| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সৈয়দ কুতুব
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
আবুল কালাম আজাদ ঢাকা শহরে এসেছিলেন তাঁর পরিবারের জন্য সচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে। বাড়ি শরীয়তপুরে হলেও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জে থাকতেন এবং ঢাকার মতিঝিলের একটি ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত হয়ে কঠোর পরিশ্রম করতেন। সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসে তিনি প্রতিদিনের মতো মতিঝিলে কাজে যোগ দেন। দুপুরবেলা ফার্মগেটের এক টংদোকানে বসে চা খেতে খেতে হয়তো পকেটে থাকা পাসপোর্টটির কথা ভাবছিলেন, যা একদিন প্রবাসে থাকার পর এখন তাঁকে নতুন কোনো যাত্রার ইঙ্গিত দিচ্ছিল কিন্তু সেই নতুন সম্ভাবনা বা যাত্রার কোনো খবর আমাদের আর জানা হলো না। মুহূর্তের মধ্যেই মেট্রোরেলের পিলারের একটি ভারী যন্ত্রাংশ, একটি বিয়ারিং প্যাড, ছিটকে এসে তাঁর মাথায় পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই নিথর দেহে টাইলসের ফুটপাতে লাল রক্তের সঙ্গে মিশে গেল তাঁর সব স্বপ্ন। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে, অপ্রত্যাশিতভাবে, আচমকা এক আঘাতে থেমে গেল তাঁর জীবন। তাঁর দুই শিশু আজ বাবা হারা হলো, যেমন তিনি শৈশবে মা-বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়েছিলেন।
মেট্রোরেল, যা যানজটের এই দম বন্ধ শহরে এক টুকরো স্বস্তি ও আশীর্বাদ হিসেবে এসেছিল, আজ সেই আবেগে রক্তের দাগ লেগে গেল। গরিব-ছিন্নমূল মানুষ বাদে এই শহরের প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষই মেট্রোরেলের যাত্রী, তাই আবুল কালামের এই মৃত্যু আমাদের আরও বেশি স্পর্শ করে, ক্ষুব্ধ করে তোলে। তাঁর এই আকস্মিক মৃত্যু শুধুই কি এক নিছক দুর্ঘটনা নাকি কাঠামোগত হত্যা? সরকার তাঁর পরিবারকে তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দিলেও কোটি টাকাও একটি প্রাণের মূল্য হতে পারে না। আসল প্রশ্ন হলো, এই মৃত্যুর জন্য দায়ী যারা, তাদের কোনো শাস্তি হবে কি?
আবুল কালামের প্রাণ কেড়ে নেওয়া সেই বিয়ারিং প্যাড হলো মেট্রোরেলের উড়ালপথ ও পিলারের মাঝখানে ব্যবহৃত এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ঝাঁকুনি প্রতিরোধের পাশাপাশি স্থাপনার সুরক্ষায় কাজ করে। কিন্তু এই বিয়ারিং প্যাডের মান নিয়ে বহু আগে থেকেই প্রশ্ন ছিল। ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদনে জানা গিয়েছিল যে উত্তরা-আগারগাঁও অংশের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই কর্তৃক সরবরাহ করা কিছু বিয়ারিং প্যাডের মান বুয়েটের ল্যাব পরীক্ষায় খারাপ পাওয়া গিয়েছিল। বসানো হয়ে যাওয়া নিম্নমানের প্যাডগুলো খুলে ফেলা হয়েছিল কি না, তা আজও পরিষ্কার নয় ।
গত বছরও ফার্মগেটে একই ধরনের ঘটনায় বিয়ারিং প্যাড ছিটকে পড়েছিল, যদিও সেবার কেউ হতাহত হননি, কিন্তু এই সতর্কতা সংকেতও কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও, এ দেশে তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না কিংবা সুপারিশ আমলে নেওয়া হয় না এটাই যেন চিরায়ত নিয়ম। বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হকের মতে, যদি নিরাপদ চলাচল ও স্থায়িত্বের জন্য বসানো জিনিস নিচে পড়ে মানুষ মারে, তবে এর নকশাগত ত্রুটি থাকতে পারে। মেট্রোরেলের মতো মেগাপ্রকল্পে উচ্চ ব্যয়েও যদি নির্মাণসামগ্রীর মান এবং সুরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এমন গাফিলতি থাকে, তবে তা কেবলই দুর্ঘটনা নয়, বরং মানহীন নির্মাণ ও দুর্বল নজরদারির ফল, যা মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে। এই ঘটনা প্রশ্ন তোলে, আর কত নিরীহ পথচারীর প্রাণ গেলে আমাদের হুঁশ ফিরবে?
