নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডোনাল্ড ট্রাম্প: বিশ্ব রাজনীতির নতুন মাস্তান

২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:৩০


ট্রাম্প যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতার মসনদে বসলেন, বিশ্বজুড়ে এক হিমশীতল শিহরণ খেলে গেল। এ যেন এক অপ্রত্যাশিত উলটপুরাণ। বিশেষত প্রগতিশীল সমাজ, অভিবাসীর দল, আর আমেরিকায় নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখা মানুষগুলোর মনে জন্ম নিল এক চাপা উদ্বেগ। কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প—তিনি তো নিছক নেতা নন, তিনি হলেন 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির মূর্ত প্রতীক। চরম ডানপন্থী এই মানুষটির একটাই ধ্যান: কীভাবে আমেরিকার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা যায়, কীভাবে আমেরিকাকে আবারও মহান করে তোলা যায়!

ক্ষমতার রাশ হাতে নিয়েই ট্রাম্প শুরু করলেন তাঁর বহুল প্রচারিত "মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন" মিশন। প্রথম কোপ পড়ল আন্তর্জাতিক এনজিও এবং সহযোগিতা সংস্থাগুলোর বাজেটে। জাতিসংঘের ভাঁড়ার থেকেও অর্থ কাটছাঁট হলো। বড় বড় টেক-জায়ান্টদের ওপর এলো কঠিন শর্তের বোঝা। আইফোন নির্মাতাদের মতো প্রতিষ্ঠানও রেহাই পেল না। তাদের লক্ষ্য—আমেরিকায় কারখানা গড়তেই হবে। কিন্তু সবচেয়ে কঠিন আঘাত এলো অভিবাসীদের ওপর। বিশেষ করে ভারতীয়দের জন্য পরিস্থিতি হলো দুর্বিষহ। এইচওয়ানবি থেকে শুরু করে নানা রকম ভিসা প্রাপ্তির পথ হয়ে উঠল বন্ধুর। কারণ স্পষ্ট: আমেরিকানদের চাকরি আমেরিকানদেরই ফিরিয়ে দিতে হবে। তবে ট্রাম্প শুধু হুমকি দেওয়ার লোক নন, তিনি যে কাজ করে দেখাতে পারেন, তা প্রমাণ করতে বেশি সময় নিলেন না।

বিশ্বের চলমান সংঘাতগুলোতে হস্তক্ষেপ করে ট্রাম্প নিজেকে এক নতুন শান্তিদূত হিসেবে তুলে ধরতে চাইলেন। তাঁর প্রথম বড় সাফল্য এলো জুলাই ২০২৫-এ, যখন থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত যুদ্ধ শুরু হলো। ৪৩ জন মানুষের প্রাণহানি এবং তিন লক্ষাধিক মানুষের বাস্তুচ্যুতির পর ট্রাম্প সরাসরি হুমকি দিলেন: যুদ্ধ বন্ধ না হলে বাণিজ্য চুক্তি বাতিল ! ফল ? মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে বসলেন। ট্রাম্পের বার্তা ছিল পরিষ্কার: আমি এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারি !

এরপর ট্রাম্প নজর দিলেন আরও কঠিন এক সংঘাতের দিকে: আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান। আগস্ট ২০২৫-এ হোয়াইট হাউসে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান এবং আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। তিন দশকের নাগোর্নো-কারাবাখ বিরোধের অবসান হতে চলেছে! এই চুক্তির চমকপ্রদ দিক: আর্মেনিয়ার ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে তৈরি হলো এক করিডোর: যার নাম দেওয়া হলো "ট্রাম্প রুট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস অ্যান্ড প্রসপেরিটি" (টিআরআইপিপি)। ৯৯ বছরের জন্য এই করিডোর উন্নয়নের একচেটিয়া অধিকার পেল আমেরিকা। এটি ছিল দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব বিস্তার এবং রাশিয়া-ইরানের প্রভাব খর্ব করার এক সুদূরপ্রসারী কৌশল।

