নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে শেখ হাসিনা ইমরান খানের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন

২৩ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:০৪


আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কৌশল, স্বার্থ ও নৈতিকতার দ্বন্দ্ব যখন চরম আকার ধারণ করে, তখন ছোট দেশের নেতাদের প্রতিটি পদক্ষেপই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। ২০১৮ সালে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের ঠিক আগে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যে দুটি বিপরীতমুখী কূটনৈতিক চাল দিয়েছিলেন, তা প্রমাণ করে বিশ্ব মঞ্চে শেখ হাসিনা ইমরান খানের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে ছিলেন। এই দুই নেতার ভিন্ন পরিণতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একজনের বাস্তববাদী সুবিধাবাদী কৌশল অন্যজনের আদর্শবাদী স্বাধীনতার চেষ্টা কে ছাপিয়ে গিয়েছিল।

খাশোগি হত্যাকাণ্ডটি ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার সামনে এক চরম পরীক্ষা। সিআইএ-এর মূল্যায়ন যখন স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে এমবিএস নিজেই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা, তখন পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, মানবাধিকারের চেয়ে strategic partnership এবং বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তিকে বেশি গুরুত্ব দেন। ট্রাম্পের অবস্থান কার্যত আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন সৌদি আরবের জন্য ঢাল তৈরি করেছিল। পশ্চিমা বিশ্বের বড় বড় ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা যখন রিয়াদের 'Davos in the Desert' বা Future Investment Initiative সম্মেলন বর্জন করে সৌদি আরবকে একঘরে করার চেষ্টা চালাচ্ছিল, ঠিক সেই সংবেদনশীল মুহূর্তে শেখ হাসিনা এক চতুর কূটনৈতিক চাল দেন। খাশোগি হত্যার মাত্র দুই সপ্তাহ পর, ২০১৮ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি, তিনি রিয়াদে পৌঁছে এমবিএস-এর সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও তথ্য-প্রযুক্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

সফরের সময়জ্ঞান ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং সুচিন্তিত। এটি কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার সফর ছিল না, বরং ছিল একটি strategic signaling যা পশ্চিমা নৈতিক ক্রোধের মুখে সৌদি আরবের পাশে দাঁড়িয়ে ওয়াশিংটনকে জানায় যে, বাংলাদেশ আমেরিকার মিত্রশক্তির সঙ্গে আছে। শেখ হাসিনার এই সফরটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছিল কারণ এর মাত্র দুই মাস পরে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছিল, যা পরবর্তীতে রাতের কারচুপির ভোটের জন্য সমালোচিত হয়।

শেখ হাসিনার মূল লক্ষ্য ছিল দেশের ভেতরে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের আগেই আমেরিকা-সৌদি অক্ষশক্তির অলিখিত সমর্থন অর্জন করে নিজের শাসনের বৈধতাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সুদৃঢ় করা। এই সফরে যে প্রতিরক্ষা চুক্তি বা তথ্য-প্রযুক্তি চুক্তিগুলি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেগুলোর বাস্তব গুরুত্বের চেয়ে কূটনৈতিক তাৎপর্য বেশি ছিল, যেন ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যেকোনো নৈতিক প্রশ্নকে উপেক্ষা করা যায়। একজন নেতা হিসেবে তিনি যেহেতু নিজেও অভ্যন্তরীণভাবে গুম, খুন ও বিরোধি দলকে কারাবাসে পাঠানোর মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে পিছপা হননি, তাই একজন অভিযুক্ত খুনির (এমবিএস) সাথে দেখা করতে তাঁর বিবেকে কোনো নৈতিক বাধা আসেনি। তাঁর কাছে পশ্চিমা নৈতিকতার চেয়ে নিজস্ব ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থই ছিল মুখ্য।

অন্যদিকে, এই ঘটনার প্রায় তিন বছর পর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এক সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে হেঁটেছিলেন, যার ফলস্বরূপ তাকে ক্ষমতার মূল্য দিতে হয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যেদিন রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ শুরু করে, ঠিক সেদিনই তিনি মস্কোতে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে যান। এটি ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দুই দশকের মধ্যে প্রথম রাশিয়া সফর। ইমরান খানের এই পদক্ষেপ ছিল তার independent পররাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠার চরম চেষ্টা, যার মাধ্যমে তিনি পশ্চিমাদের পাশাপাশি চীন-রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সময়জ্ঞান তাকে সরাসরি আমেরিকার বিরাগভাজন করে তোলে। আমেরিকান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তার পাকিস্তানি প্রতিপক্ষকে রাশিয়া সফর বাতিল করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু ইমরান খান তা উপেক্ষা করে মস্কো সফর করেন।

এরপর যা ঘটল, তা ছিল স্পষ্ট কূটনৈতিক প্রতিশোধ। তার রাশিয়া সফরের মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে The Intercept নামক তদন্তকারী সংবাদমাধ্যম একটি গোপন কূটনৈতিক নথি প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায় আমেরিকান কর্মকর্তা পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতকে বলেন, "I think if a no-confidence vote against the prime minister succeeds, all will be forgiven in Washington." এক মাস পরে, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ইমরান খান অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি পতনকে আমেরিকার ষড়যন্ত্র হিসেবে দাবি করেন, যেখানে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও বিরোধী দল অংশ নেয়। এই ঘটনা প্রমাণ করে, ইমরান খানের আদর্শবাদী বা স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির চেষ্টা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, কারণ তিনি তৎকালীন বৈশ্বিক ক্ষমতার প্রধান অক্ষশক্তির সরাসরি বিরাগভাজন হয়েছিলেন।

