমন কথা বলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায় ?

২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:২১

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন:

এনসিপি হঠাৎ উপদেষ্টাদের ওপর ‘ক্ষুব্ধ’ কেন "ছাল নাই বেডা, বেড়া দেইখা কান্দে"

১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:২৭

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এসব বলা ঠিক না ।

৩| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৩০

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: কিছু প্রতিশোধ নেয়া এবং
কিছু নূতন আইন প্রণয়ন ছাড়া আর কিছুর
অগ্রগতি হয়নি !

.......................................................................
ফলাফল দেখার জন্য , নির্বাচন পরবর্তী সময়ের জন্য
অপেক্ষা করতে হবে ।

১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৩৩

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমলারা দুইহাতে লুটছে ।

৪| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৩৬

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন:

উপদেষ্টা মাহফুজ বিএনপি থেকে নির্বাচন করার কথা শুনছি। যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে মাহফুজের বুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়!
পঞ্চগড় সারজিসের এলাকা থেকে ও বিএনপি একজন শিক্ষিত হাইপ্রোফাইল ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হবে।
বিষয়গুলো কিভাবে দেখছেন?

১৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৪২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সারজিস আলম পারবে না নেগোসিয়েশন ছাড়া । সবার চোখ আসিফ মাহমুদের উপর । কারো সাথে সেটিং না করতে পারলে ইলেকশনের দিন দেশ ছাড়া লাগবে । সে বিসিবিতে টাকা খেয়ে গতবছর আমি ডামি ইলেকশন করা লিগের একজন কে পরিচালক পদে সুপারিশ করেছে। পরে বিএনপি হইচই করাতে তাকে বাদ দেওয়া হয় । সবচেয়ে বেশি করাপটেড সে । বিএনপি থেকে না দাড়ালে তার খবর আছে ।

৫| ১৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৩১

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



"বিপ্লব" "বিপ্লব" "ইউনুসের ক্যু", "শিবিরের জল্লাদদের লাশের রাজনীতি"; ২য় স্বাধীনতা।

১৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৩৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সব দোষ শেখ হাসিনা এবং আওয়ামি লিগের । :-B

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.