নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

জুলাই সনদ স্বাক্ষর করে জামাত কি এনসিপির সাথে গাদ্দারি করেছে?

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৩৩


আজকে সকাল থেকে পুরো দেশ টিভির সামনে বসে ছিল এক মহাকাব্যিক মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য। ইউনুস স্যার নিজেই বলে দিয়েছিলেন টিভিতে বসে সাক্ষী হতে। ফলে সবাই খাওয়া-দাওয়া ভুলে টিভির সামনে ক্যাম্প করে বসে রইল। কেউ কেউ তো পপকর্নও রেডি করে রেখেছিল ড্রামা দেখার জন্য। আর সত্যি বলতে কি, ড্রামা তো কম হয়নি !

ঐক্যমত্য কমিশনের মিটিংগুলো দেখতে দেখতে মনে পড়ে যেত আমার এক স্যারের কথা। উনি বলতেন বাংলাদেশে মিটিং মানেই হচ্ছে সিটিং, ইটিং ও গসিপিং কিনতু আউটপুট নাথিং। ঐক্যমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর যে মেলোড্রামা চলছিল, তাতে মনে হচ্ছিল স্যারের ভবিষ্যদ্বাণী একদম সত্যি হতে চলেছে। কিন্তু না, আমাদের আছে এক বিশ্বখ্যাত নোবেল লরিয়েট, শান্তির পায়রা প্রফেসর ইউনুস স্যার, যিনি অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখান। যদিও এই ধরনের দাবি আগে শুধু অনন্ত জলিলের মুখেই শোনা যেত !

এবার আসি আসল চমকে। জুলাই সনদ অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। নানা রকম বাহানা করে তারা যে স্বাক্ষর করবে না, এটা প্রায় নিশ্চিত ছিল। গতকাল গুজবও ছিল জোরেশোরে। বিএনপি পন্থী একটিভিস্টরা তো একদম ক্ষেপে গিয়েছিল। কারণটা বুঝতে অসুবিধা নেই - তাদের বিড়াল বহুদিন ধরেই তাদের ম্যাও ডাক শুনাচ্ছে, যেটা তাদের একদমই ভালো লাগছে না। অনেক একটিভিস্ট তো সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেলেছিল গণভোটে না ভোট দেবে। জামাত আর এনসিপির ভয়টা তো সেখানেই - যদি গণভোটে না জয়ী হয়, তাহলে পুরো জুলাই সনদের আর কোনো দাম থাকবে না। তাই তারা চায় জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট। যদি না জয়ী হয়, তাহলে নতুন তামাশা শুরু হবে।

গতকাল বিএনপিপন্থী কতিপয় একটিভিস্টদের যে প্ল্যান ছিল, সেটা শুনলে হাসি থামানো মুশকিল। তারা ঠিক করেছিল যদি জামাত চুদুরবুদুর করে, তাহলে তারা বাকশালিদের সাথে নিয়ে গণভোটে জামাতকে জয় বাংলা করে দেবে! কিন্তু জামায়াতে ইসলামী যেন সুবোধ বালকের মতো সুরসুর করে এসে জুলাই সনদে স্বাক্ষর দিয়ে গেল। এই দৃশ্য দেখে জাশির সাপোর্টার আর এনসিপির সাপোর্টারদের মুখ দেখার মতো ছিল। সংশয় আর হতাশা একসাথে !

আজকে বিএনপি পন্থী একটিভিস্টরা এনসিপিকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। কারণ তারা ভেবেছিল জামাত আর এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না। দুইজন মিলে একই সুরে গান গাইবে। কিন্তু জামায়াত যে হঠাৎ করে তার পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসে স্বাক্ষর করে দিল, সেটা এনসিপির জন্য ছিল এক বিশাল ধাক্কা। এনসিপির দাবি-দাওয়ার সংখ্যা তো ফিবোনাক্কি সিরিজের মতো বেড়েই চলেছে। আজকে এক, কালকে দুই, পরশু তিন, তারপর পাঁচ, আট - এভাবে চলতেই থাকবে মনে হয়। তাদের মূল লক্ষ্য হলো কঠোর শর্ত আরোপ করে বিএনপিকে চাপে ফেলে জুলাই সনদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি নিয়ে তাদের মতের সাথে একমত করানো। জামায়াতও কিছু কন্ডিশন দিয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ করে এসে স্বাক্ষর করে দেওয়াটা এনসিপির জন্য বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। বিএনপি পন্থী একটিভিস্টরা ভাবছে জামায়াত এনসিপির সাথে প্রতারণা করেছে। আসলেই কি তাই?