ট্রাম্পের আরেকটি মধ্যস্থতা এলো মে ২০২৫-এ, যখন কাশ্মীর হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক অভিযান শুরু হলো। এই দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সংঘাত দ্রুত থামানোয় ট্রাম্প সফল হন। যদিও ভারত মধ্যস্থতার দাবি অস্বীকার করে, কিন্তু ট্রাম্পের বৈঠকে ক্রেডিট নিতে তিনি ভোলেননি। পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁর 'খাতির'ও বেশ লক্ষ্যণীয়। গাজার যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্প নিজেকে নোবেল পুরস্কারের দাবিদার মনে করেন। তবে এটা অস্বীকার করা যায় না যে নেতানিয়াহু তাঁর ছত্রছায়ায় গাজায় হামলার মাত্রা বাড়িয়েছিলেন। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে আমেরিকাকে বাংকার বোমা ইরানে পাঠানো ছিল প্রকাশ্য পক্ষপাতিত্ব। মূলত ইরানকে কোণঠাসা করাই ছিল এই সব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনাটি ঘটল ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার মাত্র তিন/চার মাসের মধ্যে: সিরিয়ার বাশার আল আসাদের পতন ! যে কাজ বাইডেন হয়তো জীবনেও পারতেন না, ট্রাম্প এসে নিমিষেই তা করে দেখালেন। এতে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়া এবং ইরানের মারাত্মক ক্ষতি হলো। রাশিয়ার প্রভাব কমলো, এবং বাশার আল আসাদের মাধ্যমে ইরান-হেজবুল্লাহ যে সহযোগিতা পেত, তা চিরতরে বন্ধ হলো। সিরিয়ার মসনদে এখন আমেরিকান 'পাপেট' সরকার।

ডোনাল্ড ট্রাম্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছেন রাশিয়ার, বিশেষত নতুন রাসপুতিন খ্যাত ভ্লাদিমির পুতিনের। পুতিনের মতো স্বৈরাচার, যিনি রাশিয়ার প্রাচীন গৌরব ফেরাতে বদ্ধপরিকর, তাঁর পথে ট্রাম্প যেন এক কঠিন বাধা। বাইরে পুতিনের সামনে ট্রাম্পকে নরম দেখালেও, ভেতরে ভেতরে ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার 'জাল' সুচারুভাবে কাটতে শুরু করেছেন: যার মূল লক্ষ্য ইউক্রেন আগ্রাসন বন্ধ করা।

পুতিনকে অনেকে অভিযুক্ত করেন আলেকজান্ডার দুগিন নামে এক দার্শনিকের আগ্রাসী নীতি অনুসরণ করার জন্য। দুগিনের দর্শন: আগ্রাসনই তোমাকে বিশ্বশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার অর্থনীতি আজ বেহাল। রাশিয়ার কারাগারে মুসলিমরা বেশি অত্যাচারিত হন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সেখানে নেই বললেই চলে; পুতিনের সমালোচনা মানেই আট বছরের জেল। এমন এক নরকতুল্য জীবনযাপন করছেন সেখানকার মানুষ। পুতিন-ট্রাম্পের বারবার বৈঠকেও ইউক্রেন যুদ্ধ থামেনি। ট্রাম্প ইউক্রেনকে রাশিয়ার কিছু অংশ ছেড়ে দিতে বললেও, পুতিনের যুদ্ধ থামানোর কোনো লক্ষণ নেই।

আন্তর্জাতিকভাবে ট্যারিফ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নতুন লক্ষ্য হলো ভারত। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির ওপর তিনি পঞ্চাশ শতাংশ শুল্ক ধার্য করলেন। আপাতদৃষ্টিতে ভারতের ওপর রাগ মনে হলেও, আসল কারণ হলো: ভারত যেন রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমিয়ে দেয়। রাশিয়া তেল বিক্রি করে ভারত ও চীনের কাছে, আর সেই অর্থেই যুদ্ধের খরচ চালায়। ট্রাম্প এই অর্থপ্রবাহ বন্ধ করতে চান যা 'বুড়ো বাইডেন' হয়তো কখনোই পারতেন না। ভারত এখন তাদের অর্থনীতির কথা ভেবে বিষয়টি নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করছে।

মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্প রাশিয়ার প্রভাবকে একেবারে তলানিতে নামিয়ে দিয়েছেন। আরব-রাশিয়া সম্মেলনে শক্তিশালী আরব দেশগুলোর কেউই রাশিয়া ভ্রমণে আগ্রহ দেখায়নি। বরং তারা মিশরের শারম আল-শেখে (১৩ই অক্টোবর) এক সম্মেলনে হাজির ছিলেন: যেখানে ট্রাম্প, মিশরের প্রেসিডেন্ট এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট গাজা চুক্তিতে উপস্থিত ছিলেন। অথচ রাশিয়ার কোনো প্রতিনিধিকে সেখানে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। এই ঘটনায় পুতিন বড়ই বিমর্ষ। আরব-রাশিয়া সম্মেলন ভেস্তে যাওয়ায় রাশিয়া পড়েছে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে, আর তারা দ্রুতই এটি আবার আয়োজনের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

