![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুবই ভাল, সেইসাথে চরম ভদ্র এবং গোছালো একটা ছেলে।\nকি বিশ্বাস হইল বিশ্বাস না হইলে ঠিকই ধরছেন, আমি পুরাই\nউল্টা!!!\nনিজের সম্পর্কে কিছু কথা যদি বলতেই হয় তাহলে প্রথমেই\nযে কথাটি বলব তা হলো- আমি নিতান্তই মধ্যবিত্ত পরিবারের\nএকটি ছেলে। ছোটবেলা থেকেই অনেক আদর-আল্হাদে বড়\nহয়েছি এবং এখনও হচ্ছি।বাবা-মা আমার কাছ থেকে অনেক\nকিছু আশা করে।যদিও তাদের আশা আমি পূরন করতে পারব\nকিনা জানিনা।
সাজ্জাদ, জন্ম ৫ই ডিসেম্বর ১৯৯৪। সেই থেকে এ যাবৎ মোট ৪১ টা ঈদের চাইতে এবারের ঈদটা ছিল সবচেয়ে স্পেশাল। লেখাগুলো এখানে লেখার দুটো উদ্দেশ্য আছে। প্রথমত লেখাটা সংরক্ষণ আর দ্বিতীয়ত সবার সাথে ভাগ করে নেওয়া। ঈদের রেশ নাকি সাতদিন থাকে, ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। এবার প্রথম প্রত্যক্ষ করলাম। আমি ও আমার পরিবারের সবাই একসাথে শেষ কবে বাইরে কোথাও গিয়েছিলাম তা মনে করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। খুব সম্ভবত ২০১১ তে যখন আসার দাদার দেহাবসান হয় তখন আমরা সবাই একসাথে বের হয়েছিলাম। কিন্তু এবারের ঈদে আমি ও আমার পরিবারের সবাই একসাথে ঘুরতে বের হয়েছিলাম। এই ঈদের বিশেষত্ব সেজন্যই অনেক বেশি। আরও একটা কারণ হচ্ছে প্রায় তিন বছর ধরে আমি, মেহেদী, মাহাবুব ও সাইফুল আমরা এই চার বন্ধু মিলে একসাথে কোথাও বেড়াতে চাইছিলাম কিন্তু হয়ে উঠছিল না। কিন্তু এই ঈদে সেটাও পূর্ণ হল। যে ভ্রমণকাহিনীর কথা বলতে চাইছি সেটার সূত্রপাত হয়েছিল গত ২২তারিখ রাত থেকে। মাহাবুবের বড় ভাই খাইরুলের বিয়ের হলুদ অনুষ্ঠান ছিল সে রাতে। তাই কাহিনীর শুরুটা সেখান থেকেই করছি।
(এক)
সারাদিন আমার পরিবারের সবাই মিলে ঘুরে বেরিয়েছি পতেঙ্গা সী-বীচ, নেভাল ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এলাকায়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘুরাঘুরি শেষে রাতে ফিরতেই মাহাবুবের কল। সে বলল তাড়াতাড়ি তাদের বাসায় যেতে, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে তাই। আমি রেডী হয়ে সেখানে পৌঁছলাম। অন্যান্য বন্ধুরা আমার আগেই চলে এসেছিল। আমি যাওয়ার পর অনুষ্ঠানে নতুন প্রাণ যোগ করলাম। ফটো সেশন চলছিল। সবাই যে যেভাবে পারছে ছবি তুলছে। এমন সময় হঠাৎ একটা কান্ড ঘটলো। খাইরুল ভাই (বর), উনার আম্মু আর আন্টি একসাথে ফটোশ্যুট করার জন্য দাড়িয়েছে। সাথে সাথে তারা যে খাট টায় দাড়িয়েছে সেটা ভেঙ্গে পড়লো। রুমে থাকা অন্যান্যরা ব্যাপারটায় কিছুটা মজা পেলেও মাহাবুবের আম্মুর চোখের দিকে তাকিয়ে আমার খুব খারাপ লেগেছিল। চিন্তার রেখা উনার কপালের ভাঁজে স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম। তবে এটাকে স্থায়ী হতে দেইনি আমরা। আমি, মাহাবুব, মেহেদি, সাইফুল আর ইয়াছিন খুব অল্প সময়েই নতুন একটা ব্যবস্থা করে ফেলি। খাট টা সরিয়ে সেখানে একটা সোফা বসিয়ে দেই। তারপর সব গোছগাছ করে আবার নতুন করে অনুষ্ঠান শুরু করি। প্রায় রাত ১ টা নাগাদ সেখানে থেকে সবাই যে যার বাসায় ফিরে যাই, কারণ সকালে বরযাত্রীসহ গাড়ি ছাড়বে খুব ভোরে। বাসায় ফিরে সকালের প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম।