সত্য কথা হলো, এনসিপি জামায়াতে ইসলামের মিউজিক কম্পোজিশনে গান গায় না। তাদের আসল শক্তির উৎস নোবেল লরিয়েট নিজে। প্রফেসর ইউনুস সাহেব বিদেশ থেকে ফিরেই জুলাই সনদের দুই দিন আগে সব দলকে নিয়ে জরুরি মিটিং ডেকেছিলেন। আর এর মাঝে একটা সূক্ষ্ম ঘটনা প্রায় সবার নজর এড়িয়ে গেছে। সেটা হলো বিদেশ থেকে এসেই নাহিদ ইসলামের সাথে দেখা করেছেন ইউনুস স্যার। এসব পার্সোনাল মিটিংয়ে ইউনুস স্যার নাহিদ ইসলামদের শেখান কিভাবে একটিং করতে হবে। মঞ্চে কিভাবে দাঁড়াতে হবে, কখন কঠোর হতে হবে, কখন নরম হতে হবে - সব কিছু। এনসিপির দাবি-দাওয়া যে ক্রমশ পরিবর্তন হচ্ছে এবং কঠিন পথে আগাচ্ছে, সেটা শুধু জুলাই সনদের আইনি এবং সাংবিধানিক ভিত্তি দেওয়ার জন্য। এসব স্বীকৃতি পেলেই তারা কারো প্ররোচনায় না পড়ে নির্বাচনে চলে আসবে। কিন্তু বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে এনসিপির অনেক মতের সাথে দ্বিমত করেছে।

এনসিপির যুক্তিটা আসলে খুব একটা খারাপ নয়। তারা মনে করে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে ঐক্যমত্য দেখালেও এর আইনি ভিত্তি না থাকায় কোনো গুরুত্ব নেই। ১৯৯০ সালের তিন জোটের রূপরেখার মতো এটাও কাজে আসবে না। তাছাড়া জুলাই যোদ্ধা ও ছাত্রনেতাদের দায়মুক্তির একটা বিষয় আছে। সব মিলিয়ে এনসিপি কঠোর পজিশনে গিয়েছে স্যারের পরামর্শে। জুলাই সনদে তারা স্বাক্ষর করেনি ইউনুস স্যারের পরামর্শে, জামায়াতের দেখাদেখি নয়। বিএনপির একটিভিস্টরা সেটা বুঝতে পারছে না। তারা ভাবছে জামায়াত আর এনসিপি একসাথে চলে, কিন্তু আসল ম্যাজিশিয়ান হলেন ইউনুস স্যার।

এখন আসি জামায়াত প্রশ্নে। জামায়াত কেন হঠাৎ করে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল? তারা বলছে ইউনুস স্যারকে খুশি করতে, কিন্তু আসল কথা হলো মূলত বিএনপি থেকে ফেভার পেতেই তারা এই কাজ করেছে। কোনো এক ইনফরমাল ওয়েতে বিএনপি জামায়াতের সাথে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বসতে চায় - এমন আলাপের পর জামায়াত তার পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। বিএনপি নির্বাচন নিয়ে জামায়াতসহ সবার সাথে আলোচনায় বসতে চায়। তো জামায়াত ভাবল, আরে এই সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। তাই তারা সুবোধ বালকের মতো স্বাক্ষর করে দিল।

এনসিপি আগামী কিছুদিনের মধ্যেই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারে। তবে শাপলা প্রতীক না পেলে তারা নির্বাচনে যায় কিনা সেটা এখন দেখার বিষয়। আজকের অবস্থা দেখে বোঝা গেল সবকিছু ইউনুস স্যারের হাতের ভিতরেই আছে। তিনি অবশ্যই নির্বাচন এবং আসন ভাগাভাগি নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলবেন। জামায়াত যখন ভাবছিল তারা স্মার্ট মুভ করেছে, এনসিপি যখন ভাবছিল তারা জামায়াতের সাথে একসাথে থাকবে, তখন ইউনুস স্যার তাদের সবাইকে আলাদা আলাদা সুর শিখিয়ে দিচ্ছিলেন। আর শেষে সবাই মিলে একটা সিম্ফনি তৈরি হয়ে গেল। কে কার সাথে প্রতারণা করছে, সেটা বোঝাই মুশকিল হয়ে গেছে।

