![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুবই ভাল, সেইসাথে চরম ভদ্র এবং গোছালো একটা ছেলে।\nকি বিশ্বাস হইল বিশ্বাস না হইলে ঠিকই ধরছেন, আমি পুরাই\nউল্টা!!!\nনিজের সম্পর্কে কিছু কথা যদি বলতেই হয় তাহলে প্রথমেই\nযে কথাটি বলব তা হলো- আমি নিতান্তই মধ্যবিত্ত পরিবারের\nএকটি ছেলে। ছোটবেলা থেকেই অনেক আদর-আল্হাদে বড়\nহয়েছি এবং এখনও হচ্ছি।বাবা-মা আমার কাছ থেকে অনেক\nকিছু আশা করে।যদিও তাদের আশা আমি পূরন করতে পারব\nকিনা জানিনা।
সৌরভকে কখন যে এতোটা ভালবেসে ফেলেছে সেটা বুঝতেই পারেনি মণি। যে মণি কিনা অন্য সকলকে উপদেশ দিয়ে বেড়াতো ভালবাসা নামক আবেগকে প্রশ্রয় না দিতে। সেই আজ ভালবাসার মায়ায় আচ্ছন্ন। আসলে ভালবাসা ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত। সকল অসম্ভবকে সম্ভব মনে হয়, যখন ভালবাসার শক্তি কাউকে পেয়ে বসে। মণি আর সৌরভের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা কখনো ভালবাসার সম্পর্কে পরিণত হবে এটা ভুল করেও ভাবেনি মণি। অবশ্য সৌরভও বুঝতে পারেনি কখন যে মণিকে ভালবাসতে শুরু করে সে। সেদিন খুব করে কাঁদলো মণি। সৌরভ বাঁধা দেয়নি একটুও। বরং কান্নাকে প্রশ্রয় দিয়ে গেছে। কারণ সৌরভ বুঝতে পেরেছিল, অশ্রু হয়ে কষ্টগুলো ঝরে পড়ার মাহাত্ন্য। কেঁদেছিল সৌরভও। সম্পর্কের শুরুটাই কান্নার স্পর্শে সিক্ত। কান্না, ভয়, শঙ্কা রোজ তাড়া করে বেড়ায় ওদের। তবুও সব কিছুকে আড়াল করে ওরা স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে একসাথে পথ চলার, একসাথে বাঁচার। পৃথিবীতে ভালবাসার শক্তির প্রমাণ অসংখ্য। তবুও এ পৃথিবী ভালবাসার বিরোধীতা করে চলেছে। মুখে মুখে সবাই ভালবাসার পক্ষে থাকলেও বাস্তবে ভালবাসাকে চক্ষুশূল ভাবে কমবেশি সবাই। তবুও ভালবাসা আছে, থাকবে। কারণ ভালবাসা আছে বলেই পৃথিবী আছে। ভালবাসা যতদিন থাকবে, পৃথিবী ও ততোদিনই থাকবে। সৃষ্টির শুরুতে মানুষ ছিল, সমাজ নয়। সমাজ মানুষেরই সৃষ্ট, সমাজের রীতি গুলোও মানুষেরই তৈরিকৃত। মানুষের ভালোর জন্যই এতোসব আয়োজন। তারপরেও শুধুমাত্র সমাজের দোহাই দিয়ে ভালবাসার বিরোধীতা আর কতোকাল!! প্রতিদিন একটু একটু করে নিজেদের ভবিষ্যতকে সাজানোর স্বপ্ন দেখে সৌরভ আর মণি। স্বপ্ন যেখানে সেখানেই দুঃস্বপ্নেরও বাস। তার ই কারণে আগত ভবিষ্যত নিয়ে উৎকন্ঠা যেন ওদের পিছু ছাড়তে চায়না কিছুতেই।
প্রসঙ্গক্রমে মণি আর সৌরভের এক টুকরো কথোপকথন,
মণিঃ একটা কথা বলবো?
সৌরভঃ এক হাজারটা বলো
মণিঃ সিরিয়াস কথা ছিল..
