নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘড়ির টিকটিক শব্দে হাত চেপে ধরা মেয়েটা আর ভুতের ভয় পায় না।

রাফি বিন শাহাদৎ

সাহিত্য মানে যদি অসহায়ত্ব হয় আমি তবে অসহায় এক নিরবচ্ছিন্ন পথিক

রাফি বিন শাহাদৎ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষ- জুনায়েদ ইভান

২১ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ১২:১৮

আমরা সচরাচর বলে থাকি-"আত্মহত্যা মহাপাপ।" কিন্তু কেও যদি একজনকে বারবার আত্মহত্যা করতে বলে তাহলে সেই মানুষটার আত্মহত্যায়, সে কি সমান পাপের ভাগিদার হবে? মানুষ দেখবে এটা আত্মহত্যা, কিন্তু এর পিছনে লুকিয়ে থাকবে একটা লাইন-”আমি মনে করি তোমার আত্মহত্যা করা উচিত।”

সাদাসিধে এক মানুষ শিহাব, পেশায় লেখক। সে কেন তার দুই বছর পুরোনো রুমমেটকে আত্মহত্যা করতে বলবে! দুইবছর আগে যখন রুমমেট আবশ্যকের বিজ্ঞাপন দেখে হাসান এসেছিল তখন শিহাব তাকে প্রশ্ন করে- ”বিয়ে করেছো?” প্রশ্নটা খুব সাধারণ, উত্তরটা খুব সংক্ষিপ্ত। তবুও হাসান প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে বলে- ”আমরা বরং ব্যক্তিগত আলাপ না করি।” কি লুকিয়ে আছে হাসানের ব্যক্তিগত জীবনে!

“পৃথিবীতে সবাই মরার জন্য আত্মহত্যা করে না। কেউ কেউ বাঁচার জন্য করে। কারণ মানুষ মরতে পারে কিন্তু ভুলতে পারে না।”

এই ব্যক্তিগত আলাপের যে গল্প সেই গল্পের হাত ধরেই একদিন শিহাব সিদ্ধান্ত নেয়, হাসানকে সে আত্মহত্যা করতে বলবে। একের পর এক আত্মহত্যার উপায় বলতে থাকে সে- বইয়ের পাতায় পটাসিয়াম সায়ানাইড মিশিয়ে রেখে, গলায় ফাঁস দিয়ে কিংবা ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখতে দেখতে মারা যাওয়া। কিন্তু হাসান আত্মহত্যা করতে চায় না। দড়ি কেনার নাম করে অ্যাকুরিয়াম আর গোল্ডফিশ কিনে এনে সে বলে-”আমি আত্মহত্যা করব না।”

“যেখান থেকে গল্প শুরু হয়, তার আগে গল্প থাকে। আর, যেখানে শেষ হয় তার পরও গল্প থাকে।”
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

হাসানের মুখে নিতু নামের এক মেয়ের কথা জানতে পারে শিহাব। নিতু হাসানের স্ত্রী, দুইবছর আগে তাকে ফেলে চলে যায় নিতু। এই অংশ থেকেই মূলত উপন্যাসের শুরু। নিতু সম্পর্কে বলতে থাকে হাসান, কবে নিতুর সাথে দেখা হল, কিভাবে তাদের প্রেম হল, বিয়ে হল এবং সবশেষে হল বিচ্ছেদ।

“দুইটা মানুষের মাঝে সেতু থাকে। আমরা হয়তো সেতুর দূরত্ব কমাতে পারব, কিন্তু সেতুর অস্তিত্ব বাতিল করতে পারব না।”

শ্রাবণ মাসের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে ভুল স্টেশনে দেখা হয়ে যায় হাসানের সাথে নিতুর। মেয়েটার হাতে ছিল কবি শেলির বই, আর ছেলেটার জানা ছিল কবির মৃত্যু সময়ের ইতিহাস। তাদের মধ্যে কথা শুরু হয় মৃত কবি শেলির পকেটে পাওয়া ইডিপাসের গল্প নিয়ে।

মানুষ যদি আগে থেকে বুঝতে পারত কোন পরিচয় তাকে তীব্র কষ্ট দিবে তাহলে সেই পরিচয় থেকে শত হাত দূরে থাকত। কিন্তু দুর্ভাগ্য, মানুষ যতদিনে মন বুঝতে শেখে ততদিনে সে নিজের মনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। হাসান কবি শেলির বইটা নিতুর থেকে ধার নিতে চায়, কিন্তু নিতু বইটা তাকে দিয়ে দিয়েছিল সারাজীবনের জন্য। বইটিতে সে পায় রুদ্র নামের এক ছেলের চিঠি। চিঠির শেষে লেখা তারাপদ রায়ের কবিতা-

“তারপর একদিন হয়তো জানা যাবে
বা হয়তো জানা যাবে না, যে
তোমার সঙ্গে আমার
অথবা;
আমার সঙ্গে তোমার
আর দেখা হবে না।”

চিঠি পড়ে হাসান বুঝতে পারে নিতুর জীবনে এক রুদ্র আছে এবং তারা একে অপরকে অনেক ভালবাসে। তাহলে কোথায় সেই রুদ্র! হাসানের মনে একের পর এক প্রশ্ন সৃষ্টি হতে থাকে। সে ছুটে যায় নিতুর কাছে, জানতে চায় রুদ্র কে।

তারপর ধীরে ধীরে রুদ্র সম্পর্কে জানতে পারে হাসান। ভালবেসে নিতু আর রুদ্র বিয়ে করেছিল, কিন্তু সেই ভালবাসাটা একই থাকলেও সম্পর্কটা আর ছিল না। রুদ্রর মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হলে তাকে হাসপাতালে রেখে আসে নিতু। তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। রুদ্র-নিতু সম্পর্কের ইতি কি তাহলে এখানেই?