এই হলো জুলাই সনদের মহাকাব্য। জামায়াত স্বাক্ষর করল, এনসিপি করল না, বিএনপি খুশি, এনসিপি হতাশ, জামায়াত স্মার্ট, আর ইউনুস স্যার - উনি তো সবসময়ই মাস্টারমাইন্ড। এখন দেখার বিষয় শেষ পর্যন্ত কে কার দল টানে। তবে একটা জিনিস নিশ্চিত - এই পলিটিক্যাল নাটক আরও অনেক দিন চলবে, আর আমরা সবাই টিভির সামনে বসে পপকর্ন খেতে খেতে উপভোগ করব।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:১১

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



জামাত, শিবির ও এনসিপি, এগুলো কি আলাদা দল?

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:১৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এনসিপি শিবিরের ডাকসু-চাকসু-জাকসু-রাকসুতে জেতার পর খুশি ছিলো । তারা মিছিলও করেছে । নিজেদের ভরাডুবি নিয়ে তাদের মাঝে হতাশা নেই ।

২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:২০

মাথা পাগলা বলেছেন: এনসিপিরা আজকে রাজুতে-কাজুতে যাচ্ছে না কেন? খুব সম্ভবত উপরের নির্দেশে এনসিপি বলির পাঁঠা হবে যা বুদ্বিজীবিরা আগেই বলাবলি করছিলো। আপনার ইউনুস স্যারের একটিং ক্লাসে ভর্তি হতে চাই। মাসে ফী কতো করে নেন? জানেন কি? তিনি নির্বাচন সঠিক সময়ে দেবেন নাকি নতুন কোন তাফালিং করে দেরি করবেন?

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:২৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ইউনুস স্যারের কেলাশ আমি করেছি: পাচশত টাকা সেমিনার ফি এবং course ফি পাচ হাজার টাকা যখন ছিলো।

৩| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৪১

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন:

এনসিপি আগামী কিছুদিনের মধ্যেই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারে। যদি এমন‌ কিছু করে এর থেকে হাস্যকর কিছু আর হবে না! আজকে কিছু জুলাই যোদ্ধা নাকি মাইর খাইছে; এদের কে ফান্ড দিয়ে কারা পাঠায়েছে?

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৪৭

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: লিগ বলছে এনসিপি , দল বলছে এনসিপির সারজিস করিয়েছে আবার জাশি বলছে লিগ । সংশোধনি আগেই আনা যেত এসব মারামারির দরকার ছিলো না । এরা সবাই দায় মুকতি চায় । এটা আলি রিয়াজের মাথায় কি ছিলো না ? এতদিন ঘাস কেটেছেন তারা ।

৪| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৪৮

কামাল১৮ বলেছেন: এই টিশু পেপারে সই করাও যা নকরাও তাই।ফ্লাশ করলেই সব শেষ।যারা করেছে জুলাই আন্দোলন আজকে তাদের পিঠের চামড়া তুলে নিয়েছে পুলিশ।তাদের যা ক্ষোভছিলো আজকে তা আদায় করে নিয়েছে।পুলিশকে এমন মারমুখি হতে এর আগে আর দেখা যায় নাই।

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৫৪

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনি খুশিতে বিউগল বাজান । পুলিশ যে কত ভালোন সেটা বাংলাদেশের মানুষ জানে।

৫| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:২৮

ক্লোন রাফা বলেছেন: ইহাকে জামাত বলে/ আপনার চিত্রে যা বলছে।

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: জামাত মানেই মুনাফিক। এদের কোনো চরিত্র নাই।

৬| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৩:৫৯

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



পরাজিতদের রাজাকারী সনদ।

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: অভিনয়ে জামাতই সেরা।

৭| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৫২

ডার্ক ম্যান বলেছেন: এদের নাটকের কাছে ভ্যারাইটি শোও ফেল

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এওয়ার্ড ঊইনিং পারফরম্যান্স।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.