সৌরভঃ ওকে স্যরি স্যরি, হুম বলো। সিরিয়াসলি শুনছি।
মণিঃ আচ্ছা সৌরভ, ধরো...
সৌরভঃ কি ধরতাম?
মণিঃ আরে শুনো না আগে...
সৌরভঃ বলো.... শুনছি।
মণিঃ আচ্ছা যদি আম্মু আমাদের ব্যাপারে জেনে যায়..?
সৌরভঃ হুম.. তো?
মণিঃ আম্মুতো আব্বুকে বলে দিবে
সৌরভঃ এরপর আব্বু কাকে বলবে যে?
মণিঃ উফ..!! তুমি কবে সিরিয়াস হবা?
সৌরভঃ আচ্ছা বলো, কি করতে হবে?
মণিঃ কি করতে হবে আমি বলবো নাকি তুমি? আমার মাথা একটুও কাজ করেনা এসব ভাবলে। খুব ভয় হয়। কীভাবে সবকিছু সামলে নিবা তুমি?
সৌরভঃ আরে পাগলী.. এতো ভাবিও না তো, সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু তুমি পাশে থাকিও। তোমার ভালবাসা আমার সাথে থাকলে সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবো আমরা।
মণিঃ আমিতো সবসময় তোমার পাশেই আছি, থাকবো ও। কিন্তু আমার খুব ভয় হয়। পারবে তো তুমি? এই তোমাকে পারতেই হবে কিন্তু
সৌরভঃ ইনশাআল্লাহ... আমরা পারবো।
মণিকে আশ্বস্ত করে কথোপকথনের সাময়িক ইতি টানে সৌরভ।
মণিকে সান্তনা দেওয়ার জন্য খুব সহজ করে কথাগুলো বলে সৌরভ। কিন্তু সৌরভ জানে সামনের পথটা এতোটা সহজ নয়, জানে মণি ও। তবে কেউ কাউকে বুঝতে দেয়না এ ব্যাপারটা। সৌরভ হলো মণির সাহস, আর মণি হলো সৌরভের শক্তি। মণির প্রশ্নগুলো ভাবিয়ে তোলে সৌরভকে। সত্যিই তো!! কি করবে ওরা!? ভালবাসার প্রতি এতো বিদ্বেষ কেন!! ভালবাসার কথা পরিবারের কেউ জানলেই প্রথম প্রতিক্রিয়া " আবেগের বশে এমন করছো"। অদ্ভুত লাগে কথাটা সৌরভের কাছে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই ভোটাধিকার প্রাপ্তির ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। এখন প্রশ্ন হলো ১৮ বছর বয়সে যদি আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার কর্ণধার বাছাই করতে পারি; তাহলে কেন নিজের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকারটুকু পাবো না!! কেন আবেগের তাড়না বলে আমাদের অনুভূতি গুলোকে শিকল পড়িয়ে রাখা হবে!?
এসব ভাবতে ভাবতে সৌরভের বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। সৌরভ ভাবে, বাবা-মারা কি চায়! নিশ্চয়ই সন্তানের সুখ। সন্তানের ভাল থাকা আর সুন্দর একটা জীবন। তাহলে ভালবাসাকে অবহেলা কেন! ভালবাসা ছাড়া সুখের কথা কি কল্পনাও করা যায়!? মানছি জীবনে বাস্তবতার মূল্য বেশি। মানছি ভালবাসার স্বপ্নগুলোকে অলীক মনে হয়। কিন্তু সে স্বপ্নগুলোকে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে ক্ষতি কি!?
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে সৌরভ। নিজেই উত্তর দেয়। কিন্তু এই প্রশ্নোত্তর আর কেউ শুনবে! শুনলেও বুঝবে? কিংবা বুঝতে চাইবে??