(দুই)
সকালে ৬.৩০ টায় সবার পৌঁছানোর কথা ছিল। কথা রাখলো সবাই। কিন্তু সময়মত গাড়ীগুলো এসে পৌঁছেনি। গাড়ী আসলো প্রায় ৭.৩০ টায়। তারপর সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে আমরা সবাই গাড়ীতে ওঠে পড়লাম। গাড়ী ছাড়লো প্রায় ৮.০০টার দিকে। আমি, মাহাবুব, মেহেদি, সাইফুল আর ইয়াছিন একই গাড়ীতে ছিলাম। কিছুদূর যেতেই গাড়ি একটা ফিলিং স্টেশনে থামে। সেখানে নেমে মিনিট পাঁচেক ঘুরলাম চারপাশটা। ছবি তুললাম, একটা দোকান ছিল তবে বন্ধ। এরপর আবারো যাত্রা শুরু। মাঝপথে কয়েক জায়গায় গাড়ি যাত্রি বিরতি দেয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে গরম বাড়ছিল। ফেনী পৌঁছে বৃষ্টির কবলে পড়লাম। বৃষ্টির দরকারও ছিল। এরপর কুমিল্লাতে বিখ্যাত মাতৃভান্ডার মিষ্টির দোকানের সামনে গাড়ি থামে। সেখানে নেমে ফ্রেশ হয়ে নিলাম সবাই। এরপর ক্যান্টনমেন্ট এরিয়া থেকে দুজন আত্নীয় আমাদের সাথে গাড়িতে যোগ দেয়। বরযাত্রী সহ গাড়ি বহর প্রায় পৌঁছে যাওয়ার পূর্বে একটা গ্রামে থামে। সেখানে বরের গাড়িতে ফুল লাগানোর কাজটা সেরে নেই আমরা। সেখানে আমি আর ইয়াছিন একটা দোকানে চা খেতে বসলাম। দোকানে গিয়ে একটা জিনিস চোখে পড়লো। সেখানে বেশ কিছু মানুষ মিলে রেডিওতে বাংলাদেশ- দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট ম্যাচের লাইভ কমেন্ট্রি শুনছিল। চা খেতে তাদের সাথে খেলা নিয়ে অনেক কথা বললাম। এরপর আবার যাত্রা শুরু। বিয়ে বাড়ির গ্রামে ঢুকে পড়তেই তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়। সামনের রাস্তাটুকু গাড়ি যাবার অনুপযোগী হয়ে যায়। শেষে বাকি রাস্তাটা পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিলাম। বিয়ে বাড়ির গেইট ধরার মধ্য দিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর বরেরর সাথে কনেপক্ষের আর কনের সাথে বরপক্ষের সবার হাসিঠাট্টা, ছবি তোলা পর্ব চলতে থাকে। এরপর আকদ সম্পন্ন হয়, খাওয়া পর্ব শেষ করে সবাই নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ইয়াছিন আর আমি গ্রাম ঘুরতে বের হই। কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি শেষে ফিরতি যাত্রার ডাক পড়ে। বধু বিদায়ের সময়কার চিরাচরিত কান্নাকাটি পর্ব সেরে সবাই মিলে গাড়িবহরের কাছে পৌঁছাই। এরপর যাত্রা শুরু।
(তিন)
