| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিংকন বাবু০০৭
ভালবাসি বই পড়তে আর পছন্দ করি টুকটাক লিখতে, ভালো লাগে বুদ্ধিমানদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। দেশটাকে ভালোবাসি। সৎ-পরিশ্রমীদের শ্রদ্ধা করি। । আমার ব্লগ নিয়ে অনেক আগ্রহ আছে। কিন্তু কিছু জানি না। তাই জানতে চাই
নেপালে একটা পপুলার টি শার্ট আছে, যার বুকের মধ্যে লেখা থাকে Daal Bhaat Power-24 Hour.
এই টি শার্ট সব দোকানেই পাওয়া যায়। নেপালের এক রকম জাতীয় খাবার হল ডাল ভাত আর শাক।
সেখানে বিশাল সংখ্যক মানুষই দুধ ডিমের বাইরে আর কোন প্রোটিন নেন না।
এখন নেপাল তো পাহাড়ী এলাকা, প্রচুর এনার্জি দরকার হয় সেখানে। শুধু ভেজ খেয়ে কিভাবে এই পাহাড়ী এলাকায় টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় তাপ ও মাংসপেশী তৈরি করা সম্ভব??
এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে ডাল-ভাতে।
নেপালীরা ২৪ ঘন্টাই ওঠানামার মধ্যে থাকে। ফলে তাদের জন্য ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হওয়া আমাদের চেয়ে অনেক কঠিন।
আমরা জানি যে যারা ধারাবাহিকভাবে বেশি কার্ব খায় আর শুয়ে বসে থাকে, তাদের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয়, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থেকেই ধীরে ধীরে ডায়বেটিস, হাই কোলেস্টেরল, হাইপারটেনশন, ফ্যাটি লিভার, এগুলো ঘটে থামে।
তাহলে, নেপালের পাহাড়ী মানুষরা তো এই ডাল-ভাতের ওপরেই বেচে থাকে, পাহাড়ী অঞ্চলে একটা ডিমের দাম অনেক জায়গায় কয়েকশো টাকা করে। তাদের কিভাবে মাসল তৈরি হয়?? আর ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সই বা হয় না কেন??
আবার, আমাদের দেশের শ্রমিক শ্রেনীর মানুষ, তারা তো অত প্রোটিন খেতে পারে না। তারাই বা মাসল তৈরি করেন কিভাবে??
এই প্রশ্নের জবাব আসলে লুকানো আছে ডাল আর ভাতের এমাইনো এসিড প্রোফাইলের ভেতরে।
ডালে নয়টা ইসেনশিয়াল এমাইনো এসিডের মধ্যে প্রায় সবগুলাই আছে, শুধু সালফার কনটেইনিং এমাইনো এসিডগুলা কম আছে।
আবার ভাতের প্রোটিনে মাসল বিল্ডিং এমাইনো এসিডস, লাইসিন, লিউসিন, আইসোলিউসিন, এগুলো একটু কম আছে, কিন্তু সালফার কন্টেইনিং এমাইনো এসিড সিস্টেইন, মিথিওনিন আছে বেশ ভাল পরিমানে।
ফলে আপনি যখন ডাল আর ভাত একসাথে মেখে খান, তখন আপনি কিন্তু সবগুলো ইসেনশিয়াল এমাইনো এসিডই পেয়ে যাচ্ছেন। মূলত এই কারনেই এইসব পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষ, বা খুব গরীব শ্রমিক শ্রেনীর মানুষ, যারা সামান্য প্রোটিন কেনার টাকা যোগাড় করতে হিমশিম খান, তাদের এই ডাল-ভাত খেয়েই মোটামুটি শরীর টিকে থাকে।
ডাল-ভাত খেয়ে প্রচন্ড শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করা যায়, এটা প্রমানিত সত্য। প্রায় কাছাকাছি কথা খাটে ডাল-রুটির জন্যেও।
ফলে পৃথিবীর যেসব অঞ্চলের মানুষ নিম্ন আয়ের, ডাল তাদের জন্য হয়ে দাড়িয়েছে একটা লাইফ লাইনের মত। যেসব অঞ্চলের মানুষ ধর্মীয়কারনে নন ভেজ প্রোটিন থেকে দূরে থাকেন, তাদের জন্যেও প্রকৃতির আশীর্বাদ হয়ে দাড়িয়েছে এই মসুরের ডাল।
নেপালীরা বেশ ঘন ডাল খায়।
আমরা ততটা ঘন ডাল খাই না। এর প্রধান কারনও আমি মনে করি নিউট্রিশনাল রিকোয়ারমেন্টের সঙ্গে জড়িত।
আমাদের স্টেপল হচ্ছে ভাত, ভাতের সাথে আমাদের প্রোটিন স্টেপল হচ্ছে চিকেন বা পাঙ্গাস অথবা ডিম। যাদের সামর্থ্য ভাল তাদের ক্ষেত্রে বীফ, মাটন, নানা রকমের মাছ।
ফলে ডালের কাছ থেকে আমাদের এক্সপেক্টেশান হচ্ছে একটা ভিন্ন স্বাদ আর রুচি।
কিন্তু নেপালীদের ক্ষেত্রে ডাল হচ্ছে স্টেপল প্রোটিন এবং সেকেন্ড মেইন সোর্স অফ এনার্জি।
যারা নেপালে বা ভারতে হাই অল্টিটিউড মাউন্টেইনিয়ারিং করেন, তাদের ক্ষেত্রে দেঝা যায় তিন হাজার মিটার ওঠার পর আর কোন নিন ভেজ খাবার নেপালে এভেইলেবল থাকে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই।
তখন ঐ ডাল ভাত পাওয়ার-টোয়েন্টি ফোর আওয়ারই সম্বল।
অল্প খরচ, সহজলভ্যতা, সবগুলো ইসেনশিয়াল এমাইনো এসিডের পুষ্টি দিতে পারার ক্ষমতা মিলে ডাল ভাত দক্ষিন এশিয়ার প্রধান খাবার হয়ে উঠতে পেরেছে, বিশেষভাবে ভেজিটেরিয়ানদের জন্য এটা হয়ে উঠেছে লাইফ লাইন!
সংগৃহীত।
©somewhere in net ltd.