নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেরীতে হলেও আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আমি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর পথ খুঁজে পেয়েছি। বাকি জীবনে যা-ই হোক না কেন, আল্লাহর রাস্তা আমি ছাড়ব না। ভাবতে অবাক লাগে আমি কত হীন, অকৃতজ্ঞ ছিলাম আমার জীবনের প্রথমাংশে, তা সত্ত্বেও আল্লাহ্‌ কত রহমত বর্ষণ

লাল স্কচটেপ

আমি আল্লাহর অতি নিকৃষ্ট, গুনাহগার এক বান্দা। আল্লাহর ইবাদাতের মাধ্যমে ভালো মানুষ হওয়া এবং আল্লাহর দয়া ভিক্ষা করাই আমার লক্ষ্য।

লাল স্কচটেপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রমজান মাসের স্মৃতি রোমন্থন

১১ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫১

বেশিদিন আগের কথা নয়। এই ধরুন বছর ১০-১২ আগের কথা। তখন আমি স্কুলে ক্লাস সিক্সের একজন মোটামুটি অপদার্থ বালক। বাংলাদেশের টপ তিনটি স্কুলের একটিতে পড়তাম আমি। থাকতাম ঢাকার রামপুরায় বনশ্রীতে। পড়ালেখায় মোটেও মন ছিলনা। পরীক্ষার আগের রাতে পড়ে কোন রকমে রোল নম্বর ১৫-২০ এর মধ্যে রাখতাম।

শৈশবকালের সে দিনগুলি যেন আজো কত বাস্তব। স্কুলটা ছিল যেন খেলাধুলা করার মাঝে একটা ব্রেকের মত। দিনভর সময় কাটত কোথায় খেলব, কি খেলব, কাদের সাথে খেলব এইসব নিয়ে। আমার অনেক ফ্রেন্ডের থাকলেও আমার বাসায় ছিলনা কম্পিউটার, এমনকি শুনলে অবাক হবেন আমার বাসায় ছিলনা কোন ক্যাবল কানেকশন। আশ্চর্যের ব্যাপার হল, আমি যখন ক্লাস ওয়ানে পড়তাম তখন বাসায় ডিশ লাইন ছিল। কিন্তু আমি সারাদিন কার্টুন নেটওয়ার্ক দেখতাম দেখে আব্বু লাইন বন্ধ করে দেন। তাই আমার সারাদিনের চিন্তা ভাবনা আর কল্পনার বেশিরভাগ জুড়েই ছিল খেলাধুলা আর বনশ্রীর রাস্তাঘাটে পরিচিত মানুষ ও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে।

তখনকার দিনগুলি ছিল স্বপ্নের মত। সবাই সবাইকে চিনত। পাড়ার বড়ভাই ছোটভাই সম্পর্ক ও শ্রদ্ধা ছিল, মুরুব্বীদের দেখলে স্ত্রতভাব আসাটা ছিল, বন্ধুদের জন্য নিঃশর্ত ভালবাসা ছিল। আমার এখনো মনে আছে আমরা যে বাসায় ভাড়া থাকতাম, তার বিপরীতদিকের বাসার মালিক ছিলেন একজন কলেজের প্রফেসর। তার ছেলে বিবাহিত ছিলেন ও এক সন্তানের পিতা ছিলেন। কিন্তু তিনি কিছু করতেন না। তার বাবা তাকে বাড়ির নিচে একটি ওষুধের ফার্মেসী দেয়ান। আমার জীবনের একটা ক্ষুদ্র কিন্তু অতীব স্মরণীয় সময় কেটেছে এই ভাইয়ের দোকানের বিভিন্ন আড্ডায়। এই ভাইয়ের বড় বড় বন্ধুদের সাথে ম্যাচ খেলতে গিয়েই আমি প্রথম শিখি কিভাবে ব্যাকরণ মেনে স্ট্রেইট ড্রাইভ খেলা যায়। আফসোসের বিষয় সেই ভাইয়ের নাম আজ মনে নেই। কয়েক মাস আগে বনশ্রী গিয়ে সেই ভাইকে খুঁজলাম, কিন্তু পেলাম না।
এই ভাইয়ের দোকানে মধ্য বয়স্ক অনেক মুরুব্বী ওষুধ কিনতে আসতেন। আমরা দোকানের সামনের রাস্তায় টেপ টেনিস বল দিয়ে শর্ট পিচ ক্রিকেট খেলতাম। আমার আজো মনে পড়ে কোনদিন এই মুরুব্বীরা আমাদের চোখ রাঙাননি। তারা সবসময় হাসিমুখে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যেতেন, বলতেন "বাবা এই শটটা সুন্দর মারছ। এইবার স্ট্রেইটে একটা মারো তো।" আমাদের বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটে ভালো করবে না তো করবে কে?