এই দুই নেতার পরিণতি কেন ভিন্ন হলো? এর মূল কারণ নিহিত ছিল তারা কোন axis বা জোটের সঙ্গে নিজেদের সংযুক্ত করেছিলেন তার ওপর। শেখ হাসিনা বেছে নিয়েছিলেন আমেরিকা-সৌদি অক্ষের সঙ্গে থাকার পথ, যা সেসময় বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্যে শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী। তিনি সেই right side বেছে নিয়েছিলেন, যা তার বিতর্কিত শাসনের আন্তর্জাতিক বৈধতা এনে দিয়েছিল। ইমরান খান চীন-রাশিয়া অক্ষের দিকে হেলে পড়েছিলেন, যা তাকে আমেরিকার wrong side-এ ঠেলে দেয় এবং এই চাপ থেকে দেশের প্রভাবশালী সামরিক establishment তাকে রক্ষা করেনি।

এই দুই নেতার সফর কূটনীতি থেকে স্পষ্ট হয়, তারা দুজনেই মূলত নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার বা বৈধতা বাড়ানোর স্বার্থে কূটনৈতিক চালগুলো দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা দীর্ঘমেয়াদে টিকেছিলেন কারণ তিনি সেই right side বেছে নিয়েছিলেন: আমেরিকা-ভারত-সৌদি অক্ষের সঙ্গে ছিলেন, যা বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্যে শক্তিশালী। তিনি ছিলেন একজন সুবিধাবাদী কৌশলবিদ। অন্যদিকে, ইমরান খান বেছে নিয়েছিলেন wrong side, যা বাস্তবে independent হওয়ার এক অসম্ভব চেষ্টা ছিল এবং তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে শেখ হাসিনা জোটের ভারসাম্যতা ও ক্ষমতার রাজনীতিকে কাজে লাগিয়ে ইমরান খানের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে ছিলেন।


মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৪৯

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: সঠিক বিশ্লেষণ ।

২৩ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৫৬

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:০৯

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:




এটা যদি আপনার ভাবনা হয়, বলতে হয়, আপনার মাথায় অেক গার্বেজ আছে। সৌদীদের কেহই শেখ হাসিনাকে পছন্দ করতো না; মাঝে মাঝে ভয় দেখাতো যে, বাংগালী শ্রমিক নেবে না/ফেরত পাঠাবে। ইডিয়ট প্রিন্স যখন বিপদে, তার সাথে আছে বলে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করেছিলো।

সৌদীর সাথে কিসর আবার প্রতিরক্ষা চুক্তি? কিসব কথা বলেন না;হলে তরকারীর মতো?

২৪ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:৪১

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনি ভালো আছেন? আমি ভেবেছি আপনার উপর রাগ করে কেউ সামু হ্যাকড করে ফেলেছে। :)

এসব চুক্তি জাস্ট আইওয়াশ। কিন্তু শেখ হাসিনার একটা চেষ্টা ছিলো। টাইমলাইন অনেক কিছু সন্দেহ করতে বাধ্য করে।


নাহল তরকারির মতো চিন্তা- ভাবনা হলে ভালোই হতো মনে হয়। তিনি যেমন এক্স বিবাহিত হলেও বুঝেন না কিভাবে যৌন ক্রিয়া সম্পাদিত হয়। এমন ভালো মানুষই আমাদের দরকার।

৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:১২

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



সৌদীরা পাকীদের প্রভু ও বিপদের বন্ধু; বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে পাকীরা ও জামাত "ভারতের হস্তক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরেছিলো আরবদের কাছে"; ফলে, শেক ও শেখ হাসিনাকে আরবেরা পছন্দ করতো না, তারা বেগম জিয়াকে পছন্দ করতো। শেখ হাসিনা চেষ্টা করেছিল সুদীর সুনজর পেতে।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৮:১২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সব কিছুই ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য। সফল হয়েছিলেন বলা চলে সেই বার।

৪| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:২৯

ক্লোন রাফা বলেছেন: এটা কি বিশ্লেষণ করলেন‼️ আওয়ামিলীগ, আমেরিকার অক্ষশক্তির সাথে সম্পৃক্ত থাকলে। এখনো হাসিনাই থাকতেন বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনায়। সরকার হিসেবে শেখ হাসিনা ব‍্যালেন্স করে বাংলাদেশ’কে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন।ভারতের সাথে সুসম্পর্ক রেখে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা ছিলো প্রধান লক্ষ্য। যা আওয়ামিলীগ বিরোধী শক্তি,ভারতের অনুগত হিসেবে প্রমাণ করেছে।পক্ষান্তরে আজ প্রমাণিত সত্য হলো ।শেখ হাসিনা বাংলাদেশের পক্ষে সকল ক্ষেত্রে সফল ছিলেন।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৮:১৪

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: একজন খুনির কাছে আরেকজন খুনি গিয়েছেন। এত উত্তেজিত হওয়ার কি আছে?

৫| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৩:০০

শ্রাবণধারা বলেছেন: "ক্লোন রাফা বলেছেন: পক্ষান্তরে আজ প্রমাণিত সত্য হলো ।শেখ হাসিনা বাংলাদেশের পক্ষে সকল ক্ষেত্রে সফল ছিলেন।" হা হা হা!!! :) :)

আপনি আসব কুতুব নন, ব্লগে আসল ও আদর্শ কুতুবদের চিনতে শিখুন!

২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৮:১৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

৬| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:১৭

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপা আর আসবে না , লিগ আর হাসবে না ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.