তথ্যসূত্র / References:
১. মেট্রো-মৃত্যুর বিয়ারিং প্যাড কিংবা থান ইট - দৈনিক সমকাল।
২. শৈশবে বাবা-মা হারানো আবুল কালামের এমন মৃত্যু মানতে পারছেন না স্বজনেরা- দৈনিক প্রথম আলো।
৩. মানহীন বিয়ারিং প্যাড সরবরাহ ইতাল-থাইয়ের- বণিক বার্তা।

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৭
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আসলেই।
২|
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৮:৫০
কামাল১৮ বলেছেন: তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি করছি।ক্ষতি পুরন দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৭
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: একমত।
৩|
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:১১
মাথা পাগলা বলেছেন: খুবই দুঃখজনক। আশা করি ভবিষ্যতে এমন দূর্ঘটনা যাতে না হয়, কর্তৃপক্ষ সেদিকে খেয়াল রাখবেন। ক্ষতিপূরন মাত্র ৫ লক্ষ টাকা? যেখানে সুদ কারবারি নিজের পারসোনাল কাজে লন্ডনে ৪ দিনে ৩ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা সরকারি খরচ করেছিলেন।
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৭
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ঘুরে ফিরে কেস্টা বেটারই দোষ !
৪|
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:১২
আমি নই বলেছেন: মেট্রোরেল কতৃপক্ষকে অনেক বড় একটা জরিমানা করে জরিমানার টাকা ক্ষতিপুরন হিসেবে নিহতের পরিবারকে দিলে একটু শান্তি পাইতাম। নিহতের দুইটা ছোট ছোট বাচ্চা আছে। বাচ্চা দুইটার নামে অন্তত ৫০ লাখ করে ১ কোটি টাকা এফডিআর করে দেয়া উচিৎ।
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৮
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: একমত।
৫|
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:২০
রাজীব নুর বলেছেন: খুবই হৃদয়বিদারক ঘটনা।
এই ঘটনা আমার সাথেও ঘটতে পারতো। আপনার সাথেও ঘটতে পারতো।
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:১২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ঠিক বলেছেন ।
৬|
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৪৮
মোগল সম্রাট বলেছেন:
মেট্রোরেলে আগুন না দিলে বেপ্লবই হইতো না। গতবার এই বয়ানও দেয়া হইছে জাতিরে উদ্দেশ্য কইরা। এখন বিয়ারিংয়ের দোষ দিয়া এসব মৃত্যকে অপমৃত্য কইয়া জায়েজ করা হবে। আর আমরা মাত্র ৫ লাখ ট্যাকা দিলো ক্যান তাই নিয়া হা হুতাশ করুম ।
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:২৫
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: দোষ সবারই রয়েছে । বিয়ারিংয়ের সঠিক তদারকি করতে ইনটেরিম পারে নাই এটা তাদের ফেইল ঠিক আছে কিনতু নিচু মানের বিয়ারিং pad বিগত সরকারের আমলে কেনা হয়েছিলো।
৭|
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৫
মেঠোপথ২৩ বলেছেন: এই বিয়ারিং প্যাড কে 'মানসম্মত নয়' বলে ২০২০ সালেই জানিয়েছিলো বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালট্যান্ট (বিআরটিসি)। ২০২০ সালের ২২শে জানুয়ারি বণিক বার্তায় এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়৷
"বুয়েট যেসব বিয়ারিং প্যাড মানহীন পেয়েছে, অন্য জায়গার পরীক্ষায় সেগুলো ভালো মানের পাওয়া গিয়েছিল" এই যুক্তি দেখিয়ে বুয়েটের মতকে তখন উপেক্ষা করা হয়েছিলো।
এর পরিণতি হিসেবে গত বছরও বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়তে দেখা গিয়েছিলো। গত বছর ৪৩০ নম্বর পিলার থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। এ কারণে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা বন্ধ ছিলো ট্রেন চলাচল। কিন্তু এবার সরাসরি পথচারীর মাথায় বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে তার প্রাণ-ই চলে গেলো। অথচ, আগেই জানানো হয়েছিলো এই ঝুঁকির কথা।
মানহীন বিয়ারিং প্যাড ব্যবহারের পাশাপাশি নকশাগত ত্রুটির কথাও বলছে বুয়েট। কিন্তু আমলে নেয় নি ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। যার বলি হলো একজন সাধারণ পথচারী। সুত্র ঃ ফেসবুক
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:০১
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনি যা বলছেন সেটা ঠিক আছে। কিনতু গত বছর যখন বিয়ারিং pad পড়ে ছিলো ৪৩০ নং পিলার থেকে তখন আশেপাশের সকল পিলারের pad চেক করা দরকার ছিলো। এবার ৪৩৩ নং পিলারের pad পড়েছে ।
৮|
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:০৮
মেঠোপথ২৩ বলেছেন: ঠিক বলেছেন। লীগের ঘারে দোষ চাপিয়ে দ্বায়িত্বে অবহেলার সুযোগ আর নাই। দেড় বছর পার হয়ে গেল। আর কত ? বিদেশে এই ধরনের একটা দূ্র্ঘটনা ঘটার সাথে সাথে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির চাকুরি চলে যায় । জেল জরিমানাও হয়।
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বাংলাদেশে কারো চাকুরি যাবে না । কেবল শিশুটি বাবা হারা হয়েছে , বাকি সবার কিছু হারায় নি।
৯|
২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন, সেটা জানতে।
২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:১৯
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পাক সার জমিন বাদ ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:৪৭
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
ভয়ানক