এলাকায় ফাঁকা জায়গা ছিল প্রচুর। এক মাঠের নিয়মিত খেলোয়াড় অন্য মাঠে খেলতে যাওয়াটা ছিল রীতিমত অনাচার! মাঠ বনাম মাঠ তুমুল প্রতিযোগিতা হত বিভিন্ন খেলায়। সে প্রসঙ্গ আরেকদিন।

তবে সবচেয়ে বেশি বুকে লাগে যখনই ভাবি কি সুন্দর ভাবে পার করেছি রমজানের পবিত্র দিনগুলি। আমার এখনো মনে পড়ে রমজান মাসে পুরো এলাকাতেই একটা পবিত্রতার আভা ফুটে উঠত যেন। টুপি মাথায় দাদা পিতা পুত্র এই তিন প্রজন্ম একসাথে হাসিমুখে আসরের নামায পড়তে যাচ্ছে জায়নামাজ হাতে, এরকম পবিত্র দৃশ্য আমি আমার জীবনে আর দেখি নি, হয়ত সামনেও দেখব না। আমি দেখতাম আর আফসোস করতাম কেন আমার দাদাজান আমার আব্বুর তিন মাস বয়সেই ইন্তেকাল করলেন। আব্বুর হাত ধরেই আমি - আমরা দুই প্রজন্ম নামাযে যেতাম (আব্বু যখন বাসায় থাকতেন)।

আসরের নামায শেষে মুসল্লিরা একে অপরের সাথে সৌহার্দ্য বিনিময় করতেন, এক ভাই আরেক ভাইকে দাওয়াত দিতেন তার বাসায় সামান্য ইফতার আয়োজনে শরীক হবার জন্য। এলাকার ঐতিহ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ইফতারি আয়োজনের দোকান বসত। সেখান থেকে ইফতারি ক্রয় বিক্রয় এর সময় যে পরিবেশ আর সবার যে হাসিমাখা মুখ ছিল, সেটি আজকের গতিময় যুগে আজ আর কোথাও দেখিনা।

আমার এখনো মনে পড়ে এক ভিক্ষুক বুড়ীর কথা। তার বয়স কত আমি জানিনা কিন্তু সে দেখতে ছিল অতিশয় বৃদ্ধ। তাকে দেখলেই কেন যেন আমার বাসায় থাকা আমার অতি প্রিয় দাদীর কথা মনে আসত। আমি তাই সে বুড়ীকে আমার সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করতাম। একবার রমজানে আমি মাঠে খেলছি। দেখি বুড়ী তার ঝোলাটা নিয়ে পা টেনে টেনে হাঁটছে। বললাম "কি হয়েছে তোমার?" সে বলল সে ভিক্ষা পায়নি এখনো আর আকাশে অনেক রোদ। রোজা রাখা অবস্থায় তার শরীর আর চলছে না। এমতাবস্থায় আমি জানি না আমার কি হল, আমি আমার পকেটে থাকা ১০ টাকার নোট তার ঝোলায় রেখে বললাম "আমার সাথে চল"। আমাদের খেলার মাঠ ছিল একটি বিল্ডিং এর পাশে। আমি তাকে নিয়ে বিল্ডিঙের পাশে দাঁড়ালাম। জোরসে একটা হাঁক দিলাম "ভিক্ষা দেন!" আমার বলিষ্ঠ আওয়াজে এইদিকের প্রায় সবকটা জানাল খুলে গেল। এক ঝলক উঁকি দিয়ে ভ্যাবাচাকা খাওয়া মানুষজন পরিস্থিতি বুঝল কি বুঝলনা ঠিক বুঝতে পারলাম না, কিন্তু ১,২, ৫ টাকার নোট ফেলতে লাগল ঠিকই। হঠাৎ এক জানালা থেকে চিৎকার আসল "আরে (আমার নাম) তুমি এই মহিলার সাথে কি কর!" ভালো করে তাকিয়ে দেখি আরে এ তো আমাদের বাসার ছুটা কাজের বুয়া! আমি বললাম "কিছু করিনা। টাকা দেন।" সে ২ টাকার একটা নোট ফেলল। ওইদিকে আমার বন্ধুরা খেলা ফেলে আমার কাহিনী দেখছে। বুড়ীকে টাকা কুঁড়িয়ে দিলাম। বুড়ী তার ময়লা হাত আমার মাথায় ছোঁয়ায়ে দোয়া করে আস্তে আস্তে পা ঘষটাতে ঘষটাতে চলে গেল। আমার ফ্রেন্ডরা তখন ও চুপচাপ। আমি বললাম "কিরে খেলস না কেন?" সবার তীক্ষ্ণ নজর ছিল আমার উপরে। ওরা বোঝার চেষ্টা করছিল কি হল আর আমি কি জিনিস। আমি বলটা কুঁড়িয়ে এনে থ্রো করলাম। খেলা শুরু হয়ে গেল।

বাসায় আসলাম। কেন যেন মনটা খুবই ভালো লাগছিল।

একদিন পরে কাজের বুয়া বাসায় আসল। আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম হয়ত দাদিকে বলে দিবে আর আমাকে ধমক খেতে হবে। কিন্তু শেষমেশ আমার কিছুই হলনা। আমি ও আর খুঁজিনি বুয়া কি বলেনি নাকি দাদি আমাকে কিছু না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এখন মানুষজনের মধ্যে এই ধরনের সহমর্মিতা আর দেখিনা। অন্যদের কি বলব? আমি নিজেই বড় হয়ে আবিষ্কার করেছি এককালে ভিক্ষুকের সহযোগী এই আমি আজ কোন সাহায্যপ্রার্থী দেখলে সাহায্য করিনা। ভাবি "ও কি বাটপারি করছে?"