ট্রাম্প এখন আফগানিস্তানের দিকেও নজর দিয়েছেন। বাগরাম এয়ার বেস (২০০১-২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সামরিক ঘাঁটি) তিনি ফিরে পেতে চান। কারণ এই এয়ার বেসটি চীনের পারমাণবিক স্থাপনার খুব কাছে বলে বিবেচিত। চীনকে ঠেকানোর জন্য ট্রাম্প উচ্চ হারে শুল্কসহ নানারকম পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কিন্তু রাশিয়াকে যেভাবে আটকাতে পেরেছেন, চীনকে সেভাবে বাগে আনতে পারছেন না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রেরও চীনের ওপর নির্ভরশীলতা রয়েছে। ট্রাম্প এখন আর কেবল হুমকি দেওয়া নেতা নন, তিনি কাজ করেও দেখাচ্ছেন। তবে নিজ দেশে তাঁর ইমেজ সংকট চরমে। আমাদের বেনগাজি মনে করেন : মেয়াদ শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শ্রীঘরে যেতে হতে পারে।



মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৩৪

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা তেমন কমেনি; যদি গাড়ী, বিমান ও ইকুপমেন্টে (সেলফোন, চি ফাবরিকেশন, ইত্যাদি ) তৈরির মতো দামী ম্যানফরকচারিং কাজগুলো ফিরিয়ে আনে, সে জেল থেকে বেঁচে যাবে।

২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমার ট্রাম্প কে এখন তেমন খারাপ লাগছে না । পুতিন কে সাইজ করতে ট্রাম্পকেই দরকার ।

২| ২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৪৩

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



ফিলিস্তিনে হত্যাকান্ড থামানোতে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বেড়েছে; একই সাথে ট্রাম্প তার এগ্রেসিভ আচরণ কন্ট্রোলে আনছে। সিএনএন'এর মেয়ে জার্নালিষ্টকে "ফেইক প্রেস" বলে নাজেহাল করতো, এখন সে ধৈর্য ধরে প্রশ্ন শুনে ও উত্তর দেয়।

২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৫০

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ভালো কাজ করছেন বুঝাই যাইতেসে।

৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:১০

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন:

ট্রাম্পকে নিয়ে দুনিয়ার সবকিছু ব্যাখ্যা করলেন কিন্তু ইউনুসের সাথে সম্পর্ক আর বাংলাদেশ ভবিষ্যতে নিয়ে হোয়াইট হাউস ভাবনা নিয়ে কিছু বললেন না?

২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:১৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বাংলাদেশ-আমেরিকা নিয়ে লিখার কিছু নেই । আপাতত এনসিপির দিকে নজর রাখুন ।

৪| ২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:৩৯

জ্যাক স্মিথ বলেছেন:

৫| ২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ ভোর ৪:২২

শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনার লেখাটার চার ভাগের তিন ভাগ পর্যন্ত পড়তে পারলাম। এতই আজগুবি সব কথাবার্তা লিখেছেন যে শেষ পর্যন্ত পড়তেই পাড়লাম না!

ট্রাম্প একজন প্রবল ধনতান্ত্রিক, আধিপত্যবাদী ও উপনিবেশিক আমেরিকার উগ্রধনবাদী-উপনিবেশিক শয়তানিগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের দ্বারা সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রিত এক মাথামোটা হোয়াইট সুপ্রিমিস্ট।

জঙ্গল থেকে উঠে আসা বর্বর পাকিদের পক্ষে তাকে নোবেল পুরস্কারে মনোনায়ন দেওয়ার মত তেল মারা প্রশংসাবাক্য বলা সম্ভব। পৃথিবীর কোনো বিবেকবান সুস্থ মানুষের পক্ষে এই তেলাপোকা সদৃশ প্রেসিডেন্টের গুণগান অসম্ভব। ট্রাম্প মানবসভ্যতার জন্য এক লজ্জা, এক বিষফোড়া, পাশ্চাত্তের সকল নিকৃষ্ট ধারনার সমন্বয়ে তৈরি একটা মানব-বর্জ্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.