নিতু নানারকম পারিবারিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। একদিকে তার বাবা-মার ডিভোর্স, অন্যদিকে তার সৎ বোনের আগমন এবং বাবার আরেকটা বিয়ে। সবকিছু মিলে নিতুর মানসিক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। এসময় আপন মানুষের মত পাশে ছিল হাসান। তখন থেকেই তারা একে অপরকে পছন্দ করতে শুরু করে। নিতু সব ভুলে সংসার জীবনে মন দেওয়া শুরু করে। কিন্তু তাদের সংসার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। নিতু হাসানকে রেখে চলে যায়, আর কখনো সে হাসানের খোঁজ নেয়নি।

সম্পূর্ণটা শুনে শিহাব বুঝতে পারে নিতুর প্রস্থানের পিছনে হাত হাসানের। তাই সে মনে করে হাসানের আত্মহত্যা করা উচিত। কিন্তু আত্মহত্যা কেন, কি করেছিল হাসান? কেন নিতু হাসানকে রেখে চলে গেল?

ভাল এবং খারাপ দিকঃ

সব বইয়ের কিছু ভাল এবং খারাপ দিক থাকে, যদিও সেটা পাঠক থেকে পাঠকে আলাদা হতে পারে। আমার কাছে উপন্যাসটি ভাল লাগার কারণ লেখকের লেখনশৈলী। জুনায়েদ ইভান ভাইয়ের পেজ যারা ফলো করি তারা কমবেশি সবাই জানি উনি কত সুন্দর লেখেন। উপন্যাসের প্লট খুব সাধারণ হলেও কিছু লাইন মন ছুঁয়ে গেছে। সবগুলো লাইন লিখতে গেলে রিভিউ অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক কিছু লাইন আমি উপরে লিখেছি।

বইটার যে অংশ ভাল লাগেনি সেটা হচ্ছে একই অংশ বারবার লেখা। মোটামুটি ১১০ পৃষ্ঠায় বইটা শেষ করা হলেও আমি মনে করি আরো কম পৃষ্ঠায় বইটা শেষ করা যেত। কারণ কিছু পেজে কয়েকটা লাইন লিখে সেই পেজ ফাঁকা রাখা হয়েছে। বইটির মূল্যও নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রকাশনী।

বইয়ের নাম: শেষ
লেখক: জুনায়েদ ইভান
প্রকাশকাল: মার্চ, ২০২১
প্রকাশনী: কিংবদন্তী পাবলিকেশন
প্রচ্ছদ: সঞ্চিতা সৃষ্টি
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১২০
মূল্য: ২৫০ টাকা (নির্ধারিত)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: এই লেখকের নাম আজই প্রথম জানলাম।

২৩ শে মার্চ, ২০২২ রাত ২:১২

রাফি বিন শাহাদৎ বলেছেন: উনি Ashes ব্যান্ডের ভোকালিস্ট। অনেক আগে থেকে লেখালেখি করতেন ফেসবুকে। উনার প্রথম বই এটা

২| ২১ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:১৪

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:

লেখার হাত ভালো হলেও, পরিপক্ব নয়। কানে অ্যাশেজ গুজে নিয়ে হাতে "শেষ " রাখতে হবে মনে হচ্ছে।

২৩ শে মার্চ, ২০২২ রাত ২:১৩

রাফি বিন শাহাদৎ বলেছেন: আরো ভাল আশা করেছিলাম উনার থেকে

৩| ২১ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৪০

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সুন্দর হয়েছে গল্পের রিভিউ

২৩ শে মার্চ, ২০২২ রাত ২:১৩

রাফি বিন শাহাদৎ বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২৩ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:০০

নীল আকাশ বলেছেন: উপন্যাসের প্লট খুব সাধারণ হলেও
এতদূর লিখে এসে এটা লিখলে আর কে পড়তে চাইবে?
এটার বেশ কিছু রিভিউ পড়েছি বই পোকাদের আড্ডাখানায়। আপনি সম্ভবত উনাকে বেশি পছন্দ করেন।

০৪ ঠা মার্চ, ২০২৩ সকাল ১০:২০

রাফি বিন শাহাদৎ বলেছেন: উনি যখন থেকে লেখালেখি শুরু করেছিলেন মোটামুটি ওই সময় থেকেই আমি তাকে ফলো করতাম। আর উপন্যাসের প্লটটি সত্যিই সাধারণ, কিন্তু তার লেখনশৈলী অনেক সুন্দর

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.