ফেরার পথে গাড়িতে অসস্থি এড়াতে বিয়ে বাড়ির রিচ ফুড থেকে দূরে ছিলাম। কিন্তু তবুও কিছুদূর যেতেই শরীরে অসস্থি অনুভুত হতে থাকে। এখানে আসার আগেই ইচ্ছে ছিল একজনকে দেয়া কথা রাখার চেষ্টা করবো। তখন ইচ্ছেটা প্রকট হয়ে যায়। গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। কথা ছিল মেহেদি আমার সাথে থেকে যাবে কিন্তু শেষমেষ ও যেতে রাজী হয়নি। সঙ্গ দিল সাইফুল। প্রথমে বারণ করলেও পরে মাহবুবও সমর্থন করে এবং থেকে যাওয়ার জন্য আনুষঙ্গিক দিকনির্দেশনা দেয়। সাইফুলকে নিয়ে রওনা হই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সীমা'র গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে শাসনগাছা, সেখান থেকে ব্রাক্ষণ পাড়া। পৌঁছে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে সীমা আর সীমার বড় কাকীমা এগিয়ে আসে। সীমা'দের বাড়িতে পৌঁছি প্রায় রাত ৮.০০টার দিকে। ফ্রেশ হয়ে আড্ডায় বসি। সীমার ছোট ভাইয়া বিশালের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী, সীমা, সাইফুল আর আমি আড্ডাতে মুখর থাকলাম অনেকক্ষণ। এরপর রাতের খাবার সেরে নেই একসাথে। সময় কাটানোর প্রয়াসে লুডুও খেললাম। তারপর সারাদিনের ক্লান্তিকে ছুটি দিতে বিছানায় গা এলিয়ে দেই সাইফুল আর আমি।
(চার)
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে একটু দেরীতে। ৮.০০ টার দিকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সারলাম আমরা। এরপর কিছুক্ষণ গ্রাম ঘুরে দেখার মনস্থির করলাম। বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো বৃষ্টি। পরে ছাতা মাথায় ঐ গ্রামে থাকা আরেক বন্ধু মুন্না'দের বাড়ি গেলাম। আড্ডা দিলাম ঘন্টা খানেক। মুন্না তাদের বাড়ি ঘুরিয়ে দেখালো আমাদের। এরপর আবার ফিরলাম সীমা'দের বাড়ি। সেখানে গিয়ে দুজন ক্ষণকালদর্শীর সাথে পরিচিত হলাম। নিঝুম আর একজনের নাম ভুলে গেছি। দুপুরের খাবার সেরে নেই প্রায় ১২ টার দিকেই। কারণ আমরা তখনি ফিরে আসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবার কথা। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। মুন্না সীমা'দের বাড়িতে আসে। তখন সাইফুল, সীমা, কথা (ভাবি), প্রিতি/ইতি, মুন্না আর আমি আড্ডা আর গানের আসরে মেতে ওঠি। কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমে আসে টেরও পাইনি। এরপর বিকেল ৪.৩০ টায় সেখান থেকে প্রস্থান করি। সীমা'র ভাইয়া, ভাবি, কাকী সকলে থেকে যাওয়ার জন্য অনেক অনুনয় করলো। কিন্তু আমি টের পাচ্ছিলাম অসুস্থতার আভাস। আর আমি নিজের বাড়ি থেকে এতো দূর বেড়াতে এসে অসুস্থ হয়ে এখানকার মানুষগুলোকে কষ্টে ফেলতে চাইনি। তাই সবার কাছে বিদায় নিয়ে চলে আসি। এরপরের অংশটুকু চিরাচরিত। ব্রাক্ষণ পাড়া থেকে শাসনগাছা, সেখান থেকে কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন এবং ট্রেন মিস, তারপর সেখান থেকে জাংগাইলা বাস স্ট্যান্ড এবং নো বাস, তারপর সেখান থেকে কুমিল্লা বিশ্বরোড এবং বাসের অপেক্ষা।
(পাঁচ)