চোখদুটো ছলছল করছে সৌরভের। কাঁদতে ইচ্ছে করছে খুব। কিন্তু কাঁদতে পারছে না। কারণ, এ কান্নার অর্থ কেউ বুঝবে না। সবাই শুধু বাস্তবতার বুলি নিয়ে ব্যস্ত। যািন্ত্রকতা সবার অনুভূতিকে আঁতুড় করে দিয়েছে।
নাহ, এখন কাঁদবে না সৌরভ। সে কাঁদলে মণিকে সাহস জোগাবে কে!! নিজেকে সামলে নেয় সৌরভ। মণিকে বলবে বলে আরও কিছু কথা গুছিয়ে নেয় সে। মনে মনে কথাগুলো বলার অনুশীলন করতে থাকে।
"মণি, বাবা-মারা সবসময় আমাদের ভালোই চায়। আমরা যেন সুখে থাকি সেজন্য তারা সারাজীবন অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা সহ্য করেন। পৃথিবীতে তারাই আমাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শুভাকাঙ্খী। আমরা দুজন দুজনকে ভালবাসি। যে কোনো পরিস্থিতিতে আমরা যদি আমাদের ভালবাসার ওপর আস্থা রাখি তাহলে, পৃথিবী আমাদের ভালবাসার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য। বাবা - মা জেনে গেলেই খুব খারাপ কিছু হয়ে যাবে এমন ভেবে ভেবে মরার কোনো মানেই হয়না। তাদেরকে বুঝালে তারা নিশ্চয়ই বুঝবে। তাদের বোঝানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। এখন আমরা এমন কোনো যুগে বাস করছি না, যেখানে শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসার অপরাধে বাবা- মা আমাদের মেরেই ফেলবে। জীবনটা আমাদের, একে সুন্দরভাবে সাজানোর দায়টাও আমাদের। বাবা - মা আমাদের পাশে থেকে আমাদের সহযোগীতা করবেন। আমাদের স্বপ্নের পথ রুদ্ধ করে দিবে না তারা। শুধু তাদেরকে বোঝানোর ধরনটাই গুরুত্বপূর্ণ। জীবন থেকে আমাদের চাওয়া খুব সামান্য। ভালবাসার স্পর্শে ভালবাসার মানুশটির হাতে হাত রেখে জীবনের পথ পাড়ি দেওয়া। এটুকুই চাওয়া আমাদের। সেটা বাবা -মাদের বোঝানোর দায়িত্বটাও আমাদেরকেই নিতে হবে। ভয়কে প্রশ্রয় দিয়ে নিজের ইচ্ছেদের মৃত্যু মেনে নেওয়ার নিশ্চয় কাম্য নয়। এমনকি আমাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র বাবা-মার কথায় ভালবাসাকে বিসর্জন দেওয়াটা একসাথে অনেকগুলো জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবে। তাই ভয়কে জয় করতে হবে। নিজের অনুভূতির প্রতি আস্থা রাখতে হবে। সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার সৎসাহস অর্জন করতে হবে।"
কথাগুলো বিড়বিড় করতে করতে সৌরভ একটু করে হাসে। এ কথাগুলো শুনে মণি একটু হলেও স্বস্থি পাবে সেটা ভেবেই ভালো লাগছে সৌরভের। আসলে ভালবাসার গল্পগুলো এরকমই হয়। পর্বতসম বাঁধা, ভবিষ্যতের শঙ্কা, সমাজের রীতি সব মিলিয়ে ভালবাসার পথরুদ্ধ করার এক বিরাট আয়োজন আমাদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখে। তবুও মানুষ ভালবাসে, স্বপ্ন দেখে। ভালবেসে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়, সাহস জোগায়। জীবনে কোনো কিছুই নিজে থেকে আমাদের ধরা দিবেনা; জীবনে বাঁধা থাকবেই। সুখের সময়টা একসাথে উপভোগ করা যেমন আনন্দের। ঠিক একইভাবে দুঃখের সময়, কষ্টের দিনগুলিতে, ব্যর্থতার সময়ে, পরাজয়ের সময়ে হাতে হাত রেখে চলতে পারাটাও আনন্দের।
সৌরভ আর মণি ভালো থাকুক, ভালো থাকুক তাদের ভালোবাসা......
©somewhere in net ltd.