নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাহিত্য মানে যদি অসহায়ত্ব হয় আমি তবে অসহায় এক নিরবচ্ছিন্ন পথিক
দরজার সামনে বিশাল লাইন। সবার হাতে ফুল, নয়ত উপহার। কারো উপহার পেপারে মুড়ানো, কারোটা আবার দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগই ফুলের তোড়া, তবে পেপারে মুড়ানো গুলো অন্যকিছু মনে হচ্ছে। আমিও দাঁড়িয়ে আছি লাইনে কিন্তু শেষ মাথায়। এরপর আর কেও নেই আর আসবেও না আমি জানি। যেহেতু জায়গা হারানোর ভয় নেই তাই মাঝেমাঝে হেঁটে বেড়াচ্ছি। সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কেও লাইন থেকে নড়ছে না। টিপিকাল বাঙ্গালীর মত আমি একটা সুযোগ নিলাম আগে যাওয়ার। কিন্তু যতই আগাচ্ছি সামনে আমি আবার সেই পিছেই চলে যাচ্ছি। আমি জানি না কেন এমন হচ্ছে! ভয় পেয়ে যাচ্ছি, আমি ঘামছি। কোনো অশরীরী কিছু ঘটতে যাচ্ছে না তো!
এতক্ষণ খেয়াল করি নি, অন্ধকারে ছিলাম তো। হঠাৎ দরজা খুলতেই সাদা তীব্র আলো এসে চোখে লাগল। আমি চোখের সামনে হাত দিলাম; চোখ খুলতে পারছি না। সেই আলোয় দেখলাম আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে হলুদ পাঞ্জাবী পড়া এক ছেলে। আমি পিছন থেকে ডাকলাম, কিন্তু সে পিছে ঘুরল না। আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। হলুদ পাঞ্জাবী, একটা জিন্স প্যান্ট আর পায়ে কোনো স্যান্ডেল নাই। আরেহ! এইতো হিমু! ফোনটা বের করে একটা সেলফি নিতে গেলাম; আলো বন্ধ হয়ে গেল। অন্ধকারে আর কিভাবে ছবি তুলব! মন খারাপ করে ফোনটা পকেটে রাখলাম।
আমি আবার হাঁটছি সামনে। এখন বুঝলাম লাইনটা খুব বেশি বড় নয়। আসলে লাইনের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকলে সামনে যেই কয়েকজনই থাকুক লাইন অনেক বড় মনে হয়। আমি জানি, এদের মধ্যে বেশিরভাগই আমার চেনা পরিচিত। অন্ধকারে শুধু অবয়ব দেখা যাচ্ছে, আলো পেলে হয়ত বলে দিতে পারব এদের পরিচয়; ঠিক যেমন হিমুকে চিনে ফেলেছি। একটা জিনিস খেয়াল করলাম, সবার হাতে উপহার আছে হিমুর হাতে নেই। হিমুর সামনে যেয়ে হাসতে হাসতে শালা গরীব বলে আবার লাইনে যেয়ে দাঁড়ালাম। হিমু কিছু বলল না।
আবার আলো বের হল দরজা দিয়ে। এবার চোখ বন্ধ হতেই ঠিক করলাম যেভাবেই হোক খোলা রাখতে হবে চোখ, দেখতেই হবে কি হচ্ছে ভিতরে। তীব্র আলোতে মানুষ যেমন ঝাপসা দেখে তেমন ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখি একজন লোক বের হচ্ছেন দরজা দিয়ে। কি দিয়ে চেনা যায় তাকে! পরে দেখি চোখে গোল চশমা। বুঝলাম মিসির আলী বের হলেন। বের হয়েই তিনি কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন। আবার অন্ধকার হয়ে গেল। ইশ! সেলফি তুলতে এবারও ভুলে গেলাম। কিন্তু এবার আরেকটা জিনিস খেয়াল করেছিলাম। নীল শাড়ি পড়ে এক মেয়ে ভিতরে ঢুকল। অন্ধকার থাকায় চেহারা দেখতে পেলাম না। বুঝতে বাকি নেই সে রূপা।আজকালকার দুনিয়ায় চেহারাই তো সব। আফসোস লাগছে, চেহারাটা যদি দেখতে পেতাম; একবারের জন্য।
রূপা বেশিক্ষণ সময় নিল না। রূপা বের হতেই দরজা থেকে আলো আসলো। সেই আলোতে দেখি মিসির আলী এখনো লাইনে দাঁড়িয়ে, আর লাইন একটুও আগায় নি। কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না। এত রাত হয়ে যাচ্ছে! কখন বাড়ি যাব! গাড়িও তো পাব না রাস্তায়। আমি হিমুকে ধাক্কা মেরে বললাম-"ভাই ঢুকেন তো।" অবাক করা কাণ্ড, হিমু ঢুকে গেল ভিতরে। আমি তখন আরো ঘামছি। সামনে এত বড় লাইন, পিছন থেকে হিমু ঢুকে গেল! আমি পিছে তাকালাম একবার। পুরো শূন্য চারপাশ। কোনো দরজা নেই, নেই কোনো ঘর দালানকোঠা। যেদিক তাকাচ্ছি বিশালতার ছোঁয়া। এবার ভাবলাম হিমু যখন ঢুকেই গেল এরপর দৌঁড়ে আমি আগে ঢুকব।