আমি খুব চাই যেন সেইদিনের মত পরিষ্কার মনে আমি গরীবদের সাহায্য করতে পারি।

বিঃ দ্রঃ আমি একজন সেকুলার মানুষ। কিন্তু একজন বাঙালি হিসেবে আমি মনে প্রাণে আজ থেকে ১০-১২ বছর আগের রমজানের ইসলাম এর প্রতি সম্মানসূচক পরিবেশ ভালবাসি।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:

লেখা মোটামুটি; তবে, আপনি 'টপ ৩ স্কুলের' ছাত্র নন।

১১ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১১

লাল স্কচটেপ বলেছেন: ভাই আপনি যদি তা-ই মনে করেন তবে তা-ই ঠিক।

২| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০২

চাঁদগাজী বলেছেন:

বৃদ্ধকে সাহায্য করাই ছিল আপনার জীবনের শ্রেস্ট ঘটনা।

৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এখন মানুষজনের মধ্যে এই ধরনের সহমর্মিতা আর দেখিনা। অন্যদের কি বলব? আমি নিজেই বড় হয়ে আবিষ্কার করেছি এককালে ভিক্ষুকের সহযোগী এই আমি আজ কোন সাহায্যপ্রার্থী দেখলে সাহায্য করিনা। ভাবি "ও কি বাটপারি করছে?"

আমি খুব চাই যেন সেইদিনের মত পরিষ্কার মনে আমি গরীবদের সাহায্য করতে পারি।


হারিয়ে যায় যে সময় আর ফেরে না!!!
সামনেতো মনে হয় খুবই সংকুল দিন!
স্বার্থপরতা কর্পোরেট কালচারে এমন ভাবে মনে মগজে ঢুকিয়ে দিচ্ছে- দানও হয়ে যাচ্ছে মৃত্যু উৎসব!!!!!!

আবার আন্তরিকতার সেই পরিবেশ আনতে যে সামাজিক আন্দোলন দরকার, বোধে চেতনায় যে সামাজিক জীবনের পুশআপ দরকার আমাদের মিডিয়া কালচারাল নীতিতেই তা শূন্য মাত্রায়!!

সো- চলছে চলুক! মাঝে মাঝে ভাবি সন্তানদের যে সামাজিক, পরোপকারী বোধ গুলো শিখাচ্ছি তা না আবার ওদের ভবিষ্যতের কর্পোরেট কম্পিটিশনের জীবনকে থমকে দেয়!!!

১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫৩

লাল স্কচটেপ বলেছেন: ভালো বলেছেন বিদ্রোহী ভৃগু ভাই।

৪| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:২৯

জেকলেট বলেছেন: লেখাটা সুন্দর গোছানো হয়েছে। আপনার ছোটবেলার অনুভুতিগুলোর সুন্দর প্রকাশ। আর রামাদান নিয়ে আমরা যারা ২৫ এর বেশি সবার ই এমন সুন্দর স্মৃতি আছে। আমার মনে আছে আমাদের বাসার পাশে এক হিন্দু ফ্যামেলি ছিলো রামাদানের শেষে ঈদের জন্য ওরাও কাপড় কিনত, ঈদের দিন নতুন কাপড়ে এক সাথে ঘুরতাম এবং অনেক সময় আমরা সবাই এক সাথে ইফতারও করতাম।

১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৫৯

লাল স্কচটেপ বলেছেন: জেকলেট ভাই, শৈশবের রমজান আর ঈদের কথা মনে হলে এত খারাপ লাগে। এখন তো রমজান মাস আর বাকি ১১ মাসের মধ্য কোন ফারাক লাগেনা। আমি কিন্তু ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বলছিনা, আগে মানুষের চাল চলন, ব্যবহার রমজানে ছিল অন্যরকম। বের হলেই রমজানের আমেজটা বুঝা যেত। এবং আপনি যেটা বললেন, যে ধর্মীয় সাম্য, সেটাও এখন অনেকটা মিসিং। আগে ঈদ ছিল জাতীয় আনন্দোৎসব, এখন ঈদ হচ্ছে "মুসলমান" উৎসব, তাও সব মুসলমান রমজান আর ঈদের ভাবধারায় আর বিশ্বাসী নয়। কেউ কেউ খুব বেশি ফ্যানাটিক, কেউ কেউ ফ্যাশনেবল এথেইজম এর স্রোতে রমজান আর ঈদের মূল্য দেন না, কেউ কেউ সিমপ্লি কেয়ার করেন না। মানুষ হিসেবে আমরা এখন "ইন্দ্রিয়-জাত" প্রাণী হয়ে গিয়েছি, ভ্রাতৃত্ববোধ দিনদিন কমে যাচ্ছে। আপনাকে ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.