রাত তখন ৮.৩০। প্রায় দেড় ঘন্টার অপেক্ষার পর বাস ছাঁড়লো। একসাথে দুটো সিট পাইনি অনেক চেষ্টা করেও। সাইফুল বাসের একদম সামনের সিটটায় আর আমি সবার পেছনের সিটে। সীমা'দের বাড়ি থেকে বেরোনোর পর থেকে বাস ছাঁড়ার পর্যন্ত সীমা, মুন্না, আমার আম্মু আর শাহিনূর কিছুক্ষণ পরপর কল/মেসেজ করেই যাচ্ছিল। তাদের দুঃশ্চিন্তা আমার খুব খারাপ লাগছিলো কিন্তু সে চিন্তার আড়ালে আমার প্রতি তাদের ভালবাসার কথা ভেবে ভালও লাগছিলো। বাসে ওঠার পর থেকে এ দুদিনের আতিথিয়তার জন্য মনে মনে সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছিলাম। বিশাল ভাইয়া আর কথা ভাবির যত্ন, সীমা আর মুন্নার বন্ধুত্বপূর্ণ সঙ্গ সবকিছুর জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ দেয়াটাই যথেষ্ট নয়। এছাড়া আমাদের ফেরার ব্যাপার নিয়ে উদ্নিগ্ন থাকা বন্ধু রবিউল, শান্ত আর ছানাউল্লাহকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। শেষের পথটুকুতে একটু পরপর আব্বু আর আম্মুকে আমাদের বাসের অবস্থান জানাতে হচ্ছিলো। প্রায় রাত ১২.৩০টার দিকে আমরা চট্টগ্রাম পৌঁছি। এরপর সেখান থেকে রিকশাযোগে টেক্সটাইলের পথে রওয়ানা হলাম।
(ছয়)
কুঞ্জছায়া পৌঁছি পায়ে হেঁটে। কারন টেক্সটাইল থেকে এতো রাতে গাড়ি পাচ্ছিলাম না। সেখানো পৌঁছেই বায়েজিদ থানার সামনের দিকটা থেকে দু তিনজন মানুষের চিৎকার শুনতে পাই। দৌড়ে সেখানে যাই, গিয়ে দেখি একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আগুনে পুড়ছে। সাইফুুল আর আমি সেখানে থাকা কয়েকজনের সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ি। একপর্যায়ে আমরা আগুনের খুব কাছে পৌঁছে যাই। আর সাথে সাথেই দোকানের ভিতরে থাকা রেফ্রিজারেটর ব্রাস্ট হয়। আমাদের ঠিক সামনে থাকা এক তরুণ ছিটকে গিয়ে পড়ে কয়েকহাত দূরে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অবাক হয়েছি যখন দেখি পুলিশের কয়েকজন সদস্য ঘটনার সময় সেখানে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। কিছুক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিসের একটা ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততোক্ষণে জায়গাটা লোক সমাগমে ভরে ওঠে। আমরা সে স্থান ত্যাগ করি। প্রায় রাত ২.০০ টার দিকে বাসায় পৌঁছি।
(সাত)
জ্বরটা ততোক্ষণে খুব বেড়ে গেছে। সাইফুল কেমন আছে কি জানি। বাসায় ঢুকার পর সারা শরীরে কাঁপুনি ধরে যায়। আগুনের লেলিহান শিখা চোখের সামনে ভেসে ভেসে ওঠছিল। খুব কান্না পাচ্ছিল। একটু পর আম্মু আমার রুমে এলো। আম্মুকে দেখেই কেন জানি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম। কান্না থামানোর শত চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছিলো। তখন থেকে সারারাত আম্মু আমার পাশেই বসে ছিলেন। দেখতে দেখতে ঈদের সপ্তম দিনটা অতিক্রান্ত হলো। আর এরই সাথে আমার ভ্রমণকাহিনীটার আনুষ্ঠানিক ইতি ঘটলো...।।।
©somewhere in net ltd.