অনেকক্ষণ হয়ে গেল হিমু বের হচ্ছে না। বুঝলাম ফালতু পেচাল পারতেছে সে। সবাইকে টপকে এগিয়ে গেলাম। এবার আর সামনে আগানোর পর প্রতিবারের মত লাইনের পিছে চলে যাচ্ছি না। ধরে নিলাম আমি বেশি দেরীতে এসেছি। সামনের সবাই দেখা করে ফেলেছে। আমিই শুধু বাকি আর। তাই আর লাইনের পিছে যাচ্ছি না।
এদিকে হিমু এখনো বের হয় নি। আমি ভয়ে ভয়ে দরজায় যেয়ে নক করলাম। ভিতর থেকে এক চাপা কন্ঠ ভেসে আসল-"ভিতরে আসো।" আমি আয়াতুল কুরসি পড়ে বুকে ফু দিলাম। তারপর ধীরে ধীরে দরজা খুলে দেখি হুমায়ূন আহমেদ শুয়ে আছেন একটা বিছানায়। আর হিমু তার পাশে দাঁড়ানো। যতদূর মনে হল বিছানাটা সোনার তৈরী। ঘরে বেশি আলো নেই, যতটুকু হলে দেখা যায় আরকি। আসলে প্রোজেক্টরের মত এক গুচ্ছ আলো কোথায় থেকে যেন এসে জমা হয়েছে বিছানাতে। আমি আমার হাতের গোলাপ তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম-"শুভ জন্মদিন, স্যার।"
তিনি নিলেন, নিয়ে হাসলেন। আমি বললাম- "স্যার আপনার সাথে একটা সেলফি তুলতে পারি?"
উনি আমায় বললেন-"তা পারো, কিন্তু তোমার পরিচয় টা?"
আমি হাসতে হাসতে বললাম-"এই যে বাইরে আপনার যত চরিত্র দাঁড়িয়ে আছে এসব মিলে আমি"
তখন স্যার আবার হেসে বললেন-"এবার বল তো, তুমি কেন হিমু আসার আগে আমার কাছে আসতে পারছিলে না?"
আমি প্রশ্নটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। বলে দিলাম-"জানি না স্যার।"
তিনি হিমুর দিকে তাকিয়ে বললেন-"সব চরিত্র কে ধারণ করতে পারলেও হিমুকে ধারণ করতে পারবে না। কারণ হিমুকে আমি এই নোংরা পৃথিবীর সব নোংরা মানুষের মধ্যে ধারণ করার জন্য সৃষ্টি করি নি।"
আমি হিমুর দিকে তাকালাম, হিমু হাসছে। আমি ফোন থেকে ক্যামেরা বের করলাম। সেলফি নিলাম একটা স্যার সাথে, পাশে হিমুও দাঁড়ানো ছিল। এরপর পিছে তাকাতেই স্যার বললেন-"বিদায়......"
আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল, আমি প্রচন্ড ঘেমে আছি। যদিও শীত খুব বেশি না, তবুও চারপাশে ঠান্ডা বাতাসে কেও কিভাবে এত ঘামতে পারে! আমি উঠে বসলাম, পানি খেলাম। জানি এটা স্বপ্ন, তবুও ফোনটা হাতে নিলাম। গ্যালারি তে ঢুকলাম সেলফি টা আছে কিনা দেখার জন্য। খুব স্বাভাবিকভাবেই ছবিটি নেই। তারপর কানেকশন অন করে ফেসবুকে ঢুকে স্ট্যাটাস দিলাম-"শুভ জন্মদিন স্যার, ওপারে ভাল থাকবেন।"
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২০
রাফি বিন শাহাদৎ বলেছেন: ধন্যবাদ, দোয়া করবেন।
২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: একসময় আমি খুব হতাশায় পড়ে গিয়েছিলাম। উনার বই আমাকে হতাশা মুক্ত করেছে।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪২
রাফি বিন শাহাদৎ বলেছেন: উনার প্রতিটা চরিত্র কে নিজের মধ্যে ধারণ করতে ইচ্ছা করত
৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৪
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: শ্রদ্ধাঞ্জলি কথা সম্রাট হুমায়ুন আহমেদ স্যার।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৪
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ভালো লিখেছেন। ভালো লাগলো। ++